যে স্বামী তার স্ত্রীর হক্ক আদায় করেনা, স্ত্রীকে অবহেলা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তার হক্ক থেকে বঞ্চিত করে, স্ত্রীকে মারধর ও জুলুম অত্যাচার করে, এমন জালেম বা অত্যাচারী স্বামীর জন্যে কি শাস্তি রয়েছে?

যে স্বামী তার স্ত্রীর হক্ক আদায় করেনা, স্ত্রীকে অবহেলা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তার হক্ক থেকে বঞ্চিত করে, স্ত্রীকে মারধর ও জুলুম অত্যাচার করে, এমন জালেম বা অত্যাচারী স্বামীর জন্যে কি শাস্তি রয়েছে?

উত্তরঃ ইসলাম ধর্মে সব ধরণের জুলুম-অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা একটা ‘কবীরাহ গুনাহ’ বা মহাপাপ।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা বলেন, “হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন আরেকজনের উপর জুলুম করো না।” [সহিহ মুসলিমঃ ২৫৭৭; তিরমিযি]
শুধু জুলুম নয়, জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। মানুষের ওপর জুলুম এমন এক ভয়াবহ গোনাহ, যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবনেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেমরা মনে করে, তাদেরকে কেউ কখনো পাকড়াও করবেনা। অথচ আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, “যালেমরা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?” [সুরা আশ-শুআ’রাঃ ২২৭]
সেই গন্তব্যস্থল, শেষ বিচারের দিন জালেমদের কি অবস্থা হবে তার বর্ণনাঃ
“(হে নবী!) জালেমদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আপনি কখনো আল্লাহ উদাসীন রয়েছে বলে মনে করবেন না। আল্লাহ তো তাদেরকে শুধু একটা নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত ছাড় দিয়েছেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, আর জালেমরা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে। তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে আর ফিরবে না, এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আল্লাহর আজাব চলে আসার দিন সম্পর্ক সাবধান করে দিন, যে দিন তাদের কাছে আজাব চলে আসবে। আর জালেমরা সেদিন বলবে, হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে একটু সময়ের জন্য অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসুলদের অনুসরণ করব। (আল্লাহ তখন বলবেন) তোমরা কি ইতিপূর্বে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।” [সুরা ইব্রাহীমঃ ৪২-৪৫]
জাহান্নামে জালেমদের অনেক ধরণের কঠিন শাস্তি রয়েছে। তার মাঝে জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে, তার শাস্তির ধরণ লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হবে জাহান্নাম কি কঠিন জায়গা। সাহাবী নুমান বিন বশীর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তির, সে হল তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।” [সহীহ বুখারীঃ ৬৫৬২, সহীহ মুসলিমঃ ২১৩]
তাহলে চিন্তা করুন জালেমদের শাস্তি কত কঠিন হবে, যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পূর্বেই তাঁর বান্দাদেরকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেনঃ “নিশ্চয় যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ” [সুরা ইব্রাহীমঃ ২২]
আল্লাহ আমাদেরকে কারো উপর জুলুম অত্যাচার করা এবং জুলুম অত্যাচারের শিকার হওয় থেকে রক্ষা করুন, আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করুন, আমিন।।