জুমআর দিন সব চাইতে শ্রেষ্ঠ দিন। এমনকি ঈদুল ফিতর ও আযহা থেকেও শ্রেষ্ঠ তাই এই দিনে নিম্নলিখিত ১৫ টি কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করুন।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
(১) জুমআর ফজরের নামায জামাআত সহকারে পড়ুন: উক্ত সালাত জামাআতে পড়ার পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর নিকটে সব চাইতে শ্রেষ্ঠ নামায হল, জুমআর দিন জামাআত সহকারে ফজরের নামায। (সিলসিলাহ সহীহাহ: ১৫৬৬)।
(২) জুমআর জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের দুর্গন্ধ দূর করুন: সে জন্য গোসল করা, আতর ব্যবহার করুন (সহীহ বুখারী, মিশকাত ১৩৮১)।
(৩) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করুন, মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।” (মুসলিম, সহীহ ৮৪৬)।
(৪) সুন্দর পোশাক পরিধান করুন: মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে, খোশবূ থাকলে তা ব্যবহার করে এবং তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করে, অতঃপর স্থিরতার সাথে মসজিদে আসে, অতঃপর ইচ্ছামত নামায পড়ে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না, অতঃপর ইমাম বের হলে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকে, সে ব্যক্তির এ কাজ দুই জুমআর মাঝে কৃত গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।” (আবূদাঊদ, সহীহ, মিশকাত ১৩৮৭)।
(৫) সকাল সকাল মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আগে আগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম আছে। (সহীহ বুখারী ৮৮১, মুসলিম, সহীহ ৮৫০)।
(৬) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করুন: আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন (মাথা) ধৌত করে ও যথা নিয়মে গোসল করে, সকাল-সকাল ও আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার জন্য) প্রস্তুত হয়, সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে (খোতবা) শ্রবণ করে, এবং কোন অসার ক্রিয়া-কলাপ করে না, সে ব্যক্তির প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বৎসরের নেক আমল ও তার (সারা বছরের) রোযা ও নামাযের সওয়াব লাভ হয়!(সহীহ, ইবনে হিব্বান, মুস্তাদরাক হাকেম, সহিহ আত তারগিব ৬৮৭)।
(৭) জুম’আর দিনে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকআত সালাত আদায় করুন: এমনকি খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া বসা থেকে বিরত থাকুন (সহীহ বুখারী: ৯৩০)।
(৮) ইমামের দিকে চেহারা করে বসুন: ইহা মুস্তাহাব। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) যখন মিম্বরে চড়তেন, তখন আমরা আমাদের চেহারা তাঁর দিকে ফিরিয়ে বসতাম।’ (সুনানে তিরমিযী, ৫০৯)।
(৯) খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসুন: কোনো ব্যাক্তি যদি জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হয়, কিন্তু, ইচ্ছা করে জুমুয়ার নামাজে ইমাম থেকে দূরে বসে, তবে সে বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবু দাউদ: ১১০৮)।
(১০).মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা শ্রবণ করুন: খুতবা শোনা ওয়াজিব। আর এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা, সালাম ও সালামের উত্তর, হাঁচির হামদের জবাব, এমনকি আপত্তিকর কাজে বাধা দেওয়াও নিষিদ্ধ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “জুমআর দিন ইমামের খুতবা দানকালে কথা বললে তুমি অনর্থ কর্ম করলে এবং (জুমুআহ) বাতিল করলে।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ,সহিহ তারগিব ৭১৬)।
(১১) জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করুন (সহীহ বুখারী: ১৮২, মুসলিম: ৮৮১, আবু দাউদ: ১১৩০)।
(১২) সূরা কাহ্ফ পাঠ করুন: আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।” (সুনানে নাসাঈ বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৭৩৫)।
(১৩) বেশী বেশী দরুদ পাঠ করুন: মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল, জুমআর দিন। এই দিনে তোমরা আমার প্রতি দরুদ পাঠ কর। যেহেতু তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়ে থাকে। (সুনানে আবূদাঊদ,১৫৩১)।
(১৪) বেশি বেশি দু’আ করুন: কারন এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যাতে দুআ কবুল হয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “জুমআর দিনে এমন একটি (সামান্য) মুহূর্ত আছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা নামায পড়া অবস্থায় তা পায় এবং আল্লাহর নিকট কোন মঙ্গল প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন।” (সহীহ বুখারী: ৯৩৫, মিশকাত: ১৩৫৭)।
(১৫) যথাসাধ্য দান-সদকা করুন: কা’ব (রাঃ) বলেন, ‘অন্যান্য সকল দিন অপেক্ষা এই দিনে সদকাহ্ করার সওয়াব অধিক।’ (ইবনুল কাইয়েম যাদুল মাআদ সালাতে মুবাশ্বির) মহান আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত আমলগুলো সম্পাদন করার তৌফিক দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।