রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের শহর ও আলী তার দরজা এই বর্ননার সনদ কি হাসান

ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইলমের শহর ও আলী (রা.) তার দরজা”।’ এ কথাটি আমাদের সমাজে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে পথভ্রষ্ট বক্তাদের মুখে শোনা যায়। এমনকি কিছু ইসলামি বই-পুস্তকেও উল্লেখ করা হয় এবং সাধারণ মানুষও মাঝে মাঝে উদ্ধৃত করে। অথচ দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তা বা লেখক এ কথাটি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত কি না তার সত্যতা যাচাই করেন না।এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, প্রখ্যাত সাহাবী আলী ইবনু আবি তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একজন, হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভুক্ত এবং ইসলামের চতুর্থ খলিফা। তিনি এমন মহৎ সাহাবি, যাকে প্রকৃত মুমিন ছাড়া কেউ আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে পারে না, আর মুনাফিক ছাড়া কেউ ঘৃণা করতে পারে না।তবে মনে রাখা জরুরি আলী (রা.) কিংবা অন্য কোনো নেককার বান্দার মর্যাদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন, তার বাইরে গিয়ে অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরা শরিয়তে অনুমোদিত নয়। কারণ, সৎকর্মশীলদের প্রতি ভালোবাসায় বাড়াবাড়ি মানুষকে বিদ‘আতে নিমজ্জিত করে এবং শেষ পর্যন্ত শিরকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় যেমনটা ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট সতর্ক করে দিয়েছেন:“তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান হও। নিশ্চয়ই পূর্ববর্তী জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছিল তাদের এই বাড়াবাড়ির কারণেই।”(সুনানে নাসায়ি হা/৩০৫৭, ইবনে মাজাহ হা/ ৩০২৯; ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটি সহিহ বলেছেন)
.
❑ নিম্নে মূল হাদিস, তার উৎস এবং মান সম্পর্কে জগদ্বিখ্যাত হাদিস বিশারদগণের মতামত তুলে ধরা হলো:
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا ، فَمَنْ أَرَادَ الْعِلْمَ فَلْيَأْتِهِ مِنْ بَابِهِ
“আমি হলাম, ইলম বা জ্ঞানের শহর আর আলি তার দরজা। যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের ইচ্ছে করে সে যেন তার দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।” অর্থাৎ আলি রা. এর সূত্রে ইলম অর্জন করে।”(বর্ননাটির উৎস: আল মুজামুল কাবীর, হা/১১০৬১, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৬৩৭, ইবনে হিব্বান তার মাজরুহিন কিতাবে, ১/১৩০, ইবনে আদি তার তারিখ কিতাবে ৩/৬৫৫, উকাইলি তার যুয়াফা কিতাবে, ৩/১৪৯, কানযুল উম্মাল, হা/৩২৮৯০, সুনানে তিরমিজি/৩৭২৩ ইত্যাদি।]
.
তাহক্বীক: এই বর্ণনাটি বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হলেও তার কোনো সূত্রই সহীহ নয়; বরং অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে এটি হাদীসের নামে রটানো মিথ্যা ও বানোয়াট। ইমাম বুখারী, আবু হাতিম, ইয়াহিয়া বিন সায়ীদ,যাহাবি (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদিসটিকে ভিত্তিহীন ও জাল বলে উল্লেখ করেছেন।(বিস্তারিত জানতে দেখুন:ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ১/২৬১-২৬৫; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/৩২৮-৩৩৬; মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, ৭১-৭২ পৃষ্ঠা নং ২৫১, সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃষ্ঠা নং ১১৪-১১৬, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃষ্ঠা নং ৬৯)
.
আমরা এখানে কয়েকজনের কথা উল্লেখ করছি’ যেমন: উকাইলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:لَا يَصِحُّ فِي هَذَا الْمَتْنِ حَدِيثٌ “এই মর্মে কোনো হাদীসই সহীহ নয়।”(আয যু‘আফা; ৩/১৪৯)
.
ইবনুল কায়সারানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:هَذَا الْحَدِيثُ مِمَّا ابْتَكَرَهُ أَبُو الصَّلْتِ الهروي، وَالْكَذَبَةُ عَلَى مِنْوَالِهِ نَسَجُوا “এই হাদীসটি আবুস সালাত হারাউয়ি নিজেই উদ্ভাবন করেছে, আর মিথ্যাবাদীরা তার ধারা অনুসরণ করে রচনা করেছে।”(তাযকিরাতুল হুফফায পৃষ্ঠা: ১৩৭)
.
আবু বকর ইবনুল আরাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:هُوَ حَدِيثٌ بَاطِلٌ، النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مَدِينَةُ عِلْمٍ وَأَبْوَابُهَا أَصْحَابُهَا؛ وَمِنْهُمْ الْبَابُ الْمُنْفَسِحُ، وَمِنْهُمْ الْمُتَوَسِّطُ عَلَى قَدْرِ مَنَازِلِهِمْ فِي الْعُلُومِ “এটি একটি বাতিল হাদীস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন জ্ঞানের নগরী, আর তার দরজাগুলো হলেন সাহাবীগণ। তাঁদের মধ্যে আছেন কেউ প্রশস্ত দরজার মতো, আবার কেউ আছেন মধ্যম অবস্থায় তাদের জ্ঞানে অবস্থান অনুযায়ী।” (আহকামুল কুরআন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:ذكر هذا الحديث ابن الجوزي في الموضوعات من طرق عدة، وجزم ببطلان الكل، وتابعه الذهبي وغيره”এই হাদীসটিকে ইবনুল জাওযী একাধিক সূত্রসহ আল‌ মাওযু‘আত‌ এ উল্লেখ করেছেন এবং সবকিছুরই বাতিল হওয়া নিশ্চিত করেছেন।ইমাম যাহাবী ও অন্যান্যরাও তাকে সমর্থন করেছেন।” (ফাওয়িদুল মাজমুআহ পৃষ্ঠা: ৩৪৯)
.
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর আয যুআফাহ (হাদীস নং ২৯৫৫)-এ বলেছেন: “মাওযুআ (অর্থাৎ জাল হাদীস)। এ হাদীসটি তিরমিযী তাঁর সুনান (৩৭২৩) এ আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে মারফূ‘ আকারে এ বর্ণনায় এনেছেন: সুনান (৩৭২৩) কিন্তু ইমাম তিরমিযী এর পরেই মন্তব্য করেছেন: “এটি একটি গরীব (অপরিচিত) ও মুনকার (মনগড়া) হাদিস। তিনি আর আল ইলাল গ্রন্থে তিনি বলেছেন:سَأَلْتُ مُحَمَّدًا – يعني البخاري – عَنْهُ فَلَمْ يَعْرِفْهُ, وَأَنْكَرَ هَذَا الْحَدِيثَ “আমি মুহাম্মাদকে (অর্থাৎ ইমাম বুখারীকে) এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি একে চিনতে পারেননি এবং এ হাদীসটিকে অস্বীকার করেছেন।”(আল ইলাল পৃষ্ঠা: ৩৭৫)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
وَأَمَّا حَدِيثُ ( أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ ) فَأَضْعَفُ وَأَوْهَى ، وَلِهَذَا إنَّمَا يُعَدُّ فِي الْمَوْضُوعَاتِ الْمَكْذُوبَاتِ وَإِنْ كَانَ التِّرْمِذِيُّ قَدْ رَوَاهُ . وَلِهَذَا ذَكَرَهُ ابْنُ الْجَوْزِيِّ فِي الْمَوْضُوعَاتِ وَبَيَّنَ أَنَّهُ مَوْضُوعٌ مِنْ سَائِرِ طُرُقِهِ . وَالْكَذِبُ يُعْرَفُ مِنْ نَفْسِ مَتْنِهِ ؛ لَا يَحْتَاجُ إلَى النَّظَرِ فِي إسْنَادِهِ : فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا كَانَ مَدِينَةَ الْعِلْمِ ، لَمْ يَكُنْ لِهَذِهِ الْمَدِينَةِ إلَّا بَابٌ وَاحِدٌ ، وَلَا يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْمُبَلِّغُ عَنْهُ وَاحِدًا ؛ بَلْ يَجِبُ أَنْ يَكُونَ الْمُبَلِّغُ عَنْهُ أَهْلَ التَّوَاتُرِ الَّذِينَ يَحْصُلُ الْعِلْمُ بِخَبَرِهِمْ لِلْغَائِبِ ، وَرِوَايَةُ الْوَاحِدِ لَا تُفِيدُ الْعِلْمَ إلَّا مَعَ قَرَائِنَ ، وَتِلْكَ الْقَرَائِنُ إمَّا أَنْ تَكُونَ مُنْتَفِيَةً ، وَإِمَّا أَنْ تَكُونَ خَفِيَّةً عَنْ كَثِيرٍ مِنْ النَّاسِ ، أَوْ أَكْثَرِهِمْ ؛ فَلَا يَحْصُلُ لَهُمْ الْعِلْمُ بِالْقُرْآنِ وَالسُّنَّةِ الْمُتَوَاتِرَةِ ؛ بِخِلَافِ النَّقْلِ الْمُتَوَاتِرِ: الَّذِي يَحْصُلُ بِهِ الْعِلْمُ لِلْخَاصِّ وَالْعَامِّ. وَهَذَا الْحَدِيثُ إنَّمَا افْتَرَاهُ زِنْدِيقٌ أَوْ جَاهِلٌ: ظَنَّهُ مَدْحًا؛ وَهُوَ مُطْرِقُ الزَّنَادِقَةِ إلَى الْقَدْحِ فِي عِلْمِ الدِّينِ – إذْ لَمْ يُبَلِّغْهُ إلَّا وَاحِدٌ مِنْ الصَّحَابَةِ .ثُمَّ إنَّ هَذَا خِلَافُ الْمَعْلُومِ بِالتَّوَاتُرِ؛ فَإِنَّ جَمِيعَ مَدَائِنِ الْمُسْلِمِينَ : بَلَغَهُمْ الْعِلْمُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ غَيْرِ طَرِيقِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ “
“আর ‘আমি জ্ঞানের নগরী’ হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল ও ভঙ্গুর;এই কারণেই এটিকে কেবল জাল ও মিথ্যা হাদিস হিসেবেই গণ্য করা হয়, যদিও তিরমিযি এটি বর্ণনা করেছেন। এই কারণেই ইবনুল জাওযি এটিকে তার ‘আল-মাওযু’আত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে এটি এর সকল সূত্রেই জাল। এর মিথ্যাবাদিতা মূল টেক্সট (মাতন) থেকেই বোঝা যায়; এজন্য এর সনদ যাচাই করারও প্রয়োজন পড়ে না; কারণ, যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘জ্ঞানের নগরী’ হন, তবে এই নগরীর কেবল একটি দরজা থাকা যুক্তিসঙ্গত নয়।তদুপরি, তাঁর পক্ষ থেকে দীন প্রচারের দায়িত্বও একজন মাত্র সাহাবীর ওপর সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না; বরং আবশ্যক হলো তাঁর থেকে জ্ঞান প্রচারকারীরা হতে হবে তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌঁছানো বর্ণনাকারীগণ, যাদের খবরের মাধ্যমে অনুপস্থিত লোকদের নিকটও নিশ্চিত জ্ঞান পৌঁছে যায়। কেবল একজনের বর্ণনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত জ্ঞান দেয় না; বরং তা কেবল তখনই কার্যকর হয়, যখন বিশেষ কিছু আলামত যুক্ত থাকে। কিন্তু অনেক সময় সেই আলামতগুলো অনুপস্থিত থাকে, অথবা সেগুলো অধিকাংশ মানুষের কাছেই গোপন থেকে যায়। ফলে কুরআন ও সুন্নাহ মুতাওয়াতির (যা ব্যাপক সংখ্যক রাবী দ্বারা বর্ণিত) দ্বারা যে নিশ্চিত জ্ঞান পাওয়া যায়, তা এভাবে পাওয়া যায় না। এই হাদিসটি কোনো যিন্দীক (নাস্তিক) অথবা মূর্খ ব্যক্তিই রচনা করেছে—যে ভেবেছিল এটিকে নবী (ﷺ)-এর প্রশংসা হিসেবে উপস্থাপন করছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটি নাস্তিকদের জন্য দ্বীনের জ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পথ খুলে দিয়েছে কারণ, এর দ্বারা বোঝানো হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে কেবল একজন সাহাবীই জ্ঞান প্রচার করেছেন। তাছাড়া এটি তো তাওয়াতুর দ্বারা প্রমাণিত সত্যেরও পরিপন্থী। কেননা সমগ্র মুসলিম জনপদে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে জ্ঞান পৌঁছেছে কেবল আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মাধ্যমেই নয়, বরং বহু অন্যান্য সাহাবীর বর্ণনার মাধ্যমেও।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪১০-৪১১)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইলমের শহর ও আলী (রা.) তার দরজা” এই বর্ণনার সনদ হাসান নয়; বরং অত্যন্ত দুর্বল কিংবা জাল। সম্ভবত আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহুর)-এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শিয়ারা এই হাদিসটি তৈরি করেছে। এমনকি এ উদ্দেশ্যে উক্ত হাদিস ছাড়াও তারা আরও বহু হাদিস তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অত্যন্ত মর্যাদাবান সাহাবি। তার মান-সম্মান প্রমাণের জন্য বহু বিশুদ্ধ হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেগুলোই যথেষ্ট। সুতরাং এ জন্য কোনও জাল ও ভিত্তিহীন হাদিসের আদৌ প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তাআলা জাল হাদিস রচনাকারীদেকে তাদের উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিন। সুতরাং এই অপ্রমাণিত জাল ও বানোয়াট হাদিস সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্য ছাড়া তা বর্ণনা করা ও প্রচার করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। কারণ জেনে-বুঝে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা/জাল হাদিস বর্ণনা করার পরিণতি জাহান্নাম। তাই তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানোয়াট হাদিস বর্ণনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যা রোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিলো।”(সহিহ বুখারী হা/ ৩৪৬১ মিশকাত হা/১৯৮) অপর বর্ননায় মুগীরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, يَقُولُ إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ . আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়।”(সহীহ বুখারী হা/১২৯১, মুসলিম হা/৯৩৩)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: