‘মুফতী’ কাকে বলা হয়?
যেই আলেমের ‘ইজতেহাদ’ করে অর্থাৎ, ক্বুরান ও হাদীস গবেষণা করে ‘ফতোয়া’ দেওয়ার মতো যোগ্যতা রয়েছে, তাকে মুফতী বলা হয়। ‘ফতোয়া’ হচ্ছে দ্বীনের কোন বিষয়ে মতামত দেওয়া। যেমন, কোন আলেমকে জিজ্ঞেস করা হলো, “অমুক কাজটা কি হালাল নাকি হারাম?” এর উত্তরে তিনি বললেন, “ক্বুরান ও হাদীসের উপরে আমার গবেষণা অনুযায়ী এই কাজটি হারাম” অথবা, “শরিয়তের দৃষ্টিতে এই কাজটি হারাম” – এমন বলা, এটা হচ্ছে সেই আলেমের ফতোয়া। কোন আলেম কোন কিছুকে হালাল বা হারাম বানাতে পারেনা, হালাল বা হারাম বলার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার। মুফতিরা শুধুমাত্র ক্বুরান ও হাদীস গবেষণা করে বের করেন, আল্লাহ এটাকে হালাল করেছেন নাকি, হারাম করেছেন।
একজন আলেমের কোন ফতোয়া সঠিক হতে পারে, আবার ভুলও হতে পারে। কারণ, আলেমরাও মানুষ, তাই কোন আলেমের ফতোয়া ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ফতোয়া ভুল হোক আর সঠিক হোক, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে দ্বীনের ব্যপারে কোন প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্যে তিনি যে কষ্ট করে গবেষণা করেছেন, এর বিনিময়ে তার জন্যে সওয়াব রয়েছে। কোন আলেম যদি গবেষণা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন এবং সঠিক ফতোয়া দেন, তাহলে তার জন্যে দুইটি পুরষ্কার রয়েছে। একটি পুরষ্কার হচ্ছে গবেষণা করার জন্যে, আরেকটি হচ্ছে সঠিক ফতোয়া দেওয়ার জন্য। আর কোন যোগ্য আলেম যদি নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করেন, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তে পোঁছাতে সক্ষম না হন, তবুও তার চেষ্টার জন্যে তিনি একটি পুরষ্কার পাবেন। কোন আলেমের ফতোয়া ভুল হোক আর সঠিক হোক, আমাদের কাছে তাঁরা সব সময়েই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।
আলেমদের মাঝে সবাই মুফতী নন। অর্থাৎ, অনেকে আলেম হতে পারেন, ক্বুরান ও হাদীস সম্পর্কে একজন ব্যক্তি অনেক জ্ঞানী হতে পারেন, কিন্তু তার মানে এই না যে, তিনি একজন মুফতি। আলেমদের মাঝে সবচাইতে জ্ঞানী, পরহেজগার, সুন্নতের অনুসারী, প্রখর স্মৃতিশক্তি ও তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন জ্ঞানী, যারা ‘ইজতেহাদ’ করার মতো যোগ্যতায় পৌঁছাতে সক্ষম হন, তাঁরা হচ্ছেন মুফতি। একজন আলেমের ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের জন্যে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। আমাদের দেশের কওমী মাদ্রাসার অনেকে মনে করেন, “কোন ব্যক্তি এতো হাজার ফতোয়া মুখস্থ বলতে পারলে সে একজন মুফতি”, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটা ধারণা। অন্য আলেমদের ফতোয়া মুখস্থ করে যে ব্যক্তি তার অন্ধ অনুসরণ করে, সে কোনদিন মুফতি হতে পারেনা, বরং তিনি একজন ‘মুকাল্লিদ’ বা অন্ধ অনুসারী। কোন আলেম নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে ফতোয়া দিয়ে, এবং অন্য আলেমদের কাছেও মুফতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত হলে, তাঁকে আমরা একজন মুফতি বলতে পারি।
মুসলমানদের প্রাণের ভূমি, ইসলামের কেন্দ্র, মক্কা মদীনার দেশ সৌদি আরবের বর্তমান ‘প্রধান মুফতির’ নাম হচ্ছেঃ শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ। বর্তমান সারা বিশ্বের মাঝে জীবিত আলেমদের মাঝে তিনি শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবের প্রাক্তন প্রধান মুফতি আল্লামাহ আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যুবরণ করার পর শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ সম্মানিত এই আসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, আপনারা প্রতিবছর হজ্জের সময় ৯-ই জিলহজ্জ ‘আরাফাহর ময়দানে’ ইহরামের সাদা পোশাক পড়া অবস্থায় যাকে খুতবা দিতে দেখেন, তিনিই হচ্ছেন শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ। সুবহা’নাল্লাহ, এটা আল্লাহর একটা নিয়ামত যে, তিনি একাধারে বিগত ৩৪ বছর ধরে আরাফার ময়দানে খুতবা দিয়ে আসছেন। শায়খ এর জন্ম হয়েছিলো ১৯৪৩ সালে, অর্থাৎ বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৩ বছর। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। আল্লাহ তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন, কিন্তু এর পরিবর্তে তাঁকে সবচাইতে মূল্যবান জিনিস দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। ফা লিল্লাহিল হা’মদ।
সৌদি আরবের আরেকজন বড় আলেম, শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ মুফতি হিসেবে আরব, অনারব সর্বত্র অত্যন্ত পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। বিগত শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় দুইজন আলেম ও মুফতি, শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ এবং শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, “আপনার পরে ফতোয়া নেওয়ার জন্যে আমরা কার কাছে যাবো?” তাঁদের দুইজনেই প্রথমেই যারা নাম বলেছিলেন এবং যার প্রশংসা করেছিলেন তিনি হচ্ছেনঃ শায়খ সালেহ আল-ফাওজান। শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ ১৯৩৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, বর্তমান (২০১৬ সালে) তাঁর বয়স হচ্ছে ৮৩ বছর। আকিদাহ, ফিকহ এবং দ্বীনের অনেক বিষয়ের উপরে তাঁর অসংখ্য কিতাব রয়েছে, যার অনেকগুলো ইতিমধ্যে বাংলা, ইংরেজীসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতে অনুদিত হয়েছে।
সংগ্রহঃ- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও।।
★★★কৃতজ্ঞতাঃ ভাই খলিল উল্লাহ★★★