মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য

মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য

প্রত্যেক মুসলমান নিশ্চয়ই একথা জানে যে, আল্লাহ তা’য়ালা মুসলমানকে পছন্দ করেন এবং কাফেরকে অপছন্দ করেন৷ মুসলমানের গোনাহ্ ক্ষমা করা হবে কাফেরের অপরাধের কোন ক্ষমা নেই৷ মুসলমান জান্নাতে যাবে এবং কাফের জাহান্নামে৷ কিন্তু মুসলমান এবং কাফেরের মধ্যে এতখানি পার্থক্য কেন হলো, সেই সম্বন্ধে একটু গভীরভাবে চিন্তা করা আবশ্যক৷ কাফের ব্যক্তিরা যেমন হযরত আদম (আলাইহি সালাম)-এর সন্তান, মুসলমানরাও তেমনি তাঁর সন্তান৷ মুসলমানদের মত তাদেরও হাত-পা, চোখ-কান সবই আছে৷ তাদের জন্ম এবং মৃত্যু মুসলমানদের মতই হয়৷ যে আল্লাহ মুসলমানদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন৷ তাহলে মুসলমান কেন জান্নাতে যাবে আর তারা কেন জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে? একথাটি বিশেষভাবে চিন্তা করে দেখা আবশ্যক৷

মুসলমানদের এক একজনের নাম রাখা হয়েছে আবদুলাহ,আবদুল হামিদ বা তদনুরূপ অন্য কোন নাম, অতএব তারা মুসলমান৷ আর কিছু লোকের নাম রাখা হয়েছে দীলিপ, জগদীশ, জন প্রভৃতি, কাজেই তারা কাফের; কিংবা মুসলমানগণ খতনা করায়, আর তারা তা করায় না৷ মুসলমান গরুর গোশত খায়, তারা তা খায় না_ শুধু এটুকু কথার জন্যই মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য হতে পারে কি?

আল্লাহ তায়ালাই যখন সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সকলকেই তিনি লালন-পালন করেন তিনি এতবড় অন্যায় কখনও করতে পারেন না৷ কাজেই তিনি এ রকম সামান্য বিষয়ের কারণে তাঁর সৃষ্ট এক শ্রেণীর মানুষকে অকারণে দোযখে নিক্ষেপ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না৷

বস্তুত উভয়ের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য কেবলমাত্র কুফরি ইসলামের

ইসলামের অর্থ-আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা এবং কুফরীর অর্থ আল্লাহকে অস্বীকার করা, অমান্য করা ও আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হওয়া৷ মুসলমান ও কাফের উভয়ই মানুষ, উভয়ই আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্ট জীব, তাঁরই আজ্ঞাবহ দাস৷ কিন্তু তাদের একজন অন্যজন অপেক্ষা এজন্য শ্রেষ্ঠ যে, একজন নিজের প্রকৃত মনিবকে চিনতে পারে, তার সাথে কাউকে শরীক করে না, তাঁর আদেশ পালন করে এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার দুঃখময় পরিণামকে ভয় করে৷ কিন্তু অন্যজন নিজ মনিবকে চিনে না এবং তাঁর আদেশ পালন করে না, এজন্যই সে অধঃপাতে চলে যায়৷ এ কারণেই মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তা’য়ালা সন্তুষ্ট এবং কাফেরের প্রতি অসন্তুষ্ট, মুসলমানকে জান্নাতে দেয়ার ওয়াদা করেছেন এবং কাফেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ভয় দেখিয়েছেন৷ যেসব লোক ঈমান এনেছে নেক আমল করেছেনিঃসন্দেহে তারাই সৃষ্টির সেরা৷ তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাতযার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত৷ তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল৷ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট৷ এটা তার জন্যেযে তার পালনকর্তাকে ভয় করে৷ (সূরা বাইয়্যেনাঃ )

মুসলমানকে কাফের হতে পৃথক করা যায় মাত্র দুটি জিনিসের ভিত্তিতেঃ প্রথম, ইলম বা জ্ঞান; দ্বিতীয়,আমল বা কাজ৷ অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমানকে প্রথমেই জানতে হবে যে, তার প্রকৃত মালিক কে? কি তাঁর আদেশ ও নিষেধ? কিসে তিনি সন্তুষ্ট হন আর কিসে তিনি অসন্তুষ্ট হন এসব বিস্তৃতভাবে জেনে নেয়ার পর মালিকের মর্জিমত চলবে, তার মন যদি মালিকের ইচ্ছার বিপরীত কোন বস্তুর কামনা করে তবে সে নিজের মনের কথা না শুনে মালিকের কথা শুনবে৷ কোন কাজ যদি নিজের কাছে ভাল মনে হয়, কিন্তু মালিক সেই কাজটিকে ভাল না বলেন,তবে তাকে মন্দই মনে করবে৷ আবার কোন কাজ যদি নিজের মনে খুব মন্দ বলে ধারণা হয়, কিন্তু মালিক তাকে ভাল মনে করেন এবং কোন কাজ যদি নিজের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে হয় অথচ মালিক যদি তা করার হুকুম দেন, তবে তার জান ও মালের যতই ক্ষতি হোক না কেন, তা সে অবশ্যই করবে৷ আবার কোন কাজকে যদি নিজের জন্য লাভজনক মনে করে, আর মালিক তা করতে নিষেধ করেন তবে তাতে দুনিয়ার সমস্ত ধন-সম্পত্তি লাভ করতে পারলেও তা সে কখনই করবে না৷

ঠিক ইলম এরূপ আমলের জন্যই মুসলমান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাহ৷ তার ওপর আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষিত হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে সম্মান দান করবেন৷ উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে কাফের কিছুই জানে না এবং জ্ঞান না থাকার দরুনই তার কার্যকলাপ তদ্রুপ হয় না৷ জন্য সেআল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ এবং তাঁর অবাধ্য বান্দাহ৷ ফলত সে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হবে৷

যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়,অথচ কাফেরদের মতই জাহেল বা অজ্ঞ এবং আল্লাহ তা’য়ালার অবাধ্য, এমতাবস্থায় কেবল নাম, পোশাক ও খানা-পিনার পার্থক্যের কারণে সে কাফের অপেক্ষা কোনভাবেই শ্রেষ্ঠ হতে পারে না, আর কোন কারণেই সে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহ তা’য়ালার রহমতের হকদার হতে পারে না৷ এরশাদ হচ্ছেঃ ইহাদিগকে জিজ্ঞাস করযে জানে যে জানে না ইহারা উভয় কি কখনো সমান হতে পারেবুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই তো নসীহত কবুল করিয়া থাকে৷ (যুমারঃ )

প্রকৃত কথা এই যেআল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলম সম্পন্ন লোকেরাই তাঁহাকে ভয় করে৷ (ফাতিরঃ ২৮ইলম (জ্ঞান) হচ্ছে বান্দার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ৷ তিনি যে বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে ইলম বা জ্ঞান দান করেন৷ এটা সেই জ্ঞান যা ওহী হিসাবে মহান আল্লাহ নাযিল করেছিলেন রাসূল (সাঃ) এর প্রতি কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞান এবং এর থেকে উদ্ভুত শাখা প্রশাখাসমূহ৷ ওহীর এই জ্ঞান এতই মর্যাদাপূর্ণ যে একে ইলম শরীফ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে৷ আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব হিকমাত নাযিল করেছেন এবং তোমাকে এমন জ্ঞান জানিয়ে দিয়েছেন যা তোমার জানা ছিল না৷ বস্তুতঃ তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বিরাট৷(আন নিসাঃ ১১৩)

 

 

এটাই হচ্ছে সেই জ্ঞান যাহা মৃত হৃদয়কে জীবন্ত আলোকিত করে এবং বিপন্ন মানবতাকে অন্ধকারের গভীর থেকে আলোতে নিয়ে আসে

যে ব্যক্তি প্রথমে মৃত ছিলপরে আমরা তাহাকে জীবন দান করিলাম এবং তাহাকে সেই রৌশনী দান করলাম যাহার আলোকধারায় সে লোকদের মধ্যে জীবনযাপন করেসে কি সেই ব্যক্তির মত হইতে পারে,যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে পড়িয়া রহিয়াছে এবং তাহা হইতে কোনক্রমেই বাহির হয়নাকাফেরদের জন্য এই রকমই তাহাদের আমলকে চাকচিক্যময় বানাইয়া দেওয়া হইয়াছে৷ (সূরা আনআমঃ ১২২)

যাদেরকে কুরআনে বলা হয়েছে সবচেয়ে ভাল এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী তারা হচ্ছে সেইসব লোক যারা ইল্ম অর্জন করে,সে অ নুযায়ী আমল করে ও অন্যদের কাছে তা পৌছিয়ে দেয় (আহলুল ইলম)৷ কিন্তু দলীল রয়েছে যে,যারাই ইলম অনুযায়ী আমল করে না তারা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত৷হে ঈমানদার লোকেরাতোমরা কেন সেই কথা বল যাহা কার্যতঃ কর নাআল্লাহর নিকট ইহা অত্যন্ত ক্রোধ উদ্রেককারী ব্যাপার যেতোমরা বলিবে এমন কথা যাহা কর না (আসসাফঃ )

ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর ‘মাজমুআ আল-ফাতওয়াতে’ বলেন যে যারাই ইলম অর্জন করে তাঁরা হচ্ছেন আম্বিয়া কেরামের উত্তরাধিকারী ও রাসূল (সাঃ) এর খলিফা৷ তাঁরা সেই মাটির মত যেখানে পানি জমা হয় ও সবুজ ঘাস জন্মে৷ আল্লাহ ঈমানদারগণকে সেই জ্ঞান দান করেন যা তারা জানত না, এরশাদ হচ্ছে যেমন (এই দিক দিয়া তোমরা কল্যাণ লাভ করিয়াছ যে,) আমি তোমাদের প্রতি স্বয়ং তোমাদেরই মধ্য হইতে একজন রসূল পাঠাইয়াছিযে তোমাদিগকে আমার আয়াত পড়িয়া শুনায়তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ উৎকর্ষিত করিয়া তোমাদিগকে কিতাব হিকমতের শিক্ষা দেয় এবং যেসব কথা তোমাদের অজ্ঞাততাহা তোমাদিগকে জানাইয়া দেয়৷(বাকারাহঃ –১৫১)
আল্লাহ তাঁর রাসূল (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন যেন তিনি ইলম বৃদ্ধির জন্য (আল্লাহর)কাছে প্রার্থনা করেনঃ আর দোয়া কর,হে পরোয়ারদিগারআমাকে আরও অধিক ইলম দান কর৷ (তাহাঃ ১১৪)


জ্ঞানের মধ্যে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের জ্ঞানই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ৷

কারণ তাওহীদের জন্যই আল্লাহ তার বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন৷ তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয৷ এরশাদ হচ্ছেঃ হে নবী জেনে রাখো– আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)৷ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার ত্রুটির জন্য এবং মুমিন পুরুষ নারীর জন্য৷ আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত৷ (মুহাম্মদঃ ১৯)

বিষয়টা খুবই সহজ বুঝার জন্য একজন ডাক্তারের ঘরে জন্মেছে বলেই উনার ছেলে যেমন ডাক্তার নয় অর্থাৎ ডাক্তারের ছেলে বলে রোগী দেখে ওষুধ দিতে পারে না কিংবা দিলেও কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না৷ তাকে অবশ্যই ডাক্তার হবার জন্য যে ইলম আবশ্যক তা কষ্ট করে হলেও হাসিল করতে হবে৷ এবং প্র্যাকটিস করতে হবে রুগি দেখার জন্য৷ ঠিক তেমনি মুসলিমের ঘরে জন্মেছে বলেই মুসলিম নয়৷ ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান হাসিল করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করলেই মুসলিম হওয়া যাবে৷ ইসলাম কোন জাতিবংশ বা সমপ্রদায়ের নাম নয়৷ কাজেই বাপ হতে পুত্র এবং পুত্র হতে পৌত্র আপনাআপনিই তা লাভ করতে পারে না৷

হিন্দুদের মাঝে ব্রাক্ষণের পুত্র মুর্খ এবং চরিত্রহীন হলেও কেবলমাত্র ব্রাক্ষ্মণের পুত্র বলেই সে ব্রাক্ষ্মণের মর্যাদা পেয়ে থাকে এবং উচ্চ বংশ বলে পরিগণিত হয়৷ আর চামারের পুত্র জ্ঞানী ও গুণী হয়েও নীচ ও হীন থেকে যায়৷ কারণ সে চামারের মত নীচ জাতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে৷ এখানে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে লোক আল্লাহ তায়ালাকে বেশী ভয় করে এবং সকলের অধিক তাঁর আদেশ পালন করে চলে সে তাঁর কাছে অধিক সম্মানিত৷ হযরত ইবরাহীম (আলাইহি সালাম) একজন মূর্তিপূজারীর ঘরে জন্ম লাভ করেছিলেন; কিন্তু তিনি আল্লাহ তা’য়ালাকে চিনতে পেরে তাঁর আদেশ পালন করলেন; এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে এবং তার বংশধরের মাঝে যারা মুসলিম তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত জগতের রিসালাত, নবুয়ত ও খেলাফত অর্থাৎ নেতা বা ইমাম (খলীফা) করে দিয়েছেন৷

স্মরণ করযখন ইবরাহীমকে তাহার রব বিশেষ কয়েকটি ব্যাপারে যাচাই করিলেন এবং সেই সব কয়টি ব্যাপারেই সে উত্তীর্ণ হইলতখন তিনি বলিলেনআমি তোমাকে সকল মানুষের নেতা করিতে চাহি৷ইবরাহীম বলিলআমার সন্তাননদের প্রতিও কি এই ওয়াদাতিনি উত্তরে বলিলেনআমার এই প্রতিশ্রুতি যালেমদের (ইবরাহীম (আলাইহি সালাম)এর বংশে যারা মুসলিম নহে শিরককারীসম্পর্কে নহে৷ (আল বাকারাঃ ১২৪)

আল্লাহ আদমনূহইবরাহীমের বংশধর ইমরানের বংশধরদিগকে সমগ্র দুনিয়াবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রাধান্য দান করিয়া ( নিজের নবুয়ত রিসালাতের জন্যমনোনীত করিয়াছিলেন৷ (সূরা আলে-ইমরানঃ ৩৩)
তাহা হইলে ইহারা অন্যান্য লোকদের প্রতি (মুহাম্মদ (সাঃএবং তাঁর অনুসারীদেরকি শুধু এইজন্য হিংসা পোষণ করে যে,আল্লাহ তাহাদিগকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করিয়াছেনযদি তাহাই হয় তবে তাহারা যেন জানিয়া রাখে যেআমরা তো ইবরাহিমের সন্তানদিগকে কিতাব বুদ্ধিবিজ্ঞান দান করিয়াছি এবং বিরাট রাজ্য দিয়াছি৷ (সূরা নিসাঃ ৫৪)

এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের মালিক৷ তিনি যদি তাঁর অনুগত দাসদের ইবাদতে খুশী হয়ে কাউকে মর্যাদার আসনে বসান তাহলে অন্যান্য দাসদের এ ব্যাপারে কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না৷ যেমনি ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) এর (আল্লাহর জন্য) কুরবানীতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যখন সমস্ত দুনিয়ার নেতৃত্ব দিতে চাইলেন (তার আগে থেকেই তিনি নবী ও রাসূল ছিলেন) তখন ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) উনার বংশধরদের মাঝেও যেন নেতৃত্ব দেয়া হয় তার জন্য দোয়া করলেন৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার বান্দা ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) এর দোয়া কবুল করলেন৷ কিন্তু পরিষ্কার শর্ত দিয়ে দিলেন যে- এ নেতৃত্ব শুধুমাত্র তার বংশধরদের মাঝে যারা মুসলিম হবে তাদের জন্য অর্থাৎ তার বংশধরদের মাঝে কোন কাফের, মুশরিক এ নেতৃত্বের দাবীদার হতে পারবে না৷ পরবর্তীতে তাঁর দুই ছেলে ইসহাক (আলাইহি সালাম) ও ইসমাঈল (আলাইহি সালাম) এবং তার বংশধরের মাঝে নবুয়ত, রেসালাত ও খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করলেন৷ এর ফলশ্রুতিতে ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) এর এক ছেলে ইসহাক (আলাইহি সালাম) এবং তার ছেলে ইয়াকুব (আলাইহি সালাম) নবী ছিলেন এবং ইয়াকুব (আলাইহি সালাম)-এর বংশধরদের নামই বনী ইসরাইল এবং তাদের মাঝেই মুহাম্মদ (সাঃ) আসার আগ পর্যন্ত সমস্ত নবী, রাসুল এবং নেতৃত্ব (খেলাফত) এসেছে৷

রাসূল (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসঃ ইসরাইলের বংশধরদের কাছে অব্যাহতভাবে নবী পাঠানো হয়েছিল৷ বনি ইসরাইলের বংশধরগণের মাঝে নবীগণ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রাখতেন৷ একজন নবী ইন্তেকাল করলে আরেকজন নবীকে উনার খলিফা (প্রতিনিধিহিসেবে পাঠানো হয়েছিল৷ আমার পরে আর কোন নবী পাঠানো হবে নাতবে তোমাদের আমার পরে বহু খলিফাহ আসবেন৷ সাহাবীরা মহানবী মুহাম্মদ (সাঃকে জিজ্ঞেস করলেন সময় আপনি আমাদিগকে কি করার নির্দেশ দেবেনতিনি জবাব দিলেনপ্রথমজনকে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি (বাইয়াহদেবে এবং এর পরের সর্ব প্রথমকে৷ তাদেরকে তাদের অধিকার দেবে,কেননা আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন তারা (খলিফাতাদের লোকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য পূরণ করেছে কি না৷ (আলবুখারী মুসলিম বর্ণিত)

আবার ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) এর ছেলে ইসমাঈল (আলাইহি সালাম) নবী ছিলেন এবং তার বংশই কুরাইশ এবং এ কুরাইশ বংশেই শেষ নবী রাসূল (সাঃ) এসেছিলেন৷ ইব্রাহিম (আলাইহি সালাম) এর মুসলিম বংশধরদের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নেতৃত্বের ওয়াদা মোতাবেক কুরাইশ বংশকে কিয়ামত পর্যন্ত খলিফার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ যাহা রাসূল (সাঃ) হতে নিম্নিলিখিত সিহাহ সিত্তাহ হাদীস গ্রন্থসমূহের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত৷ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত৷ রাসূলূলাহ (সঃ) বলেছেন,  আমর অর্থাত্‍ খেলাফত কুরাইশদের মধ্যে সর্বদা বিরাজমান থাকবে৷ এমনকি তাদের মধ্য থেকে দুজন লোক অবশিষ্ট থাকলেও৷ (সহীহ আল-বুখারীঃ হাদীস নং- ৬৬৪১)

মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই কি মুসলমান হওয়া যায়?

না, হযরত নূহ (আলাইহি সালাম)-এর পুত্র একজন নবী ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিল; কিন্তু সে আল্লাহ তাআলাকে চিনতে পারল না বলে তাঁর অবাধ্য হয়ে গেল৷এজন্য তার বংশমর্যাদার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হলো না৷ উপরন্তু যে শাস্তি দেয়া হলো,সমস্ত দুনিয়া তা হতে শিক্ষা লাভ করতে পারে৷ এরশাদ হচ্ছেঃ এবং নূহ তাঁর রবকে বললেনপরওয়ারদিগার!আমার পুত্র অবশ্যই আমার পরিবারভুক্তআর আপনার ওয়াদা সত্য এবং আপনি মহাজ্ঞানী৷ প্রত্যুত্তরে আল্লাহ বলেননূহসে তোমার পরিবার ভুক্ত নয়কারণ তার কার্যকলাপ সৎলোকদের মত নয় আর তুমি যে বিষয়ের তাৎপর্য অবগত নও সে বিষয়ে আমার নিকট কোন আবেদন করো না৷ (হূদঃ ৪৫-৪৭) নূহ (আলাইহি সালাম) ও হযরত লূত (আলাইহি সালাম)-এর বিবিদের কাহিনীও কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এ দু’জন মহান নবীর বিবিগণ ভিন্ন আকীদা পোষণ করতেন এবং শিরককে লিপ্ত ছিলেন৷ সেজন্য উভয় পয়গাম্বরই তাঁদের বিবিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন৷ এরশাদ হচ্ছেঃ কাফিরদের শিক্ষা গ্রহণের জন্যে আল্লাহ তাআলা নূহ লূতের বিবিগণের উদাহরণ পেশ করেছেন৷ দুজন নারী আমার দু নেক বান্দার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল৷ কিন্তু তারা খেয়ানত করেছিল৷ তাই তাদের স্বামীগণও তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারেনি৷ উভয় নারীকে আদেশ দেয়া হয়যাও অন্যান্যদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর৷ (আত তাহরীমঃ ১০)

মিসরের অত্যাচারী ও আল্লাহদ্রোহী বাদশা ফিরাউনের বিবির কাহিনীও ঈমানদারদের নমুনা হিসেবে পেশ করা হয়েছে৷ঈমানদারদের নসিহত করার জন্যে আল্লাহ তাআলা ফিরাউনের স্ত্রীর বিষয় উল্লেখ করেছেন৷ তিনি দোয়া করেছিলেনপরওয়ারদিগারবেহেশতে তোমার নিকটে আমার জন্যে একখানা ঘর তৈরী করআমাকে ফিরাউন তার সকল অপকর্মের পরিণাম থেকে মুক্তি দাও এবং যালেমদের অনিষ্টকারিতা থেকেও আমাকে নিরাপদ রাখ৷(আত তাহরীমঃ ১১)

যাদের ইলম ও আমল নেই, তাদের নাম আবদুল্লাহই হোক, আর আবদুল হামিদ হোক, দীলিপ কুমারই হোক, আর জগদীশই হোক, আল্লাহ তাআলার কাছে এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই- এরা কেউই আল্লাহ
তাআলার অনুগ্রহ পাবার অধিকার পেতে পারে না৷

মুসলমান কাফেরের মধ্যে ইলম আমল,জ্ঞান কাজ ছাড়া আর কোন প্রভেদ নেই

  • কাফের পবিত্র কুরআন পড়ে না এবং তাতে কি লিখিত আছে তা সে জানে না৷ কিন্তু মুসলমানের অবস্থা যদি এ রকমই হয় তাহলে সে নিজেকে মুসলমান বলবে কোন অধিকারে?
  • কাফের আল্লাহর মর্জি মত চলে না, চলে নিজ ইচ্ছামত; মুসলমানও যদি সেরূপ স্বেচ্ছাচারী ও স্বাধীন নিজের খামখেয়ালীর বশবর্তী হয়, সেরূপই আল্লাহ প্রতি উদাসীন ও বেপরোয়া হয় তবে তার নিজেকে‘মুসলিম’ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালনকারী বলার কি অধিকার আছে?
  • কাফের হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করে না যে কাজে সে লাভ ও আনন্দ দেখতে পায় তা আল্লাহ
    তাআলার কাছে হালাল হোক কি হারাম হোক নিঃসংকোচে সে তাই করে যায়৷ মুসলমানও যদি এ নীতি গ্রহন করে তবে তার ও কাফের ব্যক্তির পার্থক্য রইল কোথায়?

মোটকথা, কাফেরের ন্যায় মুসলমানও যদি ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ হয় এবং কাফের ও মুসলমানের কাজ-কর্ম যদি একই রকম হয় তাহলে দুনিয়ায় কাফেরের পরিবর্তে কেবল মুসলমানরাই সম্মান লাভ করবে কেন?

কাফেরের ন্যায় মুসলমানরাও পরকালে শাস্তি ভোগ করবে যদি না আমরা জানি যে, আল্লাহ কিসের প্রতি রাসূল পাঠিয়েছেন, তিনি মুসলিম হওয়ার উপায় ও নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর নবী দুনিয়ায় এসে কি শিক্ষা দিয়েছেন। এসব জানার জন্য তারা কখনও যত্নবান হয়েছি কি? আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ইজ্জত লাভ করার পথের সন্ধান বলে দিয়েছেন, কিন্তু তারা সেই পথে চলছে কি? যেসব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে, আল্লাহ তাআলা তা এক এক করে বলে দিয়েছেন, কিন্তু মুসলমান কি সেসব কাজ ত্যাগ করেছে?

প্রশ্নগুলোর কি উত্তর হতে পারেকাফের অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য বান্দা যাদেরকে মনে করি, তারা আমাদের ওপর সকল ক্ষেত্রে বিজয়ী কেন? আমাদের ও কাফেরদের মাঝে বর্তমানে শুধু নামেই পার্থক্য রয়ে গিয়েছে৷ কেননা আমরা জানি যে, কুরআন আল্লাহ তাআলার কিতাব, অথচ আমরা কি এর সাথে কাফেরের ন্যায়ই ব্যবহার করছি না ?

আমরা জানি,হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রকৃত শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী, অথচ তাঁর অনুসরণ করা আমরা কাফেরদের মতই ত্যাগ করেছি৷ আমরা জানি যে, কুরআন হল মুসলিম তথা মানব জাতির একমাত্র সংবিধান৷ কিন্তু আমরা মানুষের দ্বারা লিখিত সংবিধান দ্বারা সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা করছি৷ আমরা জানি রাসূল (সাঃ) আনীত শরীয়ত মুতাবেক বিচার ফায়সালা করতে হবে৷ মানুষের তৈরি করা আইনের (তাগুতের আইন) কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়া আল্লাহর সাথে শিরক হওয়া সত্ত্বেও কুফর কোর্টে বিচার ফায়সালার জন্য যাচ্ছি৷ মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার হুকুম দলাদলি না করে সর্বাবস্থায় (অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র থাকুক বা না থাকুক) মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে একজন খলিফার বা আমীরুল মু’মিনীনের নেতৃত্বে একত্রিত থাকা৷ অথচ আমরা জাতীয়তাবাদ, দেশ, ভাষা, বর্ণে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মাঝে দলাদলি করে শত শত ভাগে বিভক্ত রয়েছি৷

  • মিথ্যাবাদীর প্রতি আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন এবং ঘুষখোরদের ও ঘুষদাতা উভয় নিশ্চিতরূপে দোযখে যাবে বলে ঘোষণা করেছেন, সুদখোর ও সুদদাতাকে জঘন্য পাপী বলে অভিহিত করেছেন৷ চোগলখুরী ও গীবতকারীকে আপন ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন, অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতার জন্য কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন৷ কিন্তু এ সমস্ত কথা জানার পরও আমরা কাফেরদের মতই বেপরোয়াভাবে এসব কাজ করে যাচ্ছি৷ মনে হয়, যেন আমাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় বিন্দু মাত্র নেই৷

এ জন্য কাফেরদের তুলনায় আমরা কিছুটা মুসলমান হয়ে থাকলেও আমাদের জীবনে তার কোন প্রতিফলন আমরা পাচ্ছি না৷ বরং কেবল শাস্তিই পাচ্ছি নানাভাবে এবং নানাদিক দিয়ে৷ আমাদের ওপর কাফেরদের জয়লাভ এবং সর্বত্র আমাদের পরাজয় ও অপরাধের শাস্তি৷ আল্লাহর কালাম মানুষের কাছে এ জন্য আসেনি যে, এটা পেয়েও সে দুর্ভাগ্য ও দুঃখ-মুসিবতের মধ্যে পড়ে থাকবে৷ পবিত্র কুরআন তো সৌভাগ্য ও সার্থকতা লাভ করার একমাত্র উৎস; আল্লাহ তাআলা নিজেই বলে দিয়েছেনঃ ত্বহা হে নবীতোমার প্রতি কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যেএটা সত্ত্বেও তুমি হতভাগ্য হয়ে থাকবে৷ (সূরা ত্ব-হাঃ ১-২)

 

 

আল্লাহর কালামের ওপর যুলুম করা

কোন জাতির কাছে আল্লাহ কালাম বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তার লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হওয়া, পরের অধীন থাক, অপমানিত ও পদদলিত হওয়া এবং পরের দ্বারা জন্তু-জানোয়ারের মত বিতাড়িত ও নির্যাতিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার৷ এমন দুঃখপূর্ণ অবস্থা সেই জাতির ঠিক তখনই হতে পারে যখন তারা আল্লাহর কালামের ওপর যুলুম করতে শুরু করে৷ বনী ইসরাঈলের অবস্থা আপনাদের অজানা নয়৷ তাদের প্রতি তাওরাত ও ইনজিল নাযিল করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিলঃ তাওরাতইনজিল এবং অন্যান্য যেসব কিতাব তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছিলতারা যদি তা অনুসরণ করে চলতোতবে তাদের প্রতি আকাশ হতে রিযিক বর্ষিত হতো এবং যমীন হতে খাদ্যদ্রব্য ফুটে বের হতো৷ (মায়েদাঃ ৬৬) কিন্তু তারা আল্লাহ তাআলার এসব কালামের প্রতি যুলুম করেছিল তার ফলে- লাঞ্ছনা এবং পরমুখাপেক্ষিতা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং আল্লাহর গযবে তারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিলএর কারণ এই যেতারা আল্লাহর বাণীকে অমান্য করতে শুরু করেছিলআর পয়গাম্বরগণকে অকারণে হত্যা করেছিল৷ তাছাড়া আরও কারণ এই যেতারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল এবং তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেনতা তারা অতি্ক্রম করে গিয়েছিল৷ (সূরা বাকারাঃ ৬১)
অতএব, যে জাতি আল্লাহর কিতাব ধারণ করে থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ায় লাঞ্ছিত, পদদলিত এবং পরের অধীন ও পরের তুলনায় শক্তিহীন হয়, নিঃসন্দেহে মনে করবেন যে, তারা নিশ্চয়ই আল্লাহর কালামের ওপর যুলুম করছে৷ অতএব,আল্লাহর এ গযব হতে রেহাই পাওয়ার এছাড়া আর কোন উপায় থাকতে পারে না যে তারা আল্লাহর কালামের প্রতি যুলুম করা ত্যাগ করবে এবং ষোলআনা ‘হক’ আদায় করতে চেষ্টা করবে৷

 

 

মুসলমান কাকে বলে এবং মুসলিম শব্দের অর্থ কি,একথা প্রত্যেক মুসলমানকে সর্বপ্রথমেই জেনে নিতে হবে৷ কারণ মানুষ্যত্ব কাকে বলে এবং মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য কি, তা যদি মানুষের জানা না থাকে, তবে সে জানোয়ারের মত কাজ করতে শুরু করবে৷ অনুরূপভাবে যদি কেউ একথা জানতে না পারে যে, মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে কেমন করে পার্থক্য করা যায়, তবে সে তো অমুসলমানের মত কাজ-কর্ম করতে শুরু করবে৷

  • অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এবং মুসলমানের প্রত্যেকটি সন্তানকেই ভাল করে জেনে নিতে হবে যে, সে যে নিজেকে নিজে মুসলমান মনে করে এ মুসলমান হওয়ার অর্থ কি?
  • মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে কি পরিবর্তন ও পার্থক্য হয়ে যায়?
  • তার ওপর কি কর্তব্য ও দায়িত্ব এসে পড়ে?
  • ইসলামের কোন সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ মুসলমান থাকতে ঈঠরে এবং কোন সীমা অতি্ক্রম করলেই বা সে মুসলমান হতে খারিজ হয়ে যায়?
  • এসব কথা না জানলে একজন মানুষ কিভাবে মুসলিম হতে পারে?

 

মুসলিম কাকে বলে

একথাটি ভাল করে বুঝার জন্য সর্ব প্রথম আপনাকে কুফর ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে৷ আল্লাহর হুকুম পালন করতে অস্বীকার করাকেই ‘কুফর’ বা কাফেরী বলা হয়; আর কেবলমাত্র আল্লাহর হুকুম পালন করে চলা এবং আল্লাহর দেয়া পবিত্র কুরআনের বিপরীত যে নিয়ম, যে আইন এবং যে আদেশই হোক না কেন তা অমান্য করাকেই বলা হয় ইসলাম৷ ইসলাম এবং ‘কুফরের’ এ পার্থক্য কুরআন মজীদের নিম্নলিখিত আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেঃ আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে যারা ফায়সালা করে না তারাই কাফের৷(সূরা মায়েদাঃ ৪৪) আদালত ও ফৌজদারীতে যেসব মোকদ্দমা উপস্থিত হয় কেবল শুধুমাত্র সেই সবের বিচার-ফায়সালা কুরআন-হাদীস অনুসারে করার কথা এখানে বলা হয়নি৷ বরং প্রত্যেকটি মানুষ তার জীবনের প্রত্যেকটি কাজের সময় যে ফায়সালা করে সেই ফায়সালার কথাই এখানে বলা হয়েছে৷ প্রত্যেকটি ব্যাপারেই আপনাদের সামনে এ প্রশ্ন ওঠে যে, এ কাজ করা উচিত কি উচিত নয়, অমুক কাজ এ নিয়মে করবো কি আর কোন নিয়মে করবো?

এসময় আপনাদের কাছে সাধারণত দু’ প্রকারের নিয়ম এসে উপস্থিত হয়৷ এক প্রকারের নিয়ম আপনাদেরকে দেখায় আল্লাহর কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ৷ আর এক প্রকারের নিয়ম উপস্থিত করে আপনদের নফস, বাপ-দাদা হতে চলে আসা নিয়ম-প্রথা অথবা মানব রচিত আইন৷ এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া নিয়ম বাদ দিয়ে অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, প্রকৃতপক্ষে সে কুফরির পথই অবলম্বন করে৷ যদি সে তার সমস্ত জীবন সম্বন্ধে এ সিদ্ধান্ত করে নেয় এবং কোন কাজেই যদি আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুসরণ না করে তবে সে পুরোপুরিভাবে কাফের৷ যদি সে কতক কাজে আল্লাহর হেদায়াত মেনে চলে আর কতকগুলো নিজের নফসের হুকুম মত কিংবা বাপ-দাদার প্রথা মত অথবা মানুষের রচিত আইন অনুযায়ী করে তবে যতখানি আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচারণ করবে, সে ঠিক ততখানি কুফরির মধ্যে লিপ্ত হবে৷ এ হিসেবে কেউ অর্ধেক কাফের কেউ চার ভাগের এক ভাগ কাফের৷ মোটকথা,আল্লাহর আইনের যতখানি বিরোধিতা করা হবে ততখানি কুফরী করা হবে, তাতে সন্দেহ নেই৷ কুরআন শরীফে বলা হয়েছেঃ তোমরা কি আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করতে চাওঅথচ আকাশ পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিস ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাঁরই আনুগত্য করে যাচ্ছে৷ আর সকলেই তাঁর কাছে ফিরে যাবে৷ (আলে ইমরানঃ ৮৩)

আল্লাহর ইবাদতের অর্থ কেবল এটাই নয় যে, দিন-রাত পাঁচবার তাঁর সামনে সিজদা করলেই ইবাদতের যাবতীয় দায়িত্ব প্রতিপালিত হয়ে যাবে৷ বরং দিন-রাত সর্বক্ষণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করে চলাকেই প্রকৃতপক্ষে ইবাদত বলে৷ যে কাজ করতে তিনি নিষেধ করেছেন, তা হতে ফিরে থাকা এবং তিনি যা করতে আদেশ করেছেন তা পূর্ণরূপে পালন করাই হচ্ছে ইবাদত৷ কারণ হুকুম দেয়ার ক্ষমতা তো কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার,আল্লাহর হুকুম ছাড়া মানুষ অন্য কারো হুকুম মানতে পারে না৷ মানুষের ইবাদত-বন্দেগী তো কেবল তিনিই পেতে পারেন, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার অনুগ্রহে মানুষ বেঁচে আছে৷ আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই তাঁর হুকুম পালন করে চলছে৷

 

 

 

একটি পাথর অন্য পাথরের হুকুম মত কাজ করে নাএকটি গাছ আর একটি গাছের আনুগত্য করে না,কোন পশু অন্য পশুর হুকুমদারী করে চলে না! কিন্তু মানুষ কি পশু, গাছ ও পাথর অপেক্ষা নিকৃষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা তো শুধু আল্লাহর আনুগত্য করবে, আর মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে অন্য মানুষের নির্দেশ মত চলতে শুরু করবে? একথাই কুরআনের উপরে উলেখিত দুইটি আয়াতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে৷ মুসলমানের সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছেঃ  ব্যক্তির কথা হইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারেযে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজে নেক আমল করে বলে যেনিশ্চয় আমি মুসলমানদের মধ্য হইতে একজন (হামিম সিজদাহঃ ৩৩)

 

 

 

মুসলিমের বৈশিষ্ট্য

‘মুসলিম’ তাকেই বলে যে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে এবং তার আদেশ লংঘন করে না৷ আমাদের ৭০% অথবা ৯৫% মুসলিম হওয়ার কোন সুযোগ নেই৷ আমাকে ১০০% মুসলিম হতে হবে অর্থাৎ ‘আল ইসলাম’ কে ১০০% মেনে নিয়ে নিজেকে পেশ করতে হবে৷ তবে হ্যাঁ হুকুম পালনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আমলের ক্ষেত্রে কমবেশী ভুলভ্রান্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ শয়তান ও তার সঙ্গী সাথীরা আমাদের পিছনে লেগে আছে সর্বক্ষণ৷ এরশাদ হচ্ছেঃ হে বনী আদম!শয়তান যেন তোমাদিগকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করেযেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হইতে বহিষ্কৃত করিয়াছিলতাহাদিগকে তাহাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করেছিল৷ সে নিজে এবং তাহার দল তোমাদিগকে এমনভাবে দেখে যেতোমরা তাহাদিগকে দেখিতে পাও না৷ যাহারা ঈমান আনে না,শয়তানকে আমি তাহাদের অভিভাবক করিয়াছি৷ (সূরা আরাফ-২৭) সে (শয়তান) বলল আপনি আমাকে যেমন গোমরাহীতে নিমজ্জিত করিয়া দিয়াছেনআমিও এখন আপনার সত্য সরল পথে এই লোকদের জন্য ওত্‍ পাতিয়া থাকবো এর পর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকেপেছন দিক থেকেডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে৷ আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না৷ (আল-আরাফঃ ১৬-১৭)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,সেই মহান আল্লাহর শপথ, যিনি শয়তানের ষড়যন্ত্রকে কুমন্ত্রনার পর্যায়েয় সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন৷ (আবু দাউদ) শয়তানের ফাঁদে পরে মুসলিমের দ্বারা কোন ভুল হয়ে গেলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবার মাধ্যমে ক্ষমারও ব্যবস্থা রেখেছেন৷ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন৷ যদি তোমরা সৎ হওতবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল (বনী ইসরাঈলঃ ২৫)তিনিই তাঁহার বান্দাহগণের নিকট হইতে তওবা কবুল করেন এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা মার্জনা করেন৷ অথচ তোমাদের সব কাজকর্ম সম্পর্কে তিনি অবহিত৷ (আশ- শুরাঃ ২৫)

 

 

 

শুনলাম এবং মানলাম

একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হতে হবে ‘ছামিনা-ওয়া আত্বানা” শুনলাম এবং মানলাম অর্থাৎ কোরআন ও সুন্নাহর (সহীহ হাদীস) সামনে পরিপূর্ণ আত্মসমপর্ণ করতে হবে৷ এরশাদ হচ্ছেঃ রাসূল বিশ্বাস রাখেন সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও৷ সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতিতাঁর ফেরেশতাদের প্রতিতাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি৷ তারা বলেআমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি (ছামিনাওয়া আত্বানা) আমরা তোমার ক্ষমা চাইহে আমাদের পালনকর্তা৷ তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে৷ (বাকারাহঃ ২৮৫) যখন মুমিনদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য তাদেরকে আল্লাহর তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয়তখন তারা একথাই বলেঃ আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম মূলতঃ তারাই সফল কাম  (আন নূরঃ ৫১) যাহারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে এবং উহার মধ্যে যাহা উত্তম তাহা গ্রহণ করে৷ ইহারাই সেই লোক যাহাদিগকে আল্লাহ হিদায়াত দিয়েছেন৷ এবং উহারাই বোধ শক্তি সম্পন্ন৷ (আয যুমারঃ ১৮)

 

 

 

সাহাবা (রাঃ) (রাসূল (সাঃ)-এর সাথীগণ) কিভাবে মুসলিম হয়েছিলেন

আপনারা হয়তো শুনেছেন যে, আরব দেশে মদ পান করার প্রথা খুব বেশী প্রচলিত ছিল৷ নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই মদের জন্য একেবারে পাগল প্রায় ছিল৷ আসলে মদের প্রতি তাদের অন্তরে গভীর আকর্ষণ বর্তমান ছিল৷ এর প্রশংসা করে কত যে গযল-গীত তারা রচনা করেছিল, তার হিসেব নেই৷ মদের জন্য প্রাণ দিতেও তারা প্রস্তুত হতো৷ একথাও আপনারা জানেন যে, একবার মদের নেশা লাগলে তা দূর হওয়া বড়ই মুশকিল৷ মদখোর ব্যক্তিরা মদের জন্য প্রাণ দিতে পারে, কিন্তু মদ ত্যাগ করতে পারে না৷ কোন মদখোর যদি মদ না পায় তবে তার অবস্থা কঠিন রোগীর অপেক্ষাও খারাপ হয়ে যায়৷ কিন্তু যখন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আপনারা কখনও শুনেছেন? মদের জন্য পাগল জান দিতে প্রস্তুত সেই আরবরাই এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের হাতেই মদের বড় বড় পাত্র ভেংগে ফেলেছিল৷ মদীনার অলিতে-গলিতে বৃষ্টির পানির মত মদ বয়ে গিয়েছিল৷

 

হযরত আবু বুরাইদা (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, একদা আমরা একটা মদের আসরে বসাছিলামহঠাত্‍ আমি উঠে রওয়ানা হলাম এবং রসূলুল্লাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম৷ আমি তাঁকে সালাম করলাম৷ ইতিমধ্যে মদ হারাম হওয়া সম্পর্কিত নির্দেশ এসে গেছে৷ আমি আমার সংগীদের কাছে ফিরে এলাম এবং তাদের সামনে মদ হারাম হওয়া সম্পর্কিত আয়াত (মায়েদাঃ ৯০,৯১ফাহাল আনতুম মুনতাহুন পর্যন্ত পাঠ করে শুনালাম৷ তখন কতিপয় লোকের হাতে পানপাত্র ছিল,যা থেকে তারা কিছু পান করেছে এবং কিছু বাকী আছে৷ নির্দেশ শুনার সাথে সাথে সবাই পানপাত্র উপুড় করে দিলেন এবং বারবার বলতে থাকলেনইনতাহাইনা রব্বানা ইনতাহাইনা রবানড়বা_হে আমাদের প্রতিপালকআমরা বিরত হলাম (তাসীরে ইবনে কাসীর) লোকদের ভয় দেখানোর জন্য কোন সংস্থা কায়েম করারও প্রয়োজন হল নাআর সরকারকেও মৃতু্যদণ্ডকয়েদ অথবা মাল ক্রোক করতে হল না৷ বরং লোকেরা কুরআনের নির্দেশ শুনার সাথে সাথে স্বেচ্ছায় তা মেনে নিল৷ (মিনহাজুল কুরআন ফিত-তারবিয়াহ,মুহাম্মাদ শাদীদ)৷

সাফিয়্যা বিনতে শাইবা বলেন, একদা আমরা আয়েশা (রা)-র কাছে উপস্থিত ছিলাম৷ এমতাবস্থায় কুরাইশ মহিলাগণ এবং তাদের গুণকীর্তন উলেখিত হল৷ হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, কুরাইশ মহিলাদের সম্মান মর্যাদা রয়েছে ঠিকইকিন্তু আল্লাহর শপথআনসার মহিলাদের তুলনায় অধিক মর্যাদার অধিকারিণী এবং কুরআন মজীদের সত্যতা স্বীকার তার উপর ঈমানদার নারী আমি আর দেখিনি৷ যখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হলঃ এবং নিজেদের বক্ষদেশের উপর ওড়নার আঁচল ফেলে রাখে- (নুরঃ ৩১) তখন তাদের পুরুষ লোকেরা বাড়ি ফিরে গিয়ে নারীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ এই আয়াত নিজেদের স্ত্রী, কন্যা, বোন এবং অপরাপর আত্মীয়া মহিলাদের শুনালেন৷ এই নির্দেশ শুনার সাথে সাথে প্রতিটি মহিলা উঠে গিয়ে চাদর দিয়ে নিজেদের মাথা ঢেকে নিল৷ (আবু দাউদ)

 

শেখ মুহাম্মদ আলী আল রিফাই সাহাবাদের (রাঃ) সংক্রান্ত আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন সাহাবারা (রাঃ) আল্লাহর
হুকুমের অনুসরণের জন্য নিজেদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরবানী দিয়েছেন৷ কুরবানী দিতে দিতে উনারা ইসলাম যে উচ্চ আসনে রয়েছে সেই আসনে অসীন হয়েছিলেন৷

 

 

আফসোস, বর্তমান দিনের মুসলমান দাবীদাররা নিজেদের জীবনের কুরবাণী করার কথা তো অনেক দূরে, ইসলামকে কুরবানী দিতে দিতে নিজেদের মানে নামিয়ে আনতে তৎপর৷ আর এ কাজে তাদের সহযোগী হচ্ছে বর্তমান কালের আলেম নামধারী একদল ‘মাগদুবের’দল৷ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাকে হুকুম করেছেন আমি নিজে যেন সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়ার ঘোষণা দেইঃ আপনি বলে দিনঃ আমাকে তো এই আদেশই করা হয়েছে যেসকলের আগে আমি তাহার সম্মুখে মাথা নত করিয়া দিব৷ আমাকে তাকীদ করা হয়েছে যে, (কেহ যদি ইলাহর সাথে শরীক করে তবে সে করুক কিন্তুতুমি কিছুতেই মুশরিকদের মধ্যে শামিল হবে না৷ (সূরা আল-আনামঃ ১৪)

বইঃ  আল্লাহর দিকে আহবান
লেখকঃ সংকলিত