কুফরী কাকে বলে এবং কুফরী কত প্রকার ও কি কি

কুফরী ও তার প্রকারভেদ জানার গুরুত্ব:
.
কুরআন-সুন্নাহর প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত যে অবশ্যই কারো ঈমান শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য হবে না দুটি বিষয় ছাড়া। আর তা হল: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহা নেই, এই সাক্ষ্য দেওয়া এবং এর অর্থ জানা। এই দুটি শর্ত হল একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা (তাওহিদ) এবং সকল প্রকার কুফর ও শিরক এর যাবতীয় প্রকার হতে মুক্ত ঘোষণা করা।কেননা একজন ব্যক্তি কোন কিছুকে নিন্দা বা এড়িয়ে যেতে পারে না যদি না সে জানে যে এটি কী। এ থেকে আমরা তাওহিদ কি তা জানার গুরুত্ব উপলব্ধি পারি, যাতে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করতে পারি এবং তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং কুফর ও শিরক কী তা জানতে পারি যাতে আমরা সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারি এবং সেগুলো থেকে নিজে দূরে থাকতে পারি সাথে মানুষকে সতর্ক করতে পারি।
.
কুফুর শব্দের অর্থ কি?
.
আরবী ‘কুফর’ (الكُفْرُ) শব্দটি অবিশ্বাস, অস্বীকার, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির মূল অর্থ ‘আবৃত করা’ও গোপন করা।
.
৪র্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা আবুল হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস (মৃত:৩৯৫ হি:) বলেন: ‘‘(কাফ, রা ও ফা) তিন অক্ষরের ক্রিয়ামূলটি একটি বিশুদ্ধ অর্থ প্রকাশ করে, তা হলো:‘আবৃত করা বা গোপন করা’। কোনো ব্যক্তি যদি তার পরিহিত বর্মকে তার কাপড় দিয়ে আবৃত করেন তবে বলা হয় তিনি তার বর্ম ‘কুফর’ করেছেন। চাষীকে ‘কাফির’ (আবৃতকারী) বলা হয়, কারণ তিনি শষ্যদানাকে মাটি দ্বারা আবৃত করেন। ঈমান বা বিশ্বাসের বিপরীত অবিশ্বাসকে ‘কুফর’ বলা হয়; কারণ অবিশ্বাস অর্থ সত্যকে অবৃত করা। অকৃতজ্ঞতা বা নিয়ামত অস্বীকার করাকে কুফর বলা হয়; কারণ এতে নিয়ামত লুকানো হয় এবং আবৃত করা হয়।’’(ইবনু ফারিস, মু‘জামু মাকাইসিল লুগাহ, খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ১৯১)
.
আর শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়। কেননা কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক। বরং তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় ও সন্দেহ, উপেক্ষা কিংবা ঈর্ষা, অহংকার কিংবা রাসূলের অনুসরণের প্রতিবন্ধক কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ কুফরীর হুকুমে কোন পরিবর্তন আনয়ন করবেনা। যদিও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বড় কাফির হিসাবে বিবেচিত। অনুরূপভাবে ঐ অস্বীকারকারী ও বড় কাফির, যে অন্তরে রাসূলগণের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হিংসাবশতঃ মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে। অতএব কুফর এমন একটি বৈশিষ্ট্য বা গুণ যা এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত যারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় অপরিহার্য বা ফরজ সেগুলোকে অস্বীকার করে। আর এ হুকুম তার নিকট দলিলপত্র পৌঁছার পর সাব্যস্ত হবে। চাই সে ব্যক্তি মুখে স্বীকৃতি দেয় কিন্তু অন্তরে অস্বীকার করে অথবা অন্তরে স্বীকৃতি দেয় কিন্তু মুখে অস্বীকার করে অথবা একই সাথে উভয় দ্বারা অস্বীকার করে। অথবা এমন আমল করে যার ক্ষেত্রে দলিল সুস্পষ্ট যে মুমিন হতে এই আমল করার কারণে সে বেরিয়ে যাবে।(বিস্তারিত জানতে ইবনে তাইমিয়া মাজমুউল ফাতওয়া খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ৩৩৫ এবং ইবনে হাযম আল-ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
ইবনে হাজম (রহিমাহুল্লাহ) তার কিতাব“আল-ফাসল” এ বলেন:-

