লটারি কখন হালাল ও কখন হারাম তা নিয়ে বিস্তারিত

প্রশ্ন: লাভের আশায় লটারির টিকিট ক্রয় করা কিংবা অর্থের বিনিময় পুরস্কারভিত্তিক লটারি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এবং তার মাধ্যমে প্রাপ্ত পুরস্কার এর বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর লাভের আশায় লটারির (Lottery) টিকিট ক্রয়-বিক্রিয় মূলত জুয়া ও বাজিরই আরেক নাম। এটি জুয়ার এমন একটি রূপ, যাকে ‘ভাগ্যপরীক্ষা’ বলে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়।জুয়ার সংজ্ঞায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,أن يؤخذ مال الإنسان وهو على مخاطرة : هل يحصل له عوضه أو لا يحصل “জুয়া (قمار) বলা হয়, এমনভাবে মানুষের নিকট অর্থ গ্রহণ করা যে, সে তার বিনিময় পাবে নাকি না সে ব্যাপারে ঝুঁকিতে থাকে।”(মাজমুল ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ২৮৩) আবু বাক্বার আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:كل لعب يشترط فيه – غالبًا – أن يأخذ الغالبُ شيئا من المغلوب ، فهو قمار“
প্রতিটি খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা, যাতে (সাধারণত) এই শর্ত থাকে যে বিজয়ী ব্যক্তি পরাজিত ব্যক্তির নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করবে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।” (আল-কুল্লিয়্যাত, পৃষ্ঠা: ৭০২) কোনও কোনও ফকিহের মতে, জুয়াঁ হল, كل لعب يشترط فيه أن يأخذ الغالب من المغلوب شيئا “যে খেলায় এই শর্ত থাকে যে, বিজয়ী ব্যক্তি পরাজিত ব্যক্তি থেকে কোনও কিছু গ্রহণ করবে।” [almaany]
.
জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ বা বস্তু (যা পুরস্কার হিসেবে ধার্য করা হয়) নির্ধারণ করা হয়। তারপর কোনও একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার-জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায় সে অপর পক্ষকে সেই নির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে। এই খেলায় হেরে যাওয়া বা জিতে যাওয়াতে উভয় পক্ষেরই ঝুঁকি নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: কেউ দশ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনে, যার মাধ্যমে সে হয়তো দশ লক্ষ টাকার পুরস্কার জেতার সুযোগ পায়।পুরস্কার পেলে সে প্রচুর লাভবান হয়, আর না পেলে পুরো টাকাটাই হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে জুয়ার প্রকৃত স্বরূপ: লাভ কিংবা ক্ষতি কেবলই অনিশ্চিত সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল।কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য দলিলসমূহের ভিত্তিতে এ ধরনের ড্র ও লটারিতে অংশগ্রহণ স্পষ্টত হারাম। আর এ হারাম উপায়ে পুরস্কার জেতার আশায় অর্থ ব্যয় করাও গর্হিত ও নিন্দনীয় হারাম কাজ।আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ :”হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি ভাগ্য নির্ণয়ের তীর এগুলো বস্তুত শয়তানের একটি ঘৃণ্য কাজ; অতএব এসব থেকে দূরে থাক; যাতে তোমরা সফল হতে পার।শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?”(সূরা মায়িদা: ৯০-৯১) অপর আয়াতে আল্লাহ আরো বলেছেন;”হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে (গ্রহণ করলে তা বৈধ)।”(সূরা নিসা: ২৯) ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন:“الْمَيْسِر (মাইসির) অর্থই হলো জুয়া।”(তাফসির ইবনু কাসীর, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৭৮) এই আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,জুয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং তা থেকে বাঁচা ঈমানদারদের জন্য অপরিহার্য।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কিছু কিছু দাতব্য সংস্থা তাদের শিক্ষামূলক, চিকিৎসামূলক এবং সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য লটারির (ইয়ানাসিব) আয়োজন করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এর বিধান কী?”
উত্তরে শাইখ বলেন:
عمليات اليانصيب عنوان لعب القمار ، وهو الميسر ، وهو محرم بالكتاب والسنة والإجماع ، كما قال الله عز وجل : ( يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91) ) .ولا يحل لجميع المسلمين اللعب بالقمار مطلقاً سواء كان ذلك المال الذي يحصل بالقمار يصرف في جهات بر أو في غير ذلك ؛ لكونه خبيثاً محرَّماً لعموم الأدلة ؛ ولأن الكسب الحاصل بالقمار من الكسب الذي يجب تركه والحذر منه ، والله ولي التوفيق .
“লটারির (ইয়ানাসিব) কার্যক্রম মূলত জুয়ারই একটি রূপ। আর জুয়া হলো ‘মাইসির’ (مَيْسِر), যা কুরআন, সুন্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য অনুযায়ী হারাম (নিষিদ্ধ)। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ইরশাদ করেন: হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি ভাগ্য নির্ণয়ের তীর এগুলো বস্তুত শয়তানের একটি ঘৃণ্য কাজ; অতএব এসব থেকে দূরে থাক; যাতে তোমরা সফল হতে পার।শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?”(সূরা মায়িদা: ৯০-৯১) সুতরাং সকল মুসলিমের জন্যই জুয়া খেলা হারাম সেটি যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন। এমনকি যদি সেই অর্থ কল্যাণমূলক বা দানযোগ্য কাজে ব্যয় করা হয় তবুও তা বৈধ নয়। কারণ, এটি একটি অপবিত্র ও হারাম উপার্জন। জুয়া থেকে অর্জিত সম্পদ অবৈধ উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত, যা পরিহার করা ও এর থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক। আল্লাহই তাওফিক দানকারী।”(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]- কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: লটারি) তে অংশগ্রহণ করার হুকুম কী? অংশগ্রহণ বলতে বোঝানো হচ্ছে এক ব্যক্তি একটি টিকিট কিনে, তারপর যদি সৌভাগ্যবশত জিতে যায়, তবে সে একটি বড় অঙ্কের অর্থ পায়। প্রশ্নকারী জানিয়েছেন, তিনি যদি এই অর্থ পান, তাহলে তিনি তা ইসলামী প্রকল্পে ব্যয় করবেন এবং মুজাহিদদের সাহায্যে কাজে লাগাবেন যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। উত্তরে শাইখ বলেন:
هذه الصورة التي ذكرها السائل : أن يشتري تذكرة ثم قد يحالفه الحظ – كما يقول – فيربح ربحاً كبيراً : هذه داخلة في الميسر الذي قال الله تعالى فيه : يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91) وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ (92) سورة المائدة / الآيات : 90 – 92 .فهذا الميسر – وهو كل معاملة دائرة بين الغُنم والغُرم – : لا يدري فيها المعامِل هل يكون غانماً أو يكون غارماً ، كله محرَّم ، بل هو من كبائر الذنوب ، ولا يخفى على الإنسان قبحه إذا رأى أن الله تعالى قرنه بعبادة الأصنام وبالخمر والأزلام ، وما نتوقع فيه من منافع : فإنه مغمور بجانب المضار ، قال تعالى : ( يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما إثم كبير ومنافع للناس وإثمهما أكبر من نفعهما ) سورة البقرة / الآية : 219 .وتأمل هذه الآية حيث ذكر المنافع بصيغة الجمع ، وذكر الإثم بصيغة المفرد ، فلم يقل ” فيهما آثام كبيرة ومنافع للناس ” بل قل : إثم كبير ، إشارة إلى أن المنافع مهما كثرت ومهما تعددت فإنها مغمورة بجانب هذا الإثم الكبير ، والإثم الكبير راجح بها ، فإثمهما أكبر من نفعهما مهما كان فيهما من النفع الحاصل بهما.إذن لا يجوز للإنسان أن يتعامل بيناصيب وإن كان غرضه أن ما يحصله سوف يضعه في منافع عامة كإصلاح الطرق وبناء المساجد وإعانة المجاهدين وما أشبه ذلك ، بل إنه إذا صرف هذه الأموال المحرمة التي اكتسبها بطريق محرم ، إذا صرفها في هذه الأشياء يريد التقرب بها إلى الله فإن الله لا يقبلها منه ، ويبقى عليه الإثم ويحرم من الأجر ، لأن الله تعالى طيب لا يقبل إلا طيباً. وإن صرفها في هذه المصالح والمنافع كبناء المساجد تخلصاً منها فهذا من السفه ، إذا كيف يكتسب الإنسان الخطيئة ثم يحاول التخلص منها ، والعقل كل العقل الذي يؤيده الشرع أن يدع الخطيئة أصلاً دون أن يتلطخ بها ثم يحاول أن يتخلص منها ، وعلى هذا فإنه لا يجوز للإنسان أن يكتسب هذا المال الحرام لأجل أن يقيم عليه أشياء يتقرب بها إلى الله ، ولا أن يكتسبه وهو ينوي أنه إذا حصله تخلص منه بصرفه فيما ينفع العباد ، بل الواجل على المؤمن أن يدع المحرم رأساً ولا يتلبس به .
“প্রশ্নকারী যে পরিস্থিতি বা চিত্রটি বর্ণনা করেছেন—যে, কেউ একটি টিকিট ক্রয় করে, তারপর ভাগ্য সহায় হলে (যেমনটা বলা হয়) সে একটি বড় পুরস্কার জিতে নিতে পারে—এটি সেই মাইসির (জুয়া)-এর অন্তর্ভুক্ত, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:”হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি ভাগ্য নির্ণয়ের তীর এগুলো বস্তুত শয়তানের একটি ঘৃণ্য কাজ; অতএব এসব থেকে দূরে থাক; যাতে তোমরা সফল হতে পার।শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?”আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের আর সাবধান হও। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্টভাবে (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়া।”(সূরা মায়েদাহ: ৯০–৯২) এই ‘মাইসির’ বা জুয়া যা এমন প্রতিটি লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত যেখানে লাভ ও ক্ষতির মাঝে দোদুল্যমানতা থাকে, অর্থাৎ লেনদেনকারী জানে না, সে লাভবান হবে না ক্ষতিগ্রস্ত হবে? এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের লেনদেনের নিকৃষ্টতা কারো অজানা নয়, বিশেষত যখন সে লক্ষ্য করবে আল্লাহ তাআলা একে মদ, প্রতিমা পূজা ও ভাগ্য নির্ধারণকারী তীর নিক্ষেপের মতো জঘন্য কাজগুলোর সঙ্গে একসারিতে রেখেছেন। আর অনেকে যে সম্ভাব্য উপকারের আশায় লটারিতে অংশগ্রহণ করে, সেটি বাস্তবে একেবারেই তুচ্ছ। বরং এর ক্ষতি উপকারের তুলনায় অনেক বেশি। যেমন আল্লাহ বলেন:“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, এতে রয়েছে মারাত্মক পাপ এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও আছে; কিন্তু তাদের পাপ উপকারের তুলনায় অনেক বড়।”(সূরা আল-বাকারা: ২১৯) এই আয়াতটি গভীরভাবে চিন্তা করুন, যেখানে আল্লাহ ‘উপকারিতা’ শব্দটি বহুবচনে বলেছেন, অথচ ‘পাপ’ শব্দটি একবচনে ব্যবহার করেছেন। তিনি (আল্লাহ) বলেননি: ‘তাতে রয়েছে বড় বড় পাপ এবং বহু উপকারিতা’,বরং বলেছেন: ‘তাতে রয়েছে বড় পাপ এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারিতা।’ এভাবে বলার মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে—উপকারিতাগুলো যত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অধিক হোক না কেন! ওই ‘বড় পাপ’-এর তুলনায় সেগুলো একেবারেই তুচ্ছ ও অপ্রতুল। এই পাপ এতটাই প্রবল ও গুরুতর যে, তা সমস্ত উপকারকে ঢেকে দেয়।কাজেই, এতে যতটুকু উপকারই থাকুক না কেন, তার ক্ষতি ও গুনাহের দিকটি অনেক বড়, এবং ভয়াবহ। সুতরাং মানুষের জন্য লটারি, জুয়া বা এই জাতীয় যেকোনো লেনদেনে অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়—এমনকি যদি তার উদ্দেশ্য হয় সেই অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় করা যেমন রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার, মসজিদ নির্মাণ, মুজাহিদদের সহায়তা অথবা অন্য কোনো সৎ কাজ,বরং কেউ যদি হারাম অর্থ উপার্জন করে তা (মসজিদ নির্মাণ, গরিব-দুঃখীর সাহায্য) বা অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে এই আশায় যে, এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন ও নিজেও সওয়াব লাভ করবে তাহলে সে মারাত্মক ভুল করছে। কেননা, আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র (হালাল ও খাঁটি) জিনিসই কবুল করেন। এমন ব্যক্তি সেই গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে না, বরং তার সদকা বা দান গ্রহণযোগ্য হবে না,কেননা ভিত্তিই ছিল নাজায়েয। আর কেউ যদি এই অর্থ মসজিদ নির্মাণের মতো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে শুধুমাত্র এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাহলে সেটিও একপ্রকার ধোঁকা ও মূর্খতার পরিচায়ক। কারণ, একজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে গুনাহে লিপ্ত হয় না যে, পরে সেই গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার কৌশল খুঁজবে। বরং প্রকৃত প্রজ্ঞা ও তাকওয়া এটাই যে, শুরু থেকেই গুনাহ ও হারাম উপার্জন থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। সুতরাং, কোনো মুসলিম যেন এ নিয়তে হারাম উপার্জন না করে যে, পরে তা সদকা করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে কিংবা লোকদের উপকারে তা ব্যয় করবে। বরং একজন মু’মিনের কর্তব্য হলো হারাম উপার্জন থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা এবং তা নিজের জীবনে কখনো স্থান না দেওয়া।”(উবনু উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৬; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪১)
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: বর্তমানে কিছু ব্যবসায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ক্রেতাদের কুপন দিয়ে লটারি ড্র আয়োজন করে, যার উদ্দেশ্য থাকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা, যেখানে উমরাহ, মোটরসাইকেল, এসি, ফ্রিজ ইত্যাদি উপহার দেওয়া হয়।শরিয়তের দৃষ্টিতে এমন লটারিতে অংশগ্রহণের হুকুম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিক্রি বৃদ্ধি ও গ্রাহক আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের সমসাময়িক তথা বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেমদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয় এবং তাদের অভিমত মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। প্রথম অভিমত: এই ধরনের প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। দ্বিতীয় অভিমত: নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এগুলো বৈধ হতে পারে। যাঁরা এগুলোকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে ফাতওয়া দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা,এবং বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ)। এবং যারা কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে বৈধ বলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) নিচে উভয় মতের পক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ও ফাতওয়া উল্লেখ করা হলো:
.
▪️প্রথম মত অনুযায়ী যারা নিষিদ্ধ বলেছেন:
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমেরিকায় কিছু খাদ্যপণ্যের দোকান রয়েছে, যারা গ্রাহকদের কাছ থেকে কিছু ক্রয় করার সময় অজানা কিছু নম্বর দেয়। নির্দিষ্ট কিছু নম্বর সংগ্রহ করতে পারলে দোকান কর্তৃপক্ষ একটি পুরস্কার প্রদান করে, যা সাধারণত নগদ অর্থ হয়। এসব নম্বর কেবলমাত্র কেনাকাটার মাধ্যমেই পাওয়া যায়; এতে কোনো অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয় না। প্রশ্ন হলো এভাবে প্রাপ্ত পুরস্কার গ্রহণ করা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ? উত্তরে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেন:
إذا كان الأمر كما ذكرت فلا يجوز لك أخذ الجائزة التي يدفعها المحل التجاري بسبب شرائك منه أو زيارتك له واختبارك الرقم الذي كان مجهولاً لك وقت الاختيار وصار معلوماً بعد الاختيار لأن هذا من الميسر وقد علم تحريمه بالكتاب والسنة وإجماع أهل العلم .
“যদি বাস্তবতা এমনই হয়, যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন, তাহলে এই ধরনের পুরস্কার গ্রহণ করা বৈধ নয়,যেখানে আপনি কেবল কোনো দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করেছেন বা কোনো সফরে অংশ নিয়েছেন, আর তার মাধ্যমে এমন একটি নাম্বার নির্বাচন করেছেন, যা তখন আপনার অজানা ছিল এবং পরে তা প্রকাশিত হয়েছে। এটি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা কুরআন, সুন্নাহ ও সম্মানিত উলামায়ে কিরামের ঐকমত্য অনুযায়ী সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ১৯১; ফাতওয়া নং ৫৮৪৭)
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগনকে আরও একটি প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আমাদের এখানে কিছু দোকানদার একটি চিপসের কার্টুন ১০০ রিয়ালে বিক্রি করে, অথচ অন্যান্য দোকানে সেটির দাম মাত্র ২০ রিয়াল। তারা লোকদের আকৃষ্ট করতে পুরস্কার হিসেবে গাড়ি ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস রাখে। ফলে মানুষ সেগুলো কিনে পুরস্কার পাওয়ার আশায় সেই দোকানে ভিড় জমায়। এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি? উত্তরে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেন:
هذا العمل الذي سألت عنه لا يجوز بل هو منكر ومن الميسر الذي حرمه الله لما فيه من المخاطرة والغرر وأكل أموال الناس بالباطل وقد قال الله عز وجل : ( يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمْ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنْ الصَّلاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنتَهُونَ(91) .وقال سبحانه : ( يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ ) .وقد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه نهى عن بيع الغرر وفقك الله لكل خير وأعانك ويسر أمرك .
“আপনি যে কার্যটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন, তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়; বরং এটি একটি গর্হিত কাজ এবং জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তা‘আলা নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ, এতে রয়েছে ঝুঁকি, প্রতারণা ও মানুষের সম্পদ অন্যায়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও ছালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত হবে না?’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০-৯১) তিনি আল্লাহ আরো বলেছেন; হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে (গ্রহণ করলে তা বৈধ)।”(সূরা নিসা: ২৯) এছাড়া সহিহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বাই‘ উল-গারার’ (অস্পষ্টতা ও প্রতারণা সংশ্লিষ্ট বেচাকেনা) নিষিদ্ধ করেছেন।আল্লাহ আপনাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন, আপনাকে সহায়তা করুন এবং আপনার জন্য সকল কাজ সহজ করে দিন।।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ১৯৫; ফাতওয়া নং ১৮৩২৪)
.
স্থায়ী কমিটির আলেমদেরকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল: “কিছু টেলিফোন কোম্পানি কলকারীদের উপহার বা পুরস্কার দিয়ে থাকে, যাতে মানুষ একাধিকবার কল করতে উৎসাহিত হয় এর শরয়ি হুকুম কী?”
.
উত্তরে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেন:
ما يعطى للمتصلين بالهواتف من المراكز العامة باسم الهدايا على النظام المذكور لا يجوز لما فيه من المقامرة والتغرير بالناس وأكل المال بالباطل من أجل ترويج الاتصالات الهاتفية وزيادة الدخل منها مع ما يتبع ذلك من الشحناء وإيقاد نار العداوة والبغضاء بين أصحاب المراكز أنفسهم وبين المتصلين أيضاً والله تعالى يقول : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ(90)إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمْ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنْ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنتَهُونَ(91) .
“উল্লেখিত পদ্ধতিতে টেলিফোন কেন্দ্রগুলো জনসাধারণের জন্য যে উপহার বা পুরস্কার দিয়ে থাকে, তা বৈধ নয়। কারণ এতে জুয়া (মাইসির), প্রতারণা এবং অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ রয়েছে যার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো: ফোন কল প্রচারের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা। এর পাশাপাশি এতে মানুষের মাঝে বিদ্বেষ, হিংসা ও শত্রুতা সৃষ্টি হয় হোক তা টেলিফোন কেন্দ্রগুলোর মালিকদের মাঝে, অথবা ফোনকলকারীদের মাঝে।আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারণের তীরসমূহ সবই শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং এগুলো থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না?”(সূরা আল-মায়িদাহ: আয়াত ৯০-৯১; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ১৯৬; ফাতওয়া নং-১৯৫৬০)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এর নিকট নিম্নোক্ত প্রশ্নটি উপস্থাপন করা হয়েছিল: “আমাদের শহরে একটি সমবায় সংস্থা রয়েছে, যারা তাদের দোকানের প্রবেশদ্বারে একটি গাড়ি প্রদর্শন করেছে। যে কেউ ১০০ দিরহাম বা তদূর্ধ্ব মূল্যের পণ্য ক্রয় করবে, তাকে একটি কুপন বিনামূল্যে প্রদান করা হয়, যাতে লেখা থাকে “মূল্য: ১০ দিরহাম”। পরবর্তীতে একটি লটারি আয়োজন করা হয়, যেখানে তাদের ভাষায় ‘সৌভাগ্যবান বিজয়ী’ উক্ত গাড়ি লাভ করে। আমার দুটি প্রশ্ন হলো:
(১) এ লটারিতে অংশগ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী, যেখানে কুপনটি ক্রেতাকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং সে বিজয়ী না হলেও তার কোনো আর্থিক ক্ষতি হয় না?
(২) এই সমবায় প্রতিষ্ঠান থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কুপন পাওয়ার উদ্দেশ্যে কেনাকাটা করার বিধান কী? কারণ এখানকার সাধারণ মানুষ এমনকি অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও এই বিষয়ে দ্বিধান্বিত। তাই আমি দলিলসহ সুস্পষ্ট একটি উত্তর কামনা করছি, যাতে মুসলিমরা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে নিশ্চিত অবস্থানে থাকতে পারে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
.
ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) এর জবাব:
( هذه المعاملة تعتبر من القمار وهو الميسر الذي حرمه الله والمذكور في قوله تعالى : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنْصَابُ وَالأَزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ ) المائدة/90ـ91 ، فالواجب على ولاة الأمر وأهل العلم في الفجيرة وغيرها إنكار هذه المعاملة والتحذير منها ، لما في ذلك من مخالفة كتاب الله العزيز وأكل أموال الناس بالباطل ، رزق الله الجميع الهداية والاستقامة على الحق
“এই লেনদেনটি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা মাইসির তথা সেই গ্যাম্বলিং যাকে আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন। তিনি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:”হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত হবে না?”।(সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০-৯১) সুতরাং ফুজাইরাহ সহ অন্যান্য স্থানের শাসক, দায়িত্বশীল ও বুদ্ধিজীবীদের উচিত এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। কেননা এটি কুরআনের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে হিদায়াত দান করুন এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।(মাজাল্লাতুদ দাওয়াহ, সংখ্যা ১১৪৫, তারিখ ২৯/১০/১৪০৮ হি.)।
.
▪️দ্বিতীয় মত অনুযায়ী যারা শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ক্রেতার জন্য কুপনের মাধ্যমে লটারি ড্র করে পুরস্কার জেতার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার পর দু’টি শর্ত সাপেক্ষে জায়েয করেছেন। তিনি বলেন,
( الشركات – الآن – تجعل جوائز لمن يشتري منها ، فنقول : هذه لا بأس بها بشرطين :
الشرط الأول :
أن يكون الثمن – ثمن البضاعة – هو ثمنها الحقيقي ، يعني : لم يرفع السعر من أجل الجائزة ، فإن رفع السعر من أجل الجائزة : فهذا قمار ولا يحل .
الشرط الثاني :
ألاَّ يشتريَ الإنسان السلعة من أجل ترقب الجائزة ، فإن كان اشترى من أجل ترقب الجائزة فقط ، وليس له غرض في السلعة : كان هذا من إضاعة المال ، وقد سمعنا أن بعض الناس يشتري علبة الحليب أو اللبن ، وهو لا يريدها لكن لعله يحصل على الجائزة ، فتجده يشتريه ويريقه في السوق أو في طرف البيت ، وهذا لا يجوز ؛ لأن فيه إضاعة المال ، وقد نهى النبي – صلى الله عليه وسلم – عن إضاعة المال
“বর্তমান সময়ে কোম্পানীগুলো তাদের ক্রেতাদের যে সমস্ত পুরস্কার দিয়ে থাকে, আমরা বলি: দু’টি শর্ত সাপেক্ষে তা দোষনীয় নয়। যথা:
(ক) দ্রব্যমূল্যটা প্রকৃত অর্থেই পণ্যের বর্তমান বাজার দর হতে হবে। পুরস্কারের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। যদি পুরস্কারের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে এটি জুয়া হয়ে যাবে, যা জায়েয নয়।
(খ) মানুষ যেন শুধু পুরস্কার জেতার জন্য পণ্যটি ক্রয় না করে। কেউ যদি শুধু পুরস্কার জেতার জন্য ক্রয় করে, আদতে পণ্য ক্রয় করা উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে এটি জায়েয নয়। কেননা এর মধ্যে অর্থের অপচয় রয়েছে,আমরা শুনেছি কেউ কেউ দুধ বা দইয়ের কৌটা কেনে শুধুমাত্র পুরস্কারের আশায়, তারপর তা ফেলে দেয় বাজারে বা বাড়ির পাশে। এটি বৈধ নয়, কারণ এটি সম্পদের অপচয়, আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পদের অপচয় থেকে নিষেধ করেছেন।”(ইবনু উসাইমীন; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১১৬২)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমাদের দেশে (কুয়েতে) এক ধরনের বিক্রয় পদ্ধতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী তার পণ্যসমূহ প্রদর্শন করেন এবং ক্রেতারা যে পরিমাণে পণ্য ক্রয় করে, সে পরিমাণ অনুযায়ী তাদের কুপন প্রদান করেন। পরে এই কুপনগুলোর মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়, যারা ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে পুরস্কার পেয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে এই পদ্ধতির হুকুম কী? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন:
هذا نوع من البيع نخاطب به البائع والمشتري ، فنقول للبائع : هل أنت ترفع سعر السلعة من أجل هذه الجائزة أم لا ؟ فإن كنت ترفع السعر : فإنه لا يجوز ؛ لأنه إذا رفع السعر واشترى الناس منه : صاروا إما غارمين وإما غانمين ، إما رابحين وإما خاسرين ، فإذا كانت هذه السلعة في السوق – مثلاً – قيمتها عشرة فجعلها باثني عشر من أجل الجائزة : فهذا لا يجوز ؛ لأن المشتري باثني عشر إما أن يخسر الزائد على العشرة ، وإما أن يربح أضعافاً مضاعفة بالجائزة ، فيكون هذا من باب الميسر والقمار المحرم .فإذا قال البائع : أنا أبيع بسعر الناس ، لا أزيد ولا أنقص : فله أن يضع تلك الجوائز ، تشجيعاً للناس على الشراء منه .ثم نتجه إلى المشتري فنقول له : هل اشتريت هذه السلعة لحاجتك إليها ، وأنك كنت ستشتريها سواء كانت هناك جائزة أم لا ، أم أنك اشتريتها من أجل الجائزة فقط ؟ فإن قال : الأول : قلنا : لا بأس أن تشتري من هذا أو من هذا ؛ لأن السعر ما دام أنه كسعر السوق ، وأنت ستشتري هذه السلعة لحاجتك : فحينئذ تكون إما غانماً أو سالماً ، ففي هذه الحالة لا بأس أن تشتري من صاحب الجوائز .وأما إذا قال : أنا أشتري ، ولا أريد السلعة ، وإنما أشتري لأجل أن أحصل على الجائزة : قلنا : هذا من إضاعة المال ؛ لأنك لا تدري أتصيب الجائزة أم لا تصيبها .
وقد بلغني أن بعض الناس يشتري علب اللبن ، وهو لا يريدها ، يشتريها ويريقها لعله يحصل على الجائزة ، فهذا يكون من إضاعة المال ، وقد ثبت أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن إضاعة المال .بقي شيء ثالث : إذا قال قائل : هذه المعاملة ربما تضر بالبائعين الآخرين ؛ لأن هذا البائع إذا جعل جوائز للمشترين ، وكان سعره كسعر السوق : اتجه جميع الناس إليه ، وكسدت السلع عند التجار الآخرين ، فيكون في هذا ضرر على الآخرين ، فنقول : هذا يرجع إلى الدولة ، فيجب عليها أن تتدخل ، فإذا رأت أن هذا الأمر يوجب اضطراب السوق : فإنها تمنعه إذا رأت أن المصلحة في منعه ، أو إذا رأت أنه من التلاعب في الأسواق ، والتلاعب في الأسواق يجب على ولي الأمر أن يمنعه منها “
“এটি এমন এক ধরনের ক্রয়-বিক্রয়, যেখানে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় পক্ষকেই লক্ষ্য করে কথা বলতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা বিক্রেতার উদ্দেশ্যে বলব: আপনি পুরস্কারের জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছেন কি-না? যদি করে থাকেন, তাহলে জায়েয নয়। কেননা যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়, আর মানুষ তা ক্রয় করে, সেক্ষেত্রে তারা হয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুবা লাভবান। উদাহরণস্বরূপ যদি পণ্যের বাজার দর ১০ রিয়াল হয়, আর পুরস্কারের জন্য যদি তার মূল্য ১২ রিয়াল করে দেয়, তাহলে তা জায়েয নয়। কেননা এক্ষেত্রে যে ১২ রিয়াল দিয়ে কিনলো, সে হয় অতিরিক্ত ২ রিয়াল হারাল, নয়তো পুরস্কার পেয়ে অনেক বেশি লাভ করল। এতে এটি জুয়া ও মাইসিরের (সৌভাগ্যের ভিত্তিতে সম্পদ অর্জনের) শামিল হয়ে যায়, যা ইসলামে হারাম। পক্ষান্তরে যদি বিক্রেতা বলেন: “আমি বাজারমূল্যেই পণ্য বিক্রি করছি, কোনো অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছি না”, তবে তিনি মানুষকে উৎসাহিত করতে পুরস্কার দিতে পারেন। অতঃপর আমরা ক্রেতার উদ্দেশ্যে বলব: আপনি কি আপনার প্রয়োজনেই পণ্যটি ক্রয় করেছেন? যদি পুরস্কার না থাকতো তবুও কি আপনি ক্রয় করতেন? না-কি আপনি শুধু পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য ক্রয় করেছেন? যদি বলেন: “প্রয়োজন ছিল,পুরস্কার থাকুক বা না থাকুক আমি কিনতাম”, তাহলে আমরা বলি: এতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনি যেহেতু বাজার মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেছেন, আপনি তখন হয় উপকৃত হবেন অথবা অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কিন্তু যদি বলেন: “আমি পণ্য চাই না, শুধু পুরস্কারের জন্য কিনেছি”, তাহলে আমরা বলব:সেক্ষেত্রে (এটি জুয়া) ও অর্থ অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা আপনি জানেন না যে, আপনি পুরস্কার পাবেন কি-না! আমার কাছে সংবাদ এসেছে, কিছু মানুষ এমনভাবে দুগ্ধজাত পণ্যের প্যাকেট কিনে যদিও তাদের দুধের কোনো প্রয়োজনই নেই; বরং তারা কেবল পুরস্কারের আশায় তা ক্রয় করে পরে ফেলে দেয়। এ তো নিছক অর্থের অপচয়। অথচ প্রমাণিত রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে সম্পদ অপচয় নিষেধ করেছেন। তৃতীয় আরও একটি বিষয় অবশিষ্ট রয়েছে। কেউ যদি এভাবে বলেঃ“এই ধরণের লেনদেন অর্থাৎ ক্রেতাদের জন্য পুরস্কার নির্ধারণ অন্যান্য বিক্রেতাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, যদি এই বিক্রেতা বাজারমূল্যে পণ্য বিক্রি করে এবং সাথে ক্রেতাদের জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করে, তবে স্বাভাবিকভাবেই সব ক্রেতা তার দিকেই ছুটবে, ফলে অন্যান্য ব্যবসায়ীর পণ্য বিক্রি হবে না। এতে অন্যদের ক্ষতি হবে। তখন আমরা বলব: এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র চাইলে এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি তারা দেখেন যে এই ধরণের কার্যক্রম বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে,তবে প্রয়োজন হলে এটা নিষিদ্ধ করতে হবে। অথবা যদি তারা মনে করেন এটি একধরনের প্রতারণামূলক চালবাজি এবং বাজার ব্যবস্থাকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল, তাহলে তা প্রতিহত করা ওয়ালী (রাষ্ট্রীয় শাসক) তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসনকর্তার কর্তব্য।”(ইবনু উসাইমীন; লিক্বা’আত বাবিল-মাফতুহ লিক্বা নং-৪৯, প্রশ্ন-৫)
.
ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)- ফাতওয়া উল্লেখ করে শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,وهذا القول هو الأقرب ـ إن شاء الله ـ مادام الإنسان متحققا في قرارة نفسه من انطباق الشرط الثاني عليه إذ هو وحده الذي يعلم من نفسه ما لا يعلمه غيره من البشر .”এই মতামতটাই ইনশাআল্লাহ দলীলের অধিক নিকটবর্তী। যদি কোনো ব্যক্তি হৃদয়ের গভীরে নিশ্চিতভাবে অনুভব করে যে, দ্বিতীয় শর্তটি (প্রয়োজনীয়তার জন্য ক্রয় করা) তার ওপর প্রযোজ্য। কারণ সে-ই একমাত্র ব্যক্তি যে নিজেকে এমনভাবে জানে, যেমনভাবে অন্য কেউ জানে না।”(ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব,ফৎওয়া নং-২২৮৬২, ৯৭৬৪৮)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনার আলোকে এটি সুস্পষ্ট যে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য কূপনের মাধ্যমে লটারী ড্র করে যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, তা বৈধ নাকি অবৈধ তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রামাণ্য দলিল ও বিশ্লেষণের আলোকে অধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো যদি কুপনের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করা হয়, ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য না থাকে এবং ক্রেতা শুধুমাত্র পুরস্কার পাওয়ার আশায় নয়, বরং প্রকৃত প্রয়োজনেই সেই পণ্য ক্রয় করে তাহলে এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ গণ্য হবে। এমনকি সে লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করাও বৈধ হবে। কারণ, এটি মূলত একটি প্রচারমূলক কৌশল, যা মূল্যছাড় বা বিশেষ অফারের মতোই একটি বৈধ ব্যবসায়িক উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমনটি আমাদের ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যাখ্যা করেছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই অধিক অবগত)।
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
সম্পাদনায়: শাইখ ড. আবু বকর মোহাম্মদ যাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ)।
অনার্স, মাস্টার্স, এম-ফিল, পি.এইচ.ডি মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সৌদি আরব।
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: