লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্ত সমূহ

মূলঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু
ব্যাখ্যা সংকলনঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী
স্বত্বাধিকারীর অনুমতিদাতাঃ যুলফিকার ইবরাহীম মেমোন আল আথারী।

ব্যাখ্যা সংকলনঃ

 

شروط لا إله إلا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ)

 

(لا إله الا الله) (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর কিছু শর্ত রয়েছে যা উল্লেখ করেছেন শায়খ হাফিয হাকামী তাঁর  سلّم (সুল্লাম) গ্রন্থে। শাইখ আব্দুর রাহমান বিন হাসান বলেছেন فتح المجيد এ উল্লেখ করেন, “নিশ্চিতভাবে لا الاه الا الله এর সাক্ষ্যে সাতটি শর্ত রয়েছে, যার বক্তার প্রতি তা কোন কল্যাণ বয়ে আনে না, যতক্ষণ না এ সকলকে একত্র করা হয়।“

এই শর্তসমূহ হচ্ছে:

১। العلم المنافي للجهل (ইলম, অর্থ জ্ঞান যা অজ্ঞতাকে প্রত্যাখ্যান করে)

২। اليقين المنافي للشك (ইয়াকিন, অর্থ নিশ্চয়তা যা সন্দেহকে প্রত্যাখ্যান করে)

৩। الصدق المنافي للكذب (সিদক, অর্থ সত্যবাদিতা, যা মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে)

৪। الإخلاص المنافي للشرك (ইখলাস, অর্থ আন্তরিকতা/একনিষ্ঠতা যা শিরককে প্রত্যাখ্যান করে)

৫। المحبة المنافي لضدها (মুহাব্বাহ, অর্থ ভালোবাসা যা এর বিপরীতকে প্রত্যাখ্যান করে)

৬। الإنقياد المنافي للترك (ইনকিয়াদ, অর্থ- আত্মসমর্পন যা বর্জন করাকে প্রত্যাখ্যান করে)

৭। القبول المنافي للرد (কবুল, অর্থ- স্বীকার করা যা প্রত্যাবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করে)

(অনেকে, যেমন শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দিল্লাহ বিন বায  كفر باالطاغوت (কুফর বিত তাগুত, অর্থ তাগুতকে অস্বীকার করা) কে অষ্টম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।)

 

 

১। العلم المنافي للجهل (ইলম, অর্থ জ্ঞান যা অজ্ঞতাকে দূরীভূত করে)

 

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন বলেন,

জ্ঞান মানে কোন কিছুর সম্বন্ধে বুঝ যার উপর তা ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যা পরিপূর্ণ বুঝ। (شرح ثلاثة أصول,  শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ১৮,  দার থারয়া লিল নাশর)

 

শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম বলেন,

العلم (জ্ঞান) হচ্ছে কোন কিছুর উপর প্রনোদিত হওয়া জরুরী অর্থে যার হতে সেটি। হয় তা অনুভূতির সাক্ষ্য হওয়া হতে, অথবা ধীশক্তির ব্যাখ্যা হতে, অথবা কোন বুরহান (প্রমান) যা এসেছে কাছের বা দূরবর্তী ঘটিত ঘটনা হতে, যা সংগৃহিত হয়েছে অনুভূতি অথবা ধীশক্তির ব্যাখ্যা হতে। (الأصول و الفروع, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, দার ইবনু হাযম)

 

শাইখ জ্ঞানের সংজ্ঞায় আরো বলেনঃ

(জ্ঞানের উপরোক্ত সংজ্ঞা দেবার পর উৎস স্বরূপ আরো উল্লেখ করেনঃ) অথবা এমন কাউকে অনুসরণ করা যাকে আল্লাহ্‌ অনুসরণ করতে বলেছেন, সুতরাং এতে সত্যের সাথে একমত হওয়া হয়েছে, যদিও তা জরুরী ভিত্তিতে না হয়, অথবা কোন প্রমানের ভিত্তিতে না হয়। এর প্রমান হচ্ছে এই যে সকল মানুষকে আদেশ করা হয়েছে সত্য বাণী এবং বিশ্বাসের ব্যপারে, এবং আরো এই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানুষকে আল্লাহর উপর, তাঁর উপর যা নাযিল হয়েছে তার উপর বিশ্বাস করবার উদ্দেশ্যে ডেকেছেন, এবং এভাবেই উল্লেখ করেছেন এবং তিনি আলাইহিস সালাম এ শর্ত দেননি যে তাদের এটি (বিশ্বাস) থাকবেনা দলিলের উপর থাকা ব্যতীত। বরং এ বিষয়ে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াত এর ব্যপারে ) একমত হয়েছে জ্ঞানী, মূর্খ, মুক্ত, দাস-দাসী, শিশু এবং অনারব। এবং তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর এ ব্যপারে উম্মাহ ইজমা’আ (উম্মতের ঐক্যমত্য) পোষণ করেছে কিয়ামত স্থাপন পর্যন্ত। এবং একমত পোষণ করেছে তারা যারা তাদেরকে এর দ্বারা গ্রহন করেছে (অর্থাৎ দাওয়াত গ্রহন করেছে) এবং তাদের উপর এ ব্যপারে দলিল স্থাপন করা হয় নি। সুতরাং যদি এটি এমনই হয়, তবে এ কথা প্রমানিত হলো, যে বিশ্বাস করল যা আমরা উল্লেখ করেছি (অর্থাৎ শর্ত মেনে) এবং এর দ্বারা (শর্ত মেনে) প্রকাশ করল, তবে সে এ ব্যপারে জ্ঞানী, বিশ্বাসের সাথে এ ব্যপারে জ্ঞাত। যদি এ ভাবে সে জ্ঞানী না হয়, তবে এ কারনে এ ব্যপারে তার বক্তব্য রাখা হারাম, এবং হারাম এ ব্যপারে তার বিশ্বাস রাখা। কেননা আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেছেন,

وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়কে অন্বেষণ কর না। (১৭ঃ৩৬)

এবং আল্লাহ্‌ বলেছেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلالاً طَيِّبًا وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاء وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللَّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ

ও মানবজাতি, তোমরা তা হতে ভক্ষণ কর, যা হালাল এবং উত্তম, এবং তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করনা। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। বরঞ্চ সে তোমাদের আদেশ করে মন্দ, অশ্লীল কাজ এবং যেন তোমরা আল্লাহর ব্যপারে এমন কথা বল যা তোমরা জান না।(২ঃ১৬৮-১৬৯)

(الإحكام في أصول الإحكام, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম, পৃষ্ঠা ৩৩, দার আল আথার)

 

শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম বলেন,

সুতরাং যে কেউ কোন বিষয়ে বিশ্বাস করল তার ভিত্তিতে (অর্থাৎ যে শর্তের ভিত্তিতে) যা আমরা উল্লেখ করেছি, তবে সে সে বিষয়ের ব্যপারে জ্ঞানী। আর যে কেউ বিশ্বাস করল তার উপর যার উপর তা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার বিশ্বাসের ব্যপারে দলিল স্থাপন করল না, যেভাবে আমরা উল্লেখ করেছি, তবে সে সেই বিষয়ে জ্ঞানী নয়। এবং তার এ বিশ্বাসে কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং প্রত্যেক علم (জ্ঞান) হচ্ছে إعتقاد (বিশ্বাস), কিন্তু প্রত্যেক إعتقاد (বিশ্বাস) ই علم (জ্ঞান) নয়। সুতরাং জ্ঞান হচ্ছে তা যার সত্যতা প্রনোদিত হয়েছে।

(الأصول و الفروع, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম, পৃষ্ঠা ২১২, দার ইবনু হাযম)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

জ্ঞান দ্বারা শরীয়াগত উদ্দেশ্যঃ এটি সঠিক জ্ঞান যা এ কালিমা (لا إله الا الله) এর বাস্তবতার সাথে সহমত, এর দ্বারা যা নির্দেশিত, একে যা অনুসরনকৃত, যে অর্থ প্রকাশিত তার মোতাবেক, পরিস্কার চিহ্ন দ্বারা স্থাপিত যা অজ্ঞতাকে প্রত্যাখ্যান করে। আর জ্ঞান যা দ্বারা সাবিত করা হয় এই সাক্ষ্যকে, একমাত্র আল্লাহর মাঝেই ইবাদাতের যোগ্যতা অনুসন্ধানের মাধ্যমে। এবং জ্ঞান যার দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয় আল্লাহ্‌ ব্যতীত অপর কারুর প্রতি ইবাদাতের যোগ্যতা আরোপ করাকে।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১২১, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

لا إله الا الله  এর জ্ঞানের উদ্দেশ্যঃ

জ্ঞান যা বাস্তুবিক, ফলিত যা স্থাপিত এর দ্বারা নির্দেশিত কাজের সত্যায়ন এবং এ দ্বারা কাজকে প্রতি আবশ্যিক করা। এর উদ্দেশ্য শুধু العلم النظري (আল ইলম আন নাদরী, অর্থাৎ এমন জ্ঞান যা পালনের পূর্বে প্রমানিত হওয়া চাই, এক্ষেত্রে শারীয়া দ্বারা) নয়, যার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পালন করা হবে। কতই না লোক তাওহীদ জানে, কিতাবে যা লেখা তা মুখস্ত করে, (শুধু তাই নয়) বরং অপরকে শিখায়, ব্যাখ্যা করে, এর বিনাশী কারণ সমূহ এবং এর শর্ত সমূহ ব্যাখ্যা করে, এর পর নিজেই এর খেলাপ করে, নিজের কাজে, অন্তরে এর বিরোধিতা করে। ফলশ্রুতিতে তাওহীদের বরকত রোধিত হয়, তার এ বিষয়ের জ্ঞান তার নিজের জন্যে বিপজ্জনক এবং আল্লাহর তরফ হতে আজাবে পর্যবশিত হয়।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১২১-১২২, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

প্রমাণাদিঃ

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

সুতরাং তুমি জান যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো মা’বুদ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার ত্রুটির জন্য এবং মু’মিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্যে। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছেন। (৪৭ঃ১৯)

وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, শাফায়াতের ক্ষমতা তাদের নেই, তারা ব্যতীত যারা সত্যের ব্যপারে সাক্ষ্য দেয় জেনে শুনে। (৪৩ঃ৮৬)

অর্থাৎ যে সাক্ষ্য দেয়, (وهم يعلمون) এর অর্থ তারা জানে তাদের অন্তরে তাঁর لا الاه الا الله (বাংলা উচ্চারণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অর্থ নেই কোন সত্য উপাস্য  এক আল্লাহ ব্যতীত) অর্থ যা তারা মুখে উচ্চারণ করেছে।

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত সত্য কোনো মা’বুদ নেই এবং ফেরেশতাগণ, ন্যায় নিষ্ঠ বিদ্যানগন ও (সাক্ষ্য প্রদান করেন) তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা’বুদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।(৩ঃ১৮)

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

যে ব্যাক্তি রাত্রিকালে সিজদানবত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান যে তা করে না) বলঃ যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। (৩৯ঃ৯)

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরাক্রমশালী,ক্ষমাশীল। (৩৫ঃ২৮)

وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا الْعَالِمُونَ

মানুষের জন্যে এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকি; কিত্নু শুধু জ্ঞানী ব্যাক্তিরাই এসব বুঝে থাকে। (২৯ঃ৪৩)

 

উসমান বিন আফফান ( رضي الله عنه ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

من مات وهو يعلم انه لا إله الا الله دخل الجنة

যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলো এই জানা অবস্থায় যে لا الاه الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সে জান্নাতে প্রবেশ করল। (মুসলিম ২৬)

 

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

لا إله إلا الله এর স্থাপনা জ্ঞান এবং কাজ এর উপরঃ

কাজ বা عمل (আমল অর্থ কাজ ) দু প্রকারঃ

১। عمل القلب (অন্তরের কাজ)

২। عمل الجوارح (বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ)

 

বস্তুতঃ এর সাথে সংশ্লিষ্ট কাজের মধ্যে রয়েছে এর (অর্থাৎ لا إله إلا الله) প্রতি ভালোবাসা, এর প্রতি নিশ্চিত হওয়া, এর মধ্যে একাগ্র হওয়া, একে সত্যাপন করা এবং একে মেনে নেওয়া এবং এর প্রতি বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে আত্মসমর্পন।

 

আর এ সকলই তাওহীদের রুকনঃ

১। القول باللسان (মৌখিক বক্তব্য)

২। عمل بالجوارح(বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ)

৩। إعتيقاد بالقلب (আন্তরিক বিশ্বাস)

 

আবার إعتيقاد بالقلب বা আন্তরিক বিশ্বাস দু প্রকারঃ

১। قولي (বক্তব্য বিষয়ক)ঃ আর তা জ্ঞান এবং সত্যায়ন।

২। عملي(কাজ বা আমল বিষয়ক)ঃ আর তা ভালোবাসা, নিশ্চয়তা, সন্তুষ্টি এবং স্বীকার।

 

আর তাওহীদ সঠিক হয় না এ তিনটি ব্যতীত। আর যদি এদের একটিও ছুটে যায়, তবে এর বক্তার ইসলামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

 

জ্ঞান এবং বুঝের স্তরসমূহঃ

১। সর্বোচ্চঃ اليقين (আল ইয়াকিন)ঃ আর তা হচ্ছে জ্ঞানের সাথে কাজ, সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং সন্তুষ্টি।

২। العلم: (আল ইলম)ঃ জ্ঞান

৩। الظن (আধ ধান্ন)ঃ আর তা হচ্ছে যে সকল ধারনা রয়েছে তাদের মধ্য হতে একটিকে সবচাইতে বেশি গ্রহনযোগ্য সাব্যস্ত করা।

৪। الشك (আশ শাক্ক)ঃ আর তা হচ্ছে দুটি বিষয়ে ঘুরপাক খাওয়া কোন একটিকে অধিক গ্রহনযোগ্য সাব্যস্ত না করে।

৫। الوهم (আল ওয়াহম)ঃ আর তা হচ্ছে তুলনামূলক দূর্বল মতকে গ্রহন করা, এটি আধ ধান্ন এর বিপরীত।

৬। السهو و النسيان و الخطأ (আস সাহ্‌ও, আন নিসয়ান, আল খাতা) ঃ অন্য মনষ্কতা, ভূলে যাওয়া এবং ভূল করা।

৭। الجهل البسيط (আল জাহলুল বাসিত)ঃ আর তা হচ্ছে কোন জ্ঞানের বিষয়ে একেবারেই কোন জ্ঞান না থাকা, বরং অজ্ঞতা থাকা।

৮। الجهل المركب (আল জাহলুল মুরাক্কাব)ঃ আর তা হচ্ছে অজ্ঞতার ব্যপারে অজ্ঞতা।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৩৪, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

 

لا إله إلا الله এর জ্ঞানে যা অন্তর্ভূক্ত আর যা এ সম্পর্কিতঃ

১। আল্লাহ্‌ সুবহানু ওয়া তা’আলা, তাঁর নাম, গুণাবলী, রবত্ব সম্পর্কিত জ্ঞান

২। আল্লাহর উলুহিয়্যাত, তাঁর ইবাদাতের একমাত্র অধিকারী হওয়া সম্পর্কিত জ্ঞান।

৩। ভাগ্যের লিখন সম্পর্কিত জ্ঞান।

৪। অদৃশ্যের জ্ঞান তথা ফেরেশতা, নবীকূল, শেষ দিনের সম্পর্কিত জ্ঞান।

৫। আল্লাহর তথ্যাদি, তাঁর আদেশ-নিষেধ, আইন-কানুন, দীন এবং কিতাব সম্পর্কিত জ্ঞান।

৬। তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত জ্ঞান, তাঁকে অনুসরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা এবং তাঁকে সত্যায়িত করা সম্পর্কিত জ্ঞান।

৭। মৃত্যুর পর পুনঃরুত্থান এবং বিচার দিনের জ্ঞান

 

 

জ্ঞানের স্থান এবং এর রুকনঃ

জ্ঞানের স্থান অন্তর এবং এটি قول القلب (অন্তরের বাণী) এর প্রকার, কিন্তু তা অন্তরের কাজ সমূহ, যেমন নিশ্চিত বিশ্বাস, সত্যবাদিতা, ভালোবাসা হতে নয়।

সুতরাং জ্ঞানের একটি বাদে আর কোন রুকন নেই, আর তা হচ্ছে অন্তরের বাণী।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৩৪-১৩৫, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

 

كفر الجهل (কুফর আল জাহল, অজ্ঞতাবশতঃ কুফর)

এটি জ্ঞানের বিপরীত। এ অধ্যায়ে খুব সংক্ষেপে এর বর্ণনা করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে كفر (কুফর) বিষয়ক অধ্যায় পাঠ করুন।

এ বিষয়ক কিছু দলিল এই যে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ

আর তারাই (আল্লাহ্‌ বিমুখ ব্যক্তির সাথে নিয়োজিত শয়তানেরা) সৎপথে বাধা প্রদান করে অথচ তারা (আল্লাহ্‌ বিমুখ ব্যক্তিরা) ধারনা করে যে তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত। (৪৩ঃ৩৭)

 

আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেন,

الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا

তারা যাদের সকল প্রচেষ্টা এ দুনিয়ায় অপচয় হয়ে গিয়েছে অথচ তারা এ ধারনা পোষণ করত যে তারা সৎ কর্ম করছে। (১৮ঃ১০৪)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

আর তা হলো কেউ কুফর বা শিরক আল আকবারে প্রবেশ করলো অজ্ঞতাবশতঃ। সুতরাং সে আল্লাহর দীন সম্পর্কে জানে না এবং সে তা কামনাও করে না। সুতরাং তার কাছে এর দাওয়াত পৌঁছেনি এবং পৌঁছেনি এর হতে বিচ্যুত হবার ব্যপারে। এভাবেই যে কেউ তার উপর (এ বিষয়ে) প্রমাণাদি স্থাপন করল এবং এর পর সে তা মেনে নিলো না অথবা সে তা বুঝতে পারলো না, সুতরাং সে তার কুফরের উপরই রয়ে গেলো জেদ করে মূর্খতাপূর্ণ ব্যখ্যায় রয়ে গেলো এবং মনে করলো সে কোন কিছুর উপর (একে সত্য ধারনা করে) এবং সত্য সে যার উপর আছে তাতেই নিহিত এবং একেই আল্লাহ্‌ চান। সুতরাং যদি এমন হয়, তবে তার উপর কুফরের তকমা লাগাবার ব্যপারে এবং তার উপর তাকফির (তাকে অমুসলিম ঘোষণা করবার ব্যপারে) কোন বাধা নেই।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৪০, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

যে ব্যক্তি শিরকুল আকবর বা বৃহত্তর শিরকে পতিত হলো অজ্ঞতা বশতঃ এবং তার নিকট প্রমাণ না পৌছুবার কারনেঃ

সুতরাং তার ব্যপারে এ দুনিয়াতে হুকুম হচ্ছে যে সে কাফির এবং তার উপর কুফরের হুকুম আপতিত হবে, যে প্রেক্ষিতে এ নাম এবং আপতিত তাকফির তার উপর, তার বিয়ে শাদি, তার ওয়ারিশ হবার যোগ্যতার উপর, তার উপর জানাযার সালাত পড়বার ব্যপারে, তার নেতৃত্বের উপর। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং তাঁকে হত্যা করবার বিষয়টিতে অবশ্যই রয়েছে তার উপর দলীল স্থাপন এবং তার দ্বারা তাওবা করানো।

আর আখিরাতের বিষয়ে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর পরিপূর্ণ ন্যায়বিচারের থেকে কখনও কাউকে তার উপর দলিল স্থাপন হওয়া ব্যতীত আযাব দেন না। যেভাবে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولاً

আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। (১৭ঃ ১৫)

 

সুতরাং এরূপ ব্যক্তি ওজরপ্রাপ্ত এবং তার ব্যপারে হুকুম হচ্ছে আহলে ফিতরাত (যারা শুধু নিজেদের ফিতরাতের উপর স্থাপিত) অথবা পাগলদের কাফিরদের মত, যাদের প্রতি কিয়ামতের দিন রাসূল পাঠানো হবে। যে তাঁকে মান্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে তাঁর অবাধ্যতা করবে এবং বিমুখ হবে সে অবিশ্বাসী এবং সে আগুনে প্রবেশ করবে।

নিশ্চিতভাবে অনেক আলেমগণ এ ব্যপারে ভূলের মধ্যে আপতিত হন এবং তারা ইসলাম সাব্যস্ত করেন কবর-পূজারী মুশরিকদের মধ্যে যারা মূর্খ রয়েছে তাদের ব্যপারে। এবং তারা এদেরকে শারিয়াতের ধারণকারী বলেন, কেননা তারা সাক্ষ্যদ্বয় (لا إلاه إلا الله এবং محمد الرسول الله) উচ্চারণ করেছে এবং তাদের মূর্খতা এবং তাদের ব্যাখ্যাকে তাদের উপর তাকফির করার বিরুদ্ধে কারণ স্বরূপ দাঁড় করিয়েছেন।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৩, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

২।اليقين المنافي للشك (ইয়াকিন, অর্থ নিশ্চয়তা যা সন্দেহকে প্রত্যাখ্যান করে)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

ইস্তিলাহি অর্থেঃ

সেই নিশ্চিত সত্য বিশ্বাস যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা বাস্তবতা মোতাবেক এবং ইবাদাতের মাধ্যমে সত্যায়নকারী।

ইয়াকিনের শারীয়াগত সংজ্ঞা এবং এর উদ্দেশ্যঃ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তে ইয়াকিনের শর্তের উদ্দেশ্য হচ্ছে এর উচ্চারণকারী এর সঠিক অর্থই বিশ্বাস করবে নিশ্চিত বিশ্বাস সহকারে এবং এতেই সে বিশ্বাস করবে, এবং তার অন্তরকে এর সাথে আবদ্ধ করে এবং এতে নিশ্চয়তা বোধ করে। এবং তার অন্তরের সন্দেহ দূরীভূত করে এর দ্বারা, এর দিকে যা নির্দেশনা করা তার দ্বারা, এর বাস্তবতা দ্বারা এবং এর মাধ্যমে যা নিরূপিত হয় তার দ্বারা।

এভাবেই সন্দেহের দূরীভূত করা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রিসালাতের ব্যপারে, এবং যা কিছু নিয়ে তিনি এসেছিলেন সে বিষয়েও।

ঠিক যেভাবে নিশ্চিত ইয়াকিনের মধ্যে রয়েছে অপর সকল দীনকে বাতিল সাব্যস্ত করা, এদের অনুসরণ করাকে কুফর সাব্যস্ত করা, এবং মুশরিকদের কুফরে নিজেকে স্থাপন করা হতে বিরত থাকা এবং তাদের ধর্মসমূহকে বাতিল সাব্যস্ত করা। এবং কোন প্রকার তর্ক বিতর্ক নেই যদি দীনের কোন বিষয়ে ওয়াহীর উপস্থাপন করা হয়। এবং দীন ইসলাম এবং ইহুদি, খৃস্টান বা অন্যান্যদের ধ্বংসপ্রাপ্ত কুফরের মধ্যে কোন প্রকার নিকটবর্তীকরন বা একীভূত করন না করা।