بل الجحد لشيء مما صح البرهان أنه لا إيمان إلا بتصديقه كفرٌ، والنطق بشيء من كل ما قام البرهان أن النطق به كفرٌ كفر، والعمل بشيء مما قام البرهان بأنه كفرٌ كف

“সহিহ দলিল দ্বারা প্রমাণিত এমন বিষয়কে অস্বীকার করা “যে বিষয়টি তার সত্যায়ন তথা বিশ্বাস করা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান থাকে না” তা সুস্পষ্ট কুফর। অপরপক্ষে দলিল দ্বারা প্রমাণিত এমন কুফুরী বিষয়ের ক্ষেত্রে কথা বলা যার দ্বারা মানুষ কাফের হয়ে যায় সেটিও কুফর এবং দলিলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এমন বিষয়ের প্রতি আমল করা যে বিষয়ে আমল করার কারণে কুফরী সাব্যস্ত হয় সেটিও কুফর।(ইবনে হাযম আল-ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:

الكفر جحد الحق وستره ، كالذي يجحد وجوب الصلاة أو وجوب الزكاة أو وجوب صوم رمضان أو وجوب الحج مع الاستطاعة أو وجوب بر الوالدين ونحو هذا ، وكالذي يجحد تحريم الزنا أو تحريم شرب المسكر أو تحريم عقوق الوالدين أو نحو ذلك .

“কুফরী হলো সত্যকে অস্বীকার করা এবং তা গোপন করা। যেমন যে ব্যক্তি সলাতের ওয়াজিব, যাকাতের ওয়াজিব, রমজান মাসের সিয়ামের ওয়াজিব এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্বের ওয়াজিব, পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের ওয়াজিব ইত্যাদি অস্বীকার করে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যেনা, মদ পান, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি হারাম হওয়াকে অস্বীকার করে বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/৯; পৃষ্ঠা: ১৭৪-১৭৫)
.
এবং শাইখ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি (হাফিজাহুল্লাহ) বলেন:

يكفر الإنسان بالشك ، إذا شك في الله أو في الملائكة أو في الكتب أو في الرسل أو في الجنة أو في النار، يقول : ما أدري هو فيه جنة أو ما فيه جنة ؟ هو فيه نار أو ما فيه نار ؟ يكفر بهذا الشك

“কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ, ফেরেশতা মন্ডলী, কিতাব সমূহ, রাসূলগন, জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি সন্দেহ করে বলে যে আমি জানিনা তার মধ্যে জান্নাত আছে নাকি জান্নাত নেই? জাহান্নাম আছে নাকি জাহান্নাম নেই? তাহলে অবশ্যই এই সংশয়ের কারণে সে কাফের।(দেখুন https://saaid.net/Minute/m51.htm)
.
▪️কুফরীর প্রকারভেদ:
.
আলেমগণ কুফরীকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছেন যার অধীনে তারা শিরকের অনেক রূপ ও প্রকার তালিকাভুক্ত করেছেন। কুরআন ও হাদীসের আলোকে কুফরকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা হয়:

(১) كفر أكبر তথা বড় কুফরী: এটি মানুষকে ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। এটি হল ‘কুফরে এতেকাদী’ তথা বিশ্বাসে কুফরী করা, যা অন্তরের বিশ্বাস ও আমল অথবা উভয়ের যে কোন একটির বিরোধী। অর্থাৎ যা বিশ্বাস রাখা বাঞ্চনীয় ও জরুরী তার বিপরীত কিছু বিশ্বাস করা বা আমল করাই হল বড় কুফরী। এই কুফরের পরিণতি চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তিভোগ।
.
(২) كفر أصغر ছোট কুফরীঃ এটি পরিপূর্ণ ঈমানের পরিপন্থী। তবে ইহা ঈমান থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয় না। তা হল كفر عملي তথা কর্মে কুফরী, যা অন্তরের বিশ্বাস ও আমলকে ভঙ্গ করে দেয় না এমনকি ভঙ্গ হওয়াকে আবশ্যকও করে না। তাদেরকে অনন্ত জাহান্নামবাসী বলেও বিশ্বাস করা হয় না। বরং তাদেরকে পাপী ও শাস্তিযোগ্য মুসলিম বলে গণ্য করা হয়। কুফর আসগারকে কুফর মাজাযী বা রূপক কুফুরও বলা হয়
.
▪️কুফর আকবার এর প্রকারভেদ: কুফর আকবার বা ‘বৃহত্তর কুফর’-ই প্রকৃত কুফর বা অবিশ্বাস। তাওহীদ ও আরকানুল ঈমানের আলোকে আমরা কুফর বা অবিশ্বাসকে নিম্নের কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি:

(১).অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের কুফর: সত্য গোপন করা এবং প্রকাশ্যে সত্যের অনুসরণ না করাকে কুফরে জুহুদ অর্থাৎ অস্বীকারকারীদের কুফর বলা হয়। অথচ তারা অন্তরে বিশ্বাস পোষণ করত যে রাসূলগণ সত্য এবং তাদের সাথে প্রেরিত দ্বীনও সত্য। যেমন ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় মুসার সাথে কুফরী করেছিল এবং ইহুদীরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে কুফরী করেছিল। আল্লাহ্ তাআলা ফেরাউন ও তার জাতির লোকদের কুফরী সম্পর্কে বলেনঃوَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا‘‘তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল। যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল’’। (সূরা নামলঃ ২৭/১৪) আল্লাহ্ তাআলা ইহুদীদের ব্যাপারে বলেন,فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ‘অতঃপর যখন তাদের সেই পরিচিত কিতাব আসল, তখন তারা তাকে অস্বীকার করল’’। (সূরা বাকারাঃ ৮৯) আল্লাহ্ তাআলা ইহুদীদের ব্যাপারে বলেনঃوَإِنَّ فَرِيقًا مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ‘‘এবং নিশ্চয়ই তাদের একটি দল জানা সত্বেও সত্যকে গোপন করছে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৪৬) কারণ তাদের অবিশ্বাস ছিল কেবল বাহ্যিক ও মৌখিক এবং অভ্যন্তরীণভাবে তারা সত্যকে চিনতে পেরেছিল। আল্লাহ বলেন,”তারা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে”।(সূরা আনআম,৬/৩৩) অর্থাৎ কাফেররা প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতিই মিথ্যারোপ করে। কাতাদা বলেন, অর্থাৎ তারা জানে যে আপনি আল্লাহর রাসূল কিন্তু তারা ইচ্ছা করে সেটাকে অস্বীকার করছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] আর এই কুফরির অনুরূপ যা হারাম তা হালাল করার কুফর। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এমন কিছুকে হালাল মনে করে যা সে জানে যে ইসলাম সেটা হারাম করেছে সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এবং তিনি যা নিয়ে এসেছিলেন তার সাথে কুফর করল। একই কথা প্রযোজ্য যে ব্যক্তি শরীয়তের এমন কিছুকে হারাম করে যা সে জানে যে ইসলামি শরীয়তে তা হালাল।
.
(২).অহংকার করা এবং মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কুফর: তা হয়ে থাকে সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করেও তার প্রতি মস্তকাবনত না করার মাধ্যমে। যেমন কুফরী করেছিল ইবলীস। আল্লাহ্ তার সম্পর্কে বলেনঃ
إلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
‘‘কিন্তু ইবলীস নিদর্শন পালন করতে অস্বীকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারাঃ২/৩৪) আল্লাহর আদেশকে অমান্য করে সিজদা থেকে বিরত থাকা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু তার আপত্তি ছিল সিজদা করার আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইনসাফ ও হিকমতের মধ্যে। এ জন্যেই সে বলেছিলঃ”
أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا
‘‘আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি কাঁদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?’’ (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৬১) সে আরো বলেছিলঃلَمْ أَكُنْ لأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ‘আমি এমন একজন মানুষকে সিজ্দা করব না, যাকে পঁচা কর্দম থেকে তৈরী শুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হিজরঃ ৩৩) সে আরো বলেছিলঃ
أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ
‘‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা’’। (সূরা আ’রাফঃ ১২) অতএব যারা আমল করা হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের থেকে ঈমান সরে যাবে। যদিও সে মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দেয়। অতএব স্পষ্ট হলো যে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কুফরির বিধান হল মূলত হক্বকে বর্জন করা যা সে শিক্ষা গ্রহণ করে না এবং তা দ্বারা আমল করে না। তা হতে পারে ভাষার দ্বারা বা আমল দ্বারা কিংবা বিশ্বাস দ্বারা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,”আর যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে যে বিষয়ে ভীতিপ্রদর্শন করা হয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে আছে”।(সূরা আহকাফ,৪৬/৩) সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি কথাম মাধ্যমে রাসুলের আনীত বিষয় থেকে ফিরিয়ে নেয়, সে ওই ব্যক্তির মত যে ব্যক্তি বলে, “আমি তার অনুসরণ করব না।” অথবা কর্মের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির মত যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল এবং সত্য যা তিনি ﷺ) নিয়ে এসেছেন তা শ্রবণ করা থেকে পালিয়ে গেল। অথবা তার দুই আঙ্গুল কে কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল যেন সে শুনতে না পায়। অথবা সে শুনবে কিন্তু সে তার অন্তরকে তার প্রতি ঈমান আনা হতে বিরত রাখবে। আর তা আমল করা হতে। ফলে সে এমন কুফরী করল যা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কুফরির হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
.
৩. মুনাফেকি করার কারণে কুফর: আর তা হচ্ছে, মানুষকে দেখানোর জন্যে প্রকাশ্যভাবে আনুগত্যমূলক কাজ করা এবং অন্তরে অবিশ্বাস থাকলে তাকে নিফাকের কুফরী বলে। যেমন আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই ইবনে সুলুল এবং তার দলের লোকদের কুফরী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ * يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ * فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ إلى قوله -كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে, যারা বলেঃ আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিবসের প্রতি ঈমান এনেছি। অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ্ এবং মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃত অর্থে নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে প্রতারণা করতে পারে না। অথচ তারা এ সম্বন্ধে বোধগম্য নয়। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি। উপরন্তু আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। এভাবে ২০নং আয়াত পর্যন্ত। (সূরা বাকারাঃ ৮-২০) এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
.
৪. সন্দেহ করার কারণে কুফর:-আর তা হল সত্য অনুসরণের ক্ষেত্রে সন্ধিহান করা এবং সত্য কিনা তা নিয়ে সন্ধিহান করা। কারণ যা প্রয়োজন তা হল ঈমানের নিশ্চিততা (ইয়াকীন) যে রসূল যা নিয়ে এসেছেন তা সত্যই এতে কোন সন্দেহ নেই।উদ্দেশ্য হলো যে বিশ্বাস আনা এ ব্যাপারে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা সত্য তার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। ফলে যে ব্যক্তি মনে করে যে রাসূল (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা সত্য নয় সে সন্দেহের কুফর অর্থে অবিশ্বাস করেছে। আর এই কুফরি সন্দেহ এবং ধারণা করার ক্ষেত্রে কাফের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,وَ دَخَلَ جَنَّتَهٗ وَ هُوَ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِهٖ ۚ قَالَ مَاۤ اَظُنُّ اَنۡ تَبِیۡدَ هٰذِهٖۤ اَبَدًا, وَّ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّ لَئِنۡ رُّدِدۡتُّ اِلٰی رَبِّیۡ لَاَجِدَنَّ خَیۡرًا مِّنۡهَا مُنۡقَلَبًا,قَالَ لَهٗ صَاحِبُهٗ وَ هُوَ یُحَاوِرُهٗۤ اَکَفَرۡتَ بِالَّذِیۡ خَلَقَکَ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ سَوّٰىکَ رَجُلًا,لٰکِنَّا۠ هُوَ اللّٰهُ رَبِّیۡ وَ لَاۤ اُشۡرِکُ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا “আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল নিজের প্রতি যুলুম করে। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটা কখনো ধংস হয়ে যাবে;আমি মনে করি না যে, কেয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি আমার রব-এর কাছে ফিরিয়ে নেয়াও হয়, তবে আমি তো নিশ্চয় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল পাব।তদুত্তরে তার বন্ধু বিতর্কমূলকভাবে তাকে বলল, তুমি কি তাঁর সাথে কুফরী করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে বীর্য থেকে এবং তারপর পূর্ণাংগ করেছেন পুরুষ আকৃতিতে?কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব এবং আমি কাউকেও আমার রব-এর সাথে শরীক করি না।(সূরা কাহাফ: ১৮/৩৫-৩৮)

▪️দ্বিতীয় প্রকার: ছোট কুফরী: كفر عملي তথা আমলের মধ্যে কুফরী বলতে এমন সব পাপের কাজকে বুঝায়, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে উক্ত পাপের কাজে জড়িত ব্যক্তিকে ঈমান থেকে বের করে দেন নি। যেমন তিনি বলেনঃ(لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ)
‘আমার পরে তোমরা কুফুরীতে ফেরত গিয়ে পরস্পর মারামারিতে লিপ্ত হয়োনা’’।(সহীহ বুখারী হা/৪৪০৩)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ(سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ)‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং কোন মুসলিমের সাথে লড়াই করব কুফরী’’।(সহীহ বুখারী হা/৭০৭৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহকে কুফরী বলে সাব্যস্ত করেছেন এবং যারা তাতে লিপ্ত হবে তাদেরকে কাফের বলেছেন। অথচ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃوَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (9) إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘‘মুমিনদের দুই দল যদি দ্বন্দে লিপ্ত হয়, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। যদি তাদের একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা বাড়াবাড়িকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও’’। (সূরা হুজরাতঃ ৯-১০)
.
উপরোক্ত এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হওয়া সত্বেও তাদের জন্যে ঈমান ও ঈমানের বন্ধন বলবৎ রেখেছেন। তাদের থেকে ঈমান দূর হয়ে গেছে এ কথা বলেন নি। আল্লাহ্ তাআলা কিসাসের আয়াতে বলেনঃفَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ‘‘কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে তাগাদা করা হয় এবং সদ্ভাবে তা পরিশোধ করা হয়’’। (সূরা বাকারাঃ ১৭৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ(لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ ولاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوضَةٌ بَعْدُ)‘‘যেনাকারী যখন যেনা করে তখন সে মুমিন থাকে না, এমনিভাবে চোর যখন চুরি করে তখন সে মুমিন থাকে না। একই অবস্থা মদ পানকারীর। সে মদ পান করা অবস্থায় মুমিন থাকে না। এর পরও তার জন্য তাওবার দরজা উন্মুক্ত থাকে।(সহীহ বুখারী হা/৫৫৭৮) অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘যখন কোন হত্যাকারী কাউকে হত্যা করে, হত্যা করার সময় সে মুমিন থাকে না’’। অন্য বর্ণনায় আছে, ছিনতাইকারী যখন কোন মূল্যবান জিনিনষ ছিনতাই করে নেয়, যার দিকে লোকেরা দৃষ্টি উঁচু করে দেখে তখন সে মুমিন থাকে না’’।(সহীহ বুখারী হা/৬৭৭২) অনুরূপ গায়রুল্লাহর নামে কসম ও এ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ”যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর নামে কসম করল। সে কুফরী কিংবা শিরক করল”।(তিরমিযী,হা/১৫৯০ আবু দাউদ হা /৩২৫১)
.
আবু যার্ (রাঃ)এর হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ(مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ : وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ)‘‘যে কোন বান্দা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করবে অতঃপর এরই উপর মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবু যার্ (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। আবু যার্ রা বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। আবু যার্ (রা) বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। এতে আবু যার্ অসন্তুষ্ট হলেও।(সহীহ বুখারী হা/৫৮২৭, সহীহ মুসলিম হা/১৭৪)

উক্ত হাদীছটি প্রমাণ করে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেনাকারী, চোর, মদ্যপায়ী এবং খুনীদেরকে ঈমান থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেন নি। বিশেষ করে যখন তাদের ভিতরে তাওহীদের বিশ্বাস বহাল থাকবে। কেননা উপরোক্ত গুনাহ্গুলোতে লিপ্ত ব্যক্তি ঈমান থেকে বের হয়ে গেল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলতেন না যে, ‘‘যে কোন বান্দা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করবে অতঃপর এরই উপর মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। যদিও সে উক্ত পাপের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত কোন মানুষই জান্নাতে যেতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথার মাধ্যমে ঈমানের ত্রুটি উদ্দেশ্য করেছেন ও পরিপূর্ণ মুমিন হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। তবে আল্লাহ্ তাআলা যেসমস্ত পাপের কাজে লিপ্ত হওয়া হারাম করেছেন, বান্দা হালাল মনে করে তাতে লিপ্ত হলে, সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। কেননা এতে হারামকে হালাল মনে করা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শামিল। শুধু তাই নয়, পাপ কাজে লিপ্ত হওয়াকে হালাল বিশ্বাস করে তাতে লিপ্ত না হলেও কাফের হিসাবে গণ্য হবে।
.
পরিশেষে, সন্মানিত পাঠকবৃন্দ উপরোক্ত আলোচনা থেকে সারাংশ হল যে অবশ্যই কুফরি ঈমানের বিপরীত।কুফর প্রধানত দুই ধরনের তার মধ্য বড় কুফরী ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে দেয় এবং আমলসমূহ নষ্ট করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরী ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করেনা এবং আমল ও নষ্ট করে না। তবে তা তদনুযায়ী আমলে ত্রুটি সৃষ্টি করে এবং লিপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মুখোমুখি করে। বড় কুফরীতে লিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরন করা ব্যক্তি চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। কিন্তু ছোট কুফরীর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবেনা। বরং কখনো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। ফলে সে মোটেই জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা। বড় কুফরীতে লিপ্ত হলে ব্যক্তির জান মাল মুসলমানদের জন্য বৈধ হয়ে যায়। অথচ ছোট কুফরীতে লিপ্ত হলে জান মাল বৈধ হয়না।বড় কুফরীর ফলে মুমিন ও অত্র কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রকৃত শত্রুতা সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। তাই সে ব্যাক্তি যত নিকটাত্বীয়ই হোক না কেন, তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধত্ব স্থাপন করা মুমিনদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে কোন বাধা নেই। বরং তার মধ্যে যতটুকু ঈমান রয়েছে সে পরিমান তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত এবং যতটুকু নাফরমানী তার মধ্যে আছে, তার প্রতি ততটুকু পরিমান ঘৃণা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করা যেতে পারে।আমরা আল্লাহর কাছে এই কুফরি থেকে বাঁচার প্রার্থনা করছি। এবং তিনি যেন আমাদেরকে ঈমান দ্বারা সুসজ্জিত করে এবং প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন আমিন।আল্লাহ্ তাআলাই অধিক অবগত।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: