ভ্রান্ত ফিরকা ও বিদআতপন্থীদের বিভ্রান্তি ও গোমরাহি রদ করা ফরজ এ বিষয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ এবং সালাফে সালেহীনের বক্তব্যসমূহ

প্রশ্ন: আমাদের সম্মানিত শাইখ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, ভ্রান্ত ফিরকা ও বিদআতপন্থীদের বিভ্রান্তি ও গোমরাহি রদ করা ফরজ। এ বিষয়ে কুরআন, সহীহ সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের বক্তব্যসমূহের আলোকে একটি বিস্তারিত লেখা চাই।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর “গত শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ হানযালা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) মসজিদে আমাদের সম্মানিত শাইখ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ) জুমার সালাতের পর নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে, কেউ একজন তিনজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে স্যারের কাছে জানতে চান, তারা কি সঠিক পথে আছেন কিনা। জবাবে সম্মানিত শাইখ স্পষ্টভাবে জানান, উক্ত তিনজনই বিভ্রান্তির পথের অনুসারী এবং তিনি কিছু দলিল-প্রমাণসহ তাদের ভ্রান্তি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এতে বিদআতপন্থী মহলে প্রবল অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। ফলে তারা স্বভাবসুলভভাবে নানা ধরনের অশোভন, বিভ্রান্তিকর ও অপমানমূলক মন্তব্য ছড়াতে শুরু করে। আমাদের শাইখ তাদের সমালোচনা করে কোন ভুল করেন নাই। মূলত যারা বিদআতি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত চিরাচরিত অভ্যাসই হলো তারা সর্বদা সালাফি মানহাজের অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ায়, গালিগালাজ করে এবং অপমান-অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। এর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট কারণ: সালাফিরা কুরআন, সহীহ সুন্নাহ এবং সাহাবা-তাবেয়ীনের পথের প্রতি দৃঢ় আনুগত্য প্রকাশ করে এবং স্পষ্টভাবে বিদআত ও শরিয়তবিরোধী বিশ্বাস ও কর্মের বিরোধিতা করে। ফলে বিদআতি গোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভ্রান্ত আকীদা ও বিদআতসমূহ টিকিয়ে রাখার জন্যই সালাফিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। কারণ, সালাফিরাই জাতির সামনে তাদের ভ্রান্তির মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) যাঁরা সুন্নাহর ওপর অবিচল ছিলেন তারাও বিদআতিদের পক্ষ থেকে গালি, অপবাদ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। বাস্তবতা হলো, বিদআতিরা যুগে যুগে নিজেদের বাতিল বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য ‘আহলুল হক সত্যপন্থী সালাফি ও সুন্নাহর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, অপপ্রচার ও শত্রুতা চালিয়ে এসেছে, এবং আজও সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
.
বিদ‘আতীদের রদ (খণ্ডন) করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি।
.
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা জেনে রাখুন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মহান আল্লাহ কর্তৃক ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেবার অর্থই হচ্ছে, এই দ্বীনের মধ্যে জীবনের সমস্ত প্রশ্নের নীতিগত ও বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এখন আর কোন অবস্থাতেই ইসলামের বাইরে যাবার প্রয়োজন বা সুযোগ নাই। সুতরাং এই নবী (মুহাম্মদ ﷺ)-এর পরে আর কোন নবী নেই। এই শরীআতের পরে আর কোন শরীআত নেই। এ শরীআতে যা যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে সত্য ও ইনসাফপূর্ণ। অতএব এই স্বচ্ছ দ্বীনের মধ্যে নতুন যা কিছু আবিষ্কার হবে সবই প্রত্যাখ্যাত এবং বাতিল বলে গণ্য হবে কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,“(দ্বীনের মধ্যে) যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে সাবধান! কারণ প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয় হলো বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।”(আবূ দাউদ, হা/৪৬০৭) সুতরাং যারা এই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের ভিতরে আক্বীদা মানহাজের ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজার পরিবর্তে ভিন্ন কোন মতাদর্শ তৈরি করবে তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ। বরং এমন ভ্রান্ত ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি তীব্র প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি।কারণ এটি সাধারণ মানুষের দ্বীন সুরক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। হক জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক, যাতে তারা ভ্রান্ত ব্যক্তিদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়। সালাফগণ ও উম্মতের ইমামগণ কখনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি নয়, বরং দ্বীনের হেফাজতের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন। তারা সর্বদা শরিয়তের ব্যাপারে ভুল-ত্রুটিকে দৃঢ়তার সাথে খণ্ডন করেছেন, যাতে দ্বীনের স্বচ্ছতা ও বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। এই পন্থা তাদের থেকে আজও উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তাছাড়া বিদ‘আতীদের রদ করা,তাদের ভুলগুলো খণ্ডন করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। সালাফদের যুগ থেকেই বিদ‘আতীদের রদ করার এই শার‘ঈ নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট।কখনো কখনো বিদ‘আতীদের রদ করতে করতে সালাফদের জীবন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাঁরা প্রকৃত কাফির তথা ই-হুদি-খ্রি-ষ্টা-ন-দের রদ করতে প্রবৃত্ত হননি। আমরা যদি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান,ইমাম আহমাদ, সুফইয়ান, হাম্মাদ বিন যাইদ, হাম্মাদ বিন সালামাহ, নু‘আইম বিন হাম্মাদ, আওযা‘ঈ, ইসহাক্ব,‘আলী বিন মাদীনী প্রমুখ আহলুস সুন্নাহ ও ইসলামের ইমামগণের কথার দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখবে, তাদের অধিকাংশ কথা ও প্রচেষ্টা স্রেফ বিদ‘আতীদের রদ করা এবং বিদ‘আতীদের মূলনীতি খণ্ডন করার ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়েছে। তাঁরা ইহুদি-খ্রিষ্টান এবং যাবতীয় কাফির সম্প্রদায়কে রদ করার কাজে মশগুল হননি। এটা একারণে যে বিদ‘আতীদের অনিষ্ট কখনো কখনো অসংখ্য মুসলিমের কাছে অস্পষ্ট থাকে। মুসলিমদের জন্য বিদ‘আতী নিরাপদ নয়। পক্ষান্তরে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত প্রকৃত কাফিরের অনিষ্ট ও অপকারিতা সকল মুসলিমের কাছে সুস্পষ্ট। কেননা মহান আল্লাহ তা তাঁর কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তাদের অবস্থা মুসলিমদের কাছে স্পষ্ট। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের অনিষ্টতা অনেক। তাছাড়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) নিজেও বাতিল পন্থীদের খণ্ডনকারীদের প্রশংসায় সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দিয়েছেন।
.
ইবরাহীম বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-‘উযরী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,يَحْمِلُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُه يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ وَانْتَحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَأْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ “প্রত্যেক আগত জামা‘আতের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহ’র) এই ‘ইলম গ্রহণ করবে। আর তারাই কিতাব ও সুন্নাহ’র ‘ইলমের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কৃত রদবদল, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার এবং জাহিল ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন করবে।”(ইমাম বাইহাক্বী,সুনানুল কুবরা, হা/২১৪৩৯; ইবনু বাত্বত্বাহ, ইবানাতুল কুবরা, হা/৩৪; মিশকাত, হা/২৪৮; ইমাম আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি মুরসাল হলেও সহীহ বটে।কেননা এর অনেক মাওসুল সানাদ আছে। এর কোন কোনটিকে হাফিয আল ‘আলাঈ সহীহ বলেছেন।(বুগইয়াতুল মুলতামিস পৃষ্ঠা: ৩-৪)
.
উক্ত হাদিসের অর্থ হলো, প্রতিটি যুগে ন্যায়পরায়ণ এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞান বহন করবে, যারা তাদের পূর্বসূরী ন্যায়পরায়ণদের স্থান গ্রহণ করবে। তারা এই জ্ঞানের মাধ্যমে চরমপন্থীদের বিকৃতি দূর করবে অর্থাৎ যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং পথ থেকে সরে গেছে এবং মিথ্যাবাদীদের মিথ্যা রচনাগুলো অপসারণ করবে এবং অজ্ঞদের ভুল ও বাতিল ব্যাখ্যাগুলো থেকে দ্বীনকে রক্ষা করবে।” হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:[… وفي الحديث الآخر: «يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وانتحال المبطلين وتأويل الجاهلين» وهذا إخبار منه صلى الله عليه وسلم بصيانة العلم و حفظه وعدالة ناقليه وأن الله تعالى يوفق له في كل عصر خلفاً من العدول يحملونه وينفون عنه التحريف وما بعد فلا يضيع وهذا تصريح بعدالة حامليه في كل عصر وهكذا وقع ولله الحمد وهذا من أعلام النبوة ولا يضر مع هذا كون بعض الفساق يعرف شيئاً من العلم فإن الحديث إنما هو إخبار بأن العدول يحملونه لا أن غيرهم لا يعرف شيئاً منه والله أعلم] “অপর আরেকটি হাদীসে এসেছে: ‘এই জ্ঞানকে প্রতিটি যুগের ন্যায়পরায়ণরা ধারণ করবে; তারা একে চরমপন্থীদের বিকৃতি, বাতিলকারীদের অপপ্রচার এবং অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করবে।’ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী যে, আল্লাহ তাআলা দ্বীনি জ্ঞানের হেফাজত করবেন, তার বাহকদের ন্যায়পরায়ণতাকে দৃঢ় রাখবেন এবং প্রতিটি যুগে ন্যায়পরায়ণ উত্তরসূরীদের মাধ্যমে এ জ্ঞানের সংরক্ষণ সাধন করবেন, যাতে কোন বিকৃতি বা অপব্যাখ্যা এতে প্রবেশ করতে না পারে, ফলে জ্ঞান বিনষ্ট বা বিলুপ্ত হবে না। এর মধ্যে প্রতিটি যুগের জ্ঞান বাহকদের ন্যায়পরায়ণতার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। বাস্তবতাও তা-ই প্রমাণ করে,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য।এটি নবুওয়তের অন্যতম নিদর্শন। এই সংবাদ থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যদি কোনো ফাসিক (পাপাচারী) ব্যক্তি দ্বীনি জ্ঞানের কিছু অংশ জানে, তবে তাতে কোনো অকল্যাণ বা ক্ষতি নেই; কেননা হাদীসে মূলত বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ন্যায়পরায়ণরাই এই জ্ঞান ধারণ করবে, এর অর্থ এই নয় যে, অন্য কেউ কিছু জানবে না।”(নববী; তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭) সালাফগণের কর্মে আমরা এই মহান নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই। সহীহ মুসলিমের একটি হাদিসে এসেছে, কাব বিন উজরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন, যখন আব্দুর রহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন। কাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, “তোমরা এই খবিসের দিকে লক্ষ করো, সে বসে বসে খুতবা দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা (খুতবা চলাকালীন সময়ে) তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল।”(সুরা জুমুআহ: ১১)”সহিহ মুসলিম, হা: ৮৬৪) সুতরাং আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি।
.
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম, إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم.”এটি আমার জন্য খুবই কঠিন, যখন আমি বলি: অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক) আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন,“কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১) ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) -কে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “একজন ব্যক্তি সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, ই‘তিকাফ করে সে আপনার কাছে অধিক প্রিয়, নাকি সেই ব্যক্তি, যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?” জবাবে আমাদের সন্মানিত ইমাম বলেন: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.”যখন কেউ দাড়িয়ে সালাত আদায় করে এবং ই‘তিকাফ করে,তখন সেই আমলটা শুধু তার নিজের জন্যই সম্পাদিত হয়। কিন্তু যখন সে বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন সেখানে গোটা মুসলিম উম্মাহ’র কল্যাণ নিহিত থাকে। আর এটাই অধিকতর উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ’”।(ইবনু তাইমিয়া;মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১)
.
ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন, واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ. “জেনে রাখো, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি দুই প্রকারের হয়: এক প্রকার হলো এমন ব্যক্তি, যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, যদিও তার উদ্দেশ্য ছিল কেবল কল্যাণ। অতএব তার এ বিচ্যুতির অনুসরণ করা যাবে না,নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর অন্য প্রকার হলো এমন ব্যক্তি, যে সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকেও পথভ্রষ্টকারী; সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা (কাহিনী) মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।”[ইমাম বারবাহারী,শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
.
বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার শামিল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, الرادّ على أهل البدع مجاهد، حتى كان يحيى بن يحيى يقول: الذب عن السنّة أفضل الجهاد.”বিদআতপন্থীদের খণ্ডনকারী (প্রতিবাদকারী) একজন মুজাহিদ। এমনকি ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া বলতেন: ‘সুন্নাহর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা করা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।'”(নাক্বদুল মানত্বিক্ব, পৃষ্ঠা: ১২; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল বিদা‘; পৃষ্ঠা: ১০৪) শাইখুল ইসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন, ومثل أئمة البدع من أهل المقالات المخالفة للكتاب والسنة، أو العبارات المخالفة للكتاب والسنة، فإن بيان حالهم وتحذير الأمة منهم واجب باتفاق المسلمين، حتى قيل لأحمد بن حنبل: الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ فقال: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.“যেমন বিদ‘আতের ইমামগণ, যারা কিতাব ও সুন্নাহর বিপরীতে মতবাদ ও কথাবার্তা প্রচার করে, তাদের অবস্থা তুলে ধরা এবং উম্মাহকে তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা মুসলিমদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ওয়াজিব। এমনকি (ইমাম) আহমাদ বিন হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘একজন ব্যক্তি যদি সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তাহলে তা আপনার কাছে অধিক প্রিয় কি, না কি সে ব্যক্তি যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: ‘যদি সে সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তবে তা সে নিজে উপকারিত হয়; কিন্তু যদি সে বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তবে তা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য, এবং এটি বেশি উত্তম।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড ২৮, পৃষ্ঠা ২৩১-২৩২; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন, ﺍﻟﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺣﻤﺎﻳﺔ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺼﻖ ﺑﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﺘﺄﻟﻴﻒ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻃﺒﻌﻬﺎ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺣﻖ ﻭﺩﻋﻮﺓ ﻟﻠﺤﻖ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻤﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻥ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻓﺈﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻄﺄ.“বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহর পথে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। এটি নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে শরিয়তকে হেফাজত করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করা, তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করাটাই হক এবং এটিই হকের দাওয়াত ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, বিদ‘আতীদের রদ করে গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করা নবউদ্ভাবিত বিষয়, সে অবশ্যই ভুলের উপর রয়েছে।” [আর-রিয়াদ্ব পত্রিকা; শুক্রবার, ৪ঠা মুহাররাম, ১৪২৪ হিজরি; সংখ্যা: ১২৬৭৪; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম]
.
এমনকি যারা বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী: শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,”যদি হকপন্থীরা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট না করে, তাহলে ভুলকারীরা তাদের ভুলে স্থির থাকবে এবং অন্যরা সেই ভুল অনুসরণ করবে। আর নীরবতা অবলম্বনকারীরা শরিয়ত গোপনের পাপ বহন করবে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তাদের সতর্ক করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,”আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০) আল্লাহ আহলে কিতাবে তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আলিমদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে তারা এসব বিষয়ে মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে, তবে তারা তা গোপন করে রেখেছিল। তাই আল্লাহ তাদের ভর্ৎসনা করেছেন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করেছেন। কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধীদের ভুল বর্ণনা করা থেকে আহলুস সুন্নাহ যদি চুপ থাকে, তাহলে তারা এর মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে, যে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ,খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩)
.
❏ বিদ‘আতীদের নাম ধরে সমালোচনা করা বৈধ:
.
বর্তমান সময়ে শারঈ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষ তিনটি বিষয়কে বেশী প্রাধান্য দেয়- (১) আলেমদের বক্তব্য শোনা, (২) দ্বীনী মজলিসে অংশগ্রহণ করা এবং (৩) ইসলামী বইপত্র অধ্যয়ন করা। নিঃসন্দেহে এগুলো ইলম অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব আলেমের বক্তব্য শুনছে, যাদের মাহফিলে যোগদান করছে এবং যাদের লেখা বইপত্র পড়ছে, তারা যদি বিদ‘আতী ও পথভ্রষ্ট হয় এবং জনগণ তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তবে জনগণকে সেই পথভ্রষ্ট-বিদ‘আতী আলেম থেকে সতর্ক-সাবধান করা দ্বীনদার আলেমদের ওপর ওয়াজিব। এক্ষেত্রে সেই বিদ‘আতী পথভ্রষ্ট আলেমের শারঈ ত্রুটি-বিচ্যুতি লোকসম্মুখে তুলে ধরা গীবতের মধ্যে শামিল হবে না। কারণ একজন মুসলিমের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হ’ল তার দ্বীন। কিন্তু তিনি যদি সেই দ্বীন ভুলভাবে শিখেন, তবে তার দুনিয়া-আখেরাত উভয়টাই বরবাদ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ ভুল পথের পথিক বাংলাদেশের কিছু (ফেমাস) পরিচিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে চাই যারা বিভিন্ন বাতিল আক্বীদা, বিদআত ও পথভ্রষ্টতার অনুসরণ করে থাকেন। যেমন: পথভ্রষ্ট বাতিল আক্বীদার অনুসারী বিদআতি বক্তা বেলাল বিন আলি,মুফতি রেজাউল করিম আবরার,শামশুদদোহা, লুৎফর রহমান ফরাজী, হারুন ইজহার,হারুন মিযান, আলি হাসান ওসামা, তাহমিদুল মাওলা,গাওহরপুরী।কিছু মোটিভেশনাল স্পিকার—যেমন; আবু ত্বহা আদনান,শামসুল আরেফিন শক্তি,আসিফ আদনান,আসিফ হুজুর,আরিফ আজাদ,জাকারিয়া মাসুদ,প্রমুখ উপরোক্ত সকলের বইপত্র, বক্তৃতা ও ফেসবুক লেখনি ইত্যাদি থেকে প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ে আমি আমাদের সালাফি মানহাজের অনুসারী ভাই-বোনদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।কারণ,দ্বীনের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য সুন্নাহ ও সালাফের পথের প্রতি অটল থাকা অপরিহার্য। আমাদের রাসূল (ﷺ) পথভ্রষ্ট আলেমকে উম্মতের জন্য হুমকি স্বরূপ মনে করতেন। তিনি বলেন,إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الأَئِمَّةَ الـمُضِلِّينَ، ‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদেরকেই ভয় করি”(তিরমিযী হা/২২২৯; আবূদাঊদ হা/৪২৫২) তিনি (ﷺ) নাম ধরেও সমালোচনা করেছেন যেমন; নবিজি (ﷺ) বলেছেন, مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الْأَشْرَفِ فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ – “কাব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? সে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে কষ্ট দিয়েছে।”(সহিহ বুখারি, হা. ৪০৩৭; সহিহ মুসলিম, হা.১৮০১) তিনি (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে দেখে বলেছেন, بِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ، وَبِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ ‏ –“সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।”(সহিহুল বুখারি, হা. ৬০৩২; সহিহ মুসলিম, হা.২৫৯১) হাসান বছরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিদ‘আতী ব্যক্তির সমালোচনা করা হারাম গীবতের পর্যায়ভুক্ত নয়।”(লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৫৮)
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহর ছেলে মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ২৯০ হি.) বর্ণনা করেছেন, ﺟﺎﺀ ﺃﺑﻮ ﺗﺮﺍﺏ ﺍﻟﻨﺨﺸﺒﻲ – ﻋﺴﻜﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺼﻴﻦ – ﺇﻟﻲ ﺃﺑﻲ، ﻓﺠﻌﻞ ﺃﺑﻲ ﻳﻘﻮﻝ : ﻓﻼﻥ ﺿﻌﻴﻒ ﻭ ﻓﻼﻥ ﺛﻘﺔ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ: ﻳﺎ ﺷﻴﺦ، ﻻ ﺗﻐﺘﺐ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ. ﻗﺎﻝ: ﻓﺎﻟﺘﻔﺖ ﺃﺑﻲ ﺇﻟﻴﻪ؛ ﻓﻘﺎﻝ: ﻭﻳﺤﻚ، ﻫﺬﺍ ﻧﺼﻴﺤﺔ، ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﻏﻴﺒﺔ “আবু তুরাব আন নাখশাবি আসকার বিন হুসাইন– আমার বাবার নিকট আসল। তখন আমার বাবা (ইমাম আহমাদ) বলছিলেন, “অমুক জইফ তথা দুর্বল, আর অমুক সিকাহ তথা বিশ্বস্ত।” তখন আবু তুরাব বলল, “শাইখ, আপনি আলিমদের গিবত করবেন না!” আমার বাবা তখন তার দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং বলে উঠলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা নসিহত তথা সদুপদেশ, এটা গিবত নয়!”(তাবাকাতুল হানাবিলা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪৯; গৃহীত: শাইখ হারিসি রাহিমাহুল্লাহ, লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর; পৃষ্ঠা: ১৮৪) আরেকটি ঘটনায় প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ি শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৮১ হি.) বললেন, “মুআল্লা বিন হিলাল যখনই হাদিস বর্ণনা করে, তখনই মিথ্যা বলে।” তখন তাঁকে একজন সুফি বলল, “হে আবু আব্দুর রহমান, আপনি গিবত করছেন?” তখন তিনি বললেন, “চুপ করো তুমি! যদি আমরা এভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা না করি, তবে লোকেরা কীভাবে বাতিল থেকে হককে (আলাদা করে) চিনতে পারবে?”(হাফিজ সুয়ুতি কৃত তাদরিবুর রাবি; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৬৯; গৃহীত: শাইখ হারিসি, লাম্মুদ দুর্রিল মানসুর;পৃষ্ঠা: ১৮৪ সংকলক আব্দুল্লাহ মৃধা ভাই)
.
ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ২৬১ হি.) সহিহ মুসলিমের ভূমিকায় বলেছেন, “পরিচ্ছেদ: হাদিসের সনদ বর্ণনা করা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত, নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছাড়া রিওয়াইয়াত (বর্ণনা) গ্রহণ করা উচিত নয়; বর্ণনাকারীদের দোষত্রুটি তুলে ধরা শুধু জায়েজ নয়, বরং ওয়াজিব! এটি হারাম গিবতেরও অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এটি ক্ষতিকারক বিষয়াদি দূর করে মর্যাদাপূর্ণ শরিয়তের বিধানসমূহকে নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত করার অন্তর্ভুক্ত!” [সহিহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’, পরিচ্ছেদ: ৫] আলি বিন শাকিক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মুবারাক রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৮১ হি.) লোকদের সম্মুখে বলতে শুনেছি, ﺩَﻋُﻮﺍ ﺣَﺪِﻳﺚَ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺛَﺎﺑِﺖٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺴُﺐُّ ﺍﻟﺴَّﻠَﻒَ “তোমরা আমর বিন সাবিতের হাদিস বর্জন করো, কেননা সে সালাফদের গালিগালাজ করে।”(সহিহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ: ৫) বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাকিহ ও উসুলবিদ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যদি মন্দ দায়ির গিবত করে এবং নির্দিষ্টভাবে তার নাম ধরে সমালোচনা করে, যাতে মানুষ তার থেকে সতর্ক হয়, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং কখনো কখনো এটা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ এর মাধ্যমে মুসলিমদের ওপর আপতিত বিপজ্জনক বিষয়কে দূরীভূত করা হয়। যেহেতু তারা তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।”(ফাতওয়ায় নূরুন আলাদ দার্ব, ১৫৮ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: সাহাব (sahab) ডট নেট; সংকলক আব্দুল্লাহ মৃধা ভাই; অনুরূপ ফতোয়া রয়েছে, লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ; লিকা নং: ১২০)
.
পরিশেষে আমরা মহান আল্লাহর কাছে দুআ করছি, তিনি আমাদেরকে যাবতীয় শিরক বিদআত থেকে হেফাজত করুন, আমাদের অবস্থা সংশোধন করুন। আমাদের সকলকে সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী ও দুআ কবুলকারী। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: