প্রশ্ন: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে মুহররম মাসের মর্যাদা এবং ফযিলত কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য। আমাদের নবী, সর্বশেষ নবী, রাসূলদের সর্দার মুহাম্মদ ﷺ এর প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম সকলের প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর আল্লাহর মাস খ্যাত মুহাররামের দিনগুলো একে একে চলে যাচ্ছে। মুহাররাম হলো আরবি চন্দ্রবছরের প্রথম মাস। আরবরা এ মাসকে ‘সফরুল আউয়াল’ তথা প্রথম সফর নামকরণ করে নিজেদের ইচ্ছামতো যুদ্ধ-বিগ্রহসহ বিভিন্ন কাজকে হালাল ও হারাম গণ্য করত।অতঃপর ইসলাম আগমনের পর আল্লাহ তা‘আলা এসব কিছু হারাম করে এই মাসের নাম দিলেন মুহাররম।তাই আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধ করে একে শাহরুল্লাহিল মুহাররম’ তথা ‘মুহাররম আল্লাহর মাস’ বলা হয়। আর অন্য যত মাস আছে সেগুলোর নাম ইসলাম আগমনের পরেও পরিবর্তন করা হয়নি। মুহাররাম’ মানে সম্মানিত। এই মাসের সম্মানের কারণেই এই নামকরণ করা হয়েছে। এই মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। এ মাসের ১০ তারিখ আশূরা বলে পরিচিত। নিঃসন্দেহে আশূরার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। কেননা এই দিনে মহান আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সম্প্রদায় বানী ইসরাঈলকে ফের‘আউনের কবল থেকে মুক্ত ও ফের‘আউনকে ধ্বংস করেছিলেন।
.
মুহাররম মাসের গুরুত্ব: মুহাররম মাস হিজরী সনের ১২ মাসের প্রথম মাস, যা হারাম বা পবিত্র মাসগুলোর অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বছরের ১২টি মাস সম্পর্কে বলেন,إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوْا فِيْهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِيْنَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُوْنَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ “নিশ্চয় আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতে আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় ১২টি মাস, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো! আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গে আছেন”।(সূরা আত-তওবা: ৯/৩৬)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র মাস পবিত্র মাসের বিনিময়ে। এতে নিষিদ্ধ জিনিসের জন্য ক্বিসাস (প্রতিবদলা) এর বিধান রয়েছে’ (আল-বাক্বারা: ২/১৯৪)।
.
আবু বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন:الزَّمَانُ قَدْ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرً مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو القَعْدَةِ وَذُو الحِجَّةِ وَالمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِيْ بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ“আল্লাহ আসমান-জমিন সৃষ্টিকালে সময়কে ঠিক যেভাবে সৃষ্টি করেছেন এখন সময় সে অবস্থায় ফিরে এলো। বছর হচ্ছে- বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক: যুলক্বদ, যুলহজ্জ ও মুহররম। আর হচ্ছে- (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যেটি জুমাদাল আখেরা ও শাবান মাস এর মধ্যবর্তী।”(সহিহ বুখারি হা/৩১৬৭; সহিহ মুসলিম হা/১৬) মুহররম মাসকে এ নামে অভিহিত করা হয়েছে এটি নিষিদ্ধ মাস হওয়ার কারণে এবং এর নিষিদ্ধ হওয়াকে জোরদার করার উদ্দেশ্য। আল্লাহ্র বাণী: “সুতরাং এগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না।” অর্থাৎ এ নিষিদ্ধ মাসসমূহে। যেহেতু এ মাসসমূহে জুলুম করা অন্য মাসসমূহে করার চেয়ে অধিক গুরুতর গুনাহ।
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন: “আল্লাহর এই বাণী— فلا تظلموا فيهن أنفسكم”في كلهن ثم اختص من ذلك أربعة أشهر فجعلهن حراما وعظّم حرماتهن وجعل الذنب فيهن أعظم والعمل الصالح والأجر أعظم ، وقال قتادة في قوله ” فلا تظلمـوا فيهن أنفسكم ” إن الظّلم في الأشهر الحرم أعظم خطيئة ووزرا من الظلم فيما سواها. وإن كان الظلم على كل حال عظيما ولكن الله يعظّم من أمره ما يشاء ، وقال : إن الله اصطفى صفايا من خلقه : اصطفى من الملائكة رسلا ومن الناس رسلا واصطفى من الكلام ذكره واصطفى من الأرض المساجد واصطفى من الشهور رمضان والأشهر الحرم واصطفى من الأيام يوم الجمعة واصطفى من الليالي ليلة القدر فعظموا ما عظّم الله . فإنما تُعَظّم الأمور بما عظمها الله به عند أهل الفهم وأهل اأنفسكم—(অর্থ- সুতরাং এগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।) এর অন্তর্ভুক্ত মূলত সকল মাসই, কিন্তু তার মধ্যে বিশেষ করে চারটি মাসকে আলাদা করে পবিত্র ও হারাম (সম্মানিত) মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন, তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, তাদের হুরমত (সম্মান ও নিষেধ) আরও জোরালো করেছেন। তিনি ওই মাসসমূহের গুনাহকে মহা অপরাধ গণ্য করেছেন এবং সে মাসসমূহের নেক কাজ ও সওয়াবকেও মহান করেছেন। (فلا تظلموا فيهن أنفسكم) অর্থ- সুতরাং এগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।) আয়াতের তাফসিরে কাতাদা (রাঃ) বলেন: নিশ্চয় হারাম মাসসমূহে যুলুম করা অন্য মাসসমূহে যুলুম করার চেয়ে অধিক মারাত্মক গুনাহ। যদিও যুলুম সবসময়ই মারাত্মক। কিন্তু, আল্লাহ্ তাআলা নিজ ইচ্ছায় তাঁর কোনো কোনো নির্দেশনাকে অতি মহান করে থাকেন। তিনি আরও বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর মাখলুকের মধ্যে বিশেষ কিছু মাখলুককে মনোনীত করেছেন: ফেরেশতাদের মধ্য থেকে কিছু ফেরেশতাকে ‘রাসূল বা দূত’ হিসেবে মনোনীত করেছেন। মানুষের মধ্য থেকেও কিছু মানুষকে ‘রাসূল বা দূত’ হিসেবে মনোনীত করেছেন। বাণীর মধ্য থেকে কিছু বাণীকে ‘স্মরণিকা’ হিসেবে মনোনীত করেছেন। জমিনের মধ্য থেকে কিছু ভূমিকে ‘মসজিদ’ হিসেবে মনোনীত করেছেন। মাসসমূহের মধ্য থেকে রমযান ‘মাস ও হারাম মাসসমূহ’কে মনোনীত করেছেন। দিনসমূহের মধ্য থেকে ‘জুমা’র দিনকে মনোনীত করেছেন। রাতসমূহের মধ্য থেকে ‘লাইলাতুল ক্বদর’কে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ্ যা কিছুকে শ্রেষ্ঠ করেছেন সেগুলোকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিন। কারণ বুঝবান ও জ্ঞানবান লোকদের নিকট সাব্যস্ত যে, আল্লাহ্ মর্যাদা দেয়ার কারণেই বিভিন্ন বিষয়কে মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে।[সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতের তাফসির; তাফসিরে ইবনে কাছির থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত;দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২১৩১১১)
.
মুহররম মাসে অধিক সিয়াম রাখার ফযিলত:
.
আলিমগণের বড় একটি অংশের মতে, রামাদানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মুহাররাম। সব মাসই আল্লাহর, তবে মুহাররাম মাসকে হাদিসে বিশেষভাবে বলা হয়েছে শাহরুল্লাহ তথা ‘আল্লাহর মাস’।মূলত বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণেই মুহাররামকে এই নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেভাবে সকল মাসজিদই আল্লাহর ঘর, কিন্তু কাবা’র বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকায় এটিকে বিশেষভাবে বাইতুল্লাহ তথা ‘আল্লাহর ঘর’ বলা হয়। এই মাসে অন্যান্য আমলের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আমল দুইটি: নফল সিয়াম রাখা ও বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ “রামাযানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হল- আল্লাহর মাস মুহাররমের সিয়াম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল- রাতের নফল সালাত”।(সহিহ মুসলিম হা/১৯৮২) প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) সম্মানিত মাসগুলোতে সিয়াম পালন করতেন। [ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ৪/২৯২; বর্ণনাটির সনদ সহিহ;বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইমাম ইবনু রজব, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, পৃষ্ঠা: ৭৯-৮২)
.
সহীহ মুসলিমের হাদিসের ব্যাখায় হাফিজ ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি.মৃত:৭৯৫ হি:] বলেন:
وهذا الحديث صريح في أن أفضل ما تطوع به من الصيام بعد رمضان صوم شهر الله المحرم, وقد يحتمل أن يراد: أنه أفضل شهر تطوع بصيامه كاملا بعد رمضان, فأما بعض التطوع ببعض شهر, فقد يكون أفضل من بعض أيامه, كصيام يوم عرفه, أو عشر ذي الحجة, أو ستة أيام من شوال, ونحو ذلك, ويشهد لهذا ما خرجه الترمذي من حديث علي أن رجلا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله أخبرني بشهر أصومه بعد شهر رمضان؟ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” إن كنت صائما شهرا بعد رمضان فصم المحرم, فإنه شهر الله, وفيه يوم تاب الله فيه على قوم, ويتوب على آخرين” وفي إسناده مقال এই হাদীসটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রমাযানের পর সর্বোত্তম নফল সিয়াম হচ্ছে—আল্লাহর মাস মুহররমের সিয়াম। তবে এটি এই অর্থেও হতে পারে যে, রমাযানের পর পুরো একটি মাস নফল সিয়াম রাখতে চাইলে মুহররম মাসই সর্বোত্তম মাস।কিন্তু যদি নির্দিষ্ট কিছু দিনের নফল সিয়ামের কথা বিবেচনা করা হয়, তবে এমনও হতে পারে—মুহররম মাসের কিছু দিনের চেয়ে অন্য কিছু নির্দিষ্ট দিনের সিয়াম অধিক ফযীলতপূর্ণ, যেমন: আরাফার দিনের সিয়াম , জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের সিয়াম , শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম ইত্যাদি। এ বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিরমিযিতে বর্ণিত একটি হাদীস পেশ করা যেতে পারে, যা আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত:“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রমাযানের পর এমন একটি মাসের কথা আমাকে বলুন, যাতে আমি সাওম পালন করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রামাযান মাসের পর তুমি যদি আরো সিয়াম রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহারামের সিয়াম রাখো। যেহেতু এটা আল্লাহ তা’আলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তা’আলা এক গোত্রের তাওবা কুবুল করেছিলেন এবং তিনি আরোও অনেক গোত্রের তাওবাও এই দিনে কুবুল করবেন।”(তিরমিজি হা/৭৪১; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৩২২; তবে হাদিসটির সনদ দুর্বল(ضعيف); ইমাম ইবনু রজব, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, পৃষ্ঠা: ৮১-৮২)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,قوله : ( شهر الله ) إضافة الشّهر إلى الله إضافة تعظيم ، قال القاري : الظاهر أن المراد جميع شهر المحرّم .ولكن قد ثبت أنّ النبي صلى الله عليه وسلم لم يصم شهرا كاملا قطّ غير رمضان فيُحمل هذا الحديث على الترغيب في الإكثار من الصّيام في شهر محرم لا صومه كله .وقد ثبت إكثار النبي صلى الله عليه وسلم من الصوم في شعبان , ولعله لم يوحَ إليه بفضل المحرّم إلا في آخر الحياة قبل التمكّن من صومه ..”হাদিসের বাণী: “আল্লাহ্র মাস”: মাসকে আল্লাহ্র দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে মর্যাদা প্রকাশার্থে। আল-ক্বারি বলেন: বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে- গোটা মুহররম মাস। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি রমযান ছাড়া কোন মাসেই গোটা মাসব্যাপী রোযা রাখেননি। তাই হাদিসের এ ব্যাখ্যা করতে হবে যে, মুহররম মাসে বেশি সিয়াম রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু গোটা মাসব্যাপী সিয়াম নয়।আরও সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি সিয়াম রাখতেন। খুব সম্ভব মুহররম মাসের ফযিলত সম্পর্কে তাঁকে আগে ওহি পাঠানো পাঠানো হয়নি; তাঁর জীবনের একেবারে শেষ দিকে ওহি পাঠানো হয়েছে; এতে সে সিয়াম পালন সম্ভবপর হয়নি।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইমাম নববীর ‘শারহু সহিহি মুসলিম; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৮৮)
.
আল্লাহ্ তাআলা স্থান ও কালকে মনোনীত করেন:আল-ইয্য বিন আব্দুস সালাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনوَتَفْضِيلُ الأَمَاكِنِ وَالأَزْمَانِ ضَرْبَانِ : أَحَدُهُمَا : دُنْيَوِيٌّ .. وَالضَّرْبُ الثَّانِي : تَفْضِيلٌ دِينِيٌّ رَاجِعٌ إلَى أَنَّ اللَّهَ يَجُودُ عَلَى عِبَادِهِ فِيهَا بِتَفْضِيلِ أَجْرِ الْعَامِلِينَ , كَتَفْضِيلِ صَوْمِ رَمَضَانَ عَلَى صَوْمِ سَائِرِ الشُّهُورِ , وَكَذَلِكَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ .. فَفَضْلُهَا رَاجِعٌ إلَى جُودِ اللَّهِ وَإِحْسَانِهِ إلَى عِبَادِهِ فِيهَا ..“স্থান-কালের শ্রেষ্ঠত্ব দুই ধরণের: দুনিয়াবী। অন্য প্রকার হল: দ্বীনি; অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা এই স্থান-কালের মধ্যে আমলকারী বান্দাদের সওয়াব বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদের উপর তাঁর বদান্য ঢেলে দেন। যেমন- অন্য মাসসমূহের উপর রমযান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব। অনুরূপভাবে আশুরার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব…। এগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হচ্ছে- এগুলোতে বান্দার প্রতি আল্লাহ্র বদান্যতা ও দয়া…।”(ক্বাওয়ায়েদুল আহকাম; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৮) আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম সকলের প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। মুহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনে সিয়াম রাখার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে দ্বিতীয় পর্বে পোস্ট আসবে ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।