হে দ্বীনের দাঈ নরম কথা ভদ্র আচরণ ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করুন

হে, দ্বীনের দাঈ,নরম কথা, ভদ্র আচরণ ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করুন। ইসলামকে কঠিন করে উপস্থাপন করবেন না। ইসলাম যেখানে যতটুকু ছাড় দিয়েছে,সেটুকু তুলে ধরে মানুষকে কোমলতা, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের সাথে আল্লাহর দিকে ডাকুন।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
মহান আল্লাহর নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এই প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াত। সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম।মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হ’ল সফলকাম।’[আলে ইমরান ৩/১০৪]
.
নম্রতা-ভদ্রতা ও কোমলতা আদর্শ মানুষের গুণ। দ্বীনের দাঈর মধ্যে অবশ্যই এ গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। এ গুণের অধিকারী দাঈগণ দাওয়াতী কাজে সহজে মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কোমলতা অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেরাঊনের সাথে কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও হারুণ (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে বলেন,তোমরা উভয়ে ফেরাউনের নিকটে যাও, নিশ্চয়ই সে সীমালংঘন করেছে। অতঃপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বল। সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীতি অবলম্বন করবে।’[সূরা ত্ব-হা ৩৯/৪৩-৪৪]

দাওয়াত দানের পদ্ধতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়।’[সূরা নাহল ১৬/১২৫] এ আয়াতে দাওয়াতের তিনটি পদ্ধতি উল্লিখিত হয়েছে। যথা-

(১) হিকমত তথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক দাওয়াত দেওয়া। (২) উত্তম উপদেশ দেওয়া। (৩) উত্তম পন্থায় বিতর্ক করা দাওয়াতের জন্য উক্ত গুণগুলো থাকা একান্ত জরুরী। তাই দাঈ হবেন বিবেক সম্পন্ন ও বুদ্ধিদীপ্ত। আবেগী ও ঝোঁকপ্রবণ হবেন না। বিবেকশূন্য আবেগী ব্যক্তি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না,কঠোর হবেন না মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।
.
একবার এক ব্যক্তি এসে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি নামাজে (জামাতে) শামিল হতে পারি না। কারণ অমুক ব্যক্তি আমাদের নিয়ে খুব দীর্ঘ নামাজ আদায় করেন।’
.
হাদিসটির বর্ণনাকারী আবু মাস‘উদ (রা.) বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোনো ওয়াজ-নসিহতে সেদিনের তুলনায় অধিক রাগান্বিত হতে দেখিনি। নবিজি তখন বলেন, ‘‘হে লোকসকল! তোমরা তো মানুষের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টিকারী। যে ব্যক্তি লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করবে (ইমামতি করবে), সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে রোগী, দুর্বল ও কর্মব্যস্ত লোকও থাকে।’’ [সহীহ বুখারি, আস-সহিহ: ৯০]
.
আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে ওয়াজ-নসিহত করতেন, যাতে আমরা বিরক্তবোধ না করি।’ [সহীহ বুখারি, আস-সহিহ: ৬৮]
.
আরবের প্রখ্যাত আলিম শায়খ আবদুল আযিয আত তরিফি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, শুধু অকাট্য প্রমাণ দিয়েই মানুষের মন জয় করা যায় না। এর সাথে কোমল আচরণও প্রয়োজন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নবুওয়তের প্রমাণ হিসেবে ছিলো আল কুরআন আর তার সাথে ছিলেন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)। তারপরও তাঁকে বলা হয়েছে—
.
وَلَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ
.
‘‘আপনি যদি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তবে অবশ্যই তারা আপনার নিকট থেকে সরে যেতো।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯]
.
হাদীসে এসেছে,‘ইয়ায ইবনু হিমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতী : (এক) ইনছাফকারী ও দানশীল শাসক, যাকে সৎ কাজের যোগ্যতা দেয়া হয়েছে, (দুই) এমন ব্যক্তি যিনি দয়ালু এবং নিকটস্থ ও অন্যান্য মুসলিমদের প্রতি কোমল হৃদয় (তিন) যিনি সৎচরিত্রের অধিকারী এবং পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকেন।
.
এবং পাঁচ প্রকার মানুষ জাহান্নামী : (এক) দুর্বল বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি, যে নিজের স্থূল বুদ্ধির কারণে নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না। এই সমস্ত লোক তাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা তোমাদের অধীনস্ত চাকর-বাকর। তারা স্ত্রী-পরিবার চায় না এবং সম্পদেরও ভ্রুক্ষেপ করে না। (দুই) এমন আত্মসাৎকারী, যার লোভ থেকে গোপনীয় জিনিসও রক্ষা পায় না। অতি তুচ্ছ জিনিসও আত্মসাৎ করে। (তিন) এমন ব্যক্তি যে তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে প্রতারণায় ফেলার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত থাকে। (চার) কৃপণতা ও মিথ্যাবাদিতা। (পাঁচ) দুশ্চরিত্র ও অশ্লীলভাষী’। [সহীহ মুসলিম, পৃ. ৮৫৮, হা/২৮৬৫; মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৮৬, হা/৪৯৬০]
.
শায়খ আবদুল আযিয ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বর্তমান সময়টি কোমল আচরণ, ধৈর্য আর প্রজ্ঞা প্রদর্শনের সময়। এটি কঠোরতার সময় নয়। কারণ অধিকাংশ মানুষ মূর্খতা, উদাসীনতা আর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়ার মধ্যে নিপতিত। তাই ধৈর্য আর কোমলতার খুবই প্রয়োজন।’ [মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ১০/৮৯]
.
শায়খ আলবানি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বারবার বলতেন, ‘হক (সত্য) এমনিতেই খুব কঠিন জিনিস। সুতরাং কঠিন পদ্ধতি অবলম্বন করে তোমরা এটিকে আরো বেশি কঠিন করে তুলো না।’
.
সর্বশেষ, আমরা নবিজির এই কয়েকটি কথা সবসময় মাথায় রাখবো ইনশাআল্লাহ।নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিও না।’’[সহীহ বুখারি, আস-সহিহ:৬৯] আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।