যে আমলগুলোর মাধ্যমে দাস মুক্ত না করেও দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলত পাওয়া সম্ভব

যে আমলগুলোর মাধ্যমে দাস মুক্ত না করেও দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলত পাওয়া সম্ভব। আজ আমরা তেমন কিছু আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: দাসত্ব অর্থ হল কোনো মানুষকে জোর পূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা। সাধারণত দাসকে তাঁর মনিবের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে কাউকে তাঁর ইচ্ছার পরিবর্তেও দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তাঁর আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে। স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার দাসদের নেই। যদিও দাসপ্রথা ইসলামের উদ্ভাবন নয়, বরং দাসপ্রথা অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। প্রাক ইসলামী যুগে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। ইসলাম আগমনের পরে রাসূল (ﷺ) দাস প্রথাকে বিলুপ্ত না করলেও, বিভিন্নভাবে এই প্রথাকে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং দাস মুক্ত করার ফযীলত বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পাপের কাফ্ফারা আদায়ের জন্য দাস মুক্ত করার বিবিধ পন্থা ইসলামী শরী‘আতে বিধিবদ্ধ আছে। যেমন: হত্যা, কসম ভঙ্গ, যিহার এবং রামাযান মাসে দিনের বেলায় সহবাস প্রভৃতির কাফ্ফারা আদায়ের অন্যতম উপায় হলো দাস মুক্ত করা। (বিস্তারিত দেখুন হত্যার কাফফারা (সূরা নিসা ৪/৯২)। যিহারের কাফ্ফারা (সূরা মুজাদালাহ ৫৮/০৩), কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা (সূরা মায়েদা ৫/৮৯), রামাযানে দিনের বেলায় সহবাসের কাফ্ফারা (সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১), দাসকে প্রহার করার কাফ্ফারা (মুসলিম হা/১৬৫৭; আবু দাঊদ হা/৫১৬৮ ইত্যাদি) গোলাম আযাদ বা দাস মুক্ত করা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। কিন্তু এ যুগের কোন কোটিপতি ব্যক্তিও যদি দাস মুক্ত করার এই ফযীলতপূর্ণ আমল সম্পাদনের ইচ্ছা করেন, তার সে ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ নেই বললেই চলে। কেননা বর্তমান যুগে দাস প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ ইসলামী শরী‘আতের এমন কিছু আমলের বিধান দিয়েছেন, যা দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ। আজ আমরা সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

✳️ ইসলামে দাস মুক্ত করার ফযীলত: গোলাম আযাদ করা বা দাসমুক্ত করার অনেক ফযীলত রয়েছে। এ কাজের সবচেয়ে বড় ফযীলত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন মুমিন দাসকে আযাদ করবে, আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন। এমনকি এর (দাসের) লজ্জাস্থানের বিনিময়ে তার (মুক্তকারীর) লজ্জাস্থানকে মুক্তি দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম হা/১৫০৯; তিরমিযী হা/১৫৪১; ইরওয়াউল গালীল হা/১৭৪২) অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُؤْمِنَةً كَانَتْ فِدَاءَهُ مِنَ النَّارِ، ‘যে ব্যক্তি একজন মুমিন দাসকে আযাদ করে দিবে, এর বিনিময়ে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেওয়া হবে।’(আবু দাউদ হা/৩৯৬৬, সনদ সহীহ) সাহাবায়ে কেরাম এই হাদীসগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গোলাম আযাদ করার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করতেন। নাফে (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তার জীবদ্দশায় একশত দাস আযাদ করেছিলেন। (ছিফাতুছ ছাফওয়া, ১/২৪০ পৃ) অনুরূপভাবে স্বচ্ছল ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর পথে নির্যাতিত গোলাম সাহাবীদেরদে কিনে আযাদ করে দিতেন। কল্পনায় নিজেকে একজন পরাধীন ক্রীতদাস ভেবে সেই দাস প্রথা প্রচলিত সমাজের দিকে নযর দিলে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

✳️ এক নজরে দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলতপূণ আমল সমূহ
_______________________________________
(১) কা‘বা ঘর তাওয়াফ করা: উমাইর (রহঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) ভিড় ঠেলে হলেও হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকটে যেতেন (তা স্পর্শ করার জন্য)। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অন্য কোন সাহাবীকে আমি এরূপ করতে দেখিনি। আমি বললাম,হে আবু আব্দুর রহমান! আপনি ভিড় ঠেলে হলেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌঁছেন, কিন্তু আমি তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অন্য কোন সাহাবীকে এভাবে ভিড় ঠেলে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বললেন, আমি এরূপ কেন করব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আমি বলতে শুনেছি, এই দুইটি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফ্ফারা হয়ে যায়। আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছি যে, সঠিকভাবে যদি কোন লোক বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে, তাহলে তার জন্য একটি ক্রীতদাস আযাদ করার সমান নেকী হবে। আমি আরো বলতে শুনেছি যে, যখনই কোন ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে এক পা রাখে এবং অপর পা তোলে, তখন আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন এবং একটি করে পওয়াব লিখে দেন।(তিরমিযী হা/৯৫৯; মিশকাত হা/২৫৮০)। সুতরাং মুমিন বান্দাদের কর্তব্য হলো নেকী লাভের এই সুযোগ হাতছাড়া না করা। কেননা অনেকে এমন আছেন, যারা হজ্জ বা ওমরাহ করতে গিয়ে ঘোরাঘুরি, অধিক খানাপিনা এবং বাজারে কেনাকাটায় প্রচুর সময় অপচয় করেন। মহান আল্লাহ আমাদের নেকীর কাজে অগ্রগামী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন।
.
(২) তাওয়াফের পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা: সাফা ও মারওয়া দু’টি পাহাড়ের নাম, যা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। (বাক্বারাহ ২/১৫৮)। হজ্জের অন্যতম একটি রুকন হলো সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা, যার মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী লাভ করা যায়। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, আমি নবী কারীম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, জেনে রাখ! তওয়াফের পর দুই রাক‘আত সালাত আদায় করার নেকী ইসমাঈলের বংশ থেকে একজন দাস আযাদ করার মত। এরপর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার সওয়াব সত্তর জন দাস মুক্ত করার সমান।’ (মুসনাদে বায্যার হা/৬১৭৭; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১১২, সনদ হাসান)
.
(৩) আল্লাহর পথে জিহাদ করা: গোলাম আযাদের নেকী লাভের অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর পথে জিহাদ করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শত্রুবাহিনীর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করল। অতঃপর সেই তীর শত্রুর নিকটে পৌঁছে ঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানুক বা লক্ষ্যচ্যুত হোক, এর বিনিময়ে একজন দাস মুক্ত করার নেকী রয়েছে।’ (ইবনু মাজাহ হা/২৮১২; সহীহুত তারগীব হা/১২৮৬, সনদ সহীহ)। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি তীর নিক্ষেপ করবে, তার জন্য একটি গোলাম আযাদের নেকী রয়েছে। (তিরমিযী হা/১৬৩৮; নাসাঈ হা/৩১৪৩; সহীহুল জামে‘ হা/৬২৬)
.
(৪) ঋণ দেওয়া এবং পথহারাকে পথ দেখানো: বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ مَنَحَ مِنْحَةَ وَرِقٍ أَوْ مِنْحَةَ لَبَنٍ أَوْ أَهْدَى زُقَاقاً فَهُوَ كَعِتْقِ نَسَمَةٍ، ‘যে ব্যক্তি একবার দহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথহারা ব্যক্তিকে সঠিক পথ দেখায়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমাণ সওয়াব।’ (তিরমিযী হা/১৯৫৭; সহীহুল জামে‘ হা/৬৫৫৯, সহীহ হাদীস)। আলোচ্য হাদীসে ঋণ বলতে কর্যে হাসানাহ এবং পথহারা বলতে রাস্তা ভুলে যাওয়া ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া, অন্ধ ব্যক্তিকে পথ দেখানো প্রভৃতি বুঝানো হয়েছে।
.
(৫) অসহায় আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করা: আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের জন্য দান করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী অর্জন করা যায়।(দেখুন, বুখারী হা/২৫৯২; মিশকাত হা/১৯৩৫; মির‘আতুল মাফাতীহ্, ৬/৩৭২ পৃ.)
.
(৬) পরিবারের জন্য খরচ করা: সাধারণ দান-সাদাক্বার চেয়ে উত্তম দান হলো পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ, একটি দীনার তুমি ব্যয় করেছ ক্রীতদাসকে মুক্ত করার জন্য, একটি দীনার তুমি সাদাক্বাহ করেছ মিসকীনের জন্য এবং একটি দীনার তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। এর মাঝে সওয়াবের দিক দিয়ে সর্বোত্তম হলো সেটি, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ।’ (মুসলিম হা/৯৯৫; মিশকাত হা/১৯৩১)। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসে দলীল রয়েছে যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করা, দাস মুক্তির জন্যে দান করা এবং মিসকীনদেরকে সাদাক্বাহ করার চেয়েও কোন ব্যক্তির জন্য উত্তম কাজ হ’ল পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা।(মির‘আতুল মাফাতীহ্, ৬/৩৬৭ পৃ.)
.
(৭) শ্রমিকের কাজে সাহায্য করা এবং বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা: ইসলাম ছোট-বড়, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলকে পরস্পর সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। আবু যার (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ) কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বললেন, যে গোলামের মূল্য অধিক এবং যে গোলাম তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি যদি এটা করতে না পারি? তিনি বললেন, তাহলে কাজের লোককে (তার কাজে) সাহায্য করবে কিংবা বেকারকে কাজের সংস্থান করে দিবে। আমি (আবারও) বললাম, যদি আমি এটাও করতে না পারি? তিনি বললেন, ‘তাহলে মানুষকে তোমার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত রাখবে। বস্ত্ততঃ এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ থেকে সাদাক্বাহ।’ (বুখারী হা/২৫১৮; মুসলিম হা/৮৪, শব্দাবলী মুসলিমের)। বোঝা গেল, শ্রমিক বা কাজের লোককে তার কাজে সহযোগিতা করা এবং অদক্ষ ও কর্মহীন লোকের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া দাস মুক্ত করার ন্যায় মর্যাদাপূর্ণ আমল।
.
(৮) অপরকে খানাপিনা করানো এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ: দাস মুক্ত করার নেকী লাভের অন্যতম বিকল্প মাধ্যম হলো ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো, তৃষ্ণার্তকে পান করানো এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। (বিস্তারিত দেখুন, দারাকুৎনী হা/২০৫৫; শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটি সহীহ বলেছেন। বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৪০২৬; মিশকাত হা/৩৩৮৪; সহীহুত তারগীব হা/১৮৯৮, সনদ সহীহ্)
.
(৯) মাগরিব ও ফজর সালাতের পর দশ বার তাহলীল বা কালেমা তাওহীদ পাঠ করা: যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ফরয সালাতের পর দশবার করে বিশেষ তাহলীল পাঠ করে, তার আমলনামায় দশজন মুমিন ক্রীতদাস মুক্ত করার নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পর দশবার বলবে লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ইয়ুহ্ঈ ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সকল রাজত্ব তাঁর এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী)’, তাহলে আল্লাহ তার (পাঠকারীর) নিরাপত্তার জন্য একদল ফেরেশতা পাঠান, যারা তাকে শয়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহর অনুগ্রহ) আবশ্যক করার ন্যায় দশটি নেকী লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ মুছে দেন এবং তার জন্য দশজন ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিযী হা/৩৫৩৪; নাসাঈ হা/১০৩৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/৬৬০, সহীহ হাদীস)
.
(১০) প্রতিদিন একশত বার কালেমা তাওহীদ পাঠ করা: যে ব্যক্তি এই দো‘আটি দিনে একশ বার পড়বে যে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’, তাহলে তার জন্য দশটি গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ নেকী অর্জিত হবে, তার জন্য একশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং একশটি গুনাহ মোচন করা হবে। আর সেই দিনের সন্ধ্যা অবধি এই দো‘আটি তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম আমল করতে পারবে না। তবে তার কথা স্বতন্ত্র, যে এর চেয়ে আরো বেশী আমল করে। (বুখারী হা/৩২৯৩; মুসলিম হা/২৬৯১; মিশকাত হা/২৩০২)
.
(১১) একশত বার সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পাঠ করা: মহিলা সাহাবী উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে একটা আমলের কথা বলে দিন। কেননা এখন আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, দুর্বল হয়ে গেছি এবং আমার দেহও ভারী হয়ে গেছে। তখন তিনি (ﷺ) বলেন, তুমি একশত বার আল্লাহু আকবার, একশত বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং একশত বার সুবহা-নাল্লাহ পড়। এটা তোমার জন্য জিনপোষ ও লাগামসহ একশত ঘোড়া আল্লাহর পথে (জিহাদে) দান করার চেয়ে উত্তম, একশত উটের চেয়ে উত্তম এবং একশত গোলাম আযাদ করার চেয়ে উত্তম। (ইবনু মাজাহ হা/৩৮১০; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৫৩; সনদ হাসান)। বর্তমান যুগে যদি দাস প্রথা থাকত, তাহলে একশটি দাস আযাদ করতে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন হত। অথচ পাঁচ-সাত মিনিটের মাধ্যেই আমরা এই আমলটি করতে পারি।
.
পরিশেষে সম্মানিত পাঠক! যে সকল আমল সম্পর্কেবউপরে আলোচনা করা হল, তা সম্পাদন করা আমাদের কাছে আদৌ কোন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আবহেলা ও অলসতার দরূন নেকীর ভান্ডার সমৃদ্ধ করার এই সুযোগগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। কোন কোন আমল একটু ইচ্ছা করলেই স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হয়। তাই আসুন, নেকী লাভের সকল সুযোগকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাই এবং উপরোক্ত আমলসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী অর্জনে ব্রতী হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।