সালাত আদায়ের সময় ভুলক্রমে কোনো রাকআতে একটি রুকন কিংবা একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে তা সংশোধনের সঠিক পদ্ধতি

প্রশ্ন: সালাত আদায়ের সময় ভুলক্রমে কোনো রাকআতে একটি রুকন কিংবা একটি ওয়াজিব যেমন একটি সিজদা বা সিজদার তাসবিহ ছুটে গেলে তা সংশোধনের সঠিক পদ্ধতি কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর সালাতের স্তম্ভ বা রুকন মোট ১৪টি, এর মধ্যে রুকু ও সিজদা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুকন। প্রতিটি রাকাআতে রুকু এবং সিজদা করা ফরজ। রুকু ও সিজদা ছাড়া একটি রাকাআত পূর্ণ হয় না, অর্থাৎ রুকু না করলে সিজদা শুদ্ধ হবে না, এবং সিজদা না করলে রাকাআতই শুদ্ধ হবে না। তাই সালাতের রাকাআত শুদ্ধ ও পূর্ণ হওয়ার জন্য রুকু এবং সিজদা উভয়টি অপরিহার্য। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি রুকু বা একটি সিজদা, কিংবা এর মধ্যে যেকোনো একটিকে বাদ দেয়, সে গুনাহগার হবে এবং তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ ভুলে এই এক বা দুটি সিজদা বা রুকু বাদ দেয়, তাহলে তাকে সেটি পূনরায় পূর্ণ করা আবশ্যক। এটি নারী-পুরুষ, ইমাম বা মুক্তাদী, এককভাবে সালাত পড়া ব্যক্তি সবার জন্যই প্রযোজ্য। যদি কেউ ভুলে এই রুকন পূর্ণ না করে, তার সালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতের কোন একটি রুকন আদায় করতে ভুলে গেছে তার উপর অনিবার্য হল সেটি পুনরায় আদায় করা; নচেৎ তার সালাত শুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে, সালাতের মধ্যে কোনো ওয়াজিব যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ছুটে যায়,তবে সাহু সেজদার মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। ইচ্ছেকৃত হলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। এই বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে বুঝতে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
.
ইমাম ইবনে বাত্তাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: إجماع الجميع: أن المصلى لو نسى الركوع من صلاته وسجد، ثم ذكر وهو ساجد؛ أن عليه أن يقوم حتى يركع ” ا
“সকল আলেমগণ ইজমা (মতৈক্য) করেছেন যে, যদি সালাত আদায়কারী ব্যক্তি রুকু করতে ভুলে যান এবং সিজদায় চলে যান, অতঃপর সিজদায় থাকা অবস্থায় রুকুর কথা মনে পড়ে, তাহলে তার জন্য অবশ্যই উঠে দাঁড়িয়ে রুকু সম্পন্ন করতে হবে”।(শারহু সহীহ বুখারি, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১৩)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, ” … وهكذا الحكم في ترك ركن غير السجود مثل الركوع، أو الاعتدال عنه؛ فإنه يرجع إليه متى ذكره، قبل الشروع في قراءة الركعة الأخرى، فيأتي به، ثم بما بعده؛ لأن ما أتى به بعده غير معتد به؛ لفوات الترتيب “… যদি সালাতের কোনো রুকন, যেমন রুকু বা রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়ানো বাদ পড়ে এবং তা স্মরণ হয়, তবে এর সমাধান হচ্ছে রুকুনে ফিরে যেতে হবে, তবে এ শর্তে যে এটি পরবর্তী রাকাআতের কিরাআত শুরু হওয়ার আগে হতে হবে। এরপর সে ওই রুকন সম্পন্ন করবে এবং নির্ধারিত ক্রম অনুযায়ী সালাত চালিয়ে যাবে। কারণ সালাতের সঠিক ক্রম (ধারাবাহিকতা) অনুসরণ না করলে আগের আমল গ্রহণযোগ্য হবে না।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪২৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:الأركان واجبة وأوكد من الواجبات ، لكن تختلف عنها في أن الأركان لا تسقط بالسَّهْوِ ، والواجبات تسقط بالسَّهْوِ ، ويجبرها سُجودُ السَّهْوِ ، بخلاف الأركان ؛ ولهذا من نسيَ رُكناً لم تصحَّ صلاته إلا به .”আরকানগুলোও ওয়াজিব (আবশ্যকীয়) এবং ওয়াজিবগুলোর চেয়ে রুকনসমূহ অধিক তাগিদপূর্ণ। তবে রুকনগুলো ওয়াজিবগুলোর চেয়ে এদিক থেকে আলাদা যে, ভুলে গেলে রুকনগুলো মওকুফ হয় না; অথচ ওয়াজিবগুলো মওকুফ হয়ে যায় এবং সাহু সেজদা দেয়ার মাধ্যমে ওয়াজিব বাদ পড়ার ক্ষতি পূরণ করা যায়। কিন্তু রুকনগুলো এর বিপরীত। তাই ভুলবশতঃ কোন রুকন ছুটে গেলে সেটি আদায় করা ছাড়া সালাত সহিহ হয় না।” তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন: والدليل على أن الأركان لا تنجبر بسجود السَّهو : أنَّ النبي صلى الله عليه وسلم لما سَلَّم مِن ركعتين مِن صلاة الظُّهر أو العصر أتمَّها وأتى بما تَرَكَ وسَجَدَ للسَّهو ، فدلَّ هذا على أنَّ الأركان لا تسقط بالسَّهو، ولا بُدَّ مِن الإِتيان بها .”সাহু সেজদার মাধ্যমে রুকনগুলোর ক্ষতিপূরণ না হওয়ার দলিল হল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যোহর বা আসরের সালাতের দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন তখন তিনি সালাতের অবশিষ্টাংশ আদায় করে সালাত সম্পূর্ণ করলেন এবং সাহু সেজদা দিলেন। এতে করে প্রমাণিত হল যে, ভুলে গেলেও রুকনগুলো মওকুফ হয় না। বরং সেগুলো সম্পন্ন করতে হয়।”(ইবনু উসামীন, আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩১৫, ৩২৩)
.
সালাতের ভিতরে কোনো একটি রুকন কমে গেলে করণীয়:
এবিষয়ে দুটি মতের মধ্যে অধিক বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, যদি কেউ সালাতের কোনো একটি রুকন (অনিবার্য অংশ) ভুলক্রমে বাদ দেয়, তাহলে তার দুইটি সম্ভাব্য অবস্থা হতে পারে:
.
▪️(১).রুকনের স্থানে পৌঁছাবার আগেই স্মরণ হলে: সালাত আদায়কারী নারী-পুরুষ যদি পরবর্তী রাকাআতে ঐ রুকনের স্থানে পৌঁছাবার আগেই ভুলটি মনে করে, তবে তার জন্য আবশ্যক হলো সে ফিরে গিয়ে বাদ পড়া রুকনটি আদায় করবে এবং সেখান থেকে সালাতের পরবর্তী অংশগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করবে।
.
▪️(২). রুকনের স্থানে পৌঁছানোর পর স্মরণ হলে: আর যদি ভুলটি মনে পড়ে তখন, যখন সে ইতোমধ্যে পরবর্তী রাকাতে ঐ রুকনের স্থানে পৌঁছে গেছে, তাহলে সেই দ্বিতীয় রাকাআত প্রথমটির স্থলাভিষিক্ত (বদলি) হবে। এক্ষেত্রে তার উচিত হবে অতিরিক্ত একটি রাকাআত আদায় করে মোট রাকাত সংখ্যা পূর্ণ করা। এই দুই অবস্থার যেকোনো একটিতেই সালাত শেষে দুটি সাহু সিজদাহ (ভুল সংশোধনের সিজদাহ) আদায় করা জরুরি।
.
উদাহরণ স্বরূপ: কোনো ব্যক্তি সালাতের প্রথম রাকাতের প্রথম সিজদার পর ভুল করে দাঁড়িয়ে গেল, অথচ দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে বসেনি এবং দ্বিতীয় সিজদাও আদায় করেনি। এরপর যখন সে ক্বিরাত শুরু করে, তখন তার মনে পড়ে সে দ্বিতীয় সিজদা ও মধ্যবর্তী বৈঠক আদায় করেনি। তখন সে তৎক্ষণাৎ ফিরে গিয়ে বৈঠকে বসবে, তারপর দ্বিতীয় সিজদা আদায় করবে, এরপর পুনরায় দাঁড়িয়ে সালাতের বাকি অংশ সম্পন্ন করবে। সালাম ফিরানোর পর সে দুটি সাহু সিজদা করবে।
.
অন্যদিকে, কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাআতে পৌঁছাবার পূর্বে এই ভুলের কথা স্মরণ না করে, তবে তার ক্ষেত্রেও একটি নিদর্শন রয়েছে। যেমন: সে প্রথম রাকাআতের প্রথম সিজদা শেষ করে দাঁড়িয়ে গেল, কিন্তু দ্বিতীয় সিজদা আদায় করল না এবং দুই সিজদার মাঝেও বসেনি। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাআতে সে যখন দ্বিতীয় সিজদার পূর্বে বসতে গেল, তখন তার পূর্বের ভুলের কথা মনে পড়ে। এ অবস্থায় তার প্রথম রাকাআত বাতিল বলে গণ্য হবে এবং দ্বিতীয় রাকাআতই প্রথম রাকাআত হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই তাকে সালাতে অতিরিক্ত এক রাকাআত যুক্ত করতে হবে, এবং শেষে সালাম ফিরিয়ে দুটি সাহু সিজদা আদায় করতে হবে।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এই মত গ্রহন করেছেন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: এক ইমাম আসরের সালাতে শেষ সিজদা ভুলে যান, তারপর উঠে একটি সম্পূর্ণ রাকাআত পড়েন, তারপর তাশাহুদ ও সালাম দিয়ে সাহু সিজদা করেন এ বিষয়ে আপনার মত কী?
তিনি জবাবে বলেন :هذا هو المشروع ، إذا نسي الإمام سجدة وسلم ثم ذكر أو نبه ، يقوم ويأتي بركعة ثم يكمل ثم يسلم ثم يسجد سجود السهو بعد السلام وهو أفضل ، وهكذا المنفرد حكمه حكمه . وإن سجد للسهو قبل السلام فلا بأس ولكن بعده أفضل ) “এটাই শরিয়তসম্মত পদ্ধতি। যদি ইমাম একটি সিজদা ভুলে যান এবং সালাম ফিরিয়ে ফেলেন, এরপর তা স্মরণ করেন বা কেউ তা স্মরণ করিয়ে দেয়, তাহলে তিনি (ইমাম) দাঁড়াবেন এবং একটি রাকাআত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে সালাত সম্পূর্ণ করবেন,তারপর দুটি সাহু সিজদা (ভুল সংশোধনের সিজদা) করবেন—এটাই উত্তম। একই হুকুম একাকী সালাত আদায়কারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে যদি কেউ সালামের পূর্বেই সাহু সিজদা আদায় করে ফেলে, তাতে কোনো সমস্যা নেই, যদিও সালামের পর করা উত্তম।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ২৭৭)
.
অপরদিকে সালাতে ওয়াজিবের কমতি:
.
কেউ যদি সালাতের সুনির্দিষ্ট আটটি ওয়াজিবের মধ্যে কোনো একটা ওয়াজিব আদায় না করে পরবর্তী স্থানে চলে যায়,উদাহরণস্বরূপ সিজদায়: سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلى (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা) বলতে ভুলে যায় এবং সিজদা থেকে মাথা তুলে ফেলার আগে তার মনে না পড়ে; তাহলে সে ভুলবশত সালাতের একটা ওয়াজিব ত্যাগ করল। এমতাবস্থায় সে নামায চালিয়ে যাবে এবং শেষ বৈঠকে তাশাহুদ দুরুদ অন্যান্য দু’আ পড়ে সালাম ফেরানোর আগে দুটি সাহু সিজদাহ দিবে তারপর সালাম ফিরাবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বৈঠক ছেড়ে দেওয়ার পরও সালাত চালিয়ে গিয়েছিলেন বৈঠকে ফিরে আসেননি। সালাম ফেরানোর আগে তিনি সাহু সিজদাহ দিয়েছিলেন।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:সাহু সিজদা (سجود السهو) কোন কোন কারণে ও কখন করতে হয় এবং কীভাবে তা আদায় করতে হয়?”
.
জবাবে শাইখ বলেন :سجود السهو إذا ترك واجبًا، أو فعل محرمًا سهوًا؛ وجب السجود، أما إذا ترك مستحبًا؛ فلا يلزمه السجود، لو نسي الاستفتاح، أو نسي الدعاء في السجود، أو شبه ذلك، أو نسي رفع اليدين؛ فلا يلزمه السجود، إنما السجود إذا ترك واجبًا سهوًا، من ترك التشهد الأول، وقام، أو نسي سجدة، ثم أتى بالركعة التي تليها وكمل الصلاة، وزاد ركعة.المقصود: إذا ترك واجبًا سهوًا؛ وجب عليه السجود، مثل ترك سبحان ربي الأعلى في السجود، سبحان ربي العظيم في الركوع، ربنا ولك الحمد عند الرفع من الركوع، التكبيرات عند السجو،د والرفع منه، كل هذا إذا نسيه؛ سجد له في آخر الصلاة قبل أن يسلم أفضل، وهكذا لو ترك التشهد الأول.أما إذا ترك ركنًا مثل سجود الصلاة، أو مثل الركوع، ولم يذكره إلا بعد ذلك؛ قامت الركعة التي بعدها مقام الركعة التي تركه منها، وضاعت عليه الركعة التي ترك سجودها، وركوعها، وقامت الركعة التي بعدها مقامها، ثم يأتي بركعة زائدة، ثم إذا كملها؛ سجد للسهو، ثم سلم، وهذا واجب أيضًا؛ لأن الإنسان قد ينسى الركوع، أو ينسى السجود، ولا ينبه، ثم يتنبه، أو ينبه بعد ذلك، فيأتي بركعة كاملة بدلًا من الركعة التي ترك سجودها، أو ركوعها.أما إن نبه في الحال أنه لم يركع وهو هاوٍ للسجود؛ يعود، يقف ثم يركع، أو نبه أنه لم يسجد الثانية؛ يسجد في الحال، إذا نهض ونبه؛ يجلس ويقول: رب اغفر لي، رب اغفر لي، ثم يسجد السجدة الثانية، ويسجد للسهو في آخر الصلاة. نعم.المقدم: جزاكم الله خيرًا، وأحسن إليكم
“যদি কেউ ভুলবশত কোনো ওয়াজিব (আবশ্যিক কাজ) ত্যাগ করে, অথবা নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেলে, তাহলে তার উপর সাহু সিজদা করা আবশ্যক। আর যদি সে কোনো সুন্নত বা মুস্তাহাব (সওয়াবের কাজ) ত্যাগ করে, তাহলে তার উপর সাহু সিজদা আবশ্যক নয়। যেমন যদি কেউ ইস্তিফতাহ (সালাতের শুরুতে পড়া দু‘আ) ভুলে যায়, সেজদায় দু’আ বলা ভুলে যায়, অথবা রফ‘উল ইয়াদাইন (হাত ওঠানো) করতে ভুলে যায় তাহলে এসবের জন্য সাহু সিজদা আবশ্যক নয়। কিন্তু সাহু সিজদা আবশ্যক হয় যদি কেউ ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ত্যাগ করে। যেমন প্রথম তাশাহহুদ পড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়, একটি সেজদা ভুলে যায় এবং পরবর্তী রাকআতে গিয়ে সেটি পূরণ করে, বা এক রাকআত বেশি পড়ে ফেলে। আসল কথা হলো যদি কেউ ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ত্যাগ করে, তাহলে তার উপর সাহু সিজদা আবশ্যক। আরও কিছু উদাহরণ: সিজদায় “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”, রুকুতে “সুবহানা রব্বিয়াল আজিম”,রুকু থেকে ওঠার পর “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ”,সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময়ের তাকবির এগুলো ভুলে গেলে সালাত শেষে সালাম দেওয়ার আগে সাহু সিজদা করা উত্তম। তেমনি, প্রথম তাশাহহুদ ছেড়ে দিলেও সাহু সিজদা করতে হবে। কিন্তু যদি কেউ সালাতের কোনো রুকন (মূল স্তম্ভ) যেমন সিজদা বা রুকু ছেড়ে দেয় এবং পরে তা মনে পড়ে, তাহলে যেই রাকআতে এটি ছুটেছে, সেই রাকআতটি বাতিল বলে গণ্য হবে, তারপরের রাকআতটি তার স্থলাভিষিক্ত (বিকল্প) হিসেবে গণ্য হবে। এবং সে যেন একটি অতিরিক্ত রাকআত আদায় করে। সালাত শেষ হলে দুটি সাহু সিজদা আদায় করে সালাম ফিরাবে। এটিও ওয়াজিব, কারণ মানুষ রুকু বা সিজদা ভুলে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে তা স্মরণ হতে পারে। তবে যদি কেউ সঙ্গে সঙ্গে ভুলটি ধরতে পারে যেমন সিজদায় যাওয়ার সময় বুঝে ফেলে সে রুকু করেনি, তাহলে সে দাঁড়িয়ে রুকু করবে। অথবা বুঝে ফেলে দ্বিতীয় সিজদা করা হয়নি, তাহলে সে তখনই সেই সিজদা আদায় করবে। আর যদি সে দাঁড়িয়ে যায় এবং তখন কেউ তাকে ভুল ধরিয়ে দেয়, তাহলে সে বসে “রব্বিগফিরলি,রব্বিগফিরলি” বলবে, তারপর দ্বিতীয় সিজদা আদায় করবে। অতঃপর সালাতের শেষে সাহু সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আপনাকে তাঁর অনুগ্রহে ধন্য করুন।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-৯৯৩৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: