সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সালাতের পদ্ধতি কি এবং নারীরা কি এই সালাত আদায় করতে পারবে

প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত আদায় করা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই মুস্তাহাব। আবু মাসউদ আল-আনসারি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে দুইটি নিদর্শন। এ দুইটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বান্দাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেন। কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে এ দুটোর গ্রহণ ঘটে না। কাজেই যখন গ্রহণ দেখবে, তখন তোমরা এ পরিস্থিতি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে এবং দোয়া করতে থাকবে।”(সহিহ বুখারী হা/১০৪১;ও সহিহ মুসলিম হা/৯১১) অপর বর্ননায় আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন; তিনি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। এরপর তিনি মসজিদে আসেন। এর আগে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু ও সিজদা সহকারে নামায আদায় করলেন। আর তিনি বললেন: এগুলো হল আল্লাহ্‌ কর্তৃক প্রেরিত নিদর্শন; এগুলো কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে ঘটে না। বরং আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তাঁর বান্দাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত বিহ্বল অবস্থায় আল্লাহর যিকির, দু’আ ও ইস্তিগফারে মগ্ন হবে।”।(সহিহ বুখারী হা/১০৫৯; ও সহিহ মুসলিম হা/৯১২)
.
দ্বিতীয়ত: সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পদ্ধতি:
.
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় দুই রাকআত সালাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। উক্ত সালাত আদায়ের সময় অন্যান্য সালাতের ন্যায় পবিত্রতা অর্জন করে কিবলামুখী হয়ে অন্তরে নিয়ত করে মুখে উচ্চারণ করে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবে। সানা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর দীর্ঘ তেলাওয়াত (অন্য একটি সূরা পাঠ) করবে।এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে। এরপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে; তবে পরিমাণে প্রথম রাকাতের তেলাওয়াতের চেয়ে কম। এরপর দ্বিতীয়বার রুকু করবে এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকবে; তবে প্রথম রুকুর চেয়ে কম সময়।এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।এরপর দীর্ঘ দীর্ঘ দুইটি সেজদা করবে এবং দুই সেজদার মাঝখানেও দীর্ঘসময় বসে থাকবে।এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং প্রথম রাকাতের মত দুই রুকুসহ ইত্যাদি করবে। কিন্তু, সবকিছুর দীর্ঘতা প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে।এরপর তাশাহুদ,দুরদ এবং অন্যান্য দু’আ পড়ে সালাম ফিরাবে।(বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইবনু কুদামাহ ‘আল-মুগনি; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩২৩; নববী ‘আল-মাজুম’; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৪৮)।
.
উল্লেখ্য যে, কারো যদি দুই রুকুর একটিও ছুটে যায়, তাহলে রাকআত গণ্য করবে না। কারণ, একটি রুকু ছুটে গেলে রাকআত হবে না। ইমামের সালাম ফিরার পর ২টি রুকু বিশিষ্ট ১ রাকআত নামায কাযা পড়তে হবে।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৫০; মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৯৮)
.
অতঃপর সালাত শেষ হতে হতে ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। সালাত শেষ করে দাঁড়িয়ে মহানবী (ﷺ) খুতবা দিয়েছিলেন এবং হামদ ও সানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, সালাত আদায় করবে ও সাদাক্বা করবে। … আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’ষলে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে।(সহীহ বুখারী হা/১০৪৭)
.
❑ তৃতীয়ত: নারীরা কি এই সালাত আদায় করতে পারে?
.
নারীদের জন্য সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব (সুন্নাত) হিসেবে প্রমাণিত, এবং এ ব্যাপারে চার মাযহাব—হানাফি, মালিকি, শাফিঈ ও হাম্বলি—এর মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে। কেননা রাসূল (ﷺ)-এর বানী:“তোমরা যখন এ দু’টিকে (সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে, তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করো।”(সহিহ বুখারী হা/১০৫৯; সহিহ মুসলিম হা/৯১২)—এ নির্দেশ সাধারণ, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়ই অন্তর্ভুক্ত; সে ঘরে হোক কিংবা মসজিদে। তাছাড়া,আম্মিজান ‘আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে জানা যায় যে, তিনি নিজেও জামাতে এই সালাত আদায় করেছেন।যেমন:আসমা বিনতু আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)- এর নিকট আসলাম। তখন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিল। দেখলাম সব মানুষ দাড়িঁয়ে সালাত আদায় করছে এবং ‘আয়িশা (রাঃ)-ও দাড়িঁয়ে সালাত আদায় করছেন। আমি বললাম, লোকদের কী হয়েছে? তিনি তার হাত আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন “সুবহানাল্লাহ”! আমি বললাম, এটা কি কোন আলামত? তিনি ইঙ্গিত করে বললেনঃ ‘হাঁ’। অতঃপর আমিও সালাতে দাড়িঁয়ে গেলাম। এমনকি আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলো এবং আমি আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মুসল্লীদের দিকে] ফিরে আল্লাহর হাম্‌দ ও সানা বর্ণনা করে বললেনঃ “যেসব জিনিস আমি ইতোপূর্বে দেখিনি সেসব আমার এ স্থানে আমি দেখতে পেয়েছি, এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও। আর আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে , কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা কাছাকাছি।” বর্ণনাকারী বলেনঃ আসমা (রাঃ) কোন্‌টি বলেছিলেন, আমি জানি না। তোমাদের প্রত্যকের নিকট (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, “এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি জান?”- তারপর ‘মু’মিন,’ বা ‘মু’কিন ব্যক্তি বলবে- আসমা ‘মুমিন’ বলেছিলেন না ‘মুকিন’ তা আমি জানি না- ইনি আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি আমাদের নিকট মু’জিযা ও হিদায়াত নিয়ে আগমন করেছিলেন। আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছি, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাঁর ইত্তেবা’ করেছি। তারপর তাকে বলা হবে, নিশ্চিন্তে ঘুমাও। আমরা জানলাম যে, তুমি মু’মিন ছিলে। আর ‘মুনাফিক’ বা ‘মুরতাব’ বলবে- আমি জানি না আসমা এর কোন্‌টি বলেছিলেন- লোকজনকে এর সম্পর্কে কিছু একটা বলতে শুনেছি আর আমিও তা-ই বলেছি।”(সহিহ বুখারী হা/১৮৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
لا بأس أن تصلي المرأة صلاة الكسوف في بيتها؛ لأن الأمر عام: ( فصلوا وادعوا حتى ينكشف ما بكم )، وإن خرجت إلى المسجد كما فعل نساء الصحابة، وصلت مع الناس: كان في هذا خير
“নারী যদি ঘরে বসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই; কারণ এই নির্দেশটি সাধারণ ও সর্বজনীন:”(তোমরা সালাত আদায় করো এবং দো‘আ করো যতক্ষণ না তোমাদের বিপদ দূর হয়)”।আর যদি নারী সাহাবিয়াদের মতো মসজিদে গিয়ে মানুষের সঙ্গে জামাআতে সালাত আদায় করে,তবে এতে আরও বেশি (সওয়াব) এবং কল্যান রয়েছে।”(ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ৩১০)
.
❑ চতুর্থত: সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো:
.
(১) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সময় আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করা উচিত, সাথে সাথে দু’আ ও যিকির এবং তওবা ইস্তিগফার করা আবশ্যক, সূর্য গ্রহণ লাগার সাথে সাথে লোকজনকে ডেকে সালাতে নিয়ে যাওয়া উচিত।
.
(২).সূর্যগ্রহণের সালাতের কিরাআত জোরে পড়া হবে নাকি আস্তে পড়া হবে, তা নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। তবে জোরে পড়ার পক্ষের হাদিস তুলনামূলক অধিক সহীহ ও স্পষ্ট। আস্তে বা জোরে উভয় অবস্থায় সালাত সহিহ হয়ে যাবে। তবে কিরাআত জোরে পড়া সুন্নাহ (সহীহ বুখারি হা/১০৪০; ১০৬৫; সহীহ মুসলিম হা/ ৯০১; আল মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ২৭; পৃষ্ঠা: ২৫৭)
(৩).সূর্যগ্রহণের সালাতে প্রতি রাকাআতে রুকু কয়টি করে করতে হবে, তা নিয়ে আলিমগণের মাঝে মতভেদ আছে। কারণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনার হাদীস পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন হাদীসের মাঝে সমন্বয় করে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হল দু’রাক‘আত সালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ।(সহীহ বুখারী হা/১০৬৬; সহীহ মুসলিম হা/৯১০)
.
(৪).প্রথম রাকআতে রুকূ থেকে উঠে সামিআল্লাহ হুলিমানহামিদা এবং রাব্বানা লাকাল হামদ্ বলার পর আবারো সূরা ফাতিহা পড়বে এবং আরো একটি দীর্ঘ কিরআত পড়বে,অর্থাৎ ) এ সালাতে দুই রাআতে চারটি রুকূ ও চারটি সিজদা রয়েছে,এই সালাতে প্রথম রাকআতে সূরা আনকাবূত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা রূম কিংবা সূরা লুকমান পড়া সুন্নাত।
.
(৫).জামাতবদ্ধ হয়ে মাসজিদে এই সালাত পড়া উত্তম। তবে, ব্যক্তিগতভাবেও নিজ নিজ ঘরে এই নামাজ পড়া যাবে। জামাআতে আদায় করলে নারীরাও এই নামাজে অংশ নিতে পারবেন। আবার, বাসায় একাকিও পড়া যাবে। আয়িশা (রা.), আসমা (রা.) ও অন্যান্য নারীগণ নবিজির সাথে সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করেছিলেন। (সহীহ বুখারি হা/১০৫৩; মুসলিম হা/১৯৮০; ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ৩১০)
.
(৬).এই সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জনে অজু করাই যথেষ্ট। তবে গোসল করতে পারলে, সেটিকে উত্তম (মুস্তাহাব) বলেছেন আলিমগণ।
.
(৭).সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সালাতে কিরাআত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা সুন্নাত (তবে বাধ্যতামূলক নয়) প্রথম রাকআতের তুলনা দ্বিতীয় রাকআতের সময় একটু কম লাগাবে।
.
(৮).এ সালাত দু’রাকআত, এই সালাতের জন্য আজান ও ইকামতের প্রয়োজন নেই।
.
(৯).উত্তম হলো সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাতে থাকা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেও সালাত শেষ করা বৈধ। বাকি সময় যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে কাটানো উচিত।(সহীহ বুখারী হা/১০৪৪)
.
(১০).পূর্বেই বলা হয়েছে যে, চন্দ্র-সূর্য গ্রহণের সালাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কিন্তু এর তুলনায় যে সালাতের গুরুত্ব বেশী সেই সালাতের সময়ে এই সালাতের সময় হলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সালাতই পড়তে হবে। যেমন, জুমুআহ বা ঈদের সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলে, অথবা তারাবীহ্‌র সময় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলে গ্রহণের সালাতের উপর ঐ সকল সালাত প্রাধান্য পাবে।
.
(১১).নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে; যেমন ফজর ও আসরের পর গ্রহণ লাগলেও এই সালাত পড়া যায়। ফরয সালাতের সময় এসে গেলে এই সালাত হালকা করে পড়তে হবে। সালাতের পরও গ্রহণ বাকী থাকলে দ্বিতীয়বার ঐ সালাত পড়া উচিত নয়। যেমন গ্রহণ প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত কেবল পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে ঐ সালাত পড়া জায়েজ নয়। অনুরুপ জায়েজ নয় গ্রহণ দৃশ্য না হলে।
.
(১২).ভূমিকম্প, ঝড়, নিরবচ্ছিন্ন বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও গ্রহণের মত নামায পড়ার কথা আলী, ইবনে আব্বাস ও হুযাইফা সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত আছে।(ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৫৫)
(১৩).সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময় রাসূল ﷺ ক্রীতদাস মুক্ত করতে এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেও আদেশ করেছেন। (সহীহ বুখারী হা/১০৫০)
.
(১৪).পরিশেষে জেনে রাখা ভাল যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়ে যত বিধিনিষেধের কথা বলা হয়—যেমন: গর্ভবতী মায়েরা এই কাজ সেই কাজ করতে পারবে না, এই সময়ে কেউ খেতে পারবে না, এই সময়ে সন্তান জন্ম নিলে এই হবে সেই হবে, এই সময়ে বৈধ যৌন সঙ্গমও করা যাবে না—এগুলো সবই কুসংস্কার; এসবে বিশ্বাস রাখা যাবে না। এগুলো শরীয়তে আছে মনে করে এ কথা বলা ও মানা হলে তা বিদআত হবে। তবে খালি চোখে গ্রহণ দেখলে চোখ খারাপ হতে পারে, সে কথা সত্য। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
Share: