কোন আমলই কন্টিনিউ করতে পারছি না একদিন-দুদিন তারপর ইন্টারেস্ট কমে যায়

কোন আমলই কন্টিনিউ করতে পারছি না, একদিন-দুদিন তারপর ইন্টারেস্ট কমে যায়। বুঝতেছি না কেন এমন হচ্ছে?

ভাই কয়েকদিন পর পর শয়তান ধরে। ভালো থাকতে পারি না। কী করা যায়? নামাজ পড়ি, আবার পাপও করি। মনটা বিষিয়ে আছে। ভাই কী করা যেতে পারে?

এসকল ভাইদের জন্য:

১-২ দিনেই দুনিয়া উল্টানোর দরকার নেই। ধীরস্থির হোন। আপাতত ৩টা সহজ কাজ করুন। বেশি প্রেশার নিবেন না। ইনশা আল্লাহ ফ্রাষ্টেইশান কমে যাবে। মাত্র এই ৩টা কাজ কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত করলে এটা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে। আর ইসলামের বাকি সকল আহকাম মেনে চলাও তখন সহজ হয়ে যাবে। ইনশা আল্লাহ।

১- বন্ধু পরিবর্তন করুন। দ্বীনদার আলিম, ইমাম, মুয়াজ্জিন বা এলাকার সুপরিচিত দ্বীনি বড় ভাইয়ের সাথে মিশুন। একসাথে সময় কাটান। গল্প করুন। বিভিন্ন মাসায়ালা জিজ্ঞেস করুন। নবী-রাসূলদের আঃ বিভিন্ন ঘটনা শুনুন। ভালো সময় কাটবে। আর বন্ধু সার্কেলে যারা দ্বীনহীন, গান-বাদ্যতে মশগুল, অশ্লীল আড্ডাবাজ এদের থেকে দূরে থাকুন। একদিনে হবে না। ধীরে ধীরে দূরে চলে যান। কম সাক্ষাৎ করুন। ওরাও দূরে সরে যাবে। আখিরাতে হাশরে তাদের সাথেই দাঁড়াবেন যাদের সাথে দুনিয়াতে সময় কাটাতেন। এখন তারা কি সুদখোর, ঘুষখোর, মদখোর, জুয়াখোর, অশ্লীল ব্যক্তি, দাজ্জাল, ফিরাউন, নমরুদরা হবে নাকি নবী-রাসুল আঃ, সাহাবা রাঃ, সিদ্দীক, সালিহীন, ইমাম, মুয়াজ্জিনরা হবেন তা এখনি ভেবে দেখুন।

২- নিয়মিত মসজিদমুখী হোন। চেষ্টা করুন প্রত্যেক ওয়াক্তে মসজিদে আসার। কখনো মিস হয়ে গেলে হতাশ হবেন না। পরের ওয়াক্তে আসুন। এভাবে অন্তত ১ মাস। মনের উপর জোর দিয়ে হলেও আসুন। আল্লাহর ঘরের মেহমান হতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসুন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। ভাবুন আপনার মালিক আপনাকে ভালোবাসেন। আপনাকে ডাকছেন- ‘এই আমার বান্দা এখনো কি সময় হয় নি?’ বলে। তিনি বলছেন- শরীর ও মন থেকে পবিত্র হতে। নিজের গুনাহ থেকে মুক্ত হতে। অন্তরকে শীতল করতে। কবরের আগুন থেকে বাঁচতে। অতএব আসুন। মসজিদের দুয়ার আপনার জন্য উন্মুক্ত। এতে প্রবেশ করুন। সিজদাহ দিন। অনুভব করুন আপনার সৃষ্টিকর্তাকে। তিনি আপনার সাথেই রয়েছেন। অতএব কোন ভয় নেই। তিনি ক্ষমাশীল। আর শয়তানই আপনাকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। অতএব সিজদাহ দিন। শয়তান এতে কষ্ট পায়। শয়তানকে কষ্ট দিন। শয়তানের উপর প্রতিশোধ নিন। মসজিদের ছায়াতলে আসুন। আপনার রবের ক্ষমার দিকে দৌঁড়ান।

৩- কুরআনের সাথে নিয়মিত সময় কাটান। প্রতিদিন মাত্র কয়েকটা আয়াত তিলাওয়াত করুন। যতক্ষণ মনে চায়। সুরা নাবা থেকে সূরা নাস। যাকে আমরা আম পারা বা শেষ পারা বলি। ছোট ছোট সুরা। অর্থবহ, ভয়াবহ। যেগুলো সহজে হৃদয়ে দাগ কাটে। অন্তর পরিবর্তন করে দেয়। আরবী তাজওয়ীদ বা কুরআন পড়ার নিয়মাবলী না জানলে শিখে নিন। মাত্র ১-২ মাস লাগবে। যদি সপ্তাহে নূন্যতম ২-৩ দিন করে সময় দেন এক থেকে দেড় ঘন্টা। ইনশা আল্লাহ। আপনি যখন কুরআন তিলাওয়াতে ডুব দেবেন অস্বাভাবিক একটা আনন্দ পাবেন। বুঝে পড়ুন বা না বুঝে। কিন্তু পড়ুন। পড়তে থাকলেই জানার একটা অস্থিরতা কাজ করবে। আর অস্থিরতা দূর হবে যখন এর অর্থ নিয়ে পড়া শুরু করবেন। অনেক কিছুই প্রথমে বুঝবেন না। নিকটস্থ আলিম বা উস্তাদ থেকে ব্যাপারটা জেনে নিন। কিন্তু থামবেন না। চালিয়ে যান। এভাবে একটা সময় টের পাবেন কিভাবে আল্লাহ জ্ঞ্যনের এক একটা সমুদ্র আপনার সামনে তুলে ধরছেন। কিভাবে আপনার সাথে তিনি কুরআনের মাধ্যমে কথা বলছেন। কিভাবে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি নিজেকে আবিষ্কৃত করছেন। স্তব্ধ হয়ে যাবার মত ব্যাপার। ১৪০০ বছর আগের কুরআনে নিজের কথা জানতে হলেও পড়ুন। অলস হবেন না। অন্তত পৃথিবীতে কেন আসলেন সেই উত্তর পাবার আগ পর্যন্ত কুরআনের পেছনে লেগে থাকুন। ছাড়বেন না।

রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

নিশ্চয়ই যখন কোন বান্দা পাপ করে, অতঃপর বলে,
“হে আমার প্রতিপালক! আমি পাপ করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন।”
তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা কি জানে যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি ক্ষমা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন?” তিনি (আরো) বলেন, “আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।”

তারপর যতদিন আল্লাহ চান ততদিন সে পাপ করা থেকে নিবৃত থাকে। তারপর সে আবারও পাপ করে। আর বলে,
“হে আমার রব! আমি আরও একটি পাপ করে ফেলেছি, আমায় আপনি ক্ষমা করুন।”
তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা কি জানে যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন? সুতরাং নিশ্চয়ই আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। অতঃপর সে তার ইচ্ছেমত আমল করতে থাকুক।”

(আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত- মুসনাদে আহমাদ, সহীহাইন)
.

তাই প্রতিদিন হালকা যিকর করুন। ইস্তিগফার করুন। তাওবাহ হল বৃষ্টির মত। তাই তাওবাহ করে নিজের পাপগুলো ধুয়ে নিন। মৃত্যুর আগেই। অন্তরগুলো শীতল হোক। আমীন।

লিখেছেন প্রিয় এক ভাই। আল্লাহ ভাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।