শাউওয়াল মাসের সিয়াম সম্পর্কে ২০টি মাস‘আলা

*শাউওয়াল মাসের সিয়াম সম্পর্কে ২০টি মাস‘আলা*
??????????????
*১. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের ফযীলত কী?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযানের সিয়ামের পর শাউওয়ালের ছয় সিয়াম পূর্ণ বছর সিয়ামের সমান”। ফতোয়া: (২০/১৭) (দলীলের জন্য মুসলিমের হাদীস দেখুন)।

*২. শাউওয়ালের ছয়টি সিয়াম কি নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমান?*
ইবন উসাইমীন বলেন:
“নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমান”। ফতোয়া: (২০/১৭)

*৩. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখার পদ্ধতি কী?*
ইবন বায বলেন: “মুমিন ব্যক্তি শাউওয়ালের পুরো মাস থেকে ছয়টি দিন বাছাই করে তাতে সিয়াম রাখবে। মাসের শুরুতে অথবা মাঝে অথবা শেষে যেভাবে ইচ্ছা সিয়াম রাখার অনুমতি আছে। চাইলে পৃথকভাবে রাখতে পারে”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯০)

*৪. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কীভাবে রাখা উত্তম?*
ইবন বায বলেন: “সিয়াম দ্রুত ও মাসের শুরুতে লাগাতার রাখাই উত্তম”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯০)
ইবন উসাইমীন বলেন: “উত্তম হচ্ছে ঈদের পরেই সিয়াম রাখা এবং সেগুলো যেন হয় লাগাতার”। মাজমুউল ফতোয়া: (২০/২০)

*৫. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কি লাগাতার রাখা জরুরি?*
ইবন বায বলেন: “লাগাতার ও পৃথক উভয়ভাবে রাখা বৈধ”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯১)

*৬. যদি কেউ নিয়মিত শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখে, সেটা কি তার ওপর প্রতি বছর ওয়াজিব?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “যদি কতক বছর সিয়াম রাখে এবং কতক বছর না রাখে কোনো সমস্যা নেই, কারণ এটা নফল, ওয়াজিব সিয়াম নয়”। মাজমুউল ফতোয়া: (২১/২০)

*৭. ছয় সিয়ামে কি রাত থেকে নিয়ত করা জরুরি?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “ছয়টি সিয়াম রাখার জন্য ফজরের পূর্ব থেকে নিয়ত করা জরুরি যেন পূর্ণ দিন পর্যন্ত সিয়াম প্রলম্বিত হয়”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৯/১৮৪)

*৮. কেউ বলে শাউওয়ালের ছয় সিয়াম বিদ‘আত?*
ইবন বায বলেন: “এ কথাই বাতিল”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৮৯)

*৯. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কাযা করা কি বৈধ, যদি কেউ কারণবশত ত্যাগ করে?*
ইবন বায বলেন: “শাউওয়াল চলে যাওয়ার পর তার কাযা করা বৈধ নয়, কারণ এটা সুন্নত যার সময় শেষ, কারণবশত ত্যাগ করা হোক কিংবা কারণ ছাড়াই ত্যাগ করা হোক”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৮৯)

*১০. শর‘ঈ কারণবশত শাউওয়ালের ছয় সিয়াম ত্যাগকারীর বিধান?*
ইবন বায বলেন: “শাউওয়ালের যতটা সিয়াম তুমি রাখবে তার সাওয়াব তুমি পাবে, তবে শর‘ঈ কারণবশত যদি সিয়াম রাখা তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় আশা করছি তুমি পূর্ণ সাওয়াব হাসিল করবে, আর শাউওয়ালের ছুটে যাওয়া সিয়ামের কাযা নেই”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৫)

*১১. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের সাথে কাযা মিলিয়ে রাখার বিধান?*
শায়খ উষায়মিন রহঃ বলেছেন, একি নিয়তে ফরজ কাযা এবং শাওয়ালের নফল রাখবে না।
আগে ফরজ কাজা আদায় করবে এরপর নফল রাখবে।( ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম)

*১২. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম জিলকদ মাসে কাযা করা বৈধ?*
ইবন উসাইমীন বলেন:
১. যদি আমরা মনে করি, সফর অথবা অসুস্থতা অথবা নিফাসের কারণে কারো উপর পূর্ণ রমযানের কাযা ছিল, সে শাউওয়াল মাস সিয়াম রাখল এবং কাযাতেই তার পূর্ণ শাউওয়াল অতিবাহিত হল, তার পক্ষে জিলকদ মাসে ছয়টি সিয়াম রাখা বৈধ।
২. আর যদি সে অলসতা করে, এবং শাউওয়ালের কয়েকটি দিন চলে যায় যেখানে সে রমযানের কাযা করতে সক্ষম ছিল কিন্তু করে নি, অতঃপর শাউওয়ালের শেষ দিকে রমযানের কাযা করে এবং শাউওয়াল শেষে জিলকদ মাসে সিয়াম রাখে, এটা তার পক্ষে যথেষ্ট হবে না”। লিকাউল বাবিল মাফতুহ।

*১৩. মান্নত নাকি শাউওয়াল কোন সিয়াম আগে রাখবো?*
ইবন বায বলেন: “তোমার ওপর প্রথম জরুরি হচ্ছে মান্নতের সিয়াম পূর্ণ করা, অতঃপর শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা যদি তা সম্ভব হয়। কারণ, শাউওয়ালের ছয় সিয়াম মুস্তাহাব; পক্ষান্তরে মান্নতের সিয়াম ওয়াজিব”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব: (৩/১২৬১)

*১৪. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের জন্য কি নিয়ত জরুরি?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযান পরবর্তী শাউওয়ালের ছয় সিয়ামে যদি কেউ দিনে নিয়ত করে তাহলে সে পূর্ণ দিনের সাওয়াব পাবে না। যদি মনে করা হয় কেউ প্রথম দিন জোহরের সময় নিয়ত করে অতঃপর অবশিষ্ট পাঁচটি সিয়াম রাখে, তাহলে সে ছয়টি সিয়াম পূর্ণ পায় নি, পাঁচ দিন ও এক দিনের অর্ধেক, কারণ নিয়ত থেকেই সাওয়াব লিখা আরম্ভ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﺎﻟﻨﻴﺎﺕ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻟﻜﻞ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺎ ﻧﻮﻯ ».
“আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই যা সে নিয়ত করেছে”। এ ব্যক্তি দিনের শুরুতে সিয়াম রাখার নিয়ত করে নি অতএব তার পূর্ণ দিন সিয়াম হয় নি”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।

*১৫. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের হিকমত কী?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “শাউওয়ালের সিয়াম দ্বারা ফরয পূর্ণ করা উদ্দেশ্য, কারণ শাউওয়ালের ছয় সিয়াম ফরয সালাত পরবর্তী সুন্নতে রাতেবার মতো, যার দ্বারা ফরয সালাতে সৃষ্ট ত্রুটি পূর্ণ করা হয়”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।

*১৬. শাউওয়ালের তিনটি বা পাঁচটি সিয়াম পালনকারী কি সাওয়াব পাবে?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “হ্যাঁ, সংখ্যানুপাতে সাওয়াব পাবে, তবে পূর্ণ সাওয়াব পাবে না যার ওয়াদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নের বাণীতে করেছেন:
« ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺛﻢ ﺃﺗﺒﻌﻪ ﺳﺘّﺎً ﻣﻦ ﺷﻮﺍﻝ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﺻﺎﻡ ﺍﻟﺪﻫﺮ ».
“যে রমযানের সিয়াম রাখল অতঃপর তার পশ্চাতে শাউওয়ালের ছয়টি রাখল, সে যেন পুরো বছর সিয়াম রাখল”। দেখুন: ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।

*১৭. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের সাথে সোম ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামের নিয়ত করা কি বৈধ?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “যদি শাউওয়ালের ছয় সিয়াম সোম ও বৃহস্পতিবার হয়, তাহলে নিয়তের কারণে শাউওয়াল এবং সোম ও বৃহস্পতিবারের সাওয়াব পাবে”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।

*১৮. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কি রমযানের কাযা হিসেবে গণ্য করা বৈধ?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “শাউওয়ালের ছয় সিয়ামকে রমযানের কাযা হিসেবে গণ্য করা বৈধ নয়। কারণ, ছয় সিয়াম রমযানের অনুগামী, যেমন ফরয সালাতের অনুগামী তার পরবর্তী সুন্নত”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।

*১৯. কাফফারার সিয়ামের পূর্বে কি শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা বৈধ?*
ইবন বায বলেন: “ওয়াজিব হচ্ছে কাফফারার সিয়াম দ্রুত আদায় করা, তার পূর্বে নফল রাখা বৈধ নয়, কারণ শাউওয়ালের ছয় সিয়াম নফল আর কাফ্ফারার সিয়াম ফরয। কাফ্ফারা দ্রুত আদায় করা ওয়াজিব”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৪)

*২০. রমযানের কাযা যার ওপর রয়েছে, সে কি কাযা আদায় করার পূর্বে শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখলে হাদীসে বর্ণিত সাওয়াব পাবে?*
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযান মাসের সিয়াম পূর্ণ করা ব্যতীত শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের ফযীলত হাসিল হবে না”। মাজমুউল ফতোয়া: (২০/১৮)
ইবন বায বলেন: “নিয়ম হচ্ছে কাযা দিয়ে সিয়াম শুরু করা, দ্রুত কাযা আদায় করাই ওয়াজিব, যদিও ছয়টি সিয়াম ছুটে যায়, কারণ ফরয নফলের চেয়ে মুকাদ্দিম বা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৩)

সমাপ্ত