সূরা আল-হুজরাতের দুই নং আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট

একবার বনী তামীম গোত্র থেকে একটি অশ্বারোহী দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসল। আবূ বাকর (রাঃ) প্রস্তাব দিলেন, কা’কা ইবনু মা’বাদ ইবনু যারারা (রাঃ)-কে এদের আমীর নিযুক্ত করে দিন। উমার (রাঃ) বললেন, বরং আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ)-কে আমীর বানিয়ে দিন। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমার বিরোধিতা করাই তোমার উদ্দেশ্য। উমার (রাঃ) বললেন, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমি কখনো করি না। এর উপর দু’জনের বাক-বিতণ্ডা চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। আর এই বিষয়টি মহান আল্লাহ তা‘আলার কাছে অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যে, সাথে সাথে সূরা আল-হুজুরাত ৪৯/১-২)। আয়াত নাজিল করেন এবং এমন কাজ করলে নিজেদের সকল আমল বিনষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৩৬৭ আ.প্র. ৪০২১, ই.ফা. ৪০২৫) তিরমিজির বর্ণনাকারী বলেন, তারপর হতে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বললে তার কথা শুনা যেত না, এমনকি তা বুঝার জন্য আবার ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রয়োজন হত। (তিরমিজি, হাদিস নং ৩২৬৬)
.
মহান আল্লাহ বলেন,‘‘হে ইমানদারেরা! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো, তাঁর সাথে সেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো না; এতে তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে, অথচ তোমরা বুঝতেও পারবে না।’’(সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০২)
.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, যখন উপরোক্ত আয়াত নাযিল হল, “তখন সাবিত (রাঃ) নিজের ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি একজন জাহান্নামী। এরপর থেকে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। একদিন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবা সা’দ ইবনু মু’আযকে সাবিত (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললেন, হে আবূ ‘আম্‌র! সাবিতের কি হল? সা’দ (রাঃ) বললেন, সে আমার প্রতিবেশী, তার কোন অসুখ হয়েছে বলে তো জানি না। আনাস (রাঃ) বলেন, পরে সা’দ (রাঃ) সাবিতের কাছে গেলেন এবং তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বক্তব্য উল্লেখ করলেন। সাবিত (রাঃ) বলেন, এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আর তোমরা জানো রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর আমার কষ্ঠস্বরই সবচেয়ে উঁচু হয়ে যায়। সুতরাং আমি তো জাহান্নামী। সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে সাবিতের কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, না, বরং সে তো জান্নাতী। (সহীহ মুসলিম ২২৪ ই.ফা. ২১৫; ই.সে. ২২২)
.
অনুরূপভাবে রাসূলের কোন সুন্নাত সম্পর্কে জানার পরে সেটা মানতে গড়িমসি বা সামান্যতম অনীহা প্রকাশ করাও বে-আদবি। এ আয়াতের নিষেধাজ্ঞার অধীন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুজরা মোবারকের সামনেও বেশি উঁচুস্বরে সালাম ও কালাম করা নিষিদ্ধ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মান ও আদব তার ওফাতের পরও জীবদ্দশার ন্যায় ওয়াজিব। তাই তার পবিত্র কবরের সামনেও বেশী উচুস্বরে সালাম ও কালাম করা আদবের খেলাফ। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দুই ব্যক্তিকে মসজিদে নববীতে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বললঃ আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মদীনাবাসী হতে তবে আমি তোমাদের বেত্ৰাঘাত করতাম। তোমরা রাসূলের মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছ কেন? (সহীহ বুখারী: ৪৭০)
.
এই হল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মর্যাদা। তাঁর সামনে কেউ উঁচু আওয়াজে কথা বলবে, এটাও আল্লাহ্ মেনে নেননি। এমনকি আবু বকর (রা.) এবং উমার (রা.)-এর মত উম্মাহর প্রধান দুই ব্যক্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে! সুতরাং, রাসূল ﷺ কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল, মানবতার মুক্তির দিশারী, আখিরাতে (আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে) সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারিশকারী। প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী। সুতরাং এই নবীকে বাদ দিলে দুনিয়া কিংবা আখিরাত সবকিছুই বরবাদ হয়ে যাবে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফী।