মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখার ১০ উপায়

প্রিয় পাঠক, নি:সন্দেহে দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় খুবই ক্ষণস্থায়ী। প্রতিটি প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুর সাধ অস্বাদন করতে হবে। যুগে যুগে কালে কালে এর ব্যত্যয় ঘটে নি। আগামীতেও ঘটবে না। কিন্তু আমরা মানুষ দুনিয়ার রঙ্গ-তামাশায় ডুবে প্রাই মৃত্যুর কথা ভুলে যাই! ভুলে যাই যে, আমাদের জীবনের জন্য একটি সময়-সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে সময় এসে গেলে এক সেকেন্ড বৃদ্ধি করা হবে না। একটি মাত্র নির্দেশে আমাদের কত শত রঙ্গিন স্বপ্ন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রস্তুতি, বহু সাধনার ক্যারিয়ার, যত্নে গড়া ঘরবাড়ি, সুন্দর দেহাবয়ব, দাম্পত্য জীবনের উষ্ণতা, পারিবারিক নিবিড় বন্ধন সব কিছু পেছনে ফেলে চলে যেতে হবে না এক ফেরার দেশে। সেখান থেকে ফিরে আসার আর কখনো সুযোগ থাকবে না।

সে অবধারিত বাস্তবতা ও অন্তিম জীবনের কথা আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত থাকলে সত্যি আমাদের জীবনটা অন্য রকম হত। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী আবাসকে এত এত স্বপ্ন, রঙ্গিন কল্পবিলাস আর ভালবাসা দিয়ে না গড়ে চিরস্থায়ী আবাস ভূমিতে প্রসাদ তৈরির প্রতি বেশি মনোযোগী হতাম। আর সমাজটাও এত অন্যায় ও পাপাচারে হাবুডুবু খেতো না। বরং এক অনাবিল শুদ্ধতা ও পবিত্রতার আবেশে ভরে থাকত আমাদের চারদিক-পারিপার্শ্বিকতা।

◯ যাহোক, নিম্নে হৃদয়পটে সর্বদা মৃত্যুর কথা জাগ্রত রাখার জন্য কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হল:

◈ ১) তরজমা ও তাফসির সহ কুরআন পড়া। কেননা কুরআনে মৃত্যু, পৃথিবীর ধ্বংস, আখিরাত, হাশর, বিচার, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা আছে।
◈ ২) কবরের প্রশ্ন, সুখ, আজাব, ফেরেশতাদের কঠোরতা এবং ভয়াবহতা ইত্যাদি সংক্রান্ত হাদিসগুলো পাঠ করা।
◈ ৩) মৃত্যু, কবর এবং আখিরাত সংক্রান্ত বই-পুস্তক পড়া এবং বিজ্ঞ আলেমদের বক্তব্য শোনা।
◈ ৪) যখনই সম্ভব কবর জিয়ারত করা।
◈ ৫. বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা।
◈ ৬) মৃত মানুষদের গোসল, কাফন-দাফন ও জানাজা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করা।
◈ ৭) নিজের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশী যারা সম্প্রতি মৃত্যু বরণ করেছে তাদের কথা স্মরণ করা যে, তারা এই ক দিন পূর্বে দুনিয়ায় জীবন-যাবন করত কিন্তু এখন তারা আর নেই।
◈ ৮) বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভি নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সকল দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির খবর আসে সেগুলো দেখে শিক্ষা নেয়া যে, মৃত্যু কত সন্নিকটে।
◈ ৯) মাঝে-মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের অবস্থা দেখতে যাওয়া অথবা এলাকার কোন মানুষ রোগাক্রান্ত হলে বা মৃত্যু শয্যায় শায়িত থাকলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং যথাসাধ্য তার সেবা-শুশ্রূষা করা।
◈ ১০) পূর্ববর্তী ধ্বংস প্রাপ্ত জাতি সমূহের ইতিহাস পড়া এবং শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য তাদের স্মৃতি বাহী স্থানগুলো দেখতে যাওয়া।

মহান রবের নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে মৃত্যুর কথা অন্তরে জাগ্রত রেখে নিজেদেরকে মহান আল্লাহর পথে জীবন যাপনের এবং সব ধরণের পাপ-পঙ্কিলতা ও অন্যায়-অপকর্ম থেকে পরিশুদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করেন এবং শঙ্কামুক্ত করেন মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে। আমীন। নিশ্চয় তিনি পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব