ভূমিকা: মানুষের মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে জৈবিক চাহিদা অন্যতম। মহান আল্লাহ নারী পুরুষের ক্ষেত্রে হালাল পথে এই চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন। যখন কোন ছেলে-মেয়ের মাঝে বিবাহের মাধ্যমে পবিত্র বন্ধন রচিত হয়, তখন সেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার খুনসুটি, প্রেমালাপ, সহবাস সব কিছুই দয়াময় আল্লাহর দরবারে সাদাক্বার মতো মহান ইবাদত হিসাবে পরিগণিত হয়। যেমন:
প্রখ্যাত সাহাবী আবূ যার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর বর্ণনায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
فِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ،
“স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও তোমাদের জন্য সাদাক্বাহ স্বরূপ’। সাহাবীগণ একটু বিস্ময় হয়ে বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ، أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ “হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সংগম করে, তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে?’ তিনি (ﷺ) বললেন:أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ،”তোমারা আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে (স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে) কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে।(সহীহ মুসলিম হা/১০০৬; মুসনাদে আহমাদ হা/২১৪৮২; সিলসিলাহ সহীহাহ হা/৪৫৪,
মিশকাত হা/১৮৯৮)
.
হাদীসের বাক্য (وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ) শব্দটি স্ত্রী সহবাস এবং লজ্জাস্থান দু’টির ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতে পারে। এখানে وَفِي তথা স্ত্রী সহবাসের মধ্যে বলা হয়েছে, সুতরাং এ কথা বলা হয়নি যে সরাসরি স্ত্রী সহবাস করার মাধ্যমে। এ কথা থেকে বুঝা যায় যে স্ত্রী সহবাস করা সাদাকা নয় বরং স্ত্রী সহবাসের মাধমে নিজেকে পরনারী থেকে সংবরণ করার প্রেক্ষিতে সাদাকার সাওয়াব হবে। বস্ত্তত স্ত্রীর হক আদায় করা, সৎ সন্তান কামনা করা এগুলো সদাক্বাহ হিসেবে পরিগণিত। হাদিসের শেষে (إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ) অর্থাৎ হারাম থেকে বিরত থেকেছে অথচ মানুষের অন্তর হারামের দিকেই ঝুকে যায় এবং হারাম কাজ করেই হালালের চেয়ে বেশী স্বাদ পেয়ে থাকে। কেননা প্রতিটি নতুন জিনিসের রয়েছে নতুন স্বাদ, অভ্যাসগত কারণে আত্মা সেদিকে বেশী ধাবিত, শয়তান তার জন্য সহযোগিতায় সর্বাধিক অগ্রগামী এবং পরিশ্রমটাও অনেক কম হয়।
.
হাদিসটির ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
الْجِمَاعُ يَكُونُ عِبَادَةً إِذَا نَوَى بِهِ قَضَاءَ حَقِّ الزَّوْجَةِ وَمُعَاشَرَتَهَا بِالْمَعْرُوفِ الَّذِي أَمَرَ اللهُ تَعَالَى بِهِ أَوْ طَلَبَ وَلَدٍ صَالِحٍ أَوْ إِعْفَافَ نَفْسِهِ أَوْ إِعْفَافَ الزَّوْجَةِ،
‘স্বামী-স্ত্রীর সহবাসও ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে যদি তাতে স্ত্রীর অধিকার আদায়ের নিয়ত করা হয়, আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় স্ত্রীর সাথে ন্যায়সঙ্গতভাবে মেলামেশা করা হয়, নেক সন্তান কামনা করা হয় এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চরিত্রের হেফাযতের জন্য এটা করা হয়”।(ইমাম নববী, শারহু সহীহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৯২)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি: