ভণ্ডপীরের মুখোশ উম্মোচন​: সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাজিমি সেজদা করা হারাম

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরিয়তে মুসলিমদের পরষ্পরের প্রতি সম্মান ও সম্ভাষণের বৈধ রীতি হল, সালাম, মুসাফাহা ও বিশেষ ক্ষেত্রে মুয়ানাকা করা। অনুরূপভাবে সন্তান বা স্নেহাস্পদ কাউকে কিংবা পিতামাতা, শ্বশুর, শাশুড়ি, মুরব্বি, শিক্ষক, আলেম, বুজুর্গ ইত্যাদি ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে কপালে বা হাতে চুম্বন করা। এ সব ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে বহু দলিল বিদ্যমান রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।
কিন্তু সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে হোক বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে হোক একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন মখলুককে সেজদা করা হারাম।
◈ সেজদার হকদার একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাই তো তিনি মহা গ্রন্থ কুরআনে কেবল তাকে সেজদা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّـهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
“তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; সেজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।” (সূরা ফুসসিলাত: ৩৭)
প্রকৃতপক্ষে এক আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ ইবাদতের সেজদা পাওয়ার যেমন হকদার নয় তেমনি সম্মানের সেজদা পাওয়ারও হকদার নয়।
◈ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِـﻲْ ﺃَﻭْﻓَﻰ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪِﻡَ ﻣُﻌَﺎﺫٌ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦَ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ ﺗَﺴْﺠُﺪُ ﻟِﺒَﻄَﺎﺭِﻗَﺘِﻪَﺍ ﻭَﺃَﺳَﺎﻗِﻔَﺘِﻪَﺍ ﻓَﺮَﻭَّﺃَ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﻳُﻌَﻈَّﻢَ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻗَﺪِﻡَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ ﺗَﺴْﺠُﺪُ ﻟِﺒَﻄَﺎﺭِﻗَﺘِﻪَﺍ ﻭَﺃَﺳَﺎﻗِﻔَﺘِﻪَﺍ ﻓَﺮَﻭَّﺃْﺕُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺃَﻧَّﻚَ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﺗُﻌَﻈَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻮْ ﻛُﻨْﺖُ ﺁﻣِﺮًﺍ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺠُﺪَ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﻟَﺄَﻣَﺮْﺕُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺃَﻥْ ﺗَﺴْﺠُﺪَ ﻟِﺰَﻭْﺟِﻬَﺎ
আব্দুল্লাহ বিন আবী আউফা রা. বলেন, ‘‘মুআয যখন শাম (দেশ) থেকে ফিরে এলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সিজদা করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘একি মুআয?’’
মুআয বললেন: ‘আমি শাম গিয়ে দেখলাম, সে দেশের লোকেরা তাদের যাজক ও পাদ্রীগণকে সিজদা করছে। তাই আমি মনে মনে চাইলাম যে, আমরাও আপনার জন্য সিজদা করব।”
তা শুনে তিনি বললেন: “খবরদার! তা করো না। কারণ, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সিজদা করতে কাউকে আদেশ করতাম, তাহলে মহিলাকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।”
[ইবনে মাজাহ ১৮৫৩, আহমদ ৪/৩৮১, ইবনে হিব্বান ৪১৭১, হাকেম ৪/১৭২, বাযযার ১৪৬১, সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/ ১২০৩]
◈ অন্য হাদিসে এসেছে,
لَا يَصْلُحُ لِبَشَرٍ أَنْ يَسْجُدَ لِبَشَرٍ ، وَلَوْ صَلَحَ لِبَشَرٍ أَنْ يَسْجُدَ لِبَشَرٍ ، لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا، مِنْ عِظَمِ حَقِّهِ عَلَيْهَا ) ، وصححه الألباني في ” صحيح الجامع ” (7725) .
“কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত নয়। কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত হলে আমি মহিলাকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।” (সহিহুল জামে, হা/৭৭২৫)
কাউকে যদি তাজিমি সেজদা (সম্মানের উদ্দেশ্যে সেজদা) করা বৈধ হত, তাহলে সাহাবিগণ দিনরাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সেজদা করতেন। কারণ তারা নি:সন্দেহে অন্য সকল মানুষ থেকে তাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন এবং জীবন দিয়ে ভালবাসতেন।
শুধু তাই নয়, সাহাবিগণও একে অপরকে সেজদা করতেন। তারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর রা. কে সেজদা করতেন। তার পরবর্তী খলিফাবৃন্দ তথা উমর রা., উসমান রা., আলী রা., হাসান রা., হুসাইন রা. সহ সম্মানিত সাহাবিদেরকে সেজদা করতেন। কিন্তু হাদিস, সিরাত বা সাহাবিদের জীবন চরিতে এর একটিও উদাহরণ নেই।
সুতরাং সম্মান প্রদর্শন এবং ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিয়তে কবর, মাজার, পীর-আউলিয়া, রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা স্বামী, পিতামাতা, শ্বশুর, শাশুড়, পীর-বুজুর্গ বা কোনও সম্মানিত ব্যক্তিকে সেজদা করা বা মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করা সম্পূর্ণ হারাম ও শিরকের মাধ্যম। আর যদি ইবাদতের নিয়তে হয় তাহলে তা নি:সন্দেহে বড় শিরক। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।