একজন ব্যক্তি কখন ইজতিহাদ করার ও ফাতওয়া দেয়ার অধিকার অর্জন করে

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিষয়ে ইজতিহাদ করার কিছু শর্ত রয়েছে। যে কোন ব্যক্তির যে কোন বিষয়ে ফাততয়া দেয়া ও কথা বলার অধিকার নেই। কোন বিষয়ে ফাতওয়া দিতে ও কথা বলতে হলে যথাযথ ইলম ও যোগ্যতা থাকতে হবে। দলিল জানার ক্ষমতা থাকতে হবে। দলিলের মধ্যে কোনটি নস (প্রত্যক্ষ), কোনটি যাহের (প্রকাশ্য), কোনটি সহিহ (বিশুদ্ধ), কোনটি জয়িফ (দুর্বল), কোনটি নাসেখ (রহিতকারী), কোনটি মানসুখ (রহিত), কোনটি মানতুক (শব্দ-ভিত্তিক), কোনটি মাফহুম (ভাব-ভিত্তিক), কোনটি খাস (বিশেষ), কোনটি আম (সাধারণ), কোনটি মুতলাক (শর্তহীন), কোনটি মুকাইয়্যাদ (শর্তযুক্ত), কোনটি মুজমাল (অ-বিস্তারিত), কোনটি মুবাইয়্যান (বিস্তারিত) তা জানতে হবে। সাথে সাথে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া ফিকাহর প্রকারভেদ, গবেষণাযোগ্য বিষয়গুলো, পূর্ববর্তী আলেম ও ফকীহদের মতামত জানা থাকতে হবে এবং দলিল-প্রমাণ মুখস্থ থাকতে হবে অথবা বুঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। কোন সন্দেহ নেই যথাযথ যোগ্যতা ছাড়া ফতোয়া দিতে নেমে পড়া বড় ধরনের গুনাহ এবং ইলম ছাড়া মতপ্রকাশের নামান্তর। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
.
মহান আল্লাহ বলেন,“আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে- এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।”(সূরা আন্‌-নাহল, আয়াত: ১১৬) হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তিকে যথাযথ দলিল ছাড়া কোন ফতোয়া দেয়া হয়েছে তার পাপ ফাতওয়া দানকারীর (মুফতি) উপর বর্তাবে।”(মুসনাদে আহমাদ,২/৩২১ সনদ সহীহ)
.
ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জন্ম ৯৩ হি./৭১১ খ্রি. এবং মৃত্যু ১৭৯ হি./৭৯৫ খ্রি.] বলেন: ”যে ব্যক্তি কোনো মাস’আলার উত্তর দিতে চায়, সে যেন নিজেকে প্রথমে জান্নাত ও জাহান্নামের সামনে পেশ করে এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পথ বের করে নেয়, অতঃপর উত্তর প্রদান করে” এভাবে আরেক দিন ইমাম মালিককে একটি মাস’আলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, উত্তরে তিনি জানান ‘আমি জানি না’। অতঃপর তাঁকে বলা হল, এটা তো সহজ মাস’আলা। এ কথা শুনে তিনি রেগে গেলেন এবং বললেনঃ ”জ্ঞানের মধ্যে সহজ বলে কিছু নেই” (মুখতাসারু ইবনুল হাজিব খণ্ড:৩ পৃষ্ঠা:২৯০)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,”মুফতীকে ফাতওয়া তলবকারীর ভাষা, শব্দচয়ন ইত্যাদি সম্পর্কে পারদর্শী হতে হবে। যাতে তিনি উল্টো বুঝে ফাতওয়া দিয়ে না বসেন” (আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব,খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৬৯।)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন: ”তড়িঘড়ি করে ফাতওয়া প্রদান করা এ যুগের একটি বড় মুসীবত”(আলবানী সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নুর ১/৩০৬)
.
অতএব,তালিবে ইলমের কর্তব্য ফাতওয়া দানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা। কোন বিষয়ে কথা বলার আগে এর উৎস, দলিল এবং তার পূর্বে এ অভিমত আর কে ব্যক্ত করেছেন ইত্যাদি জেনে তারপর কথা বলা। যদি তার সে যোগ্যতা না থাকে তাহলে তার উচিত এ দায়িত্ব উপযুক্ত ব্যক্তির জন্য ছেড়ে দেয়া। সে যে বিষয়গুলো জানে সেগুলোর মধ্যে তাকে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত এবং সে যা অর্জন করেছে সেটার উপর তার আমল করা উচিত এবং ইলম অর্জন চালিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে সে ইজতিহাদ করার যোগ্যতায় পৌঁছতে পারে। আল্লাহই সঠিক পথে পরিচালনাকারী।(বিস্তারিত দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২০৭১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: