ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর মহান আল্লাহ তাআলা বনী আদমকে সম্মানিত করেছেন এবং তাদেরকে এমন সব বৈশিষ্ট্য ও গুণে ভূষিত করেছেন, যা অন্য কোনো সৃষ্টির মধ্যে নেই। এজন্য মুসলিম নর-নারী জীবিত অবস্থায় যেমন মর্যাদার অধিকারী, মৃত্যুর পরও তাদের সেই মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। তাই একবার কোনো মৃতদেহ দাফন করা হলে তাকে সেই কবরেই রাখা আবশ্যক, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার দেহ সম্পূর্ণরূপে মাটির সাথে মিশে বিলীন হয়ে যায় এবং আর কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকে। এখন প্রশ্ন হলো শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন কোন পরিস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির কবর স্থানান্তর করা বা কবর থেকে হাড় উত্তোলন করে অন্য স্থানে দাফন করা বৈধ গণ্য হবে?
.
জবাবে বলা যায়, শারই দৃষ্টিকোণ থেকে কবর থেকে মৃতদেহ স্থানান্তর বা হাড় উত্তোলন করে অন্য স্থানে দাফন করার দুটি অবস্থা হতে পারে।যার মধ্যে একটি পদ্ধতি সরাসরি নিষিদ্ধ অপরটি শরীয়ত সম্মত ওজরের কারণে বৈধ।

.
শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন:فيمن حفر فوجد عظام ميت : “وإن أخرجت عظام ميت أحببت أن تعاد فتدفن”কেউ যদি খনন করতে গিয়ে মৃতের হাড় পায় আর যদি মৃতের হাড় বের করা হয়, তবে আমি পছন্দ করি সেগুলো পুনরায় ফেরত দিয়ে দাফন করা হোক।”(আল উম্ম; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১৬)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:وَأَمَّا نَبْشُ الْقَبْرِ فَلَا يَجُوزُ لِغَيْرِ سَبَبٍ شَرْعِيٍّ بِاتِّفَاقِ الْأَصْحَابِ “শারঈ কোনো কারণ ছাড়া কবর খনন করা বৈধ নয় এ ব্যাপারে সব সাহাবীরা (শাফেয়ী মাযহাবের আলেমগণ) একমত।”(নববী আল মাজমূ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৭৩)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,وَإِنْ تَيَقَّنَ أَنَّ الْمَيِّتَ قَدْ بَلِيَ وَصَارَ رَمِيمًا , جَازَ نَبْشُ قَبْرِهِ , وَدَفْنُ غَيْرِهِ فِيهِ ، وَإِنْ شَكَّ فِي ذَلِكَ رَجَعَ إلَى أَهْلِ الْخِبْرَةِ . فَإِنْ حَفَرَ , فَوَجَدَ فِيهَا عِظَامًا دَفَنَهَا , وَحَفَرَ فِي مَكَان آخَرَ . نَصَّ عَلَيْهِ أَحْمَدُ “যদি কেউ নিশ্চিত হয় যে মৃত ব্যক্তি (মৃতদেহ) সম্পূর্ণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তবে তার কবর খুঁড়ে অন্য কাউকে সেখানে দাফন করা বৈধ। আর যদি এতে সন্দেহ থাকে, তবে সে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেবে। যদি কবর খুঁড়ে হাড় পাওয়া যায়, তবে তা আবার ঢেকে দেয়া হবে এবং অন্য স্থানে কবর খনন করা হবে। এই বিষয়টি ইমাম আহমদও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।”(ইবনু কুদামাহ; আল-মুগনী; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৯৪)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:
فالأصل أنه لا يجوز نبش قبر الميت وإخراجه منه ؛ لأن الميت إذا وضع في قبره فقد تبوأ منزلا وسبق إليه فهو حبْسٌ عليه ، ليس لأحد التعرض له ، ولا التصرف فيه ؛ ولأن النبش قد يؤدي إلى كسر عظم الميت وامتهانه .وإنما يجوز نبش قبر الميت وإخراجه منه إذا دعت الضرورة إلى ذلك ، أو مصلحة إسلامية راجحة يقررها أهل العلم
“মূলনীতি হলো, মৃতের কবর খনন করে তাকে বের করা বৈধ নয়। কারণ মৃত যখন তার কবরস্থানে রাখা হয়, তখন সেটাই তার আস্তানা হয়ে যায় এবং সে সেখানে পৌঁছে গেছে; তাই সেটি তার জন্যই সংরক্ষিত, অন্য কারও সেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। আর কবর খনন করলে মৃতের অস্থি ভেঙে যাওয়া বা তার অসম্মান হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কেবল তখনই বৈধ হবে, যখন জরুরি প্রয়োজন দেখা দেয়, অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী স্বার্থ থাকে, যেটি আলেমগণ নির্ধারণ করবেন।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১২২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য,বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,যদি কোন কবরে কোন মাইয়্যেতকে দাফন করা হয় এবং সেটা যদি স্থায়ীভাবে বেঁধে ফেলে তাহলে সেটা তার জন্যই অগ্রাধিকার। তাতে খুবই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে কবরস্থ করা যাবে না। (ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘ খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৬৯)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল:“আমাদের এখানে মৃতদেহ রাখার জন্য একটি ঘর রয়েছে, যা মাটির নিচে নির্মিত কক্ষের মতো। সেখানে মৃতদেহ রাখা হয়। এক বছর পর সেই কবর পুনরায় খোলা হয় এবং সেখানে আরেকটি মৃতদেহ রাখা হয়। সেক্ষেত্রে কি এমন হতে পারে যে যদি একজন মৃত ব্যক্তি অপরাধী হয়ে শাস্তি ভোগ করে, তবে একই কবরে থাকা সৎকর্মশীল ব্যক্তি তার কারণে কষ্টভোগ করবে?” তিনি উত্তরে বলেছেন:السنة أن يقبر كل إنسان على حدة مع القدرة ، إذا اتسعت الأرض ، وأمكن قبر كل واحد على حدة فهذا هو السنة ، كما كان النبي صلى الله عليه وسلم في البقيع يقبرون الموتى هكذا ، كل واحد على حده ، أما إذا حصل ضرورة ولم يوجد مكان إلا هكذا فلا حرج ، وكل يؤاخذ بذنبه ، المحسن يجازى بإحسانه ، والمسيء يجازى بإساءته ( وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ) لكن مهما أمكن فالمشروع أن يدفن كل واحدٍ على حدة ، كل قبر على حدة ، ولا يجمع في محل واحد “
“সুন্নাত হল প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্ভব হলে আলাদাভাবে দাফন করা। যদি জমি প্রশস্ত হয় এবং প্রত্যেককে আলাদাভাবে দাফন করা সম্ভব হয় তাহলে এটিই সুন্নত। যেমনভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার বাকি কবরস্থানে প্রতিটি মাইয়্যেতকে পৃথকভাবে দাফন করেছেন।কিন্তু যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয় এবং আলাদা জায়গা না পাওয়া যায়,তাহলে একই জায়গায় দাফনে কোনো দোষ নেই।প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ আমলের দায়ভার বহন করবে—সৎকর্মকারী তার সৎকর্মের প্রতিদান পাবে আর দুষ্কর্মকারী তার দুষ্কর্মের শাস্তি ভোগ করবে।কেননা আল্লাহ বলেছেন: “কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” (সূরা আন‘আম: ১৬৪; সূরা ফাতির: ১৮) তবে শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, যতটুকু সম্ভব প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির জন্য পৃথক কবর খোঁড়া উচিত। প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে দাফন করা জরুরি এবং এক কবরের মধ্যে একাধিক মৃতদেহ একত্র করা জায়েজ নয়।”(ইবনু বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৪০৯১)
.

.
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ বুখারীতে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে যে,”هَلْ يُخْرَجُ الْمَيِّتُ مِنْ الْقَبْرِ وَاللَّحْدِ لِعِلَّةٍ”কোন কারণে মৃতদেহকে কবর বা লাহ্দ হতে বাহির করা যাবে কি?।(সহীহ বুখারী অধ্যায় নং-২৩, অনুচ্ছেদ নং-৭৭)। অতঃপর তিনি হাদিস উল্লেখ করেছেন,জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমার পিতার সাথে (একই কবরে) অন্য এক লোককে দাফন করা হয়েছিল। তাই আমি তার মরদেহকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা করলাম। অতঃপর ছয় মাস পর আমি পিতার মৃতদেহকে তুললাম (এবং অন্যত্র দাফন করলাম)। (যেহেতু তিনি উহুদের দিন শহীদ হয়েছিলেন তাই) তাঁর শরীরের কোন অংশই পরিবর্তন হয়নি। কেবল দাড়ির কিছু চুল মাটির সংস্পর্শে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল’ (সহীহ বুখারী হা/১৩৫১, ১৩৫২)।
.
উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, وفي حديث جابر دلالة على جواز الإخراج لأمر يتعلق بالحي “জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, বিশেষ প্রয়োজনে মরাদেহ বাহির করা জায়েয।(ফাৎহুল বারী; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১৫)।অনুরূপভাবে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি পানির নহর প্রবাহিত করার জন্য ওহোদ যুদ্ধে শহীদ কতিপয় সাহাবীর কবর খনন করে তাঁদের লাশ অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করেন।”(কিতাবুল জিহাদ; পৃষ্ঠা: ৯৮; মাওয়াহিবুল জালীল; খণ্ড: ৬;
পৃষ্ঠা: ২০; আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাতওয়া নং-৩০৬৩৫৫)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] তার আল মিনহাজ-এ বলেছেন:ونبشه بعد دفنه للنقل وغيره: حرام ، إلا لضرورة؛ بأن دفن بلا غسل أو في أرض أو ثوب مغصوبين، أو وقع فيه مال، أو دفن، لغير القبلة”দাফনের পর মৃতকে স্থানান্তরের জন্য বা অন্য কারণে কবর খনন করা হারাম, তবে প্রয়োজন হলে বৈধ হবে; যেমন তাকে গোসল না দিয়েই দাফন করা হয়েছে, বা দাফন করা হয়েছে দখলকৃত জমিতে বা দখলকৃত কাফনে, অথবা তার সাথে কোনো সম্পদ পড়ে গেছে, অথবা কিবলামুখী না করে দাফন করা হয়েছে (তাহলে দাফনের পর মৃতকে স্থানান্তর করা বৈধ)।(নববী আল মিনহাজ; পৃষ্ঠা: ৬২)
.
ইমাম বাহূতী (রাহিমাহুল্লাহ) কাশ্শাফুল ক্বিনাআ-এ বলেছেন:
فلو دفن قبل الغسل ، من أمكن غسله : لزم نبشه) وأن يخرج ويغسل، تداركا لواجب غسله ، (ما لم يخف تفسخه أو تغيره) ، فإن خيف ذلك ترك بحاله وسقط غسله، كالحي يتضرر به …
(ومثله) أي مثل من دفن بلا غسل أمكن : (من دُفن غير متوجه إلى القبلة) ، فينبش ويوجه إليها، تداركا لذلك الواجب …
(أو دفن قبل تكفينه) ، فيخرج ، ويكفن . نص عليه [يعني الإمام أحمد] .(ويجوز نبشه لغرض صحيح ، كتحسين كفنه) لحديث جابر قال أتى النبي عبد الله بن أبي ابن سلول بعد ما دفن، فأخرجه ، فنفث فيه من ريقه وألبسه قميصه رواه الشيخان، (و) كـ (دفنه في بقعة خير من بقعته) التي دفن فيها فيجوز نبشه لذلك.(و) لـ (مجاورة صالح) ، لتعود عليه بركته…
(ويجوز نبشه) أي الميت (إذا دفن لعذر بلا غسل ولا حنوط) ، فيغسل ويحنط ، لأنه غرض صحيح ، (وكإفراده في قبر عمن دفن معه) ؛ أي يجوز نبشه لذلك لقول جابر دفن مع أبي رجل، فلم تطب نفسي حتى أخرجته، فجعلته في قبر على حدة “.
وفي رواية ” كان أبي أول قتيل ، يعني يوم أحد ، فدفن معه آخر في قبره، ثم لم تطب نفسي أن أتركه مع الآخر ، فاستخرجته بعد ستة أشهر ، فإذا هو كيوم وضعته غير أذنه ” رواهما البخاري”
“যদি (মাইয়তকে) গোসল দেওয়ার আগে দাফন করা হয়, অথচ গোসল দেওয়া সম্ভব হয়, তবে তাকে অবশ্যই কবর থেকে বের করা হবে এবং বের করে গোসল করানো হবে, তার গোসলের ফরজ আদায়ের জন্য, (যতক্ষণ না আশঙ্কা হয় যে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে বা পরিবর্তিত হবে)। যদি এমন আশঙ্কা থাকে, তবে তাকে সেভাবেই ছেড়ে দেওয়া হবে এবং গোসলের ফরজ তার থেকে রহিত হবে, যেমন জীবিত মানুষের ক্ষতি হলে গোসল রহিত হয়।” (একইভাবে) যেমন গোসল ছাড়া দাফন করা হয়েছে (যদি কিবলামুখী না করে দাফন করা হয়), তবে কবর খনন করা হবে এবং তাকে কিবলামুখী করা হবে, কারণ এটি ফরজ।(অথবা তাকে কাফন ছাড়া দাফন করা হলে), বের করে কাফন পরানো হবে। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ স্পষ্টভাবে বলেছেন।(বৈধ হবে কবর খনন করা যদি কোনো সঠিক উদ্দেশ্য থাকে, যেমন তার কাফনকে উন্নত করা)। জাবির (রা.) হতে হাদিসে এসেছে: নবী (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলূল দাফন করার পর তার কবরের কাছে গেলেন, তাকে বের করলেন, তার লালারস দিলেন এবং নিজ জামা পরিয়ে দিলেন। এটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে।যেমন (তাকে ভালো স্থানে দাফন করা, তার আগের স্থান থেকে উত্তম হলে) এ কারণেও কবর খনন করা বৈধ।নেককার মানুষের পাশে দাফন করার জন্য, যেন তার বরকত প্রাপ্ত হয়।(বৈধ হবে কবর খনন করা) অর্থাৎ মৃতকে (যদি সে গোসল বা সুগন্ধি ছাড়া কোনো কারণে দাফন করা হয়), তবে তাকে বের করে গোসল ও সুগন্ধি দেওয়া হবে, কারণ এটি একটি সঠিক উদ্দেশ্য। (যদি এক কবরের মধ্যে অন্য কারও সাথে দাফন করা হয়ে থাকে, তবে আলাদা করার জন্যও কবর খনন বৈধ)। যেমন জাবির (রা.) বলেছেন: আমার বাবা একজন শহীদ ছিলেন (উহুদের যুদ্ধে), তার সাথে আরও একজনকে একই কবরের মধ্যে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু আমার মন রাজি হচ্ছিল না তাকে অন্যের সাথে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তাই ছয় মাস পর আমি তাকে বের করলাম, তখনও তিনি ঠিক তেমনই ছিলেন যেদিন তাকে দাফন করেছিলাম, শুধু কান সামান্য পরিবর্তিত ছিল। এটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন।”(বাহূতী; কাশ্শাফুল ক্বিনাআ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:لا ينبش الميت من قبره ، إلا لحاجة ؛ مثل أن يكون المدفن الأول فيه ما يؤذي الميت ، فينقل إلى غيره ، كما نقل بعض الصحابة في مثل ذلك”মৃতকে কবর থেকে খনন করে বের করা বৈধ নয়, তবে প্রয়োজন হলে বৈধ হবে; যেমন প্রথম কবরস্থল মৃতের জন্য কষ্টদায়ক হলে, তখন অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হবে। সাহাবাদের কিছু কবর এভাবে স্থানান্তর করা হয়েছিল। (মাজমূউল ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ৩০৩)।
.
বাজী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:ولا بأس بحفر القبر وإخراج الميت منه ، إذا كان ذلك لوجه مصلحة ، ولم يكن في ذلك إضرار به ، وليس من هذا الباب نبش القبور ، فإن ذلك لوجه الضرر ، أو لغير منفعة “কোনো উপকারী কারণে এবং যদি মৃতের প্রতি কোনো অবমাননা বা ক্ষতি না হয়,তবে কবর খনন করে মৃতকে বের করতে দোষ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণ কবর খননের (নবশুল কুবুর) সাথে তুলনা করা যাবে না, কারণ সেটা সাধারণত ক্ষতির উদ্দেশ্যে বা কোনো উপকার ছাড়া করা হয়।”(আল মুনতাকা শারহুল মুওয়াত্তা; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২২৫)।
.
শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে কবর খনন করা নিষিদ্ধ, তবে বিশেষ প্রয়োজনে পুরাতন কবরকে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা জায়েয’ (কুয়েতী ফিক্বহ বিশ্বকোষ; খণ্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৫২; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাতওয়া নং-৩০৬৩৫৫)। শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) আরো বলেন, ‘কবর স্থানান্তরিত করার সময় অবশ্যই সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অত্যন্ত যত্ন সহকারে অবশিষ্ট অংশগুলো বহন করতে হবে। যাতে মৃতদেহের কোন প্রকারের অসম্মান না হয়।(ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব; ফাতওয়া নং-৩০৬৩৫৫)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।