গীবত (যাতে মানুষ ডুবে আছে), এ থেকে মানুষকে দূরে রাখা রমজানের এক বড় শিক্ষা:
গীবত হচ্ছে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের অগোচরে তার ব্যাপারে এমন আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। চাই এটা তার শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতিই হোক না কেন। যেমন কাউকে নিন্দা ও দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে ল্যাংড়া, ট্যারা বা অন্ধ বলা। তেমনি কারো চারিত্রিক ত্রুটি তুলে ধরা যা সে অপছন্দ করে, যেমন বোকা, নির্বোধ, ফাসেক ইত্যাদি। বাস্তবে ওই লোকের মধ্যে এ সকল দোষ-ত্রুটি বিদ্যমান থাকুক বা না থাকুক।
* কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে গীবত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: ‘এটা হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জবাব দিলেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তুমি গীবত করলে, আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে।’ (মুসলিম: ২৫৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে গীবত করতে নিষেধ করেছেন ও একে নিকৃষ্ট বস্তু তথা আপন মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ ﴾ [الحجرات: ١٢]
‘আর তোমরা কারো গীবত করো না, তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা এটাকে ঘৃণাই কর।’ {সূরা আল-হুজুরাত: ১২}
* অনুরূপভাবে নবী (সাঃ) জানিয়েছেন যে, ‘তিনি মেরাজের রাত্রে কোনো এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যাদের পিতলের নখ রয়েছে তারা এগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষে আঘাত করছে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, হে জিব্রাইল এরা কারা? জিব্রাঈল উত্তরে বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক যারা পৃথিবীতে মানুষের গোশত খেতো এবং মানুষের সম্মানহানি ঘটাতো।’ (আবু দাউদ: ৪৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪, শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সলেহ আল উসাইমিন (রঃ-রমজান মাসের ৩০ আসর)
সুতরাং এই রমজান থেকেই যেন গীবত নামক জাহান্নামের উৎস থেকে আমরা বহু দূরে থাকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আজীবন চলতে পারি, আমীন। আর অন্যরা যদি আপনার গীবত করে সেক্ষেত্রে আপনাকেও যে করতে হবে এমন নয় বরং তারা গীবত করার মাধ্যমে এতো ক্ষতিগ্রস্থ হলো যে, কিয়ামতের দিন তাদের আমলনামা থেকে এই পরিমাণ আপনাকে প্রদান করা হবে, নিঃসন্দেহে এটা তার জন্য বড় ক্ষতি এবং আপনার জন্য বড় সুসংবাদ।