হায়েজ নেফাস অবস্থায় নারীরা তালীমী বৈঠক সহ বিভিন্ন কারণে মসজিদে অবস্থান করতে পারবে কি

ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি। অতঃপর হায়েজ অবস্থায় নারীরা মসজিদে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে কিনা এই মাসালায় আহলুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, চার মাযহাবের (হানাফি, মালিকি, শাফিঈ ও হাম্বলি) ফকীহদের অধিকাংশের মতে, হায়েজ (ঋতুমতী) মহিলার জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়।কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে অথবা মসজিদের উপর দিয়ে পারাপার করতে পারবে। মসজিদ হলো আসমানের নিচে জমিনের ওপর অবস্থিত এক পবিত্র স্থান, যেখানে আল্লাহর ইবাদত সম্পাদিত হয়। এজন্য সেখানে শুধুমাত্র পবিত্র ও পরিশুদ্ধ ব্যক্তিরাই উপস্থিত থাকতে পারবেন। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন,“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন নেশার অবস্থা থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হও, ততক্ষণ পর্যন্ত সালাতের কাছে যেও না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি যা বলছো তা বুঝতে পারছ না; এবং অপবিত্র অবস্থায়ও নামাজের কাছে যেও না, যদি না তুমি পথচারী হও এবং গোসল করো।” (সূরা নিসা; আয়াত: ৪৩) উক্ত আয়াতের তাফসীরে হাফিয ইবনে কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অনেক ইমাম এ আয়াত দ্বারা এ কথার উপর প্রমাণ পেশ করেন যে, গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম। তবে তার জন্য মসজিদ ত্যাগ করার জন্য অতিক্রম করা বৈধ। অনুরূপভাবে ঋতুবর্তী ও নিফাসগ্রস্ত মহিলার বিধানও একই।(তাফসীরে ইবনে কাসীর, নিসা ৪৩নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
.
এ ব্যাপারে চার মাজহাবসহ জমহুর আলেমগন দলীল হিসেবে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উম্মে ‘আতিইয়া (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস পেশ করেন উম্মু আতিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, যুবতী, পর্দানশীন ও ঋতুবতী মহিলারা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হবে এবং ভাল স্থানে ও মুমিনদের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করবে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলারা ঈদগাহ হতে দূরে থাকবে। হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম ঋতুবতীও কি বেরুবে? তিনি বললেন, সে কি ‘আরাফাতে ও অমুক অমুক স্থানে উপস্থিত হবে না?’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৪, ৯৭১, ৯৭৪; সহীহ মুসলিম হা/৮৯০; রিসালাতুদ-দিমা‘ত তাবি‘ইয়াহ লিন্নিসা, পৃ. ৫২-৫৫)। এই হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়েজগস্থ মহিলাকে ঈদের মুসাল্লায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রেখেছেন এবং সেখানে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কারণ ঈদগাহ মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হায়েজ অবস্থায় নারীর জন্য মসজিদে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। তাঁরা এ মতকে সমর্থন করার জন্য আরও কিছু হাদীস পেশ করার চেষ্টা করেছেন; তবে সেগুলো দুর্বল হওয়ায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এর মধ্যে একটি হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই বাণী:“আমি হায়েজ বা জুনুব (অপবিত্র) ব্যক্তির জন্য মসজিদ হালাল করিনি।”কিন্তু শাইখ আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসকে দুর্বল বলেছেন (যঈফ আবু দাউদ হা/২৩২; মাসালাটি সম্পর্কে ফকীহদের মতামত জানতে দেখুন:সারাখসির রচিত “আল-মাবসুত” গ্রন্থে খণ্ড;৩ পৃষ্ঠা;১৫৩;হাশিয়াতুদ দাসূকী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭৩; নববী আল-মাজমূ‘ খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৮৮; ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৯৫)
.
হাম্বলী মাহাজাবের বিখ্যাত গ্রন্থ কাশশাফুল ক্বিনায় এসেছে:
” ويحرم على الجنب اللبث في المسجد لقوله تعالى : ( ولا جنبا إلا عابري سبيل حتى تغتسلوا ) ، إلا أن يتوضأ ، لما روى سعيد بن منصور عن عطاء بن يسار قال : رأيت رجالا من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم يجلسون في المسجد وهم مجنبون إذا توضئوا وضوء الصلاة . قال في “المبدع” : إسناده صحيح ، ولأن الوضوء يخفف حدثه فيزول بعض ما يمنعه . قال الشيخ تقي الدين ( شيخ الإسلام ابن تيمية ) : وحينئذ فيجوز أن ينام في المسجد حيث ينام غيره “
“জুনুবী (অপবিত্র) ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এবং (দৈহিক) অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না গোসল কর।”(সূরা নিসা,আয়াত:৪৩) তবে ওযু করে নিয়ে অবস্থান করতে পারবে। যেহেতু আতা বিন ইয়াসার থেকে সাঈদ বিন মানসুর বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের কিছু লোককে এমন দেখেছি যে, তারা ওযু করে নিয়ে অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে বসে থাকতেন। আল-মুবদি গ্রন্থে বলেন: এর সনদ সহিহ। এবং যেহেতু ওযুকরণ অপবিত্রতাকে কিছুটা হালকা করে। ফলে কিছু নিষেধাজ্ঞা দূর হয়ে যায়। শাইখ তাক্বী উদ্দিন (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া) বলেন: সেক্ষেত্রে মসজিদে ঘুমানো জায়েয হবে যেভাবে অন্যেরা সেখানে ঘুমায়।” (পরিমার্জিতভাবে সমাপ্ত;কাশ্‌শাফুল ক্বিনা খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দেখুন: আল-শারহুল মুমতি’ খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৭)
.
وسئل الشيخ محمد المختار الشنقيطي حفظه الله: هل يجوز للمرأة إذا جاءتها الحيضة أن تحضر الدرس وتجلس عند الدرج، أو عند موضع الأحذية -أكرمكم الله- وهي عند مصلى النساء. أي: داخل الباب من جهة المصلى أو من جهة المسجد؟
فأجاب: ” المرأة الحائض لا تدخل إلى المسجد إذا كانت حال حيضها؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعائشة: ناوليني الخُمرة [نوع من الفراش]، فقالت: إني حائض، قال: إن حيضتك ليست في يدك، فدل على أن الأصل عدم دخول الحائض، بدليل أن أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها لما قال لها: ناوليني الخُمرة؛ قالت: إني حائض، فامتنعت من الدخول واعتذرت بكونها حائضاً، فدل على أن هذا كان معمولاً به في زمان النبي صلى الله عليه وسلم، لأنها لا تنشئ الأحكام من عندها، وقد قال لها عليه الصلاة والسلام ذلك صريحاً في قوله: اصنعي ما يصنع الحاج، غير أن لا تطوفي بالبيت حينما حاضت في حجة الوداع، فالذي على المرأة أن تلتزم به: أن لا تدخل مسجداً إذا كانت حائضة والله يأجرها ويكتب ثوابها…وفي هذه الحالة تجلس خارج المسجد عند باب المسجد وتسمع، لكن لا تدخل، ولها أن تدني رأسها وتصغي ” انتهى مختصرا من “شرح زاد المستقنع”.
ড.মুহাম্মাদ মুখতার বিন মুহাম্মাদ আল-আমীন শানক্বীতি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট প্রশ্ন করা হয়েছিল:“কোনো মহিলার হায়েজ শুরু হলে, সে কি মসজিদে দারস শুনতে বা শিক্ষাসভায় অংশগ্রহণ করতে পারবে? বিশেষ করে, যদি সে মসজিদের মহিলাদের নামাজকক্ষের ঠিক পাশে যেমন সিঁড়ির ধাপের কাছে বা জুতার তাকের পাশে বসে থাকে, তাহলে এর হুকুম কী হবে?” তিনি জবাবে বলেন:
المرأة الحائض لا تدخل إلى المسجد إذا كانت حال حيضها؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعائشة: ناوليني الخُمرة [نوع من الفراش]، فقالت: إني حائض، قال: إن حيضتك ليست في يدك، فدل على أن الأصل عدم دخول الحائض، بدليل أن أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها لما قال لها: ناوليني الخُمرة؛ قالت: إني حائض، فامتنعت من الدخول واعتذرت بكونها حائضاً، فدل على أن هذا كان معمولاً به في زمان النبي صلى الله عليه وسلم، لأنها لا تنشئ الأحكام من عندها، وقد قال لها عليه الصلاة والسلام ذلك صريحاً في قوله: اصنعي ما يصنع الحاج، غير أن لا تطوفي بالبيت حينما حاضت في حجة الوداع، فالذي على المرأة أن تلتزم به: أن لا تدخل مسجداً إذا كانت حائضة والله يأجرها ويكتب ثوابها…وفي هذه الحالة تجلس خارج المسجد عند باب المسجد وتسمع، لكن لا تدخل، ولها أن تدني رأسها وتصغي “
হায়েজ অবস্থায় নারীর জন্য মসজিদে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। কারণ নবী করিম ﷺ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে বলেছেন, “আমাকে খুমরা (এক ধরনের মাদুর) এগিয়ে দাও।” আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিয়েছিলেন, “আমার হায়েজ চলছে।” তখন নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমার মাসিক তো তোমার হাতে নয়।” এ থেকে স্পষ্ট হয় যে মূল বিধান হলো মাসিক অবস্থায় নারী মসজিদে প্রবেশ করবে না। কারণ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজেই নবী ﷺ-এর নির্দেশ অনুসরণ করে মসজিদে প্রবেশ থেকে বিরত ছিলেন এবং তাঁর অজুহাত ছিল মাসিক হওয়া। এটি প্রমাণ করে যে এই বিধান নবী ﷺ-এর যুগ থেকেই কার্যকর ছিল, কারণ নবী ﷺ নিজের থেকে কোনো শরীয়ত বিধান প্রণয়ন করতেন না, বরং তিনি আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে চলতেন। অতিরিক্তভাবে, নবী ﷺ হজ্বের বিদায়ে যখন মাসিক ছিলেন, তখন তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, “হজযাত্রী যা করে, তুমি ও করো; তবে কেবল কাবা তাওয়াফ করবে না।” অর্থাৎ মাসিক অবস্থায় তিনি নিজেও মসজিদে কিছু কিছু কার্যকলাপ থেকে বিরত ছিলেন।সুতরাং নারীর করণীয় হলো যদি সে মাসিক থাকে, তবে সে মসজিদে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ তাআলা তার জন্য সওয়াব নির্দিষ্ট করবেন এবং তার আমল কবুল করবেন।এই অবস্থায় নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য হলো মসজিদের বাইরে, দরজার কাছে বা পাশের স্থানে বসে দারস শুনা। এতে কোনো সমস্যা নেই। সে চাইলে মনোযোগ দিয়ে মাথা নিচু করে দারস শুনতে পারবে।”(শারহু আলা জাদিল মুস্তাকনি থেকে সংক্ষিপ্ত আরও দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৭৩৩৪৪)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; যদি কোন মহিলা হায়েজ অবস্থায় শুধু খুতবা শোনার জন্য মসজিদে প্রবেশ করে এর শারঈ হুকুম কী? উত্তরে তারা বলেন:
لا يحل للمرأة أن تدخل المسجد وهي حائض أو نفساء…أما المرور فلا بأس، إذا دعت إليه الحاجة، وأمن تنجيسها المسجد، لقوله تعالى: وَلا جُنُباً إِلا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا النساء/43. والحائض في معنى الجنب؛ ولأنه أمر عائشة أن تناوله حاجة من المسجد وهي حائض
“হায়েয বা প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব (নেফাস) অবস্থায় নারীদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয নয়.. তবে যদি প্রয়োজন হয় এবং নিশ্চিত হয় যে মসজিদের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা পড়বে না, তাহলে শুধু অতিক্রম করার অনুমতি আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর জুনুবী (অপবিত্র) ব্যক্তিও শুধু পথ অতিক্রম করার জন্য যেতে পারবে।”(সূরা নিসা:৪৩) হায়েয অবস্থায় নারীরা জুনুবী (অপবিত্র) ব্যক্তির মতই বিধানের অন্তর্ভুক্ত, কারণ নবী (ﷺ) আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে হায়েয অবস্থায় মসজিদ থেকে কিছু আনতে বলেছিলেন।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৭২)
.
প্রিয় পাঠক! স্থায়ী কমিটির আলেমগন যে হাদীসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন সে হাদীসটি হচ্ছে, আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে আমার জায়নামাযটি (হাত বাড়িয়ে) নিয়ে এসো”। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বললেনঃ তোমার হায়িয তো তোমার হাতে নয়।” (সহীহ মুসলিম হা/৫৭৬) অপর বর্ননায় আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফরত অবস্থায় মসজিদ থেকে বললেন, ‘হে আয়েশা! আমাকে কাপড়টা এগিয়ে দাও’। তিনি বলেন, আমি যে ঋতুমতী! জবাবে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ঋতু তো তোমার হাতে লাগে নেই’। তারপর আমি তা এনে দিলাম”।(সহীহ মুসলিম, হা/২৯৯)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রশ্ন: হায়েজগ্রস্থ মহিলা কি মসজিদে অনুষ্ঠিত যিকর-মজলিসে অংশ নিতে পারবে? উত্তরে শাইখ বলেন;
المرأة الحائض لا يجوز لها أن تمكث في المسجد ، وأما مرورها بالمسجد فلا بأس به ، بشرط أن تأمن تلويث المسجد مما يخرج منها من الدم ، وإذا كان لا يجوز لها أن تبقى في المسجد ، فإنه لا يحل لها أن تذهب لتستمع إلى حلق الذكر وقراءة القرآن ، اللهم إلا أن يكون هناك موضع خارج المسجد يصل إليه الصوت بواسطة مكبر الصوت ، فلا بأس أن تجلس فيه لاستماع الذكر ، لأنه لا بأس أن تستمع المرأة إلى الذكر وقراءة القرآن كما ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان يتكئ في حجر عائشة ، فيقرأ القرآن وهي حائض ، وأما أن تذهب إلى المسجد لتمكث فيه لاستماع الذكر ، أو القراءة ، فإن ذلك لا يجوز ، ولهذا لما أُبلغ النبي عليه الصلاة والسلام في حجة الوداع ، أن صفية كانت حائضا قال : ( أحابستنا هي ؟ ) ظن صلى الله عليه وسلم ، أنها لم تطف طواف الإفاضة فقالوا إنها قد أفاضت ، وهذا يدل على أنه لا يجوز المكث في المسجد ولو للعبادة . وثبت عنه أنه أمر النساء أن يخرجن إلى مصلى العيد للصلاة والذكر ، وأمر الحيض أن يعتزلن المصلى
“নারী হায়েজ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করতে পারবে না। তবে তার মসজিদ দিয়ে অতিক্রম করায় কোনো অসুবিধা নেই শর্ত হলো, তার থেকে যে রক্ত নির্গত হচ্ছে, তা দ্বারা মসজিদ নাপাক হওয়ার আশঙ্কা না থাকে। আর যখন তার মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়, তখন তার পক্ষে ওয়াজ-মহফিল বা কুরআন তিলাওয়াত শোনার উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া হালাল নয়। হ্যাঁ, যদি মসজিদের বাইরে এমন কোনো জায়গা থাকে যেখানে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দ পৌঁছে যায়, তবে সেখানে বসে যিকির শোনায় অসুবিধা নেই। কারণ নারীর পক্ষে যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত শোনা বৈধ যেমন প্রমাণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশার (রাঃ) কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন, অথচ তিনি তখন হায়েজ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু মসজিদে গিয়ে সেখানে অবস্থান করে যিকির বা কুরআন শোনা এটি বৈধ নয়। এ কারণেই বিদায় হজে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে খবর দেওয়া হলো যে, সাফিয়া (রাঃ) হায়েজগ্রস্ত হয়েছেন, তখন তিনি বললেন “أحابستنا هي؟” (তিনি কি আমাদের আটকে রাখবেন)? অর্থাৎ তিনি (ﷺ) ভেবেছিলেন যে, সাফিয়া (রাঃ) এখনও তাওয়াফে ইফাযাহ করেননি। তখন সাহাবারা বললেন তিনি ইতিমধ্যে তাওয়াফে ইফাযাহ করে নিয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যেও মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়। এছাড়াও প্রমাণিত আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদেরকে ঈদের নামাজ ও যিকিরের জন্য ঈদগাহে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু হায়েজগ্রস্থ নারীদেরকে নামাজের স্থান থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।”(ইবনু উসাইমীন; ফাতাওয়া আত-তাহারাহ, পৃষ্ঠা: ২৭৩)
.
শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, “মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের জন্য মসজিদে বসে খুত্ববাহ শোনা অনুমোদিত নয়। কারণ ঋতুবতী মহিলার মসজিদে প্রবেশ করা বৈধ নয়, তবে তিনি পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি মসজিদের সাথে সংযুক্ত বা কাছাকাছি কোন স্থানে বসে খুত্ববা শুনতে চান, তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই, কারণ এই ক্ষেত্রে তিনি মসজিদে প্রবেশ করছেন না’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৩৬৪৯)।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, ঋতুস্রাবগ্রস্ত মহিলার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে একদিক থেকে অপরদিকে অতিক্রম করতে পারে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।
Share: