মেয়েদের মুখ ঢাকতে হবে কিনা? এটার শরীয়তের দলীল আছে কিনা? মুখ কি পর্দার মধ্যে পড়বে?

উত্তরঃ কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে গোটা বিশ্বের সকল আলেমদের ঐক্যমতে বালেগা মেয়েদের মুখ পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটা ঢাকতে হবে । কিছু সংখ্যক আলেমদের থেকে এব্যাপারে বিকল্প মত পাওয়া যায় , যারা বলে থাকেন মেয়েদের মুখ পর্দার মধ্যে পড়বে না । এসকল আলেমদের অন্যতম প্রতিনিধিত্বকারী হলেন আল্লামা আলবানী সাহেব। তাহাদের এমন বিতর্কিত মতের প্রবক্তা হওয়ার কারনে সারা বিশ্বের হক্কানী আলেমগন মুসলিম জাতির সামনে প্রকৃত সত্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে তুলে ধরার জন্য কলম হাতে গর্জে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্বয়ং আলবানী সাহেবের বাসস্হান সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদদের থেকে এই সংক্রান্ত
১৫টিরও অধিক কিতাব রচিত হয়। তন্মধ্যে আরবের ফিকাহ বোর্ডের গ্রান্ড মুফতি “শায়খ মুহম্মদ বিন
সালেহ বিন উসমান” সংকলিত “রিসালাতুল হিজাব” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । নিম্নে (মহিলাদের মুখ পর্দার মধ্যে
সামিল) এই ব্যাপারে প্রমান স্বরূপ কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হল। [১ম আয়াত]
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞ ﻟِّﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ
ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সুরা আল আহযাব, আয়াত নং- ৫৯] হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন “আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে চাদর দ্বারা মস্তক ও
চেহারা আবৃত করার নির্দেশ দিয়েছেন ”। (তফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৭৪) [২য় নং আয়াত]
ﻭَﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈْﻦَ
ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻟْﻴَﻀْﺮِﺑْﻦَ
ﺑِﺨُﻤُﺮِﻫِﻦَّ ﻋَﻠَﻰ ﺟُﻴُﻮﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺒُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ
ﺃَﻭْ
ﺁﺑَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁﺑَﺎﺀ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ
ﺃَﻭْ
ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ ﺃَﺧَﻮَﺍﺗِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻬِﻦَّ
ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻬُﻦَّ ﺃَﻭِ ﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴﻦَ ﻏَﻴْﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﺍﻟْﺈِﺭْﺑَﺔِ
ﻣِﻦَ
ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﺃَﻭِ ﺍﻟﻄِّﻔْﻞِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﻈْﻬَﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻮْﺭَﺍﺕِ
ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ
ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺄَﺭْﺟُﻠِﻬِﻦَّ ﻟِﻴُﻌْﻠَﻢَ ﻣَﺎ ﻳُﺨْﻔِﻴﻦَ ﻣِﻦ ﺯِﻳﻨَﺘِﻬِﻦَّ
ﻭَﺗُﻮﺑُﻮﺍ
ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ
আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক
অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরাহ আন নুর: ৩১)
ব্যাখ্যাঃ আয়াতে মেয়েদের জোরে পদচাড়না করতে নিষেধ করা হয়েছে । অথচ হাটার আওয়াজের মাধ্যমে একজন মেয়ের সৌন্দর্য বা সে বৃদ্ধ না যুবতী কিছুই অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সুতরাং চেহারা যাহা ফিৎনার মুল ও সব চেয়ে বেশী আকর্ষনীয় তাহা খোলা রেখে পরপুরুষের সামনে আসা যাওয়া করা কিভাবে জায়েজ হতে পারে? [৩য় নং আয়াত]
ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ
ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺯْﻛَﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ
আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। [সুরা আন নুর। আয়াত নং- ৩০]
দৃষ্টির প্রধান লক্ষবস্তু থাকে চেহারা – সুতরাং মেয়েদের চেহারা পর্দার হুকুম না হলে পুরুষ মুমিনদের ব্যাপারে কালামে
পাকের মাঝে এত শক্ত আদেশের কোনো যুক্তিকতাই থাকে না। আল্লাহপাক যেনো আমাদের সবাই কে পর্দার হুকুম মেনে চলাফেরা করার তৌফিক দান করেন। আমিন। ছুম্মা আমিন।