শরিকানা (ভাগা) কুরবানি প্রসঙ্গে কিছু কথা

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।

শিরোনামের বিষয়টির সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা খুব ভালো করেই জানেন—বাংলাদেশে কারা এই বিষয়ে ফিতনা ছড়িয়েছেন এবং এখনও ছড়াচ্ছেন। সেজন্য তাদের নাম মেনশন করছি না। কিন্তু তাদের ছড়ানো ফিতনা এবং বাতিল দাবির মূলোৎপাটন করা জরুরি মনে করছি। কারণ তাদের কেউ কেউ জোর গলায় বলছেন, “যারা মুক্বীম (মুসাফির নয় এমন) অবস্থায় শরিক কুরবানি জায়েজ বলেন—তারা গোঁড়ামি করছেন, তারা হক থেকে দূরে রয়েছেন!” লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত, চুলচেরা বিশ্লেষণপূর্ণ আর্টিকেল লিখতে পারব না। কারণ জরুরি ভিত্তিতে লিখছি, পরে কখনো চেষ্টা করব বিস্তারিত লেখার। যাইহোক, বেশি কথা না বাড়িয়ে আসুন, মূল আলোচনা শুরু করি। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।

·
এটা সর্বজনবিদিত যে, ছাগলে শরিক কুরবানি বৈধ নয়। সুতরাং, সেটা আমাদের আলোচনার বিষয়ও নয়। আমরা আলোচনা করব উট ও গরুতে শরিক কুরবানির বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে। যাইহোক মুক্বীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় উট ও গরুতে শরিক হওয়া নাবী ﷺ এর একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস এবং ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মহামূল্যবান বাণী ও ফাতাওয়া দ্বারা প্রমাণিত ও সুসাব্যস্ত। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ—

১. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فِي سَفَرٍ فَحَضَرَ الأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِي الْجَزُورِ عَنْ عَشَرَةٍ وَالَبَقَرَةِ عَنْ سَبْعَةٍ “আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। ইতোমধ্যে কুরবানির ঈদ এসে গেল। আমরা একটি উট দশজনে এবং একটি গরু সাতজনে শরিক হয়ে কুরবানি করলাম।” [তিরমিযী, হা/৯০৫; নাসাঈ, হা/৪৩৯২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

২. জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, نَحَرْنَا بِالْحُدَيْبِيَةِ مَعَ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ “আমরা হুদাইবিয়াহ নামক স্থানে নাবী ﷺ এর সাথে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছি।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; আবূ দাউদ, হা/২৮০৯; তিরমিযী, হা/৯০৪, ১৫০২, নাসাঈ, হা/৪৩৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩২]

৩. জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْعُمْرَةِ فَنَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ نَشْتَرِكُ فِيهَا “আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে তামাত্তু‘ হজ করেছি। তখন আমরা সাত শরিকে মিলে একটি গরু কুরবানি করেছি।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; শেষোক্ত হাদীস দুটি একই নম্বরের আওতায় বর্ণিত হয়েছে, শাইখ ফুআদ ‘আব্দুল বাক্বী’র তারক্বীম (নাম্বারিং) অনুযায়ী]

কেউ কেউ কুরবানিতে শরিক হওয়া সফর ও হজের সাথে খাস (নির্দিষ্ট) করেছেন। কারণ উপরিউক্ত হাদীসগুলোতে শুধু সফরের কথা এসেছে। আমি বলি, তাদের এই খাসকরণের পিছনে কোনো দলিল নেই। এই খাসকরণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্ভট এবং দলিলবিহীন। আমি পয়েন্ট আউট করে তাদের এই অযৌক্তিক কথা এবং দলিলবিহীন বিভ্রান্তির দলিলভিত্তিক জবাব দিব, ইনশাআল্লাহ।

·

❏ বিভ্রান্তির অপনোদন:

শরিকানা (ভাগা) কুরবানিকে যারা সফরের সাথে খাস বলে দাবি করছেন, তাদের এই ভ্রান্ত দাবির জবাব নিম্নরূপ:

·
প্রথমত, উপরিউক্ত হাদীসগুলো বা শরিকানা কুরবানি সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসগুলোর মধ্যে কোনো একটি হাদীসেও বলা হয়নি যে, মুক্বীম অবস্থায় কুরবানিতে শরিক হওয়া বৈধ নয়। একবারও এ কথা বলা হয়নি যে, শরিকানা কুরবানি শুধুমাত্র সফরের সাথেই খাস।

·
দ্বিতীয়ত, সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ যেভাবে কুরবানি অধ্যায়ে হাদীসগুলো এনেছেন; এ থেকেও বুঝা যায় যে, তাঁরা ওই সব হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়া বুঝেননি। এটা সুবিদিত যে, মুহাদ্দিসগণ তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেসব বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনা করেন, সেটাই তাঁদের ফিক্বহ (বুঝ)। সুতরাং আসুন, তাঁদের বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনার ক্যাটাগরিটা দেখে নিই।

·
১. ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) ওপরে উল্লিখিত ১ নং হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে—“বাবুন ফিল ইশরাকি ফিল উদ্বহিয়্যাহ।” অর্থাৎ, “কুরবানিতে শরিক হওয়ার অনুচ্ছেদ।” [সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল হাজ্ব (হজ অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৬৬]

এরপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরিক হয়ে কুরবানি করার আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم “এর ওপর নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গ এবং অন্যান্য আহলুল ‘ইলমের আমল রয়েছে।”

এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় সুনানে তিরমিযীর ভাষ্যকার ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “অর্থাৎ, হাদ্ঈ* ও কুরবানির উট ও গরুতে সাত জন শরিক হওয়ার বৈধতার আমল রয়েছে।” [ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), তুহফাতুল আহওয়াযী; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৮৮; দারুল ফিকর, দিমাশক্ব কর্তৃক প্রকাশিত (সন-তারিখ বিহীন)]

[*]. টীকা: হাদ্ঈ হলো সেই চতুষ্পদ জন্তু—যাকে আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানির দিনগুলিতে হারামে তথা মক্কায় জবেহ করা হয় ‘তামাত্তু’ বা ‘ক্বিরান’ হজ করার কারণে, অথবা হজ বা ওমরার কোনো ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে বা ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে।

·
২. ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) এভাবে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, “বাবুন ফিল বাক্বারি ওয়াল জাযূরি ‘আন কাম তুজযাউ।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: কুরবানিতে গরু ও উট কত জনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুদ্ব দ্বাহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৭]

এরপর যে হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়ার ধারণা করা হয়, সে হাদীসটিই এই অনুচ্ছেদের অধীনে এনেছেন। হাদীসটি হলো—জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورَ عَنْ سَبْعَةٍ نَشْتَرِكُ فِيهَا “আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে তামাত্তু‘ হজ করতাম এবং সাতজনে মিলে একটি গরু কুরবানি করতাম। অনুরূপভাবে সাতজনে শরিক হয়ে একটি উট কুরবানি করতাম।” [আবূ দাঊদ, হা/২৮০৭; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত উক্ত হাদীসের পরেই তিনি ওই জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল ﷺ এর ক্বওলী (বাচনিক) হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হলো—জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেন, الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ “একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানি করা যাবে)।” [আবূ দাঊদ, হা/২৮০৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর বর্ণনাকৃত উক্ত হাদীসদ্বয়কে সফরের সাথে খাস মনে করতেন না, বরং মুক্বীমের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য মনে করতেন। সেজন্যই তিনি ‘শরিক কুরবানি’ অধ্যায়ে হাদীস দুটো এনেছেন। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত উক্ত হাদীসদ্বয়কে তিনি সফরের সাথে খাস মনে করতেন না—এর প্রমাণে আরও বলা যায় যে, তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) সফরে কুরবানি করা সম্পর্কে স্বতন্ত্র একটি অনুচ্ছেদ রচনা করা সত্ত্বেও সেখানে জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীস দুটি না এনে ভিন্ন একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। অনুচ্ছেদটি হলো—“বাবুন ফিল মুসাফিরি ইউদ্বাহহী।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: মুসাফিরের কুরবানি করা।” [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুদ্ব দ্বাহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ১২]

·
৩. ইমাম নাসাঈ (রহিমাহুল্লাহ) যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি (উপরিউক্ত ১ নং হাদীস) নিয়ে এসেছেন, তার নামকরণ করা হয় এভাবে, “বাবু মা তুজযি’উ ‘আনহুল বাদানাতু ফিদ্ব দ্বাহাইয়া।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: কুরবানিতে একটি উট যত জনের পক্ষে যথেষ্ট।” [সুনানুন নাসাঈ, কিতাবুদ্ব দ্বহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ১৫]

·
৪. ইমাম ইবনু মাজাহ (রাহিমাহুল্লাহ) কুরবানি অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন, তার শিরোনাম এই রকম—“বাবু ‘আন কাম তুজযি’উল বাদানাতু ওয়াল বাক্বারাহ।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট?” [সুনানু ইবনি মাজাহ, কিতাবুল আদ্বাহী (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৫]

সম্মানিত পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, মুহাদ্দিসগণ বাবগুলো রচনার ক্ষেত্রে ঘুণাক্ষরেও সফরের কথা বলেননি। তাঁরা ব্যাপকভাবে বলেছেন, ‘উট ও গরুতে শরিক হওয়া প্রসঙ্গ’ বা ‘একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’ প্রভৃতি। তাঁরা যদি শরিক কুরবানি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোকে সফরের সাথে খাস হওয়া বুঝতেন, তাহলে অবশ্যই তা তাঁদের বাব তথা অনুচ্ছেদগুলোর শিরোনামে উল্লেখ করতেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি!

অতএব সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, উপরিউক্ত হাদীসের গ্রন্থগুলোতে শরিক কুরবানি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোকে সফরের সাথে খাস করা ভুল।

·
তৃতীয়ত, শরিক কুরবানি সংক্রান্ত বেশ কিছু এমন হাদীস আছে, যেগুলোতে সফরের কোনো উল্লেখই নেই। এ রকম কিছু হাদীস নিম্নরূপ—

১. জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন, الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ “একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানি করা যাবে)।” [আবূ দাউদ, হা/২৮০৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী]

২. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ “কুরবানিতে একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (যথেষ্ট হবে)।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সাহীহুল জামি‘ইস সাগীর, হা/২৮৯০; সনদ: সাহীহ]

৩. হুজ্জিয়াহ বিন ‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، قُلْتُ فَإِنْ وَلَدَتْ قَالَ اذْبَحْ وَلَدَهَا مَعَهَا “সাতজন ব্যক্তি পর্যন্ত একটি গরুতে শরিক হওয়া হওয়া যায়। আমি (হুজ্জিয়াহ) বললাম, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে (অর্থাৎ পেটে বাচ্চা পাওয়া গেলে)? তিনি বললেন, বাচ্চাটিকেও এর সাথে জবেহ করো…।” [তিরমিযী, হা/১৫০৩; সনদ: হাসান (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

৪. হুজ্জিয়াহ বিন ‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, كنا عند علي رضي الله عنه، فأتاه رجل فقال: البقرة ؟ فقال: عن سبعة، قال: القرن (و في رواية: مكسورة القرن)؟ قال: لا يضرك “একদা আমরা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র নিকট ছিলাম, এমতাবস্থায় তাঁর নিকটে একজন লোক এসে (ভাগে কুরবানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে) বলল, ‘গরুর কী হবে?’ তিনি বললেন, ‘সাত জনের পক্ষ থেকে (কুরবানি দেওয়া যাবে)।’ লোকটি বলল, ‘শিং ভাঙা গরু হলে?’ তিনি বললেন, ওটা তোমার কোনো অসুবিধা করবে না।” [ত্বাহাউয়ী, ২/২৯৭; হাকিম, ৪/২২৫; আহমাদ, ১/১০৫, ১২৫, ১৫২, ৯৭৫; গৃহীত: ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), ইরওয়াউল গালীল; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৬২; সনদ: হাসান; আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৩৯৯ হি./১৯৭৯ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

কেউ কেউ বলেন, সফর ছাড়া শরিক কুরবানির বর্ণনা শুধুমাত্র একটি হাদীসে রয়েছে। সেটা হলো সুনানু আবী দাউদের ২৮০৮ নং হাদীস। তাই তারা এই হাদীসকে “ব্যাখ্যাশূন্য হাদীস” বলে সফরের হাদীসগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করে থাকেন যে, শরিক কুরবানি কেবলমাত্র সফরের সাথে খাস! তাঁরা যেন আরেকবার ভালো করে বাকি হাদীসগুলো দেখে নেন! আল্লাহ তাঁদেরকে হক বুঝার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

·
চতুর্থত, শরিক কুরবানি সফরে সংঘটিত হওয়ার জন্য সেটাকে সফরের সাথেই খাস করলে, যত কিছু নাবী ﷺ ও সাহাবীগণ কর্তৃক সফরে ঘটেছে তার সবগুলোকেই ওই সফরের সাথে খাস করা জরুরি হয়ে যাবে। আর এ অবস্থায় শরিয়তের বহু মাসআলাহ আমল থেকে বাদ পড়ে যাবে। অথবা যে সমস্ত দলিল বাহ্যিকভাবে কোনো কারণের সাথে জড়িত, কিংবা কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্য দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত—সেগুলোকেও সেই কারণ ও গুণ বা বৈশিষ্ট্যের সাথে খাস করে দেওয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াবে। যেমন—

তায়াম্মুমের বিধান অবতীর্ণ হয়েছে সফরে। আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেছেন যে, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম, বাইদা কিংবা যাতুল জাইশ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোঁজার জন্যে রাসূল ﷺ সেখানে অবস্থান করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে অবস্থান করল। সেখানে কোনো পানি ছিল না এবং তাদের সঙ্গেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবূ বাকর আস-সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে আসল এবং বলল, ‘আয়িশাহ যা করেছেন, আপনি তা দেখেছেন কি? তিনি রাসূলকে ﷺ এবং সকল লোককে আটকে রেখেছেন; অথচ সেই জায়গায় পানি নেই, আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই।

রাসূল ﷺ আমার ঊরুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এলেন এবং বললেন, তুমি রাসূল ﷺ কে এবং সকল লোককে আটকে রেখেছো; অথচ সেই জায়গায় পানি নেই, আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আমাকে ভর্ৎসনা করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বললেন। তারপর তাঁর হাত দিয়ে আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। আমার কোলে রাসূল ﷺ এর অবস্থানই কেবল আমাকে নড়াচড়া করতে বাধা দিল। পানিবিহীন অবস্থায় ভোরে রাসূল ﷺ ঘুম থেকে উঠলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন, এরপর সবাই তায়াম্মুম করল। তখন উসাইদ ইবনু হুদ্বাইর বললেন, ‘হে আবূ বাকরের বংশধর, এটাই আপনাদের কারণে পাওয়া প্রথম বরকত নয়!’

‘আইশাহ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললেন, ‘যে উটের উপর আমি ছিলাম, তাকে আমরা উঠালাম, তখন দেখি হারটি তার নিচে।’ [সাহীহ বুখারী, হা/৪৬০৭]

তাদের ঠুনকো যুক্তি অনুযায়ী তায়াম্মুমের বিধান সফরের সাথে খাস হয়ে যাবে, মুক্বীম অবস্থায় তা বিধিসম্মত হবে না! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। শরিয়তে এরকম আরও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। সুতরাং, ‘উলামাদের অনুসরণ না করে নিজেরা দুএকটি আয়াত ও হাদীসকে সামনে রেখে তার বাহ্যিক অর্থ দ্বারা দলিল পেশ করলে, সত্য পর্যন্ত পৌঁছা যাবে না; চিরদিন বাতিলের সাথেই থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।

·
পঞ্চমত, বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি উট দশটি ছাগলের সমান। বিধায় শরিক কুরবানি মুক্বীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় বৈধ। দলিল—

রাফি‘ বিন খাদীজ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তিহামার অন্তর্গত যুল হুলাইফাহ নামক স্থানে আমরা নাবী ﷺ এর সাথে অবস্থান করছিলাম। সে সময় আমরা (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অংশ হিসেবে) কিছু বকরি ও উট পেয়ে গেলাম। সাহাবীগণ (অনুমতির অপেক্ষা না করেই) তাড়াহুড়া করে পাত্রে গোশত চড়িয়ে দিলেন। পরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এসে পাত্রগুলো উল্টিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আর (বণ্টনকালে) প্রতি দশটি বকরিকে তিনি একটি উটের সমান ধার্য করলেন (ثُمَّ عَدَلَ عَشْرًا مِنْ الْغَنَمِ بِجَزُور)।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৫০৭]

এই হাদীসকে কোনো কোনো ‘আলিম শরিক কুরবানির বৈধতার স্বপক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন।

·
ষষ্ঠত, হাদীসের শারিহ তথা ভাষ্যকারগণের কেউই ওপরে উল্লিখিত হাদীসগুলোকে সফরের সাথে খাস করেননি। এমনকি বিশ্ববরেণ্য ‘আলিমগণও এই হাদীসগুলোকে সফরের সাথে নির্দিষ্ট করেননি। বরং হাদীসগুলো যে মুক্বীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় শরিক কুরবানির বৈধতার ফাইদাহ (অবগতি) দেয়; তারা এটাই বুঝেছেন। এখন আমরা কয়েকজন জগদ্বিখ্যাত ‘আলিমে দ্বীনের ফাতওয়া সরল বাংলায় উপস্থাপন করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।

·

❏ ‘আলিমগণের ফাতাওয়া:

১ম ফাত‌ওয়া:

হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,

ﻭﺗﺠﺰﺉ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻋﻦ ﺳﺒﻌﺔ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﻫﺬﺍ ﻗﻮﻝ ﺃﻛﺜﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ . ﺭﻭﻱ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ، ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﻋﻄﺎﺀ ﻭﻃﺎﻭﺱ ﻭﺳﺎﻟﻢ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﻭﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻭﺍﻷﻭﺯﺍﻋﻲ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﺃﺑﻮ ﺛﻮﺭ، ﻭﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺮﺃﻱ.

“একটি উট সাত ভাগে, অনুরূপভাবে একটি গরুও সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া জায়েজ। এটা অধিকাংশ ‘আলিমের বক্তব্য। এমনটি বর্ণিত হয়েছে—সাহাবী আলী, ইবনু ‘উমার, ইবনু মাস‘ঊদ, ইবনু ‘আব্বাস, ‘আইশাহ প্রমুখ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) থেকে। আর এই কথাই বলেছেন—তাবি‘ঈ ‘আত্বা, ত্বাঊস, সালিম, হাসান বাসরী, ‘আমর বিন দীনার, সুফইয়ান সাওরী, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আবূ সাওর, আবূ হানীফাহ ও তাঁর ছাত্রবর্গ।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩৬৩-৩৬৪; মাসআলাহ নং: ১৭৫০; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
২য় ফাতওয়া:

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,

يجوز أن يشترك سبعة في بدنة أو بقرة للتضحية، سواء كانوا كلهم أهل بيت واحد أو متفرقين، أو بعضهم يريد اللحم فيجزئ عن المتقرب، و سواء كان أضحية منذورة أو تطوعا، هذا مذهبنا و به قال أحمد و داود و جماهير العلماء.

“কুরবানির উদ্দেশ্যে সাত ব্যক্তির একটি উটে কিংবা গরুতে শরিক হওয়া জায়েজ। চাই তারা সকলে এক পরিবারের হোক বা বিভিন্ন পরিবারের। কিংবা কারও গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্য থাক (আর অন্যদের নৈকট্য উদ্দেশ্য); এমতাবস্থায় নৈকট্য কামনাকারীর পক্ষ থেকে তা (কুরবানি হিসেবে) যথেষ্ট হবে। আর চাই সে কুরবানিটা মানতের হোক কিংবা নফল কুরবানি (সর্বাবস্থায় শরিক কুরবানি জায়েজ)। এটাই আমাদের মাযহাব এবং এটাই আহমাদ, দাঊদ ও অধিকাংশ ‘উলামার কথা।” [ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ), কিতাবুল মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব লিশ শীরাযী; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৩৭১; মাকতাবাতুল ইরশাদ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত (সন-তারিখ বিহীন)]

·
৩য় ফাতওয়া:

ভারতবর্ষের বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, বহুগ্রন্থ প্রণেতা, আল-ইমামুল ‘আল্লামাহ নওয়াব সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী আল-ক্বান্নূযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,

ويصح إشتراك سبعة في بدنة أو بقرة، و إن كانوا أهل بيوت شتى.

“উট ও গরুর কুরবানিতে সাতজনের অংশগ্রহণ সঠিক; যদিও তারা বিভিন্ন পরিবারের হয়ে থাকে।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ), আর-রাওদ্বাতুন নাদিয়্যাহ শারহুদ দুরারিল বাহিয়্যাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৭০; দারুল আরক্বাম, বার্মিংহাম (ইউকে) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৩ হি./১৯৯৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
৪র্থ ফাতওয়া:

ভারতবর্ষের আরেক প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, সুনানুত তিরমিযীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযী’র সম্মানিত মুসান্নিফ (লেখক), আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ‘আব্দুর রহমান বিন আব্দুর রহীম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

قد ثبت الإشتراك في الإبل و البقرة من أهل أبيات شتى، وثبت الإشتراك في الشاة من أهل بيت واحد.

“উট এবং গরুর কুরবানিতে বিভিন্ন পরিবারের অংশগ্রহণ প্রমাণিত হয়েছে; যেমন প্রমাণিত হয়েছে একটি ছাগলে একই পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণ।” [ইমাম ‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), তুহফাতুল আহওয়াযী শারহু সুনানিত তিরমিযী; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৯৩; দারুল ফিকর, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত (সন-তারিখ বিহীন)]

·
৫ম ফাতওয়া:

ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের আরেক দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন,

وأما الأضحية، فقال الجمهور بجواز الإشتراك فيها كالهدي، سواء كان المشتركون من البيت الواحد أو من أبيات شتى، أقارب كانوا أو أباعد، واشترط أبو حنيفة أن يكون المشتركون كلهم متقربين.

“আর কুরবানি প্রসঙ্গে অধিকাংশ ইমামের মত হচ্ছে, কুরবানিতেও হাদ্ঈ তথা হজের পশুর ন্যায় অংশগ্রহণ (শরিক হওয়া) করা বৈধ। চাই অংশগ্রহণকারীগণ একই পরিবারের সদস্য হোক বা বিভিন্ন পরিবারের হোক; আর চাই তারা নিজেদের মধ্যে আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয় হোক (সকল ক্ষেত্রে বিধান একই)। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) শর্তারোপ করেছেন যে, একই পশুতে বিভিন্ন জনের অংশগ্রহণ তখনই বৈধ, যখন তারা পরস্পরের নিকটাত্মীয় হবে।” [ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৮৫ (সন-তারিখ ও প্রেসের নাম বিহীন)]

·
৬ষ্ঠ ফাতওয়া:

ভারতবর্ষের আরেক প্রথিতযশা মুহাদ্দিস, সুনানু আবী দাউদের বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ‘আওনুল মা‘বূদের সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম শামসুল হক ‘আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩২৯ হি./১৯১১ খ্রি.] বলেছেন,

( ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻋﻦ ﺳﺒﻌﺔ ‏) : ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺒﻞ : ﺩﻝ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻋﻠﻰ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺃﻧﻬﻤﺎ ﻳﺠﺰﻳﺎﻥ ﻋﻦ ﺳﺒﻌﺔ ، ﻭﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻬﺪﻱ ، ﻭﻳﻘﺎﺱ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ ﺑﻞ ﻗﺪ ﻭﺭﺩ ﻓﻴﻬﺎ ﻧﺺ.

“সুবুলুস সালাম গ্রন্থে বলা হয়েছে, হাদীসটি উট ও গরুতে শরিক হওয়ার বৈধতা প্রমাণ করে এবং এটাও প্রমাণ করে যে, উট-গরু দুটোই সাত জনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। এটা হাদ্ঈ’র (হজের জন্তু) ক্ষেত্রে; আর কুরবানিকে এর ওপর ক্বিয়াস করা হবে। তবে কুরবানির ব্যাপারে নস তথা সুস্পষ্ট দলিলও বর্ণিত হয়েছে।” [ইমাম ‘আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ), ‘আওনুল মা‘বূদ শারহু সুনানি আবী দাউদ; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৬২; দারুল হাদীস, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

·
৭ম ফাতওয়া:

বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

قد دلت السنة الصحيحة عن النبي صلى الله عليه وسلم أن الرأس الواحد من الأبل و البقر و الغنم يجزئ عن الرجل و أهل بيته و إن كثروا، أما السبع من البدنة و البقرة ففي إجزاءه عن الرجل و أهل بيته تردد و خلاف بين أهل العلم. والأرجح أنه يجزئ عن الرجل و أهل بيته؛ لأن الرجل و أهل بيته كالشخص الواحد، و لكن الرأس من الغنم أفضل. و الله سبحانه وتعالى أعلم.

“রাসূল ﷺ থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ সুন্নাহ প্রমাণ করেছে যে, উট, গরু ও ছাগল প্রভৃতির যে কোনো একটি জান (কুরবানির ক্ষেত্রে) একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে; যদিও তারা (পরিবারের সদস্য) সংখ্যায় অনেক হয়। পক্ষান্তরে উট ও গরুর এক সপ্তমাংশ একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিমদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং মতানৈক্য রয়েছে। তবে অগ্রগণ্য মত হলো—তা একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। কেননা একজন ব্যক্তি ও তার পরিবার একজন মানুষের মতোই। তবে একটি ছাগল কুরবানি করাই উত্তম। আর আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৪৪; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
৮ম ফাতওয়া:

বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

فإذا كان الإنسان يضحي بالواحدة عنه و عن أهل بيته، فإنه بالسبع يضحي عنه و عن أهل بيته؛ لأن هذا تشريك في الثواب، والتشريك في الثواب لا حصر له، وها هو النبي صلى الله عليه وسلم ضحي عن كل أمته، وها هو الرجل يضحي بالشاة الواحدة عنه و عن أهل بيته، و لو كانوا ماءة، أما التشريك في الملك فلا يزيد علي سبعة، فلو اشترك ثمانية في بعير قلنا: لا يجوز، فلا بدّ أن يخرج واحد منكم، فإن رضي واحد منهم أن يخرج فهو هو المطلوب، و إلا فالأخير هو الخارج، و إن لم يعلم الأخير فالقرعة، لكن لو ذبحوها فبانوا ثمانية فماذا يصنعون؟ قيل: يذبحون شاة واحدة لتكمل للثامن، ويحتمل أن يقال: يقترعون فمن خرج بالقرعة خرج و ذبح شاة وحده.
فالبدنة و البقرة هل تجزءان عن سبعة رجال أو تجزءان عن سبع شياه؟ الجواب: الثاني، فإذا قلنا بالثاني قلنا: إذا كانت الشاة تجزئ عن الرجل و عن أهل بيته في الثواب، و كذلك يجزئ سبع البدنة و سبع البقرة عنه و عن أهل بيته.

“মানুষ যেহেতু নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু বা উট কুরবানি দিতে পারে, সেহেতু নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে তার সপ্তমাংশও কুরবানি দিতে পারবে। এটা হলো সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার করা (শরিক করা)। আর সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার করার মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এই তো নাবী ﷺ, যিনি তাঁর সকল উম্মতের তরফ থেকে কুরবানি দিয়েছেন। আর একজন ব্যক্তিও তাঁর নিজের তরফ থেকে এবং নিজের পরিবারের তরফ থেকে একটি বকরি কুরবানি দিতে পারবে, যদিও তাদের (পরিবারের সদস্যদের) সংখ্যা একশ পর্যন্ত পৌঁছে।

পক্ষান্তরে মালিকানার ক্ষেত্রে সাতজনের বেশি অংশীদার করা (শরিক করা) যাবে না। সুতরাং একটি উটে যদি আটজন শরিক হয়, তবে আমরা বলব, এটা জায়েজ নয়; অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে একজনকে বের হতে হবে। অতএব তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি বের হতে রাজি হয়, তাহলে সেটাই ভালো ও কাঙ্ক্ষিত। নতুবা সবার শেষে যে এসেছে, সে বেরিয়ে যাবে। আর সবার শেষে কে এসেছে, তা যদি না জানা যায়, তাহলে লটারি করতে হবে। কিন্তু তারা যদি জবেহ করে ফেলে, আর আটজনই পৃথক হয়ে যায়। তাহলে তারা কী করবে? বলা হয়ে থাকে, তারা অষ্টমজনের জন্য একটি ছাগল জবেহ করবে। আবার এটাও বলা যায় যে, তারা লটারি করবে। আর লটারির মাধ্যমে যে নির্বাচিত হবে, সে বের হয়ে যাবে এবং নিজের তরফ থেকে একটি ছাগল কুরবানি করবে।

এখন কথা হলো, উট ও গরু কি সাতজন ব্যক্তির তরফ থেকে যথেষ্ট হবে, না কি সাতটি বকরির স্থলে যথেষ্ট হবে? উত্তর: দ্বিতীয়টি (সঠিক)। আমরা যখন দ্বিতীয়টির কথা বলছি, তখন আমরা এটা বলছি যে, একটি বকরি যেমন সওয়াবের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়, ঠিক তেমনিভাবে উট ও গরুর এক সপ্তমাংশও একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।” [ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪২৮; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
৯ম ফাতওয়া:

ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,

ﻭﺗﺠﺰﺉ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﻨﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﺸﺨﺺ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ، ﻭﻳﺠﺰﺉ ﺳُﺒْﻊ ﺍﻟﺒﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻋﻤﺎ ﺗﺠﺰﺉ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﻨﻢ، لحديث جابر رضي الله عنه، قال: نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، رواه مسلم. و في رواية قال: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الإِبِلِ وَالْبَقَرِ كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَدَنَةٍ. ففي هذا دليل علي أن سبع البعير أو البقرة قاءم مقام الواحدة من الغنم، و مجزئ عما تجزئ عنه، لأن الواجب في الاحصار و التمتع هدي علي كل واحد، و قد جعل النبي صلى الله عليه وسلم البدنة عن سبعة، فدل علي أن سبعها يحل محل الواحدة من الغنم و يكون بدلا عنها، و البدل له حكم المبدل.

“একটি ছাগল একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। আর উট এবং গরুর সাত ভাগের এক ভাগ (এক সপ্তমাংশ) ওই পরিমাণের জন্য যথেষ্ট হবে, যে পরিমাণের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট হয়। কারণ জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন, হুদাইবিয়ার বছর (৬ষ্ঠ হিজরী) আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানি করেছি। হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন (হাদীস নং: ১৩১৮)। অন্য বর্ণনায় জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে রওনা হলাম। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি উট এবং গরু সাতজনে মিলে কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন। (সাহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮)

এখানে এই দলিল রয়েছে যে, উট বা গরুর এক সপ্তমাংশ একটি পূর্ণাঙ্গ ছাগলের স্থলাভিষিক্ত হবে, এবং যে পরিমাণের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট, সেটাও (ওই এক সপ্তমাংশ) সে পরিমাণের জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা তামাত্তু‘ হজের ক্ষেত্রে এবং (হজে) বাধাগ্রস্ত হলে, সেক্ষেত্রেও প্রত্যেকের ওপর একটি করে হাদ্ঈ (হজের পশু কুরবানি করা) ওয়াজিব। অথচ নাবী ﷺ একটি উটকে সাতজনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করলেন। এটাই প্রমাণ করে, উটের এক সপ্তমাংশ একটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং তার বিকল্প হিসেবে যথেষ্ট হবে। আর আর বদল তথা বিকল্পের জন্য মুবদালের (যার বিকল্প গ্রহণ করা হয়েছে) হুকুম প্রযোজ্য হবে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আহকামুল উদ্বহিয়্যাতি ওয়ায যাকাত; পৃষ্ঠা: ২৫; (সন ও প্রকশনার নাম বিহীন)]

·
১০ম ফাতওয়া:

বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] শরিকানা কুরবানির হাদীসগুলোকে সফরের সাথে খাস করেননি। তিনি সুনানু আবী দাউদের ২৮০৮ নং হাদীসের টীকা প্রণয়ন করতে গিয়ে তাঁর সংকলিত তাহক্বীক্ব মিশকাতে বলেছেন,

وقد صح أن البعير يجزئ عن عشرة، و به قال إسحاق بن راهويه و احتج لحديث ابن عباس الآتي (1469).

“কুরবানিতে দশজনের পক্ষ থেকে একটি উটের যথেষ্ট হওয়া বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, (ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ’র উস্তায) ইসহাক্ব বিন রাহওয়াইহ-ও তাই বলেছেন। তিনি তাঁর মতের স্বপক্ষে ইবনু ‘আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র হাদীস থেকে দলিল গ্রহণ করেছেন, যা (এই মিশকাতে) ১৪৬৯ নাম্বারে আসবে।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), তাহক্বীক্ব মিশকাত; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৫৮; ১৪৫৮ নং হাদীসের টীকা দ্রষ্টব্য]

ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তা আমরা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। [তিরমিযী, হা/৯০৫; নাসাঈ, হা/৪৩৯২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩১; সনদ: সাহীহ]

এছাড়াও পাঠক মহোদয় ইতোমধ্যে লক্ষ করেছেন, আমরা ভারতবর্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুহাদ্দিস ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ)’র একটি উক্তি তাঁর রচিত গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছি। তো নওয়াব সিদ্দীক্ব হাসান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত সেই গ্রন্থটির ওপর টীকা প্রণয়ন করেছেন ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)। ইমাম আলবানী তাঁর টীকা সংবলিত গ্রন্থে ইমাম সিদ্দীক্ব হাসানের সেই উক্তিটির বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। এ থেকেও বুঝা যায়, তিনি উক্তিটির সাথে একমত ছিলেন। ফালিল্লাহিল হামদ। [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), আত-তা‘লীক্বাতুর রাদ্বিয়্যাহ ‘আলার রাওদ্বাতিন নাদিয়্যাহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১২৮; দারু ইবনি ‘আফফান, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
১১শ ফাতওয়া:

সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—

“কুরবানির ক্ষেত্রে শরিক হওয়া: অর্থাৎ, কিছু লোক কুরবানিতে শরিক হওয়ার ইচ্ছা করল, তারা যদি উটে সাতজন করে এবং গরুতে সাতজন করে শরিক হয়ে কুরবানি করে, তবে তা যথেষ্ট হবে। এটি সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়েছে। আর একটি বকরির কুরবানি একজন ব্যক্তি এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। কিন্তু একদল লোক যাদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবারের লোক আছে; তারা যদি এক জায়গায় জমায়েত হয়ে একটি বকরি কুরবানি করে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। এটা কেবলমাত্র উট এবং গরুর ক্ষেত্রেই জায়েজ।” [দ্র.: https://youtu.be/og2hjZHIteM.]

·
১২শ ফাতওয়া:

বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাতুল ফাক্বীহ, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] বলেছেন,

ﻻ ﻳﺸﺘﺮﻙ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﻨﻢ؛ ﻟﻜﻦ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻳﻀﺤﻲ ﺑﺎﻟﺸﺎﺓ ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻭﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ. ﻭﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻳﺼﺢ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻦ ﺍﻹﺑﻞ، ﻓﻴﺸﺘﺮﻙ ﻓﻴﻬﺎ ﺳﺒﻌﺔ ﺑﺄﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻜﻞ ﻭﺍﺣﺪ ﺳﺒﻊ ﺑﺪﻧﺔ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻘﺮ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺸﺎﺓ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻓﻼ ﻳﺸﺘﺮﻙ ﻓﻴﻬﺎ، ﻛﻤﺎ ﺃﻥ ﺳﺒﻊ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻻ ﻳﺸﺘﺮﻙ ﻓﻴﻪ.

“ছাগল কুরবানির ক্ষেত্রে লোকেরা শরিক হবে না। বরং নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানি করবে। একটি কুরবানির মধ্যে তখনই অংশগ্রহণ করা (শরিক হওয়া) বিশুদ্ধ হবে, যখন তা উটের কুরবানি হবে। এর মধ্যে সাতজন শরিক হবে; অর্থাৎ, তাদের প্রত্যেকের জন্য উটের এক সপ্তমাংশ থাকবে। একইভাবে গরুর মধ্যেও শরিক হওয়া যাবে। পক্ষান্তরে একটি ছাগলের মধ্যে শরিক হওয়া যাবে না, যেমনভাবে উটের এক সপ্তমাংশের মধ্যে শরিক হওয়া যায় না।” [ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু সুনানি আবী দাউদ, খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ৩২৯; গৃহীত: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=39794.]

·
১৩শ ফাতওয়া:

আলজেরিয়ার প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আল-মুহাদ্দিসুল ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] বলেছেন,

ﻓﺎﻻﺷﺘﺮﺍﻙُ ﻓﻲ ﺍﻟﺒَﺪَﻧﺔ ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﺟﺎﺋﺰٌ ﻟِﻤَﺎ ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺨﻤﺴﺔُ ﺇﻻَّ ﺃﺑﺎ ﺩﺍﻭﺩ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ‏«ﻛُﻨّﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺁﻟِﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﺤَﻀَﺮَ ﺍﻷَﺿْﺤَﻰ ﻓَﺬَﺑَﺤْﻨَﺎ ﺍﻟﺒَﻘَﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺳَﺒْﻌَﺔٍ ﻭَﺍﻟﺒَﻌِﻴﺮَ ﻋَﻦْ ﻋَﺸَﺮَﺓٍ». ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳَﺪُﻝُّ ﻋﻠﻰ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﺑﺎﻟﻌﺪﺩ ﺍﻟﻤﺨﺼﻮﺹ ﺳﺒﻌﺔ ﺃﻧﻔﺎﺭ ﻟﻠﺒﻘﺮﺓ، ﻭﻋَﺸْﺮُ ﺃﻧﻔﺲ ﻟﻠﺒَﺪَﻧﺔ ، ﻭﻳﺸﻬﺪ ﻟﻪ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺭﺍﻓﻊ ﺑﻦ ﺧﺪﻳﺞ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ‏«ﺃﻧّﻪُ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺁﻟِﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺪَﻝَ ﻋَﺸْﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻐَﻨَﻢِ ﺑِﺒَﻌِﻴﺮٍ‏».

“গরু ও উট কুরবানিতে শরিক হওয়া বৈধ। কারণ, আবূ দাঊদ ছাড়া পাঁচজনে (পাঁচজন মানে—আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ ও আহমাদ) ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। ইতোমধ্যে কুরবানির ঈদ এসে গেল। আমরা একটি উট দশজনে এবং একটি গরু সাতজনে শরিক হয়ে কুরবানি করলাম।” (তিরমিযী, হা/৯০৫; নাসাঈ, হা/৪৩৯২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩১; আহমাদ, হা/২৪৮০; সনদ: সাহীহ)

হাদীসটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় কুরবানিতে অংশগ্রহণ করার বৈধতা প্রমাণ করে; সেটা হলো—গরুর ক্ষেত্রে সাতজন ব্যক্তি এবং উটের ক্ষেত্রে দশজন ব্যক্তি। আর এই কথাটির সাক্ষ্য দেয় বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত রাফি‘ বিন খাদীজ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র একটি হাদীস। তিনি বলেছেন, “তিনি ﷺ প্রতি দশটি বকরিকে একটি উটের সমান ধার্য করেছেন।” (সাহীহ বুখারী, হা/২৫০৭)” [দ্র.: ইউটিউব লিঙ্ক: https://youtu.be/awsC4pnkxls; শাইখের ওয়েবসাইটে ফাতওয়াটির লিংক: http://www.ferkous.com/rep/Bo14.php]

·
১৪শ ফাতওয়া:

সৌদি আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফাতওয়া—

ﺱ : ﻫﻞ ﻳﺠﻮﺯ ﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ، ﻭﻛﻢ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺸﺘﺮﻛﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ، ﻭﻫﻞ ﻳﻜﻮﻧﻮﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺖ ﻭﺍﺣﺪ، ﻭﻫﻞ ﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﻓﻲ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﺃﻡ ﻻ؟
ﺝ : ﻳﺠﻮﺯ ﺃﻥ ﻳﻀﺤﻲ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻋﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ ﺑﺸﺎﺓ، ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺛﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻀﺤﻲ ﺑﺎﻟﺸﺎﺓ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻋﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ، ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻣﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ، ﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ﻗﺎﻝ : ﺳﺄﻟﺖ ﺃﺑﺎ ﺃﻳﻮﺏ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ : ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻀﺤﺎﻳﺎ ﻓﻴﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﺤﻲ ﺑﺎﻟﺸﺎﺓ ﻋﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ، ﻓﻴﺄﻛﻠﻮﻥ ﻭﻳﻄﻌﻤﻮﻥ، ﺣﺘﻰ ﺗﺒﺎﻫﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﺼﺎﺭﻭﺍ ﻛﻤﺎ ﺗﺮﻯ.
ﻭﺗﺠﺰﺉ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻋﻦ ﺳﺒﻌﺔ، ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺖ ﻭﺍﺣﺪ ﺃﻭ ﻣﻦ ﺑﻴﻮﺕ ﻣﺘﻔﺮﻗﻴﻦ، ﻭﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻗﺮﺍﺑﺔ ﺃﻭ ﻻ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﺫﻥ ﻟﻠﺼﺤﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺍﻻﺷﺘﺮﺍﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻛﻞ ﺳﺒﻌﺔ ﻓﻲ ﻭﺍﺣﺪﺓ، ﻭﻟﻢ ﻳﻔﺼﻞ ﺫﻟﻚ. ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ.
ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﻭﺳﻠﻢ.

প্রশ্ন: “কুরবানিতে কি শরিক হওয়া বৈধ? অনেক মুসলিম শরিক হয়ে কুরবানি দেয়। তাদেরকে কি একই বাড়ির লোক হতে হবে? আর শরিকানা কুরবানি (কুরবানিতে শরিক হওয়া) কি বিদ‘আত, না কি বিদ‘আত না?”

উত্তর: “একজন ব্যক্তি কর্তৃক তার নিজের পক্ষ থেকে এবং স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বকরি কুরবানি দেওয়া জায়েজ। মূলত এক্ষেত্রে নাবী ﷺ থেকে যা প্রমাণিত হয়েছে; তা হলো—তিনি নিজের পক্ষ থেকে এবং স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বকরি কুরবানি দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

মালিক, ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে সাহীহ বলেছেন। হাদীসটি হলো: ‘আত্বা বিন ইয়াসার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ আইয়্যূব আল-আনসারী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে আপনাদের কুরবানি কীরূপ ছিল? তিনি বলেন, “নাবী ﷺ এর যুগে ব্যক্তি নিজের ও স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বকরি কুরবানি করতো। তা থেকে তারা নিজেরাও আহার করতো এবং (অন্যদেরও) আহার করাতো। পরবর্তীকালে লোকেরা কুরবানিকে অহমিকা প্রকাশের বিষয়ে পরিণত করেছে এবং এখন যা অবস্থা দাড়িয়েছে তা তো দেখতেই পাচ্ছ।” (তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৭; সনদ: সাহীহ)

একটি উট এবং একটি গরু কুরবানি হিসেবে সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। চাই তা (ওই সাত ভাগ) একটি পরিবার থেকে হোক, বা বিভিন্ন পরিবার থেকে হোক। আর চাই তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক (তা বৈধ ও যথেষ্ট)। কেননা নাবী ﷺ সাহাবীদেরকে একটি উটে সাতজন এবং একটি গরুতেও সাতজন শরিক হয়ে কুরবানি করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং এক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করেননি। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।

হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”

ফাতওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৪০১-৪০২; ফাতওয়া নং: ২৪১৬; গৃহীত: alifta.net]

·
১৫শ ফাতওয়া:

সৌদি আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত আরেকটি ফাতওয়া—

ﺱ: ﻫﻞ ﻟﻠﻤﺴﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﺤﻲ ﺑﺴﺒﻊ ﺑﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﺳﺒﻊ ﺑﻘﺮﺓ، ﻭﻳﺸﺮﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ﻣﻦ ﺷﺎﺀ ﻣﻦ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ﻭﺃﻭﻻﺩﻩ ﻭﺃﻗﺎﺭﺑﻪ ﻭﻣﻌﻠﻤﻴﻪ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﺃﻡ ﺃﻥ ﺍﻟﺴﺒﻊ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻮﺍﺣﺪ ﻓﻘﻂ، ﻻ ﻳﺸﺮﻙ ﻣﻌﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ﻏﻴﺮﻩ؟
ﺝ: ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺃﻥ ﻛﻼً ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻧﺔ ﻭﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﺗﺠﺰﺉ ﻋﻦ ﺳﺒﻌﺔ، ﻭﺃﻥ ﺳﺒﻊ ﻛﻞ ﻣﻨﻬﻢ ﻳﺠﺰﺉ ﻋﻦ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﻭﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ.

প্রশ্ন: “একজন মুসলিম কি একটি উটের এক সপ্তমাংশ বা একটি গরুর এক সপ্তমাংশ কুরবানি করতে পারবে? এবং সেই কুরবানির সওয়াবের মধ্যে কি সে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষকবৃন্দ ও অন্যান্য মুসলিমদেরকে শরিক করতে পারবে? না কি এক সপ্তমাংশ শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে আদায় হবে, এর সওয়াবে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না?”

উত্তর: “প্রত্যেকটি উট ও গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। আর প্রত্যেক এক সপ্তমাংশ একজন ব্যক্তি এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ৮৭৯০; প্রশ্ন নং: ১]

আমরা বিশ্ববরেণ্য ফাক্বীহ ‘আলিমগণের সুচিন্তিত মতামত জানলাম। আমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, শরিকানা (ভাগা) কুরবানি মুক্বীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় জায়েজ। ইসলামের এই বিধিসম্মত বিধানকে সফরের সাথে খাস করা ঠিক নয়।

·
সুতরাং, হে সালাফী ভাইজান, আপনাকে বলছি—আরবি প্রবাদে আছে, الإعتراف بالحق خير من. التمادي في الباطل “হককে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়া, বাতিলকে আঁকড়ে ধরার চেয়ে উত্তম।” আপনি বাতিলকে আঁকড়ে ধরবেন না। অন্ধ তাক্বলীদের চশমা আপনার সাথে একেবারেই যায় না। আপনার নিশ্চয় অজানা নেই, আমাদের পূর্বসূরি সালাফে সালিহীন যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ভুল সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্র তা থেকে ফিরে আসতেন। ভুল স্বীকার করে হককে গ্রহণ করার মধ্যে কোনো ব্যর্থতা নেই, বরং সফলতা আছে। আপনি নিশ্চিত থাকুন, ভুল স্বীকার করে নিয়ে ভুলকে বর্জন করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা। আপনি এর বিনিময়ে মহান রবের কাছে প্রতিদান আশা করুন, আপনাকে প্রতিদান দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে হককে বর্জন করে ভুলকে আঁকড়ে ধরাই তো অহমিকা, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা, যা ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। ওই শুনুন, রাসূল ﷺ এর সুস্পষ্ট বাণী—“যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার?’ রাসূল ﷺ বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে হককে (সত্য) অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৯১]

পরিশেষে, আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি— اَلَّهُمَّ أَرِنَا الْحَقَّ حَقًّّاً وَارْزُقْنَا إِتِّبَاعَهُ، وَأَرِنَا الْبَاطِلَ بَاطِلاً وَارْزُقْنَا إِجْتِنَابَهُ হে আল্লাহ, আমাদের কাছে হককে হক হিসেবে দেখান এবং তা অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আর বাতিলকে বাতিল হিসেবেই দেখান এবং তা বর্জন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
রচনাকাল:

বৃহস্পতিবার।
২রা যুলহাজ্ব, ১৪৩৮ হিজরী।
৯ই ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ।
২৪শে আগস্ট, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari