লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তাবলীর বিবরণ ও এ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার ভয়াবহতা

মূল: শাইখ আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ)

অনুবাদ: মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল কাফী

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী

প্রশ্ন: লক্ষ্য করা যাচ্ছে মুসলিম মিল্লাতের অনেক মানুষ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ। যার ফলে এই কালেমার তাৎপর্য ও দাবীর বিপরীত বিভিন্ন কথা ও কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তারা। অতএব লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রকৃত অর্থ কি? তার দাবী কি? আর এর শর্তাবলীই বা কি?
উত্তর: নিঃসন্দেহে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটিই হচ্ছে দ্বীনের মূল। এর সাথে ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ সাক্ষ্য প্রদান সংযুক্ত হয়ে কালেমাটি ইসলামের প্রথম রোকন। যেমনটি আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত:

  • (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল
  • (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা
  • (৩) যাকাত আদায় করা
  • (৪) আল্লাহর ঘরের হজ্জ পালন করা
  • (৫) রামাযানের রোযা রাখা।

বুখারী ও মুসলিমে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয বিন জাবাল (রাঃ)কে ইয়ামান প্রেরণ করেন, তাঁকে বলেন,
“নিশ্চয় তুমি এমন সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব (ইহুদী-খৃষ্টান)। তাদের সর্বপ্রথম আহবান জানাবে একথার সাক্ষ্য দিতে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তারা যদি একথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে শিক্ষা দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তবে জানাবে যে আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের মধ্যকার ধনীদের কাছ থেকে নিয়ে তাদের মধ্যকার গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে। ” এ ক্ষেত্রে আরও অনেক হাদীছ আছে।
শাহাদাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই। একথাটি আল্লাহ সুবহানাহু ব্যতীত অন্য সবকিছুর ইবাদত বা দাসত্বকে অস্বীকার করে এবং ইবাদত এককভাবে শুধু আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন,

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ

“এসব এজন্য যে,আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা সবাই মিথ্যা। আর আল্লাহই পরাক্রমশালী ও মহান।” (হজ্জ: ৬২)
সূরা মুমিনূনে আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ

“এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যার পক্ষে তার কাছে কোন যুক্তি প্রমাণ নেই,তার হিসেব রয়েছে তার রবের কাছে। এ ধরনের কাফের কখনো সফলকাম হতে পারে না।” (মুমেনূনঃ ১১৭)
সূরা বাকারায় আল্লাহ আরও বলেন,

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ

“তোমাদের আল্লাহ্‌ এক ও একক। সেই দয়াবান ও করুণাময় আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ্‌ নেই।” (বাকারাঃ ১৬৩)
সূরা বাইয়্যেনাতে আল্লাহ বলেন,

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ

“তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর ইবাদাত করবে।” (বাইয়্যেনাহঃ ৫)
এ অর্থবোধক আয়াত অসংখ্য রয়েছে। এই মহান কালেমা থেকে পাঠকারী উপকৃত হবে না, শিরকের বৃত্ত থেকে মুক্তি পাবে না যতক্ষণ সে তার অর্থ না জানবে, সত্যায়ন না করবে এবং তার দাবী অনুযায়ী আমল না করবে।
মুনাফিকরা এই কালেমা পাঠ করেছে কিন্তু তারপরও তারা জাহান্নামের অতল তলে অবস্থান করবে। কেননা তারা অন্তর দিয়ে তা বিশ্বাস করেনি এবং তার দাবী অনুযায়ী একনিষ্ঠ ভাবে আমল করেনি।
অনুরূপভাবে ইহুদীরাও কালেমাটি বলেছে। অথচ তারা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাফের। এ জন্যে যে তারা কালেমার দাবী অনুযায়ী আমল করেনি।
এমনিভাবে কবর পূজারীরা এবং উম্মতের নামধারী ওলীরা এই কালেমা পাঠ করে; কিন্তু কথা, কাজ ও বিশ্বাসে কালেমার বিপরীত চলতে থাকে। এ কারণে কালেমা তাদের কোন উপকার করবে না। কালেমা যতই পাঠ করুক তারা মুসলিম হতে পারবে না। কেননা কথা, কাজ ও বিশ্বাসের মাধ্যমে তারা কালেমাকে নষ্ট করে দিয়েছে।
বিদ্বানগণ এই কালেমার শর্ত উল্লেখ করেছেন ৮টি। যথা:

(১) ইলম
(২) ইয়াকীন
(৩) ইখলাস
(৪) সত্যায়ন
(৫) ভালোবাসা
(৬) বশ্যতা স্বীকার
(৭) গ্রহণ করা
অষ্টম আরেকটি হচ্ছে:
(৮) আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুকে অস্বীকার করা।

শর্তগুলোর সংক্ষেপ ব্যাখ্যা:
(১) ইলম: অর্থাৎ এমনভাবে কালেমার অর্থ জানা যাতে অজ্ঞতা বিদূরিত হয়। পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, এই কালেমার অর্থ হল: আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবুদ বা উপাস্য নেই। অতএব আল্লাহ ব্যতীত মানুষ আর যা কিছুর উপাসনা করে তা সবই বাতিল।
(২) ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাস যা সন্দেহের বিপরীত: অতএব এই কালেমা পাঠকারীর অন্তরে এ দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে যে, আল্লাহ সুবহানাহুই প্রকৃত মাবূদ ও উপাস্য।
(৩) ইখলাস: অর্থাৎ বান্দা তার যাবতীয় ইবাদত খালেস তথা নির্ভেজাল ভাবে তার পালনকর্তা আল্লাহর জন্যই সম্পন্ন করবে। সে যদি ইবাদতের কোন কিছু আল্লাহ ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে করে যেমন নবী বা ওলী বা ফেরেশতা বা মূর্তি বা জিন ইত্যাদি তবে সে আল্লাহর সাথে শিরক করল এবং ইখলাসের শর্তকে নষ্ট করে ফেলল।
(৪) সত্যায়ন: অর্থাৎ এমনভাবে এই কালেমা বলবে যে, সে তাতে সত্যবাদী থাকবে। তার অন্তর হবে মুখের কথার মোতাবেক। মুখের কথা হবে অন্তরের মোতাবেক। শুধু যদি মুখে উচ্চারণ করে আর অন্তর তার অর্থ ও তাৎপর্যের বিশ্বাস না করে, তবে কোন লাভ হবে না। ফলে অন্যান্য মুনাফেকদের মত সেও কাফেরে পরিণত হবে।
(৫) ভালোবাসা: অর্থাৎ আল্লার প্রতি ভালোবাসা রেখে এটা উচ্চারণ করবে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভালবাসা না রেখে যদি এই কালেমা পাঠ করে, তবে কাফেরই থেকে যাবে। ইসলামে প্রবেশ করা হবে না। তবে তার হুকুম হবে অন্যান্য মুনাফেকদের ন্যায়।
এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।” (আল ইমরানঃ ৩১) আল্লাহ সুবহানাহু আরও বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبّاً لِّلّهِ
“কিছু লোক আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় এবং তাদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন আল্লাহ‌কে ভালোবাসা উচিত অথচ ঈমানদাররা সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে আল্লাহ‌কে।” (বাকারাঃ ১৬৫)
(৬) বশ্যতা স্বীকার ও আত্মসমর্পণ: এই কালেমার তাৎপর্যকে মেনে নেয়া। অর্থাৎ এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর শরীয়তের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তার প্রতি ঈমান আনবে এবং এ বিশ্বাস রাখবে যে এটাই প্রকৃত হক ও সত্য। যদি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করে কিন্তু আল্লাহর ইবাদত এককভাবে না করে, তাঁর শরীয়তের কাছে আত্মসমর্পণ না করে; বরং তা থেকে অহংকার প্রদর্শন করে, তবে সে হবে এমন মুসলিম যেমন ছিল ইবলিস ও তার দলবল।
(৭) কবুল বা গ্রহণ করা: এই কালেমা দ্বারা যা প্রমাণ হয়, যেমন খালেস ভাবে এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তিনি ব্যতীত সব ধরণের ইবাদতকে বর্জন করা। এই নীতিকেই আঁকড়ে থাকা ও তাতে সন্তুষ্ট থাকা।
(৮) আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয় তার সবকিছুকে অস্বীকার করা: অর্থাৎ গাইরুল্লাহর ইবাদত থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং তা যে বাতিল তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহ বলেন,
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ্‌ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন।” (বাকারাঃ ২৫৬)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونِ الله حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ وَحِسَابُهُ عَلَى الله» وفي رواية عنهأنَّه قال:« مَنْ وَحَّدَ اللهَ وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونِ الله حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ وَحِسَابُهُ عَلَى الله »
“যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয় তা অস্বীকার করবে, তার জান ও মালে আক্রমণ করা হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু তার অন্তরের হিসাব আল্লাহর কাছে।”
অন্য বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে এককভাবে মেনে নিবে এবং আল্লাহ ব্যতীত যা কিছুর ইবাদত করা হয় তা অস্বীকার করবে, তার জান ও মাল হারাম হয়ে যাবে; কিন্তু তার অন্তরের হিসাব আল্লাহর কাছে।”
অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে উল্লেখিত শর্তাবলীর ভিত্তিতে এই কালেমাকে বাস্তবায়ন করা। যখনই কোন ব্যক্তি এর অর্থের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং সঠিক পথে চলবে, সে এমন মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে যার জান ও মাল হারাম হবে। যদিও সেই মুসলিম ব্যক্তি এই শর্তগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না জানে। কেননা মুল কথা হচ্ছে সত্য জানা এবং তদনুযায়ী আমল করা, যদিও সবগুলো শর্তের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সে না জানে।
তাগূত বলা হয় প্রত্যেক ঐ বস্তুকে যার ইবাদত আল্লাহকে বাদ দিয়ে করা হয় এবং তাতে সে সন্তুষ্ট। যেমন আল্লাহ বলেন,
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ্‌ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন।” (বাকারাঃ ২৫৬)
আল্লাহ সুবহানাহু আরও বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ الله وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
“আর আমি প্রত্যেক জাতির নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এই আদেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগূত থেকে বিরত থাকবে।” (নাহালঃ ৩৬) আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য মাবূদগণ যদি উক্ত ইবাদতের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে, যেমন নবীগণ, সলেহীন, ফেরেশতা মণ্ডলী, প্রভৃতি তাঁরা তাগূত নন। অনেক মানুষ এদের ইবাদত করে থাকে; কিন্তু তাঁরা তাতে সন্তুষ্ট নন, তাই তারা তাগূতেরও অন্তর্ভুক্ত নন। মূলত: তাগূত হচ্ছে শয়তান। কেননা সেই তো এ সমস্ত ব্যক্তিদের ইবাদতের জন্য মানুষকে ডেকেছে। আর সুসজ্জিত ভাবে বিষয়টিকে তাদের সামনে উপস্থিত করেছে। (আমাদের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য প্রত্যেক খারাপ কাজ থেকে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি।)

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমাকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট কারী ও আংশিক নষ্ট কারী বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে:
প্রত্যেক কথা, কাজ ও বিশ্বাস যদি ব্যক্তিকে শিরকে আকবারে পতিত করে, তবে এর মাধ্যমে কালেমা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে। যেমন কোন মৃত ব্যক্তি, ফেরেশতা, মূর্তি, গাছ, পাথর, তারকা প্রভৃতিকে ডাকা বা তাদের কাছে দুয়া করা। তাদের উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা, নযর-মানত করা বা সিজদা ইত্যাদি করা।
এ ধরণের কাজ তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাহ কে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দিবে। অনুরূপ কালেমা বিনষ্টকারী আরও বিষয় হচ্ছে, ইসলামের সুস্পষ্ট হারাম কোন বিষয়কে হালাল বিশ্বাস করা। যেমন ব্যভিচার, মদ্য বা মাদকদ্রব্য সেবন, পিতা-মাতার নাফরমানী, সুদ ইত্যাদি।
আরও বিষয় হচ্ছে, ইসলামের সুস্পষ্ট কোন আমল ও কথাকে অস্বীকার করা যা মেনে চলতে আল্লাহ আবশ্যক করেছেন। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, যাকাত, রামাযানের সিয়াম, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ, শাহাদাতাইনকে মুখে উচ্চারণ ইত্যাদি।
আর যে সমস্ত কথা, কাজ ও বিশ্বাস মানুষের ঈমান ও তাওহীদকে দুর্বল করে দেয় এবং তাওহীদকে পূর্ণভাবে মেনে চলতে বাধা প্রদান করে তা অনেক প্রকারের। যেমন ছোট শিরক, রিয়া, গাইরুল্লাহর নামে শপথ, আল্লাহ এবং উমুক যা চায় এরূপ বলা, এটা আল্লাহ এবং উমুকের পক্ষ থেকে বলা। ইত্যাদি এরূপ আরও অনেক বিষয় যা ঈমানকে দুর্বল করে দেয় এবং তাওহীদকে কমজোর করে দেয়। তাওহীদকে পূর্ণরূপে মেনে চলার আবশ্যকতাকে ব্যাহত করে। অতএব তাওহীদ ও ঈমানের বিপরীত যে কোন বিষয় বা তাওহীদ ও ঈমানকে দুর্বল করবে এরকম সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা সকলের উপর আবশ্যক।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মতে ঈমান হচ্ছে কথা, কাজ ও বিশ্বাসের নাম। যা ভাল কাজ করলে বৃদ্ধি পায় এবং মন্দ কাজ করলে হ্রাস পায়। এ কথার পক্ষে অনেক দলীল রয়েছে। উলামাগণ আকীদা, তাফসীর ও হাদীছের কিতাবগুলোতে তার বিবরণ বিস্তারিতভাবে প্রদান করেছেন। কেউ চাইলেই তা পেতে পারে। তম্মধ্যে কিছু দলীল নিম্নরূপ:
আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
“যখন কোন নতুন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের কেউ কেউ (ঠাট্টা করে মুসলমানদের) জিজ্ঞেস করে বলে, এর ফলে তোমাদের কার ঈমান বেড়ে গেছে? (এর জবাব হচ্ছে) যারা ঈমান এনেছে (প্রত্যেকটি অবতীর্ণ সূরা) যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত।” (তাওবাঃ ১২৪)
আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
“সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।” (আনফালঃ ২)
তিনি আরো বলেন,
وَيَزِيدُ اللَّهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى
“যারা সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন করে আল্লাহ‌ তাদেরকে সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করেন।” (মারয়ামঃ ৭৬)

উৎস:

আকীদা বিষয়ক মাসআলামাসায়েল

মূলঃ শাইখ আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ)

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল কাফী