মাগরিবের সালাতের সুন্নতী ক্বিরাআত

মাগরিবের সালাতে অপেক্ষাকৃত ছোট সূরা গুলো পড়া উত্তম তবে বড় সূরাগুলো পড়াও জায়েজ। কেননা হাদীসে ছোট বড় উভয় সূরা তেলোয়াতের বর্ননা পাওয়া যায়। মোটকথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তাদীর অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে কখনও ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘ করেছেন আবার কখনো সংক্ষিপ্ত করেছেন। যেমন:
.
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি অমুক লোক ছাড়া আর কোন লোকের পিছনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সালাত আদায় করিনি। সুলায়মান বলেন, আমিও ওই লোকের পিছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্‘আত অনেক লম্বা করে পড়তেন। আর শেষ দু’ রাক‘আতকে ছোট করে পড়তেন। ‘আসরের সালাত ছোট করতেন। মাগরিবের সালাতে ক্বিসারি মুফাসসাল (সংক্ষিপ্ত) সূরাহ্ পাঠ করতেন। ‘ইশার সালাতে আওসাতে মুফাসসাল (মধ্যম) সূরাহ্ পাঠ করতেন। আর ফজরের (ফজরের) সালাতে তিওয়ালি মুফাসসাল (দীর্ঘ) সূরাহ্ পাঠ করতেন। (নাসাঈ ৯৮৩; মিশকাত ৮৫৩)
.
উক্ত হাদীসে ক্বিসারি মুফাসসাল সূরা বলতে সূরাহ্ আল বাইয়্যিনাহ থেকে সূরাহ আন না-স পর্যন্ত সূরাহগুলোকে কিসারে মুফাস্‌সাল বলা হয়। আর মাগরিবের সালাত সংক্ষেপের ফলেই সাহাবাগণ যখন নামায পড়ে ফিরতেন তখন কেউ তীর ছুঁড়লে তাঁর তীর পড়ার স্থানটিকে দেখেতে পেতেন। কারণ, তখনও বেশ উজ্জ্বল থাকত। যেমন: অন্য বর্ননায় রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম। সালাত শেষ করে আমাদের কেউ তার তীর পড়ার স্থান (পর্যন্ত) দেখতে পেত (সহীহ বুখারী ৫৫৯, মুসলিম ৬৩৭, ইবনু মাজাহ্ ৬৮৭, আহমাদ ১৭২৭৬, ইরওয়া ২৫৬, মিশকাত ৫৯৬)
.
রাসূল ﷺ মাগরিবের সালাতে কখনো কখনো বড় সূরা ও পড়তেন। যেমন:

মারওয়ান ইব্‌নু হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা যায়িদ ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) আমাকে বললেন, কী ব্যাপার, মাগরিবের সালাতে তুমি যে কেবল ছোট ছোট সুরা তেলাওয়াত কর? অথচ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দু’টি দীর্ঘ সূরার মধ্যে অধিকতর দীর্ঘটি পাঠ করতে শুনেছি।(সহিহ বুখারী ৭৬৪) উক্ত হাদীসে অপেক্ষাকৃত দু’টি দীর্ঘতম সূরা দ্বারা সূরা আরাফ ও সূরা আন’আমকে বুঝানো হয়েছে। আর এ দু’টির মাঝে দীর্ঘতম সূরা আরাফ।

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আল আ‘রাফ দু’ ভাগে ভাগ করে মাগরিবের সালাতের দু’ রাক‘আতে তিলাওয়াত করলেন (সহীহ বুখারী ১/১৯৭, নাসায়ী ৯৯১, আবূ দাঊদ ৮১২, মিশকাত ৮৪৭)

উম্মুল ফাযল বিনতু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ মুরসালাত তিলাওয়াত করতে শুনেছি,(সহীহ বুখারী ৪৪২৯, মুসলিম ৪৬২, দারেমী ১৩৩১)

জুবায়র ইবনু মুত্ব‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ ‘তূর’ পাঠ করতে শুনেছি। (সহীহ বুখারী ৭৬৫, মুসলিম ৪৬৩, নাসায়ী ৯৮৭, ইবনু মাজাহ্ ৮৩২, আহমাদ ১৬৭৩৫, দারেমী ১৩৩২)

কখনো বা সূরা আনফাল। (ত্বাবারানী, মু’জাম, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১১৬ পৃ:)

রাসূল ﷺ মাগরিবের সালাতে কখনো পড়তেন সূরা মুহাম্মাদ। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ত্বাবারানী, মু’জাম, মাক্বদেসী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১১৬ পৃ:)

রাসূল ﷺ কখনো সফরে তিনি মাগরিবের দ্বিতীয় রাকআতে সূরা তীন পাঠ করেছেন। (ত্বায়ালেসী, আহমাদ, মুসনাদ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১১৫ পৃ:)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।