মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়কালে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য কতিপয় দোয়ার আমল

মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়কালে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য কতিপয় দোয়ার আমলঃ
——————————————————————————————

দুনিয়ার বুকে বিপদ-আপদ থেকে হেফাজতের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে। সেখান থেকে সহজে আমল যোগ্য কয়েকটি ছোট ছোট দোয়া সবার বিবেচনা ও আমলের জন্য পেশ করা হল:

১) কোন সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশংকা হলে দোয়াঃ হযরত আবু মুসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা করতেন তখন বলতেনঃ

اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ

হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (আবু দাউদ ও নাসাই)

২) সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে হিফাজতের দোয়াঃ হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন বান্দা প্রতিদিন সকালে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।

بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ

আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিযী-৩৩২৪ : হাসান ও সহীহ, আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ্)

৩) বিপদগ্রস্থ বা রোগাগ্রস্থ ব্যক্তিকে দেখে দোয়াঃ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থ বা ব্যাধিগ্রস্থ লোককে দেখে বলে:

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا

সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তার বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন সে কখনো উক্ত বিপদ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। (তিরমিযী: হাসান)

৪) মুসিবতের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির উপর কোন বিপদ এলে যদি সে বলে:

إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ – اَللّهُمَّ أَجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا

আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভাল বস্তু দান করুন) আল্লাহ তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চাইতে উত্তম বস্তু দেন। (সহীহ মুসলিম)

৫) বিপদের সময় দোয়া ইউনুস পাঠ এবং এর ফজিলতঃ হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নবী যুন-নুন (ইউনুস আলাইহিস সালাম) মাছের পেটে অবস্থান কালে যে দোয়া করেছিলেন তা হল:

لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত)। কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন বিষয়ে এ দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করেন। (তিরমিযী ও নাসাই)

৬) বিপদের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় দোয়া করতেন:

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيْمُ الْحَكِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ السَّموَاتِ وَالْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمُ

আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহা জ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমীন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)

৭) ফজরবাদ পাঠ করার বিশেষ দোয়াঃ হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর দুই পা ভাজ অবস্থায় কারো সাথে কথা বলার পূর্বে দশ বার বলে

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, সার্বভৌমত্ব তারই, সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান- তার আমল নামায় দশটি নেকী লেখা হয়, দশটি গুনাহ বিলুপ্ত করা হয় এবং দশগুন মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। সে ঐ দিন সব রকমের বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে, শয়তানের ধোঁকা থেকে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন র্শিক ছাড়া অন্য কোন গুনাহ তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না।  (তিরমিযীঃ হাসান ও সহীহ)

মুসীবাত থেকে রক্ষার জন্য বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়াঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলে

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ

আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া অকল্যাণ রোধ বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নাই – তাকে বলা হয় তোমাকে হেদায়াত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর শয়তান তার থেকে দুরে চলে যায়। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাই) আবু দাউদ পরে আরও বৃদ্ধি করেছেনঃ শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি এর উপর কেমন করে নিয়ন্ত্রন লাভ করবে যাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিপদ-মুসিবতে আপতিত হলে পাঠ করার দোয়াঃ মুমিনগণের উপর কোন মুসিবত আপতিত হলে আল্লাহ তায়ালা যে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন

اَلَّذِيْنَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوا ] إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ[

যখন তাদের উপর কোন মুসিবত আপতিত হয় তখন তারা বলে : ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য আর আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে’ (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫৬)

জালিম শাসকদের জুলুম থেকে মুক্তির জন্য হযরত মুসা (আলাইহিসসালাম) এর দোয়াঃ এই দোয়া নিয়মিত পাঠে জালিম শাসকদের অন্যায় ও জুলুম থেকে মুক্তির দৃঢ় সম্ভাবনা রয়েছে।

عَلَى اللّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ০ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ ০

আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের নির্যাতনের শিকার বানাবেন না। আমাদেরকে আপনার রহমতে কাফিরদের কবল থেকে রক্ষা করুন। (সূরা ইউনুসঃ আয়াত ৮৫-৮৬)

জালিমদের জুলুম ও নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য মাজলুম ঈমানদার বান্দাগণের দোয়াঃ এই দোয়া নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে সমাজের জালিম সম্প্রদায়ের জুলুম থেকে মুক্তির আশা করা যায়।

رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا وَّاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا

হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের এ জনপদ থেকে মুক্ত করুন। আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক করে দিন, আপনার নিকট থেকে কাউকে আমাদের সাহায্যকারী করে দিন। (সূরা নিসাঃ আয়াত ৭৫)