শিয়া এবং আহলে সুন্নাহর মাঝে ঐক্য কি আদৌ সম্ভব

প্রশ্ন: পথবষ্ট শিয়া এবং আহলে সুন্নাহ’র মাঝে ঐক্য কি আদৌ সম্ভব?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি। অতঃপর আমরা ইতোমধ্যেই শিয়াদের মৌলিক কুফরিপূর্ণ আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কে অবহিত হয়েছি; ইরানের শিয়া সম্প্রদায় মুসলিম হিসেবে গণ্য হয় কি না—তাও স্পষ্ট করেছি।একটি বিভিন্ন মহলে মাঝে মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখা যা আর তা হচ্ছে: শিয়া-সুন্নি ঐক্য আদৌ সম্ভব কি? বাস্তবতার মাটিতে তার অবস্থানই বা কতটুকু? এবং এমন ঐক্যের আহ্বানকারীদের ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অবস্থান কী? প্রিয় পাঠক! আমাদের জানা আবশ্যক যে,ইসলামে প্রকৃত ঐক্যের ভিত্তিভূমি হলো বিশুদ্ধ তাওহীদ, নবী ﷺ-এর পথনিষ্ঠ অনুসরণ ও কুরআন-সুন্নাহ-সম্মত সহীহ ফাহম (অনুধাবন) বাহ্যিকভাবে পরস্পর একই কিবলা, এক কুরআন ও একক হজের কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও, যদি সহীহ আকীদা-এ-ইমান ও মানহাজে ঐক্য না থাকে, তবে সেই “ঐক্য” কেবল ঝলকানি মাত্র; তার ভিত নড়বড়ে, ফলও অস্থায়ী। তাই বিভ্রান্ত আকীদা ও বিকৃত মানহাজ ঠিক না করে শুধু সৌহার্দ্যের ঐক্যের স্লোগান তোলা আত্ম-প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্থায়ী ঐক্যের পথ একটাই বাতিল বিশ্বাস থেকে তাওবা করে বিশুদ্ধ তাওহিদ-ভিত্তিক মানহাজে ফিরে আসা। সালাফগণও বারবার এ কথাই উচ্চারণ করেছেন: সহীহ আকীদা ছাড়া সত্যিকারের সম্পর্ক ও ঐক্যের কোনো অবকাশ নেই।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মতনৈক্য করা যাবে আর কোন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মতনৈক্য করা যাবে না? মুসলিমদের দ্বীনের ব্যাপারে এগুলো কি আবশ্যক?
উত্তরে শাইখ বলেন :
الاختلاف على قسمين :القسم الأول : الاختلاف في مسائل العقيدة ، وهذا لا يجوز ؛ لأنّ الواجب على المسلمين اعتقاد ما دلَّ عليه الكتاب والسُّنَّة ، وعدم التّدخُّل في ذلك بعقولهم واجتهاداتهم ؛ لأنّ العقيدة توقيفيّة ، ولا مجال للاجتهاد والاختلاف فيها .القسم الثاني : اختلاف في المسائل الفقهيَّة المستنبطة من النُّصوص ، وهذا لابدّ منه ؛ لأنّ مدارك الناس تختلف ، ولكن يجب الأخذ بما ترجّح بالدّليل من أقوالهم ، وهذا هو سبيل الخروج من هذا الخلاف .ويجب على المسلم أن يهتمَّ بأمور دينه ، ويحافظ على أداء ما أوجب الله عليه ، ويترك ما حرَّمَ الله عليه ، وأن يتحلَّى بالأخلاق الفاضلة مع إخوانه ، وأن يصدُقَ في معاملته ، ويحفظ أمانته ، ويكون قدوةً صالحةً لغيره .ويجب أن يتربَّوا على التّمسّك بالدّين والأخلاق الفاضلة ، وأن يبتعدوا عن الأخلاق الرّذيلة وقرناء السُّوء ، وأن يهتمُّوا بما ينفعهم في دينهم ودُنياه ، وأن يكونوا قوَّة للإسلام والمسلمين .
“মতানৈক্য দুইভাবে হয়ে থাকে:
প্রথম প্রকার: আক্বীদার মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা, আর এটা জায়েজ নেই; কেননা মুসলিমদের জন্য আবশ্যক হলো তারা কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহর (হাদিসের) নির্দেশনার উপর ঈমান স্থাপন করা,ওই বিষয়ে তাদের ইজতিহাদ ও গবেষণায় হস্তক্ষেপ না করা। কেননা আক্বীদা হচ্ছে তাওকিফি বিষয় (বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর) যার মধ্যে মতানৈক্য ও ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই।
.
দ্বিতীয় প্রকার: ফিকহি মাসআয়েলের ক্ষেত্রে মতভেদ যেগুলো বিভিন্ন নস (কুরআন, হাদীস ইত্যাদি) থেকে ইস্তিবাত বা নির্যাস গ্রহণ। এ ধরনের মতপার্থক্য এক অর্থে অনিবার্য, কেননা মানুষের বোধশক্তি, উপলব্ধি এবং বিশ্লেষণক্ষমতা একে অপরের থেকে ভিন্ন। তবে এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো যে মতটি দলীল প্রমাণের দিক থেকে অধিকতর দৃঢ় ও গ্রহণযোগ্য, সেটিকে গ্রহণ করা। এটিই এমন মতভেদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সঠিক ও সংগত পথ।একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো:সে যেন তার দ্বীনের বিষয়ে যত্নবান হয়, আল্লাহ তাকে যা ফরজ করেছেন তা যথাযথভাবে পালন করে, আল্লাহ যেসব কাজ হারাম করেছেন তা থেকে বিরত থাকে। তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে উত্তম আচরণের মাধ্যমে সজ্জিত হওয়া, তার কাজ কর্মের মাধ্যমে বিশ্বস্ততা অর্জন করা, আমানত রক্ষা করা অন্যের জন্য সৎ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা। তাদের (তরুণ প্রজন্মের) আবশ্যক হলো,দ্বীন এবং উত্তম চরিত্র ধারণ করা,খারাপ চরিত্র ও খারাপ সঙ্গীদের থেকে দূরে থাকা,যা তাদের জন্য দ্বীন ও দুনিয়ার দিক থেকে উপকারী, সেসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া,এবং তারা যেন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য এক শক্তি হিসেবে পরিণত হয়।”(আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া আশ-শাইখ সালেহ আল-ফাওযান, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪০৭-৪০৮, প্রশ্ন নং: ২৪১)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছে,সম্মানিত শাইখ, এটা তো সুবিদিত যে শী‘আ ও মুরজিয়া—এরা সবাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সঙ্গে মারাত্মকভাবে দ্বিমত পোষণ করে থাকে। অথচ কিছু আলেম এমন একটি নীতিমালা বর্ণনা করেন, যেটিকে তাঁরা ‘সোনালী নীতি’ বলে থাকেন। নীতিটি হলো “যেসব বিষয়ে আমরা একমত, সেসব বিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করব, আর যেসব বিষয়ে মতভেদ আছে, সেসব বিষয়ে একে অপরকে মার্জনা (ক্ষমা) করব।” তাহলে প্রশ্ন হলো, আমরা কীভাবে ঐই শী‘আদের মার্জনা করব? তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন, هذه القاعدة الذهبية ليست قاعدة ذهبية ولا تستحق أن تكون قاعدة، بل ما اتفقنا فيه فهو من نعمة الله عز وجل، والإتفاق خير من الإختلاف، وما اختلفنا فيه فقد يعذر فيه المخالف وقد لا يعذر، فإذا كان الاختلاف في أمر يسوغ فيه الاختلاف فهذا لا بأس به، وما زال الأئمة يختلفون، فالإمام أحمد والشافعي ومالك وأبو حنيفة كلهم يختلفون، وأما إذا كان الخلاف لا يعذر فيه كالخلاف في العقائد، فإنه لا يعذر بعضنا بعضاً، بل الواجب الرجوع إلى ما دل عليه الكتاب والسنة، فعلى المرجئة وعلى الشيعة وعلى كل مبتدع أن يرجع إلى الكتاب والسنة ولا يعذر، فهذه القاعدة ليست قاعدة ذهبية، ولعلك تسميها قاعدة خشبية. عرفت الآن الذي يسوغ فيه الاجتهاد، هذا لا بأس أن نسمح للمخالف، والذي لا يسوغ فيه الاجتهاد كمسائل العقائد التي يخالف فيها الإنسان السلف لا يمكن أن يعذروا. “এই (তথাকথিত) সোনালী মূলনীতি আসলে সোনালী মূলনীতি নয়। আর এটি মূলনীতি হওয়ারই যোগ্য (হকদার) নয়।বরং আমরা যে বিষয়ে একমত হয়েছি, তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এক বিশাল নিয়ামত।আর মতৈক্য মতদ্বৈধতার চেয়ে উত্তম।পক্ষান্তরে আমরা যে ব্যাপারে একমত নই,সে ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিকে মার্জনা (ক্ষমা) করা হতে পারে, আবার মার্জনা (ক্ষমা) করা নাও হতে পারে। মতানৈক্য যখন এমন বিষয়ে সংঘটিত হয়,যে বিষয়ে মতানৈক্যের অবকাশ আছে, তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। ইমামগণ সবসময়ই এমন বিষয়ে মতানৈক্য করে এসেছেন—ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম মালিক এবং ইমাম আবূ হানীফাহ (রহিমাহুমুল্লাহ) তাঁরা সবাই মতানৈক্য করেছেন। তবে যদি মতানৈক্য এমন ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়, যেক্ষেত্রে মতানৈক্য (মার্জনা) ক্ষমার্হ নয় যেমন ‘আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিষয়ে মতানৈক্য—সেক্ষেত্রে পরস্পরকে মার্জনা করা হবে না। বরং ওই বিষয়ের দিকে ফিরে যাওয়া ওয়াজিব, যা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত (প্রমাণিত)। সুতরাং মুরজিয়া, শী‘আ এবং প্রত্যেক বিদআতীকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে হবে; এ ব্যাপারে তাদের কোনো উযর গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই, এই (তথাকথিত) সোনালী মূলনীতি আসলে সোনালী নয় তুমি একে কাষ্ঠবৎ মূলনীতি (অর্থাৎ মূল্যহীন) বললেই অধিকতর যথার্থ হবে। তুমি এখন বুঝে গেছ যে, যেসব বিষয়ে ইজতিহাদের অবকাশ রয়েছে, সেখানে ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি (মার্জনা) বা নমনীয়তা দেখানো যেতে পারে। কিন্তু যেসব বিষয়ে ইজতিহাদের সুযোগ নেই বিশেষ করে আকীদাগত বিষয়ে কেউ যদি সালাফদের বিরোধিতা করে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে মার্জনা করা সম্ভব নয়।”(ইবনু ‘উসাইমীন, লিক্বাআতুল বাবিল মাফতূহ; লিক্বা নং: ৭৫)।
.
আসুন দেখি রাফিদ্বী শিয়াদের সাথে মুসলিমদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব? কিনা সে বিষয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণ কী বলেছেন।
·
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
التقريب بين الرافضة وبين أهل السنة غير ممكن؛ لأن العقيدة مختلفة، فعقيدة أهل السنة والجماعة توحيد الله وإخلاص العبادة لله سبحانه وتعالى، وأنه لا يدعى معه أحد لا ملك مقرب ولا نبي مرسل، وأن الله سبحانه وتعالى هو الذي يعلم الغيب، ومن عقيدة أهل السنة محبة الصحابة رضي الله عنهم جميعا والترضي عنهم، والإيمان بأنهم أفضل خلق الله بعد الأنبياء، وأن أفضلهم أبو بكر الصديق، ثم عمر، ثم عثمان، ثم علي، رضي الله عن الجميع، والرافضة خلاف ذلك فلا يمكن الجمع بينهما، كما أنه لا يمكن الجمع بين اليهود والنصارى والوثنيين وأهل السنة، فكذلك لا يمكن التقريب بين الرافضة وبين أهل السنة لاختلاف العقيدة التي أوضحناها.
“রাফেযী (শিয়া) সম্প্রদায় ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গঠন করা সম্ভব নয়; কেননা তাদের আকীদা (বিশ্বাস) একে অপরের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ তাদের আকীদা (বিশ্বাসমূলক বিষয়) একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ হলো আল্লাহকে এক বলে গণ্য করা,ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই একনিষ্ঠ করা, এই বিশ্বাস পোষণ করা যে দু‘আর ক্ষেত্রে তাঁর সাথে আর কাউকে শরিক করা যাবে না, না কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতাকে, আর না কোনো প্রেরিত নাবীকে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করা যে,অদৃশ্যের জ্ঞান (গায়েব) কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তাআলাই জানেন। আহলুস সুন্নাহর ‘আক্বীদাহর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সকল সাহাবীকে (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ভালোবাসা এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, আর এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, তাঁরা হলেন নাবীগণের পরে আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি, আর তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্ব, তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমান, তারপর ‘আলী। আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। পক্ষান্তরে, রাফেযীদের অবস্থা এই আক্বীদার বিপরীত। সুতরাং তাদের (রাফিদ্বীদের) সঙ্গে আহলুস সুন্নাহর মাঝে ঐক্য বা সামঞ্জস্য তৈরি করা সম্ভব নয়; যেমনটা ইহুদি, খ্রিস্টান,মূর্তিপূজারীদের সাথে আহলুস সুন্নাহর মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা অসম্ভব — ঠিক তেমনি রাফিদ্বী সম্প্রদায় এবং আহলুস সুন্নাহকে পরস্পরের কাছে আনা সম্ভব নয় ‘আক্বীদাহর ভিন্নতার কারণে, যে ‘আক্বীদাহ আমরা ইতিপূর্বে বর্ণনা করলাম।”(বিন বায;মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ২৭; পৃষ্ঠা: ৩২৫)
·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে: কতিপয় দা‘ঈ এবং ত্বালিবুল ‘ইলম শিয়া ও রাফিদ্বীদের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, তারা আমাদের ভাই। আমাদের জন্য কি এই কথা বলা বৈধ? এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন:
نبرأ إلى الله منهم ونبرأ إلى الله من هذا القول، ليسوا إخواننا، والله ليسوا إخواننا، بل هم إخوان الشيطان، لأنهم يسبون أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها زوج النبي ﷺ التي إختارها الله لنبيه ﷺ الصديقة بنت الصديق، ويكفرون أبا بكر وعمر ويلعنونهما ويكفرون الصحابة عمومًا إلا أهل البيت علي بن أبي طالب رضي الله عنه، مع أنهم هم أعداء علي بن أبي طالب، علي يبرأ منهم رضي الله عنه، بريءٌ منهم؛ علي إمامنا وليس إمامهم؛ إمام أهل السنة؛ ليس إمام الرافضة الخبثاء. فنحن نبرأ إلى الله منهم؛ وليسوا إخواننا؛ ومن قال إنهم إخواننا فليتب إلى الله ويستغفر الله؛ والله -جلّ وعلا- أوجب علينا البراءة من أهل الضلال وموالاة أهل الإيمان.
“আমরা আল্লাহর কাছে তাদের (রাফিদ্বীদের) থেকে (নিজেদেরকে) মুক্ত ঘোষণা করছি এবং আল্লাহর কাছে এই কথা থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি। তারা আমাদের ভাই না। আল্লাহর কসম, তারা আমাদের ভাই না। বরং তারা শয়তানের ভাই। কেননা তারা মু’মিনদের জননী ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে গালি দেয়। যিনি ছিলেন নাবী (ﷺ)-এর সহধর্মিনী, যাঁকে স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নাবীর (ﷺ) জন্য নির্বাচিত করেছেন, এবং যিনি ছিলেন সিদ্দীক্ব তনয়া সিদ্দীক্বাহ।তারা আবূ বাকার ও ‘উমারকে কাফির বলে এবং তাঁদেরকে অভিসম্পাত করে। তারা আমভাবে সকল সাহাবীকে কাফির বলে, শুধু আহলে বাইতের কয়েকজন সাহাবী বাদে, যে সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত হলেন ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। যদিও তারাই হলো ‘আলী বিন আবূ ত্বালিবের শত্রু। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) নির্দোষ এবং তাদের থেকে মুক্ত। ‘আলী হলেন আমাদের ইমাম, তাদের ইমাম নন। তিনি আহলুস সুন্নাহ’র ইমাম, রাফিদ্বী খবিসদের ইমাম নন।আমরা আল্লাহর কাছে তাদের থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি। তারা আমাদের ভাই না। যে ব্যক্তি বলেছে, তারা আমাদের ভাই, সে যেন আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে। মহান আল্লাহ পথভ্রষ্টদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মু’মিনদের সাথে মিত্রতা পোষণ করা আমাদের ওপর আবশ্যক করেছেন।” [দ্র.: www.tasfiatarbia(ডট)org/vb/showthread.php?t=21030.]
·
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনুষদ সদস্য ও অধ্যাপক, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫২ হি./১৯৩৩ খ্রি.] বলেছেন, فالذي يدعو إلى التقريب بين السنة والشيعة إما جاهل بحقيقة المذهبين، وإما متجاهل مغالط “যে ব্যক্তি সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়কে পরস্পরের কাছে আনয়ন করার দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সে হয় এই দুই সম্প্রদায়ের প্রকৃতত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ, আর না হয় অজ্ঞতার ভানকারী ভ্রষ্ট।” [দ্র.:https://tinyurl(ডট)com/y2esu52w (ইসলামওয়েব ডট নেটের আর্টিকেল। অনুবাদ আব্দুল্লাহ মৃধা হাফি.)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনার মূল কথা এই যে বিশুদ্ধ আকিদা ও সহীহ তাওহীদের ভিত্তি ছাড়া মুসলিমদের মাঝে প্রকৃত ঐক্য সম্ভব নয়। কুরআন ও সুন্নাহর বিশুদ্ধ মানহাজে একতাবদ্ধ না হলে ঐক্যের দাবি কেবল একটি শ্লোগানই থেকে যাবে। আহলুস সুন্নাহর যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানগণের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের দাবি করা সম্পূর্ণরূপে বাতিল, ভ্রান্ত এবং জুলুম। আল্লাহ আমাদেরকে এরকম বাতিল মতাদর্শ থেকে হেফাজত করুন এবং সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: