রমাযানে তারাবীহ পড়ার পর আবার তাহাজ্জুদ পড়তে চাইলে তার সঠিক পদ্ধতি

প্রশ্ন: রমাযান মাসে রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উত্তম। এখন আমি যদি তারাবীহ পড়ার পর ভোররাতে আবার তাহাজ্জুদ পড়তে চাই তাহলে কি ঠিক হবে? ঠিক হলে কিভাবে পড়ব দয়া করে বুঝিয়ে বলবেন।

উত্তর:
রমযান মাসে অধিক পরিমাণে কিয়ামুল লায়ল বা রাতের নফল সালাত আদায় করা অত্যন্ত ফযিলত পূর্ণ কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোওয়াবের আশায় রমাযানে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাত আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত (ছোট) গুনাহ মোচন হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

এই রাতের নফল সালাত যেমন রাতের প্রথমাংশে (ইশার সালাতের পর) পড়া যায় তেমনি রাতের শেষাংশেও পড়া যায়। যদি কেউ ১মাংশে পড়ে তাহলে তাকে ‘তারাবীহ’ বলে আর যারা শেষাংশে পড়ে তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে নিচের হাদিসটি দেখুন:
আব্দুর রাহমান বিন আব্দুল কাদের বলেন: রমাযানের এক রাতে আমি উমর রা. এর সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে (নফল) নামায পড়ছে। কেউ একাকি নামায আদায় করছে। কেউ বা কয়েকজনকে নিয়ে জামাআত করছে। এ অবস্থা দেখে উমর রা. বললেন, “এ সমস্ত লোককে একজন ক্বারীর পেছনে নামায পড়ার জন্য একত্রিত করা হলে তা হবে অতি উত্তম।”
অতঃপর তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং উবাই ইবনে কা’ব রা. এর পেছনে নামায পড়ার জন্য লোকজনকে একত্রিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
এরপর আরেক রাতে তাঁর সাথে বের হলাম। এ সময় লোকজন উক্ত ক্বারীর পেছনে জামাতবদ্ধ হয়ে নামায আদায় করছিলেন। এটা দেখে উমর রা. বললেন: “এ নতুন পদ্ধতিটি কত চমৎকার!
যারা এখন ঘুমাচ্ছে (কিন্তু শেষ রাতে আদায় করবে) তারা এখন যারা পড়ছে তাদের চেয়ে উত্তম। এ সময় মানুষ প্রথম রাতেই কিয়ামুল লাইল করত।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইতিকাফ, সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ)
উক্ত হাদীসে উমর রা. এর উক্তি “যারা এখন ঘুমাচ্ছে (কিন্তু শেষ রাতে আদায় করবে) তারা এখন যারা পড়ছে তাদের চেয়ে উত্তম” থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, ১ম রাতের ও শেষ রাতের সালাত (অর্থাৎ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ) একই সালাত।

মোটকথা, আপনি কিয়ামুল্লায়ল (রাতের নফল সালাত) যত রাকাতই পড়ুন না কেন (যেমন, ১১, ২৩, ৩৩, ৪৩ রাকাত বা এর চেয়ে কম বা বেশি ) আপনার সুবিধা অনুযায়ী রাতের প্রথমাংশে, মধ্যাংশে বা শেষাংশে তা পড়তে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে ১ম রাতে কিছু আবার শেষ রাতে কিছু পড়তে পারেন। ইচ্ছা করলে সারারাত ধরেও পড়তে পারেন। এটা আপনার ইচ্ছা ও সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল। যে যতটুকু পড়তে পারে আল্লাহ তাতে ততটুকু সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত, দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশংকা করবে, সে এক রাকাত সালাত আদায় করবে, যা তার পূর্বের সালাতগুলো বেজোড় করে দিবে” (বুখারি, হা/ ৯৯০ ও মুসলিম হা/৭৪৯)

🔹রাতের সর্ব শেষ সালাত বিতির‎:
কেউ যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন বিতরকে রেখে দেয় এবং তাহাজ্জুদ পড়ার পর বিতির পড়ে।
আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً».
“রাতে তোমরা তোমাদের সর্বশেষ সালাত আদায় কর বিতির‎”। {বুখারি: (৯৯৮), মুসলিম: (৭৫১)}
মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার সর্বশেষ সালাত আদায় করে বিতিরর ফজরের পূর্বে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিতেন”। [মুসলিম: ১৫২-(৭৫১)]
আল্লাহ তাওফিক দান কারী।
✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।