এ সকলই তা যা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর ইয়াকিন বিষয়ক শর্তের অন্তর্ভূক্ত। এবং যে কেউ এ ব্যতীত অন্য কিছু দাবী করবে অথবা প্রত্যাশা করবে, নিশ্চিতভাবে সে ইয়াকিনের শর্ত ভঙ্গ করেছে। এবং সে ইসলাম ধর্মত্যাগ করেছে এ গুণের কারণে।

সুতরাং সে ইয়াকিনকে সত্যায়ন করেনি, সন্দেহকে দূরীভূত করেনি বিশবাসসের মধ্যে বিহ্বলতা এবং দ্বিধাকে দূরীভূত করবার মাধ্যমে। সুতরাং তা ইমান নয় এবং প্রকৃত তাওহীদ হয়। এবং তা এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণকারী হতে কবুল করা হবে না।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

অর্থাৎ এটি এমন যেন এর বক্তা এই বাক্যের (لا إله الا الله) অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানসহ সুনিশ্চিত । কেননা এ ব্যপারে বিশ্বাস কখনই বাড়বে না সুনিশ্চিত জ্ঞান ব্যতীত (আর তা) অনুমান নির্ভর নয়। সেক্ষেত্রে (কিভাবে তাঁর পক্ষে বিশ্বাস বৃদ্ধি সম্ভব) তার মাঝে যদি সন্দেহ আর অবিশ্বাস প্রবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

তারাই প্রকৃত মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনার পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।(৪৯ঃ১৫)

সুতরাং এখানে শর্ত দেওয়া হয়েছে আল্লাহর আর রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) এর উপর তাদের বিশ্বাসের সত্যায়নের এবং তাদের অবস্থান এরূপ যে তারা অবিশ্বাস করেনি। এর অর্থ তারা সন্দেহ করেনি।  আর যে অবিশ্বাসী সে তো মুনাফিকেদের অন্তর্ভূক্ত। এরাই হচ্ছে তারা আল্লাহ যাদের ব্যপারে বলেছেন,

إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ

অবশ্য ঐসব লোক তোমার কাছে অব্যাহতি চেয়ে থাকে, যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে না আর তাদের অন্তরসমুহ সন্দেহে নিপতিত রয়েছে, অতএব তারা তাদের সংশয়ের আবর্তে ঘুর্ণিপাক খাচ্ছে। (৯ঃ৪৫)

সুতরাং তার কোন ঈমান নেই যে لا إله الا الله উচ্চারণ করেছে অবিশ্বাস আর সন্দেহের সাথে। যদিও সে তা ব্যক্ত করে থাকে অনেক লোকের মাঝে।  যদিও সে এ কথা নিয়ে ক্রন্দন করে থাকে; এমনকিতা শোনানো হয় সকল লোকের সামনে।

 

আহমেদ এবং মুসলিমে আবু হুরাইরাহ ( رضي الله عنه ) এর বরাতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

اشهد ان لا اله الا الله , و اني رسول الله لا يلقى الله بهما عبد غير شاك فيهما الا دخل الجنة

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত এবং আমি আল্লাহর রাসুল।  কোন বান্দা আল্লাহর সাথে দেখা করবেনা, এ দুটো বিষয়ে সন্দেহহীন ভাবে, এ (পুরস্কার) ব্যতীত যে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম ২৭, আহমেদ ১০৬৯৬ )

সুতরাং রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) শর্ত দিয়েছেন যে ব্যক্তি একথা বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, (তবে) তাঁর অন্তর হতে হবে নিশ্চিত, এতে কোন প্রকার সন্দেহ ব্যতীত। যদি শর্তের খেলাপ করা হয়, তবে শর্তাধীনকেও অস্বীকার করা হবে। সুতরাং জান্নাতে কেউ প্রবেশ করবে না সে ব্যতীত যার অন্তর لا إله الا الله দ্বারা সুনিশ্চিত।

 

 

ইয়াকিনের রুকনসমূহ, এর স্থান, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

ইয়াকিনের দু’টি রুকনঃ

১। قول القلب (অন্তরের বক্তব্য)

২। عمل القلب (অন্তরের কাজ)

এর স্থান অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, অন্তরের কাজ এবং কথার মাঝে। এবং তা বাহ্যিক নয়। বরং তা গোপন অন্তরের মাঝে, জিহ্বা বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাঝে নয়, এ ব্যতীত যা কিছু বাধ্যতামূলক। ইমাম আন নাওয়াওয়ী বলেন, “ইয়াকিন খুঁজবার স্থান অন্তর ব্যতীত অন্য কোন স্থান নয়।”

সুতরাং ইয়াকিন শুধুমাত্র অন্তরের জ্ঞান অথবা এর সত্যায়ন নয়, বরং তা অন্তরের শান্তি, নিশ্চয়তা এবং কাজ।

ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,”ইয়াকিন এর উদ্দেশ্য অন্তরের ভেতর সম্মত জ্ঞান আর এর উদ্দেশ্য এ জ্ঞানের দ্বারা কাজ। সুতরাং মুকিন (ইয়াকিনকারী) কে সাধারণ করা যায় না যে এ ব্যতীত, যে সম্মত হয়েছে তার অন্তরে জ্ঞান এবং ইয়াকিনের ব্যপারে।”

তিনি আরো বলেন,”ইয়াকিন রয়েছে কাজ, নিশ্চয়তার মাধ্যমে যেভাবে রয়েছে জ্ঞানের মাধ্যমে।”

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৫৬-১৫৭, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

ইয়াকিন যার উপর স্থাপিতঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

১। আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যপারে ইয়াকিনঃ সুতরাং আল্লাহর অস্তিত্বে কোন সন্দেহ পোষণ করা নেই। আল্লাহ্‌ বলেন, আল্লাহতেই কি সন্দেহ?

أَفِي اللَّهِ شَكٌّ

আল্লাহতেই কি সন্দেহ? (১৪ঃ১০)

২। আল্লাহকে তার রুবুবিয়্যাতে এক করাতে ইয়াকিনঃ সুতরাং বান্দা এই বিশ্বাস করবে যে আল্লাহই হচ্ছেন পরিচালক, স্রষ্টা, রিযিকদাতা, মালিক, কল্যাণকারী, অকল্যাণকারী – একমাত্র, যার কোন অংশীদার নেই। আর এই যে সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে তার সকলেই তার রবত্বের পরাক্রান্ত আর তাঁর ক্ষমতা আর পরিচালনার তলে। তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিচালনা করে থাকেন।

৩। বান্দা কেবলমাত্র আল্লাহর উলুহিয়্যাতে ইয়াকিন রাখবে এবং আল্লাহকে ইবাদাতে এক রাখবে এবং এ বিশ্বাস করবে যে একমাত্র আল্লাহই এ ইবাদাত প্রাপ্তির যোগ্য। সুতরাং তাওহীদ আল উলুহিয়্যাতে ইয়াকিন রাখবে এবং এই বিশ্বাস রাখবে যে সকল আল্লাহ্‌ তা’আলা ব্যতীত সকল মাবুদ বাতিল।

৪। আল্লাহকে তাঁর পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণতার ব্যপারে ইয়াকিন রাখা এবং এই ইয়াকিন রাখা যে তিনি কোন প্রকার কলঙ্ক এবং অপূর্ণতার উর্ধবে।

৫। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের ঘটন এবং পূর্ব-নির্ধারনের উপর বিশ্বাস করা এবং এর উপর ইয়াকিন করা বশতঃ ঈমান আনা। এবং একথা জানা যে ইমান, ইসলাম এবং ইবাদাত কোন কল্যাণ বয়ে আনে না যদি ভাগ্যের পূর্বনির্ধারনের উপর বিশ্বাস না করা হয়। এবং এ ইয়াকিন রাখা যে অশান্ত শান্তি পায় না এবং শান্ত অশান্ত হয় না একমাত্র আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ঘটন, ভাগ্য নির্ধারন, তাঁর জ্ঞান, তাঁর সৃষ্টি করবার ক্ষমতা, ইচ্ছা  ব্যতীত।

৬। ইয়াকিন রাখা ইয়াকিনের অধিকারের মাধ্যমে প্রত্যেক তাগুত – মা’বুদ, অনুসরনকৃত এবং আদেশকারীর ব্যপারে অবিশ্বাস করা। আর এই কুফর এবং শত্রুতার অর্থঃ এমন ধর্ম যা ইসলাম ধর্ম ব্যতীত, এবং ইয়াকিন রাখা মুশরিক, ইহুদি, খৃস্টান এবং অন্যান্য কাফিরদের উপর অবিশ্বাস করবার ব্যপারে, এবং ইয়াকিন রাখা তাদের ব্যপারে শত্রুতা পোষণ করবার বাধ্যবাধকতার উপরে এবং তাদের হতে নিজেকে মুক্ত করবার ব্যপারে। সুতরাং যে কেউ এ সকলে ইয়াকিন আনবে না সে তাওহীদপন্থী নয়।

৭। ইয়াকিন রাখা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নুবুয়্যাতের ব্যপারে এবং ইয়াকিন রাখা তাঁকে অনুসরণ, মান্য করা এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা রাখবার ব্যপারে।

৮। ইয়াকিন রাখা ফেরেশতাকূলের উপর, নবীদের উপর, কিতাবসমূহের উপর যা নাযিল হয়েছে রাসূলগণের উপর।

৯। ইয়াকিন আল কুরআনের উপর এবং এর দ্বারা আমল করবার উপর।

১০। ইয়াকিন রাখা দীন ইসলামের সত্যতার উপর এবং তা এর পূর্বে যা কিছু আসমানী দীন এসেছে তার রদকারী।

১১। ইয়াকিন রাখা শেষ দিনের উপর, মৃত্যু, পুনরুত্থান, বিচার-আচার, জান্নাত এবং আগুণের উপর।

১২। ইয়াকিন সে সকল বিষয়ের উপর যা কিছুর ব্যপারে আল্লাহ্‌ আমাদের খবর দিয়েছেন এবং যা কিছু দিয়ে তিনি আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং ইয়াকিন করতে হবে তাঁর সততায়, তাঁর দয়া-দাক্ষিন্যে এবং এই যে তিনিই সত্য এবং এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

ইয়াকিনের পর্যায় সমূহঃ

ইয়াকিনের পর্যায় তিনটিঃ

১। علم اليقين(ইলমুল ইয়াকিন)। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

كَلاَّ لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ

কখনই নয়, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে। (১০২ঃ৫)

২। عين اليقين(আইনুল ইয়াকিন)ঃ আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ

ইয়াকিন এর পর তোমরা তাকে তোমাদের নিজ চোখে দেখবে। (১০২ঃ৭)

৩। حق اليقين(হাক্কুল ইয়াকিন)। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

وَإِنَّهُ لَحَقُّ الْيَقِينِ

ইলমুল এবং নিশ্চিতভাবে তা হচ্ছে নিশ্চিত বিশ্বাস। (৬৯ঃ৫১)

 

শাইখ ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন,

ইলমুল ইয়াকিন হচ্ছে এমন জ্ঞান যা শোনা, খবর, কিয়াস, গবেষণা ইত্যাদি হতে প্রসূত। আইনুল ইয়াকিন হচ্ছে যা মানুষ প্রত্যক্ষ করে এবং দৃষ্টি শক্তি দ্বারা দর্শন করে। হাক্কুল ইয়াকিন হচ্ছে যাতে সে অংশগ্রহন করে, যা তার কাছে উম্মোচিত হয়, যার সবাদ সে আস্বাদন করে। এ তিনটি পর্যায়কে এভাবে দাড় করানো যায়, কেউ আপনাকে জানাল যে তার কাছে মধু আছে এবং আপনি তার সত্যবাদিতায় কোন সন্দেহ করলেন না। এর পর আপনি তা পর্যবেক্ষণ করলেন এবং তা আপনার ইয়াকিনকে বাড়িয়ে দিলো। এর পর আপনি তা হতে চেখে দেখলেন এবং এর স্বাদ এবং মিষ্টত্ব আস্বাদন করলেন।

(মাজমু’ ফাতাওয়া, শাইখ ইবনু তাইমিয়্যাহ, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ৬৪৫)

 

শাইখ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ বলেন,

জেনে নাও এই হাক্কুল ইয়াকিনের পর্যায় এ পৃথিবীতে অর্জন করা সম্ভব নয় কেবল মাত্র রসূলগণ ব্যতীত, তাদের সকলের উপর সালাত এবং সালাম। নিশ্চিতভাবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইয়াহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজ চক্ষু দিয়ে জান্নাত, আগুন অবলোকন করেছেন, আর মূসা শুনেছেন আল্লাহর কালাম তাঁর নিকট হতে কোন প্রকার মাধ্যম ব্যতীত, এবং তাঁর প্রতি বক্তব্য রেখেছেন, পাহাড়কে ধ্বংস করেছেন আর মূসা তা অবলোকন করেছেন, আর পাহাড়কে ধাক্কা দিয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ করেছেন।

তবে হ্যাঁ, আমাদের নিকট হাক্কুল ইয়াকিন এ পর্যায় থেকে আসে আর তা হচ্ছে আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু জানিয়েছেন ইমানের সত্যাসত্য হতে যা অন্তর এবং তার কাজ সমূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কেননা অন্তর, যদি তাতে অংশগ্রহণ করে এবং তার স্বাদ গ্রহন করে তবে বাস্তবিকভাবে তা হয়ে যায় হাক্কুল ইয়াকিন।

আর আখিরাতের বিষয়-আশয়, প্রত্যাবর্তন, আল্লাহকে চর্মচক্ষুতে দর্শন, তাঁর কালাম শ্রবণ কোন প্রকার মাধ্যম ব্যতীত – এ সকলই মুমিনের সুযোগ সম্ভাবনা এ পর্যায়েঃ ইমান এবং ইলমুল ইয়াকিনে। আর হাক্কুল ইয়াকিন প্রলম্বিত আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত।

(مدارج السالكين, শামসুদ্দীন আবি আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১, দার তাইবাহ)

 

৩।الصدق (সিদক, অর্থ সত্যবাদিতা)

 

আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম বলেন, সিদক হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করা, যার উপর তা স্থাপিত।

(الإحكام في أصول الإحكام, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনু হাযম, পৃষ্ঠা ৩৬, দার আল আথার)

শামসুদ্দিন আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ বলেন, সিদকঃ বিশেষ করে কোন কিছুর বাস্তবতার নাম এর অর্জনের ক্ষেত্রে অথবা এর অস্তিত্বের ক্ষেত্রে।

সিদক হচ্ছে কোন কিছু অর্জন করা এবং তার পুরোটাই, এর পরিপূর্ণ শক্তি এবং এর সকল ভগ্নাংশের সমন্বিত করন।

(مدارج السالكين, শামসুদ্দীন আবি আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৩, দার তাইবাহ)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

সিদকঃ এটি কোন বক্তব্যের অনুসরণ বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, এবং প্রকাশ্য এবং গোপনের একাত্বতা।

সিদক কাযিব (كذب , মিথ্যাচার) এর বিপরীত এবং এর মূল অতীতকাল বা ভবিষ্যতের বক্তব্যে নিহিত, এর সংঘটন আত্মনির্ভর অথবা অন্যের উপর। মূলতঃ এটি খবরের সাথে সম্পর্কযুক্ত আবার কখনো তা অন্য কোন কিছুতে নিহিত আর তার সংঘটন আত্মনির্ভর।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ৯০, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

এ আলোচনার প্রেক্ষিতে তা হচ্ছে  لا الاه الا الله কে অন্তর দ্বারা সত্যায়িত করা আর (একই সাথে) মুখের বক্তব্যকে অন্তরের সাথে সংযুক্ত করা । সুতরাং কেউ যদি একথা তার মুখে স্বীকার করে কিন্তু অন্তর দ্বারা সত্যায়িত না করে তবে সে منافق (মুনাফিক, অর্থ কপট, তবে ইসলামিক পরিভাষায় মুনাফিকেরা অমুসলিম), মিথ্যুক।  আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لا يُفْتَنُونَ

وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমাণ এনেছি, একথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।  (২৯ঃ১-৩)

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ

يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ

فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ

আর মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিবসের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে, প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সঙ্গে প্রতারণা করে না, অথচ তারা এ সম্বন্ধে বোধই রাখে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো। (২ঃ৮-১০)

 

এবং আল্লাহ মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন তাদের তাঁর বক্তব্যের মাঝে آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ (আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিবসের উপর বিশ্বাস এনেছি) এ বক্তব্যের মাধ্যমে وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ (অথচ তারা মোটেই বিশ্বাসী নয়।)

এটি এ কারণে যে যখন আল্লাহ দেখালেন তাদের হৃদয়ে কি ব্যধি রয়েছে, আর সেটি হলো তারা তাদের মুখের বক্তব্যকে সংযোগ করেনি অন্তরের সাথে, আর তারা কাফিরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য।  এবং তাদের বাসস্থান হবে আগুণের (জাহান্নামের) সর্বনিম্ন স্তরে।

 

আনাস ( رضي الله عنه ) এর বরাতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

ما من احد يشهد ان لا الاه الا الله و ان محمدا رسول الله صدقا من قلبه الا حرمه الله على النار

এমন কেউ নেই যে এই সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল সত্যবাদিতার সাথে তার অন্তর হতে এ ব্যতীত যে আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামের আগুণের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন। (বুখারী ১২৮, মুসলিম ৩২)

সুতরাং রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) শর্ত দিয়েছেন এই যে আগুণ (জাহান্নাম) থেকে রক্ষা পাওয়া এই বাক্যের মাধ্যমে তখনই সম্ভব যখন কেউ সেটা উচ্চারণ করবে হৃদয়ে তাঁর সত্যায়নের সাথে। সুতরাং কারুর হৃদয়ের সংযোগ ব্যতীত  শুধু মৌখিক স্বীকৃতি তাঁর জন্যে কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।

উদাহরণ স্বরূপ সেই বেদুঈনের হাদিস, যেখানে সে নবী (صلى الله عليه وسلم) এর কাছে এলো এবং ইসলামের স্তম্ভ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলো, যার সর্বোচ্চ হচ্ছে এই বাক্য لا إله الا الله । নবী (صلى الله عليه وسلم) তাকে এ ব্যপারে জানালেন । তখন সেই বেদুঈন বললো, আমার উপর কি আর কিছু (করনীয়) রয়েছে? তিনি বললেন, না, ঐচ্ছিক কাজ (নফল) ব্যতীত। সে বললো, আল্লাহর কসম! আমি এর চাইতে না কিছু বেশী করবো, না কিছু কম করবো। তখন রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বললেন, সে সফল হয়েছে যদি সে সত্য বলে থাকে।

সুতরাং নবী (صلى الله عليه وسلم) সাফল্যের জন্যে ঐ ব্যক্তির সত্যবাদী শর্ত দিলেন । সুতরাং তা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে كاذب (মিথ্যুক) এবং  منافق (মুনাফিক), কেননা সে কখনই সফলকাম হবে না। বরঞ্চ তাঁর জন্যে রয়েছে হতাশা এবং ধ্বংস। আল্লাহ রক্ষা করুন এসব থেকে।

 

সিদকের শাখাঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

সিদক সবচাইতে বড় ইবাদাত, দীনের স্থাপন এবং ইমানের শাখার ন্যায় যা أصل (আসল, অর্থ মূল) এবং كمال (কামাল, অর্থ পরিপূর্ণ), এ দুভাগে বিভক্ত। বস্তুতঃ আসল ব্যতীত ইমান সঠিক নয়, আর ইসলাম কবুল করা এর সত্যায়নের উপর নির্ভর করে। আর যে আসল কে তরক করে সে কাফির এবং তার সাথে কোন দীন নেই। কামাল সিদকের অনেক স্তর রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ওয়াজিব যা তরক করলে তরককারী গুনাহগার হয় কিন্তু তার উপর কোন তাকফির হয় না। আবার এর মধ্যে রয়েছে মুস্তাহাব। তাওহীদপন্থীরা এ স্তরের ভিতর পড়েছে। এই প্রকার, অর্থাৎ পরিপূর্ণ – তিনটি স্তরের মধ্যেঃ নিজ নফসের প্রতি যে অত্যাচার করে, কম অগ্রসর, ভালো কাজে অগ্রগামী ব্যক্তি। আর এরা সকলেই আসলের ক্ষেত্রে সঠিক ঈমান এবং ইসলাম সম্পন্ন।

الأصل في الصدك (সিদকের ক্ষেত্রে মূল)ঃ এটি সম্পর্কযুক্ত তাওহীদ, এর বাণী, এর ব্যপারে সিদক এবং এর বক্তব্যে সিদক এর সাথে।

الكمال في الصدك (সিদকের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা)ঃ এটি সম্পর্কযুক্ত দীনের কোন একটি বিষয়ের সাথে যেক্ষেত্রে এর দ্বারা আমল করা হয় এবং এতে ইয়াকিন করা হয়। একারণেই সিদ্দিক হচ্ছেন তিনি যিনি তাঁর বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করবেন তাঁর আমলের মাধ্যমে আর আহলে ঈমানেরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা দেয় সিদকের পরিপূর্ণতা সত্যায়নের ক্ষেত্রে। তাই মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে সিদ্দিক, এর পর সুদুক এবং এর পর সাদিক।

আর এর ভিত্তিতেই রয়েছে ঈমান অনুযায়ী সিদক বেশি বা কম থাকা।

ইবন রাজাব উল্লেখ করেছেন كلمة الإخلاص গ্রন্থে, “আর যারা আগুনে প্রবেশ করবে এই কালিমা উচ্চারণকারীদের মধ্য হতে, তা একান্তই তাদের এ বক্তব্যের ক্ষেত্রে সিদকের স্বল্পতার কারনে। কেননা যদি এ কালিমাকে সত্যাসত্য ভাবে ধারন করা হয় তবে তা অন্তরকে পবিত্র করে দেবে আল্লাহ্‌ ব্যতীত সকল কিছু হতে। আর যখন অন্তরে রয়ে যাবে কোন প্রকার রেশ আল্লাহ্‌ ব্যতীত, তবে তা এই বক্তব্যের ব্যপারে সিদকের কমতি হতে। আর যে সত্য বলেছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর উচ্চারনের ক্ষেত্রে সে তাঁকে ব্যতীত আর কাউকে ভালোবাসেনা, তাঁকে ব্যতীত আর কাউকে চায় না, আল্লাহকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করেনা, আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কারুর উপর আস্থা রাখে না। ”

ইবন তাইমিয়্যাহ منهاج السنة গ্রন্থেঃ সিদ্দিক শব্দটি দ্বারা কখনো সিদকের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা নির্দেশ করা হয়, কখনো সত্যায়নের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা নির্দেশ করা হয়।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৯২-১৯৩, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

সিদকের প্রকারভেদঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

১। الصدك قلبي (আস সিদক কালবী, অন্তরের সিদক)ঃ আর এটি রয়েছে অন্তরের বক্তব্য এবং কাজে। আর এটিই সিদকের মূল এবং ভিত্তি।

২। الصدك قولي (আস সিদক কাউলী, বক্তব্যের সিদক)ঃ আর এটি উচ্চারণে।

৩। الصدك عملي (আস সিদক আমালী, আমল বিষয়ক সিদক)ঃ  এটি রয়েছে ক্রিয়া এবং বাহ্যিক অঙ্গ প্রতঙ্গের কাজে।

এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বপ্নের সত্যায়ন।

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا

তুমি বাস্তবায়ন (অনুবাদকঃ শাব্দিক অর্থে সত্যায়ন) করেছ তোমার স্বপ্নকে। (৩৭ঃ১০৫)

আর এ ব্যপারে তাঁর সত্যায়ন তাঁর কাজ এবং উদাহরণ স্থাপন এবং নির্দেশনার প্রতি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তব্যঃ

والفرج يصدق ذلك أو يكذبه

আর গোপনাংগ হয় এ ব্যপারে সত্যায়ন করবে অথবা মিথ্যাচার করবে।

আর এ সত্যায়ন হচ্ছে যিনা করা।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ১৯৩-১৯৪, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

(অনুবাদকঃ এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পড়তে হলে পড়ুন ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ এর مدارج السالكين)

 

 

الكذب في التوحيد (আল কাযিব ফিত তাওহীদ, আল্লাহর একত্ববাদে মিথ্যা)ঃ

সিদকের তরক করবার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়টি দু প্রকারঃ

ক। التكذيب (আত তাকযিব, মিথ্যায়ন)ঃ এটি التصديق (আত তাসদিক, সত্যায়ন) এর বিপরীত, যা (অর্থাৎ আত তাসদিক) কবুল করার সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং এর বিপরীত হচ্ছে আত তাকযিব যা ধর্মত্যাগের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

খ। النفاق (আন নিফাক, কপটতা)।

৪। الإخلاص (ইখলাস, অর্থ আন্তরিকতা/একাগ্রতা)

 

আন্তরিকতা যা شرك (শিরক, আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব), نفاق (নিফাক, অর্থ কপটতা),  رياء (রিয়া, অহংকার করে লোক দেখানো), سمعة (সুম’আহ, লোকের কাছ থেকে প্রশংসা প্রাপ্তির আশা) কে অকার্যকর করে।  الإخلاص এর অর্থ কর্ম (এ ক্ষেত্রে ইবাদাত) কে শুদ্ধ করা সকল প্রকার  شرك এর অপমিশ্রতা হতে ন্যয়পরায়ণ আকাঙ্ক্ষার (نية , নিয়্যাত, অর্থ আকাঙ্ক্ষা) মাধ্যমে।  আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ

আমি তোমার নিকট এই কিতাব সত্যতা সহকারে অবতীর্ণ করেছি; সুতরাং তুমি আল্লাহর ইবাদাত কর তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। জেনে রেখো, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে, (তারা বলে:) আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, এরা আমাকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দিবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাঁকে সতপথে পরিচালিত করেন না। (৩৯ঃ২-৩)

 

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ

তারা তো আদিষ্ট হয়েছিলো আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত সঠিক দ্বীন। (৯৮ঃ৫)

قُلِ اللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَّهُ دِينِي

বলঃ আমি ইবাদত করি আল্লাহরই তাঁর প্রতি আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ রেখে। (৩৯ঃ১৪)

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا

নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থিত হবে এবং তুমি কখনো তাদের জন্যে সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা ক্ষমা প্রার্থণা করে ও সংশোধিত হয় এবং আল্লাহকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও আল্লাহর জন্যে তাদের দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে, ফলতঃ তারাই মু’মিনদের সঙ্গী এবং অচিরেই আল্লাহ মু’মিনদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। (৪ঃ১৪৫-১৪৬)

সুতরাং আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের মধ্যে অবস্থান করবার শর্ত দিয়েছেন এই বলে যে তারা তাদের দীন আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করবে। যে কেউ একথা মুখে স্বীকার করে নেবে কিন্তু আন্তরিকভাবে গ্রহন করবে না, সে মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত হবে না। বরঞ্চ সে منافق (মুনাফিক, অর্থ কপট), তবে ইসলামিক পরিভাষায় মুনাফিকেরা অমুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত হবে যাদের স্থান (জাহান্নামের) আগুণের সর্বনিম্ন স্তরে।

তাই لا إله الا الله এর উচ্চারণ করবার মধ্যে নিশ্চিতভাবে রয়েছে ইখলাস, এ বাক্য উচ্চারণ করবার উদ্দেশ্য হবে না কোন পার্থিব আশা আকাঙ্ক্ষা, (অহংকার বশত) লোক দেখানো এবং লোক প্রশংসা ।

 

এবং আবু হুরাইরাহ ( رضي الله عنه ) এর বরাতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

اسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال لا الاه الا الله خالصا من قلبه

কিয়ামতের দিনে আমার شفاعة (শাফা’আত , অর্থ সুপারিশ) লাভের জন্যে সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তি সে যে আন্তরিকভাবে তাঁর হৃদয় হতে উচ্চারণ করেছে  لا إله الا الله  । (বুখারী ৯৯)

 

এবং ইতবান ইবনু মালিক ( رضي الله عنه ) এর বরাতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

ان الله قد حرم على النار من قال لا إله الا الله يبتغي بذلك وجه الله

নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তাকে (জাহান্নামের) আগুণের উপর হারাম করেছেন যে উচ্চারণ করে  لا إله الا الله  এবং তার মাধ্যমে (অর্থাৎ এ উচ্চারণের মাধ্যমে ) সে শুধু আল্লাহর চেহারা (তাঁর সন্তুষ্টি) আশা করে। (বুখারী ৪২৫, মুসলিম ৩৩)

شرك (শিরক, আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব)ঃ

ইখলাসের বিপরীত হচ্ছে শিরক।

 

৫। المحببة (মুহাব্বাহ, অর্থ ভালোবাসা)

 

এ মহান এবং বরকতময় বাক্যের প্রতি ভালবাসা, এবং যা কিছু এ বাক্যটিতে (لا إله الا الله ) ফরমান দেওয়া হয়েছে এবং যা কিছু এ বাক্যটি নির্দেশ করে। এবং ভালোবাসা তাদের প্রতি যারা এ বাক্যের প্রয়োগ করে, আঁকড়ে ধরে এর শর্তসমূহকে, একই সাথে ঘৃণা পোষণ করে যা কিছু একে বাতিল করে এবং এর (বাতিলকারী) গোত্রকে।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ

এবং মানবমন্ডলীর মধ্যে এরুপ কিছু লোক আছে-যারা আল্লাহর মোকাবেলায় অপরকে সমকক্ষ স্থির করে, আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় তারা অপরকে ভালোবেসে থাকে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে-আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর এবং যারা অত্যাচার করেছে তারা যদি শাস্তি অবলোকন করতো, তবে বুঝতো যে, সমুদয় শক্তি আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর। (২ঃ১৬৫)

 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ

হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্য কেউ তার দীন হতে যদি ফিরে যায়, তবে আল্লাহ্‌ অতি সত্বর (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে নম্র, কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর, তারা জিহাদ করবে আল্লাহর রাস্তায় এবং তারা নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না।  (৫ঃ৫৪)

সুতরাং আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন যে তাঁর সেসব বান্দারাই বিশ্বাসী যাদের ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি দৃঢ়তর। এটা এরূপ কেননা তাদের কেউ তাঁর (আল্লাহর) সাথে তাঁর ভালোবাসায় কোন অংশীদার স্থাপন করেন না যেভাবে আল্লাহকে ভালোবাসার (তথাকথিত) মুশরিক দাবীদারেরা দাবী করে থাকে, যারা গ্রহণ করেছে (আল্লাহ ব্যতীত) নিদ এবং তারা তাদের ভালোবাসে ঠিক যেভাবে তারা ভালোবাসে আল্লাহকে।

আর বান্দার তার রবের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ হচ্ছে সে তার রবের প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেবেন যদিও তা তার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যায়। আর সে ঘৃণা করবে যা তার রব ঘৃণা করেন যদিও তা তার প্রবৃত্তির পক্ষে যায়। এবং সে সুসম্পর্ক স্থাপন করবে তার সাথে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করেছে, আর শত্রুতা স্থাপন করবে যারা তাদের (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের) সাথে শত্রুতা স্থাপন করেছে।  এবং সে اتباع (ইত্তিবা’, শাব্দিক অর্থ অনুসরণ করা ) করে আল্লাহর রাসুল  (صلى الله عليه وسلم) কে।

(অনুবাদক: اتباع (ইত্তিবা’, শাব্দিক অর্থ অনুসরণ করা ) পারিভাষিক অর্থের সংজ্ঞায় ইমাম আহমেদ ইবন হানবাল বলেছেন,

الإتباع ان يتبع الرجل ما جاء عن النبي صلى الله عليه و سلم و عن اصحابه, ثم هو من بعد في التابعين مخير

اتباع (ইত্তিবা’,) হচ্ছে কোন এক ব্যক্তি তাই অনুসরণ করবে যা নবী (صلى الله عليه وسلم) হতে প্রাপ্ত এবং যা তাঁর সাহাবি বর্গ হতে প্রাপ্ত, এর পর  তাদের মনোনীত  التابعين (তাবিঈ, শাব্দিক অর্থ অনুসরণকারী। বস্তুত তারা সাহাবাদের ছাত্র) অনুসরণকারীগণকে ।

(إعلام الموقعين, ইবন কুদামাহ আল মাকদিসি, খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৮১ )

এ সকল আলামতই (আল্লাহকে) ভালোবাসার শর্ত, যাদের একটিও বাদ দিলে (আল্লাহর প্রতি) ভালোবাসা বিদ্যমান রইবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا

আপনি কি দেখেছেন তাকে যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহ স্বরূপ গ্রহন করেছে? এর পরও আপনি কি তার জিম্মাদার হবেন?  (২৫ঃ৪৩)

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ 

আপনি পাবেন না এমন কোন কাওমকে যারা আল্লাহর এবং শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও  আল্লাহ্‌ এবং তার রাসুলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের ভালোবাসে। যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা আত্মীয় হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ্‌ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদের সাহায্য করেছেন তার তরফ হতে রুহ দ্বারা। এবং তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন  জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে নহর বয়ে যায়। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ্‌ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের উপর। তারাই আল্লাহর দল। এটা কি নয় যে আল্লাহর দলই সফলকাম।(৫৮ঃ২২)

সুতরাং আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী (মুমিন) বান্দাদের ব্যপারে এই বলেছেন যে তারা বরঞ্চ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাতেই দৃঢ়তর। আর তারা আল্লাহ কে ভালবাসে আর তিনি তাদের ভালবাসেন। এবং তারা ভালোবাসেনা তাদের যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচারী হয়, যদিও তারা তাদের পরম নিকটজন হয়। এবং এ থেকে জানা যায় বিরুদ্ধাচারীরা আপন করে নেয়না তাদের ব্যতীত যারা তাদের দীনের অন্তর্ভূক্ত এবং তাদেরই অংশ। সুতরাং তারা অবিশ্বাসীদেরই (কাফিরদের) অংশ।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ 

ও তোমরা যারা বিশ্বাসী, তোমরা ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের বন্ধু স্বরূপ গ্রহন করোনা, তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, নিশ্চিতভাবে সে তাদের মধ্য হতে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ জালিম কাওমকে হিদায়াত দেন না।  (৫ঃ৫১)

আনাস ( رضي الله عنه ) এর বরাতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন,

ثلاث من كن فيه وجد بهن حلاوة الايمان: ان يكون الله و رسوله احب اليه مما سواهما, وان يحب المرء لا يحبه الا لله, و ان يكره ان يعود في الكفر بعد اذ انقذه الله منه كما يكره ان يقذف في النار

যে কারুর এ তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে বিশ্বাসের (ঈমানের) মিষ্টত্ব আস্বাদন করবে: নিশ্চিতভাবে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল তার নিকট অন্য যেকোন কিছুর অপেক্ষা প্রিয়তর হবে, সে যদি কাউকে ভালবাসে তবে তা আল্লাহর কারণ ব্যতীত আর কোন কারণে নয়, এবং আল্লাহ তাকে অবিশ্বাস (কুফর) হতে রক্ষা করবার পর সে অবিশ্বাসে (কুফরে) ফেরত যেতে ঘৃণাবোধ করবে ঠিক সেভাবে যেভাবে সে ঘৃণা করে আগুনে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হওয়াকে।

 

 

মুহাব্বাতের প্রকারভেদঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

মুহাব্বাতের প্রকারভেদঃ

 

১। المحبة الطبعية العادية الفطرية (মুহাব্বাহ যা ফিতরাগত প্রকৃতির অনসুরনে) ঃ

যেমন বাবা, সন্তান, ধন সম্পত্তির প্রতি ভালোবাসা। এবং এ ধরনের মুহাব্বাতে নেই কোন প্রকার মহত্ত্ব, নমনীয়তা, স্বাধীন অনুসরণ, ইবাদাতগত নম্রতা ইত্যাদির আবশ্যিকতা। কিন্তু বাবার প্রতি নমনীয়তা এবং তার প্রতি দয়ার পাখনা বিছিয়ে দেওয়া এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা – এ সকলই আল্লাহর প্রতি , তাঁর আদেশের প্রতি  সম্মান প্রদর্শন করা, এবং তাঁকে মান্য করা কেননা এ সকল উপস্থিত যা আল্লাহ আদেশ করেছেন। এর পর এ সকল বিষয় পরিপূর্ণ এবং খালিস সম্মান নয় (কেননা তা কেবল আল্লাহর প্রাপ্য)।

(সংকলকঃ লক্ষ্য করুন আল্লাহ্‌ বলছেনঃ

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

এবং আপনার রব আপনাকে এ হুকুম দিয়েছেন যেন আপনি তাঁকে ব্যতীত অপর কাউকে ইবাদাত করবেন না এবং আপনার পিতা-মাতার প্রতি দয়াসুলভ সদাচার করবেন। যদি তাদের কোন একজন অথবা উভয়েই আপনার জীবদ্দাশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের প্রতি উফ শব্দটিও উচ্চারণ করবেন না এবং তাদের তিরস্কার করবেন না, বরঞ্চ তাদেরকে বলুন সম্মানসূচক বক্তব্য।(১৭ঃ২৩)

আল্লাহ্‌ এ আয়াতে পিতা-মাতার ক্ষেত্রে যে আদেশ করেছেন তা মুসলিম এবং অমুসলিম সকল পিতা-মাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, ঠিক তেমনিভাবে অন্যান্য সম্পর্ক, যেমন ভাই-বোন, খালা, মামা, চাচা – এ সকল সম্পর্কই প্রাকৃতিক।)

 

২। المحبة التعبدية (ইবাদাত সংক্রান্ত মুহাব্বাহ)ঃ

আর এটি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যাতে সংশ্লিষ্ট নম্রতা, নমনীয়তা, নিরাপত্তার আশ্রয় সন্ধান, আশা করা, ভয় করা, আর্জি করা ইত্যাদি সকল বিশেষ করে আল্লাহর জন্যে এবং অন্যের জন্যে তা উদ্দেশ্য করা জায়িয নয় এবং তা অন্যের জন্যে করা হয় না।

 

(সংকলকঃ আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ

وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ

আর যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় প্রচন্ড।(২ঃ১৬৫))

 

৩। المحبة اللزومية (আবশ্যকীয় মুহাব্বাহ)ঃ

আর এটি হচ্ছে সে ভালোবাসা যা আল্লাহর মাঝে এবং আল্লাহর জন্যে। আর এটি ইবাদাত সংক্রান্ত মুহাব্বাতের সাথে আবশ্যকীয় এবং এর কারণেই। আর তা হচ্ছে এমন ভালোবাসা যা আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন তাঁকে মান্য করা এবং ভালো বিষয় হতে। এবং ভালোবাসা আল্লাহর মাঝে এবং আল্লাহর কারণে। এবং এ ভালোবাসা আল্লাহর ওয়ালীদের জন্যে, এবং মুমিন বান্দাদের প্রতি যেমন রাসুল, ফেরেশতা এবং সালেহ বান্দাদের প্রতি। এবং এ প্রকার মুহাব্বাহ আল্লাহর কারনে বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর কারনে শত্রুতা, এবং এটি ব্যতীত ইসলাম পরিপূর্ণ হয়না। এবং তা ঈমানের সবচাইতে শক্তিবহ শর্ত।

 

(সংকলকঃ আল্লাহ্‌ বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ

ও তোমরা যারা বিশ্বাস এনেছ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের আমলসমূহকে ধ্বংস করে দিও না।

(৪৭ঃ৩৩)

অর্থাৎ আমলসমূহ ধ্বংস না হবার একমাত্র শর্ত হলো আল্লাহর এবং আল্লাহর নবীর অনুসরণ করা।

 

আবার আল্লাহ্‌ বলেনঃ

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে (অর্থাৎ আল্লাহর রাসুলকে) অনুসরণ কর, আল্লাহ্‌ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পরম ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু।(৩ঃ৩১)

সুতরাং আল্লাহকে ভালোবাসলে অবশ্যই রাসুলকে অনুসরণ করতে হবে, নতুবা আল্লাহকে ভালোবাসা হয় না। লক্ষ্য করুন রাসুলকে অনুসরণ কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে আল্লাহ্‌ কি বলছেনঃ

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ

যা কিছু রাসুল তোমাদের দেন তা তোমরা গ্রহন কর এবং যা কিছুর ব্যপারে তিনি তোমাদের নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। (৫৯:৭)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে যা কিছু রাসুল দেন, অর্থাৎ আল কুরআন এবং আস সুন্নাহ হতে, তাকে অবশ্যই পালন করবার মাধ্যমেই এ ব ভালোবাসা প্রমান করতে হবে। শুধু মুখের দাবী এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে এ গ্রন্থের ঈমান অধ্যায়ে আরো আসছে। )

 

৪। المحبة الشركية (শিরকবশতঃ মুহাব্বাহ)ঃ

আর এটি নিদ এর প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যকে ইবাদাতের যোগ্য মনে করা অথবা আল্লাহর সাথে সাথেই অপর কারুর জন্যে (একই প্রকার) ভালোবাসা পোষণ করা, যেভাবে এ কাজ করে থাকে মুশরিকেরা তাদের উপাস্যসমূহের ক্ষেত্রে করে থাকে।

 

(সংকলকঃ আল্লাহ্‌ বলেনঃ

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ

এবং মানুষের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিদস্বরূপ গ্রহন করেছে, তারা তাদের সেভাবে ভালোবাসে যেভাবে তারা আল্লাহকে ভালোবাসে। (২ঃ১৬৫)

এ প্রসঙ্গে ইত্তিবাআ এর অধ্যায় পাঠ করুন, যা সামনে আসছে।)

 

৫। المحبة المحرمة (হারাম মুহাব্বাহ) ঃ

এটি হচ্ছে এমন প্রকার মুহাব্বাহ যাকে আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন না, যেমন কুফর, ফিসক, গুনাহ, প্রবৃত্তির অনুসরণ, অথবা কাফিরের প্রতি ভালোবাসা অথবা তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা অথবা আল্লাহর আদেশের ব্যপারে রাগ পোষণ করা দুনিয়া এবং ধন সম্পত্তির ব্যপারে বাড়াবাড়ি পোষণ করা।

(সংকলকঃ এ প্রসঙ্গে এ বইয়ের কুফর, ফিসক, ওয়ালা ওয়াল বারাআ অধ্যায় পাঠ করুন, যা সামনে আসছে। )

এ সকল মুহাব্বাহ বিভিন্ন স্তরের, এর মধ্যে রয়েছে পালনকারীর কুফর (যা ধর্মচ্যূত করে দেয়), আবার এর মধ্যে রয়েছে এমন গুনাহ যা কুফর নয়।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ২৭০-২৭১, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বিনষ্ট বা কদর্য হওয়ার কারনসমূহের মধ্যে রয়েছেঃ

১। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতি অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা, অথবা গালমন্দ করা অথবা তাদের আদেশের ব্যপারে বিদ্বেষ পোষণ করা অথবা ইবাদাতের এমন কাজ করা যা ঘৃণা এবং বিদ্বেষের সাথে।

২। শিরকবশতঃ মুহাব্বাহ পোষণ করা অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুকে আল্লাহর ন্যায় ভালোবাসা।

৩। এমন ভালোবাসা যা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ হতে বিধায় আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে।

৪। আল্লাহর শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা এবং বন্ধুত্ব পোষণ করা।

৫। আল্লাহ যা ভালোবাসেন এবং যে আইন প্রনয়ন করেছেন অথবা কিছু (ওয়াহীর মাধ্যমে) তাদের প্রতি প্রেরণ করেছেন তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করা।

৬। আল্লাহর ওয়ালীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।

৭। আল্লাহ যা ভালোবাসেন বা যা আদেশ করেছেন তার উপর নিজের প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেওয়া।

৮। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর (নিকট প্রেরিত ওয়াহীর) অনুসরণ এবং  আত্মসমর্পন করা এবং তার আদেশের উদাহরণ অনুসরণ করবার মাধ্যমে ভালোবাসার অবশ্যিকতা প্রদর্শনের বিপরীত করা।

এ সকল অপছন্দনীয় কাজ বিভিন্ন স্তরের, এর মধ্যে রয়েছে পালনকারীর কুফর (যা ধর্মচ্যূত করে দেয়), আবার এর মধ্যে রয়েছে এমন গুনাহ যা কুফর নয়।

(شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ২৭৯, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

 

(كفر البغض و الكره) ঘৃণা এবং অপছন্দের মাধ্যমে কুফর

ভালবাসার বিপরীত হচ্ছে ঘৃণা এবং অপছন্দ। ঘৃণা এবং অপছন্দ মুহাব্বাতকে বিনষ্ট করে দেয়।

আল্লাহ বলেন,

لَقَدِ ابْتَغَوُاْ الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ الأُمُورَ حَتَّى جَاءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَارِهُونَ

তারা পূর্বেও ফ্যাসাদ করতে চেয়েছিল, এবং আপনার বিষয় সমূহ উল্টে ফেলেছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সত্য এল এবং আল্লাহর আদেশ বাস্তব হল। আর তারা ছিল এতে অসন্তুষ্ট। (৯ঃ৪৮)

 

আল্লাহ আরও বলেন,

ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

এটি একারণে যে তারা অনুসরণ করে তা যা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে এবং অপছন্দ করে তাঁর সন্তুষ্টিকে। সুতরাং তিনি তাদের আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেন।(৪৭ঃ২৮)

এরূপ আরও অসংখ্য আয়াত রয়েছে যাতে এ ধরনের রোগাক্রান্ত লোকেদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর ওয়াহীকে ঘৃণা বা অপছন্দ করা কুফর।

 

৬। قبول (কবুল, অর্থ- স্বীকার করা)

 

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

কবুলের অবস্থান বিষয়ে দুটো মূল রয়েছেঃ

১। الأخذ و اللزوم (গ্রহন করা এবং লেগে থাকা)ঃ যেমন আপনি বলেন, “আমি উপহার গ্রহন করেছি এবং নিয়েছি। এবং গ্রহন করেছি আদেশসমূহ যদি এর দ্বারা আমি গ্রহন করি।” এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর বাণীঃ

فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ

অতঃপর তাঁর প্রভু তাঁকে উত্তমরূপে কবুল করলেন। (৩ঃ ৩৭)

অর্থাৎ তাঁকে গ্রহন করলেন। আর তাঁর বক্তব্যঃ

أُوْلَئِكَ الَّذِينَ نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا

ওরাই হচ্ছে তারা যাদের নিকট হতে তারা যেসব সুন্দর কাজ সমূহ করে তা কবুল করা হয়। (৪৬ঃ১৬)

অর্থাৎ একে গ্রহন করা। আল্লাহ এ সকল আমল কবুল করেন – এর অর্থ হচ্ছে গ্রহন করেন।

 

২। الرضاء و ميل النفس (নাফসের সন্তুষ্টি এবং পছন্দ)ঃ আপনি বললেন, কোন কিছুকে গ্রহন করলাম যদি সন্তুষ্ট হই, এবং কোন কিছুকে গ্রহন করলাম যদি এর দ্বারা সন্তুষ্ট হই।

শারীয়াতে কবুল এ দুটো অর্থের সমন্বয়েঃ কোন বিষয়কে গ্রহন করা এবং তার সাথে লেগে থাকা, তার উপর সন্তুষ্টির, এর প্রতি নাফসের পছন্দের সাথে এবং এর বিরোধিতা, এর বিরুদ্ধাচরন এবং একে পরিত্যাগের বিপরীত।

 

কবুলের শারয়ী সংজ্ঞা এবং আকিদাগত ইস্তিলাহঃ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বাণীটির ক্ষেত্রে কবুলের অর্থ সাক্ষ্যদ্বয় যা কিছু নির্দেশ করে তাকে কবুল করা। হোক তা এ সাক্ষ্যদ্বয়ের সংশ্লিষ্ট অথবা এ সাক্ষ্যদ্বয় দ্বারা নির্দেশিত। আর এটি একে গ্রহন করবার, এতে লেগে থাকা ও একাত্মতা পোষণ করবার মাধ্যমে এবং এর প্রতি সন্তুষ্টি, এর প্রতি আত্মসমর্পনের মাধ্যমে এবং এ সাক্ষ্যদ্বয় হতে ফিরে না যাওয়া, এর বিরোধিতা অথবা এর প্রতি বিরক্তি পোষণ করা এবং একে চ্যালেঞ্জ করা ব্যতীত।

এমনিভাবে এ সাক্ষ্যদ্বয়ের কবুল করবার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম হতে যা কিছু নাযিল হয়েছে তাকে কবুল করা, তার সাথে একাত্মতা পোষণ করা, তাতে সন্তুষ্ট হওয়া, এর কোন কিছু হতে হটে না যাওয়া। আর তা অন্তুরের আত্মসমর্পন, নম্রতা, শারীয়াতের কাছে এর পরাজয় এর মাধ্যমে এবং এর আত্মসমর্পন যা কিছু আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলﷺ হতে যা কিছু এসেছে তার ব্যপারে এবং তাতে সন্তুষ্টি।

(সংক্ষেপিত, شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ৩১৫-৩১৬, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

আল্লাহ বলেন,

إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ

وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ

যখন তাদেরকে বলা হতো যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা’বুদ নেই তখন তারা অহংকার করতো। এবং বলতো আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের মা’বুদদেরকে বর্জন করবো? (৩৭ঃ৩৫-৩৬)

وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ

قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ

অনুরূপ তোমার পূর্বে কোনো জনপদে যখনই কোনো সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই ওর সমৃদ্ধশালী ব্যাক্তিরা বলতঃ আমরাতো আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। সে (সতর্ককারী) বলতঃতোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের যে পথে পেয়েছ আমি যদি তোমাদের জন্যে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি?(তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরন করবে?)  (৪৩ঃ২৩-২৪)

 

বরঞ্চ তারা অস্বীকার করেছে অহংকারের সাথে এবং বলেছে:

قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ

তারা বলতঃ তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখান করি।(৪৩ঃ২৪)

 

সুতরাং আল্লাহ لا إله الا الله  উচ্চারণে তাদের অহংকার এবং তা নিয়ে যারা (অর্থাৎ রাসুলগণ) আগত হয়েছেন তাদের ব্যপারে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কারণে এই বাক্যকে তাদের আযাবের কারণ করেছেন।  সুতরাং তারা পরিত্যাগ করেনি যা তারা অস্বীকার করেছিল এবং তারা স্বীকার করেনি যা তাদের প্রমাণ করা হয়েছিল। বরঞ্চ তারা অস্বীকার করেছে অহংকারের সাথে এবং বলেছে:

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَى آلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ

مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ

সে কি বহু মা’বুদের (পরিবর্তে) এক মা’বুদ বানিয়ে নিয়েছে? এতো এক আশ্চর্যের ব্যাপার! তাদের প্রধাণরা সরে পড়ে এই বলেঃ তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের দেবতাগুলোর পূজোয় তোমরা অবিচলিত থাকো। নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটি উদ্দেশ্যমূলক। আমরা তো পূর্বের ধর্মে এরুপ কথা শুনিনি; এটা এক মনগড়া উক্তি মাত্র।(৩৮ঃ৫-৭)

 

এবং তারা বলল:

وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ

এবং বলতো আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের মা’বুদদেরকে বর্জন করবো? (৩৭ঃ৩৬)

 

সুতরাং তারা আল্লাহর ব্যপারে মিথ্যা কথা বলল, আর আল্লাহ তাদের উত্তর দিলেন রাসুলুল্লাহﷺ এর উদাহরণ দিয়ে

بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ

বরং সে তো সত্য নিয়ে এসেছে এবং সমস্ত রাসুলকে সত্য বলে স্বীকার করেছে।(৩৭ঃ৩৭)

 

এর পর তাদের মর্যাদা সম্বন্ধে বলেছেন যারা স্বীকার করে নিয়েছে,

إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ

أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ

فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ

فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ

তবে তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। তাদের জন্য নির্ধারিত আছে রিযিক-ফলমূল এবং তারা হবে সম্মানিত। থাকবে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে। (৩৭ঃ৪০-৪৩)

 

 

কবুলের স্থান ও তার রুকন সমূহঃ

শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি বলেন,

কবুলের স্থান হচ্ছে অন্তর এবং জিহ্বা। এর রুকন সমূহ এ দুটির সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং তা কাজের মধ্যে আবশ্যকীয়।

 

 

কবুলের রুকন সমূহঃ

১। القبول القلبي الباطن (অন্তর সংক্রান্ত অদৃশ্য কবুল)ঃ আর তা হচ্ছে একমত হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, আত্মসমর্পন করা, সত্যায়িত করবার পর যা দ্বারা কবুল করা হয় তাতে আনন্দিত হওয়া।

অন্তর সঙ্ক্রান্ত অদৃশ্য কবুল দু প্রকারঃ

ক। যা কিছু অন্তরের বক্তব্যের সাথে সম্পর্কযুক্তঃ আর তা হচ্ছে সত্যায়ন, জ্ঞাত হওয়া, ইয়াকিন এবং শোনা।

খ। যা কিছু অন্তরের কাজের সাথে সম্পর্কযুক্তঃ আর তা দাঁড়িয়ে আছে একমত হওয়া, আত্মসমর্পন করা, সন্তুষ্ট হওয়া, আন্তরিক উত্তর দেওয়া এবং স্বীকার করা।

 

২। القبول القولي الظاهر (বাহ্যিক বক্তব্যের মাধ্যমে কবুল)ঃ আর তা কবুল করবার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং জিহ্বা দ্বারা নিকটবর্তী হওয়া।

 

৩। القبول العملي الظاهر (বাহ্যিক কাজের মাধ্যমে কবুল)ঃ বাহ্যিক কাজের মাধ্যমে কবুল করা বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে কাজ করবার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এ কাজ কবুলের অন্তর্ভূক্ত নয়, বরং তা এর আবশ্যিকতা এবং নির্দেশনা হতে। অর্থাৎ মানুষ কবুল করবে অন্তর এবং জিহ্বা দিয়ে। আর যদি সে কবুল করে তবে তার এই কবুল আবশ্যিক করে তার বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আত্মসমর্পন করানোকে এবং এভাবে তার কবুল করা কে প্রকাশ করাকে।

 

 

قبول عملي (কাবুল আমালি বা কর্ম সংক্রান্ত কবুল) কি বিদ্যমান?

কর্ম সংক্রান্ত কবুল প্রকাশ্য এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফুদাইল ইবনু ইয়্যাদ বলেন,

الإيمان عندنا: الإقرار باللسان و القبول بالقبول و العمل

আমাদের কাছে ঈমানঃ জিহ্বা দ্বারা একমত হওয়া, অন্তর দ্বারা কবুল করা এবং কর্ম। আল লালাকায়ী এ কথা বর্ণনা করেছেন।

আর কর্ম শুধুমাত্র কবুলের অংশ নয়, বরঞ্চ তা এর আবশ্যিকতা এবং এর দ্বারা নির্দেশ হতে। এর অর্থ মানুষ তার অন্তর এবং জিহ্বা দ্বারা কবুল করবে, আর যদি সে কবুল করে, তবে তার এই কবুল আবশ্যিক করবে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আত্মসমর্পণ এবং এদের উপর কবুল করাকে প্রদর্শন করাকে।

সুতরাং যদি কবুলকে সাধারনভাবে দেখা হয়, তবে তাতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এটিই মূল আর অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। যদি না একে মুকায়্যিদভাবে দেখা হয়, অর্থাৎ বলা হয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কবুল অথবা কাজের কবুল।

 

قبول العملي (আমল সংক্রান্ত কবুল) এর উদ্দেশ্য মূলতঃ আত্মসমর্পণঃ

قبول العملي (আমল সংক্রান্ত কবুল)ঃ তা হচ্ছে আত্মসমর্পণ এবং নতি স্বীকার যা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল দ্বারা কায়িম হয়। আর তা ঈমানের রুকন, যা ব্যতীত ঈমান সঠিক হয় না।

 

কবুল করা আত্মসমর্পনকে আবশ্যিক করেঃ

সত্যবাদীর সত্যকে কবুল করা আত্মসমর্পণ এবং আমলকে আবশ্যিক করে। আর আত্মসমর্পনে শামিল হয়েছে নম্রতা প্রদর্শন, ফারদ আমলসমূহ সম্পাদন, শারীয়াত মোতাবেক শাসন, দীন আঁকড়ে ধরে রাখা এবং তাওহীদ অনুযায়ী আমল করা। আর যা কিছু আত্মসমর্পনের অংশ তাই কবুল দ্বারা নির্দেশিত এবং এর জন্যে আবশ্যিক, সুতরাং এসব এতে প্রবেশ করে আবশ্যিকতা এবং আঁকড়ে ধরবার দিক হতে। উদাহরণ স্বরূপ তার বক্তব্য, যাকে কোন কিছু উপহার দেওয়া হয় – সে এটিকে কবুল করা হিসেবে বর্ণনা করে না যা সে গ্রহন করে না। যদি বলা হয় এমন যে জিহ্বা দ্বারা উচ্চারিত শব্দে হাদিয়াহ গ্রহন করা হয়েছে, কিন্তু তা যদি কোন প্রকার ওজর ব্যতীত উপহার গ্রহন করতে অপারগতার সাথে হয়, তবে তাকে এই উপহারের কবুলকারী বলা হয় না।

এ কথার উপর ভিত্তি করে কবুল সঠিক হয় না আমল ব্যতীত, তা আমরা আমল কবুলের মধ্য হতে বলি বা এর জন্যে আবশ্যিক হিসেবেই বলি। আর কবুলের সম্পর্ক এবং স্থান অন্তরে আর এর জন্যে আমল করা আবশ্যিক। আমল ব্যতীত কবুল সঠিক হয় না। আর আমলের অস্তিত্ব ব্যতীত কবুল সত্যায়িত হয় না। তাই কোন প্রকার সন্দেহ এবং পার্থক্য নেই এতে যদি আমরা বলিঃ ঈমানের মূল অন্তরে আর অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ এর দ্বারা নির্দেশিত এবং এর জন্যে আবশ্যিক। আর এ ব্যতীত ঈমান সঠিক হয় না এবং কবুলও করা হয় না, যতক্ষণ এর ফলাফল একই হচ্ছে আর তা হচ্ছে আমল ও আত্মসমর্পন তরক করবার কুফর। যেভাবে শাইখুল ইসলাম ঈমানের ব্যপারে বলেছেন।

 

কবুলের শর্তের সাথে বাকি শর্তসমূহের সম্পর্কঃ   

সত্য এবং পরিপূর্ণ কবুল যা শারীয়াস্বরূপ বর্ণনাকৃত তা অন্য সকল শর্তকে আবশ্যিক করে, যেভাবে অন্য শর্তগুলো একে আবশ্যিক করে আর এতে দাবী রাখে। হয়ত কখনো কখনো কিছু শর্তকে কবুল ব্যতীত পাওয়া যায় আর কখনো কবুল করাকে পাওয়া যায় কিন্তু অন্য শর্ত সমূহকে পাওয়া যায় না। এ দুটো অবস্থাতেই তা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর ধারককে উপকার পৌঁছায় না, বরঞ্চ তা এর সুস্থতার জন্যে আবশ্যিক অন্য শর্তসমূহকে বিনষ্ট করে দেয়।

অর্থাৎ, তাওহীদের সত্যায়নের ক্ষেত্রে শুধু কবুল করা যথেষ্ট নয়, যদি এতে বাকি সকল শর্ত সমূহ বিন্যাস্ত না হয়।

আপনাদের জন্যে এই কাঈদাহ বুঝবার জন্যে কিছু উদাহরন পেশ করছিঃ

১। কখনো হয়ত কোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে কবুল করেছে, কিন্তু সে এর প্রতি আত্মসমর্পন করে না এবং এই কবুল যেসব বিষয়ের দিকে নির্দেশ করে, সে সব বিষয়ের উদ্দেশ্যে সে কাজও করে না। আর এই অবস্থায় তার কুফরকে বলা হয় كفر الإعراض (কুফর আল ই’রাদ, অনীহার কুফর), كفر الإمتناع و التولي (কুফর আল ইমতিনা’ ওয়াল তাওয়ালী, বারণ করবার এবং ছেড়ে দেওয়ার কুফর)। আর এর উল্টোটি হলো যদি কেউ আত্মসমর্পন করে কবুল করা ব্যতীত, আর সে ক্ষেত্রে তা হলো كفر النفاق (কুফর আন নিফাক, কপটতার কুফর) আর তা বাহ্যিক আত্মসমর্পন যা ইসলামের (আত্মসমর্পনের) বাহ্যিক প্রদর্শন এবং তা গোপন কবুল নয়, বরং তা কুফর এবং বিরোধিতাকে গোপন করে।

২। কখনো হয়ত বান্দা তাওহীদকে সাধারণভাবে গ্রহন করে, কিন্তু অজ্ঞতা বা মূর্খতা পোষণ করে, সুতরাং সে তা জানেনা অথবা সে এর নির্দেশিত বিষয় বা এর সত্যাসত্যের ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করে। আর এটি কবর পূজারী মূর্খ, অজ্ঞ এবং আমাদের জমানার অনেক মুশরিকদের হালের মত।

আর এর বিপরীত হল, কখনো হয়ত এ ব্যপারে (অর্থাৎ তাওহীদের ব্যপারে) ইয়াকিন রাখে এবং এ সম্বন্ধে জানে, কিন্তু একে কবুল করে নেয় না। আর এটি كفر العناد (কুফর আল ‘ইনাদ, বা জেদের বশে কুফর) হতে, যেমন আরবদের এবং অন্যান্যদের অধিকাংশ কাফিরেরা।

৩।কখনো হয়ত তাওহীদ ভালোবাসে, কিন্তু তা গ্রহন করে না, যেমন হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) এবং আবু তালিব।

আবার কখনো গ্রহন করে কিন্তু ভালোবাসে না, এতে সত্যায়ন করে না। আর এরাই হচ্ছে মুনাফিকেরা।

৪। কখনো কবুল করে কিন্তু ইখলাস রাখে না আর এরা হচ্ছে মুশরিকেরা।

 

যে সকল বিষয়ের উপর কবুল করতে হবে এবং এতে যা কিছু অন্তর্ভূক্তঃ

১। তাওহীদকে কবুল করা, অর্থাৎ বান্দা আল্লাহর ألوهية (উলুহিয়্যাহ অর্থাৎ ইলাহ হিসেবে একত্ববাদ) মেনে নেবে, এর দ্বারা আল্লাহকে আলাদা করে নেবে এবং তার ربوبية (রুবুবিয়্যাহ অর্থাৎ রব হিসেবে সৃষ্টি, রাজত্ব এবং পরিচালনায় আল্লাহর একত্ববাদ) এবং এ সকল বিষয়ে আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদ মেনে নেবে।

২। موحد (মুওয়াহহীদ বা তাওহীদবাদী) মুহাম্মাদﷺ এর রিসালাত (পৌঁছিয়ে দেওয়া ঐশী বাণী ) এবং এর দ্বারা যা নির্দেশিত এবং এর শেষ হওয়ার বিষয়ে কে কবুল করবে।

৩। ইসলামকে এবং এর মধ্যে যা কিছু আদেশ এবং নিষেধ রয়েছে তাকে কবুল করবে। এবং এ সকল বিষয়কে দীন স্বরূপ স্বীকার করবে, এর দিকে দাওয়াত দেবে, এর দ্বারা বিচারক নিয়োগ করবে, এবং এর দ্বারাই বিচার করবে।

৪। আল কুরআনকে কবুল করবে, এতে ঈমান আনবে, এতে যা কিছু আছে তা দ্বারা আমল করবে এবং এর দ্বারা বিচার করবে।

৫। আল্লাহ নিজের সম্বন্ধে যা কিছু বলেছেন সে সকল বিষয় কবুল করবে এবং তার সত্যায়ন করবে।

৬। الولاء و البراء (আল ওয়ালা ওয়াল বারা’আ , বন্ধুত্ব এবং মুক্ত হওয়া বা শত্রুতা করা) বিষয়ক আকিদাকে কবুল করে নেবে, মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তাদের সাহচর্য ভালবাসবে। মুসলিমদের নেতাদের প্রতি আনুগত্য পোষণ করবে, মুশরিক হতে মুক্ত হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে।

৭। এ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে, তার সকল কিছু সে মুখে উচ্চারণ করবে, এতেই থাকবে যতক্ষণ না সে মুসলিম হিসেবেই মৃত্যু বরণ করে, আল্লাহর দেখা পায়, আর সে পারঙ্গম, কোন প্রকার পরিত্যাগ অথবা বদল করা ব্যতীত।

৮। আর কবুলের মধ্যে আরও প্রবেশ করেছে এ সকল বিষয়ের ব্যপারে সন্তুষ্টি এবং ভালোবাসা পোষণ করা।

(সংক্ষেপিত, شرح شروط لا إله إلا الله, শাইখ খালিদ বিন আলী আল মিরদি আল গামিদি, পৃষ্ঠা ৩২৫-৩৩০, মাক্তাবাতু দারিল হিজায)

 

 

কিছু সংশয় নিরশনঃ

(এ অংশে সকল উত্তর অত্যন্ত সংক্ষেপে দেওয়া হয়েছে। এ সকল বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত লিখবার ইচ্ছা রাখি ইনশা আল্লাহ)

 

সংশয় ১ঃ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি মুখে উচ্চারণ না করে অর্থাৎ স্বীকার না করে কেবল অন্তরে স্বীকার করলে কেউ মুসলিম প্রতিপন্ন হবে?

রাসুলুল্লাহﷺ বলেন,

من قال لا إله إلا الله صدقاً من قلبه دخل الجنة

যে উচ্চারণ করলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সত্যবাদিতার সাথে তার অন্তর হতে, সে জানাতে প্রবেশ করলো।

(مسند ابي يعلى, আবু ইয়া’লা মুহাম্মাদ বিন আল হুসাইন আল ফাররা, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১০)

 

তিনি আরও বলেন,

أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله، وأن محمدا رسول الله، ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة

আমাকে আদেশ করা হয়েছে লোকেদের সাথে যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল, সালাত আদায় করে যাকাত প্রদান করে।

(صحيح البخاري, আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল আল বুখারী, হাদিস ১৩৯৯)

উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়, শাহাদাতের বাণী দুটি অবশ্যই উচ্চারণ করতে হবে, শুধু মনে কবুল করা যথেষ্ট নয়।

 

শাইখ তাকি উদ্দিন ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন,

আর শাহাদাত দুটির ব্যপারে, যদি তাদের ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও উচ্চারণ করা না হয়, তবে সে সকল মুসলিমদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কাফির। আর সে কাফির যাহির ভাবে এবং বাতিন ভাবে উম্মতের পূর্ব্বর্তীগণ এবং ইমামদের মতে।

(مجموعة الفتاوى, তাকি উদ্দিন আহমাদ ইবন তাইমিয়্যাহ, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৬০৯)

 

সংশয় ২ঃ

যদি কোন ব্যক্তি শুধু মুখে কবুল করে কিন্তু আমল করে না, তবে সে ক্ষেত্রে তার কবুল কি যথেষ্ট হবে?

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কবুল করবার শর্তের মধ্যে রয়েছে এতে আমৃত্যু কায়েম থাকা এবং এ অনুযায়ী আমল করা।

আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন,

ما من عبد قال لا إله إلا الله ثم مات على ذلك إلا دخل الجنة

বান্দাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে বলবে, “নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত”, এর পর এর উপর মৃত্যু বরন করবে, এ ব্যতীত যে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

(মুসলিম ১৫৪)

এ থেকে প্রমানিত হলো কবুল করবার পর এতে কায়েম থাকা এবং তাওহীদের উপর মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে না।

 

আল্লাহর রাসুল ﷺ আরও বলেন,

فوالله الـذي لا إلــه غـيره إن أحــدكم ليعـمل بعمل أهل الجنه حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعـمل بعـمل أهــل النار فـيـدخـلها . وإن أحدكم ليعمل بعمل أهل النار حتي ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فــيسـبـق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل الجنة فيدخلها

অতএব, আল্লাহর কসম-যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই-তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে – এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।

এবং তোমাদের মধ্যে কোন এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে।

(বুখারী ৩২০৮, মুসলিম ২৬৪৩)

উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হয় তাকদীরের লিখন সত্ত্বেও কোন মানুষ অসৎ কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করবে না বা সৎ কাজের মাধ্যমে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। বরঞ্চ জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশের জন্যে রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মতের শর্ত হচ্ছে তাওহীদ কবুল করবার সাথে সাথে তার আমল, অর্থাৎ কোন ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুখে স্বীকার করা স্বত্বেও যদি সৎ আমলকে পরিত্যাগ করে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

 

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com