বিশ্ব মুসলিমদের জন্য আরাফার দিন হল বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন,এই দিনের সুমহান মর্যাদা ও আমলসমূহ

যিলহজ্জ ও কুরবানীর ধারাবাহিক ১২ তম পর্ব।

প্রশ্ন: বিশ্ব মুসলিমদের জন্য আরাফার দিন হল বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন,এই দিনের সুমহান মর্যাদা ও আমলসমূহ কি কি বিস্তারিত বর্ননাসহ।
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
ভুমিকা: আরাফার দিন অতি মর্যাদাসম্পন্ন এক দিন। যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ-কে আরাফার দিন বলা হয়।
আরাফার দিনটিই হজ্জের দিন। আর এর পরের দিন অর্থাৎ, যিলহজ্জের ১০ তারিখ হলো ঈদের দিন।আরাফার ময়দান সৌদি আরবে হেরেম এলাকার বাইরে অবস্থিত। কাবাঘর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, মসজিদুল হারাম রোড হয়ে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফার এই ময়দান। ১০.৪ কি.মি. জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আরাফার ময়দান। চতুর্দিকে সীমানা-নির্ধারণমূলক উঁচু ফলক রয়েছে। আরাফার এ দিনটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিনের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। দ্বীনে ইসলামের পূর্ণতা লাভ, বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। এই দিনের সুমহান মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি আমলঃ

➤(১).দিন ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভ ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহর নে‘মতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন।
.
হাদীছে এসেছে-তারিক বিন শিহাব (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ইহুদী লোক ওমর (রাঃ)-কে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হ’ত তাহ’লে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসাবে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, সে আয়াত কোনটি? লোকটি বলল, আয়াতটি হ’ল-আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসাবে মনোনীত করলাম’
(সূরা মায়েদাহ ৫/৩)। ওমর (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ হয়েছে ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোথায় ছিলেন। সে দিনটি হ’ল জুম‘আর দিন। তিনি সে দিন আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলেন’।(সহীহ বুখারী হা/৪৫, ৪৬০৬)

➤(২) এ দিন হ’ল ঈদের দিন সমূহের একটি দিন।

আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,আরাফাহ দিবস, কুরবানীর দিন ও আইয়ামে তাশরীক (কুরবানী পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার দিন’।(আবুদাঊদ হা/২৪১৯)

ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে দু’টো ঈদের দিনে। তা হ’ল জুম‘আর দিন ও আরাফার দিন।(সুনানে তিরমিযী, হা/২৪৩৮)

➤(৩) আরাফার দিনের রোজা দ্বারা দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হয়:
.
আরাফার দিন সিয়াম পালন করলে এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের গুনাহ মাফ হয়। আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আরাফাহ দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,
‘‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬২]

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অপর বর্ননায় বলেছেন,যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।(ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১০১২ সনদ সহীহ) প্রকাশ থাকে যে, রমাযানের কাযা রোযার নিয়তে কেউ আরাফা অথবা আশূরার দিন রোযা রাখলে তার উভয় সওয়াব লাভ হবে ইন শা আল্লাহ। তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয় অন্যদের জন্য।
.
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ﷺ) এক হাজার দিন ছিয়াম পালনের সমতুল্য মনে করতেন (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৬৮০২,বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৪৮৭ হাদীসটি সহীহ নয় বরং জয়ীফ বিস্তারিত দেখুন সিলসিলা জয়ীফা,৫১৯১ এছাড়াও ইমাম নাসিরুদ্দীন আল-আলবানি রাহি. দয়ীফ জামিউস সগীর গ্রন্থে ৩৫২৩ নং হাদীসে এটিকে ‘দয়ীফ’ বলেছেন।দয়ীফ আত-তারগীব, হা.৬১০)
.
➤(৪)মহান আল্লাহ এই দিনের কসম করেছেন :
.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল-ইয়াউমুল মাও‘ঊদ’ (বুরূজ ৮৫/২) অর্থ-ক্বিয়ামতের দিন; ‘আল-ইয়াউমুল মাশ্হূদ’ (হূদ ১১/১০৩) অর্থ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ’ (বুরূজ ৮৫/৩) অর্থ- জুম‘আর দিন’।(তিরমিযী হা/৩৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮২০১) আল্লাহ বলেন, ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বেজোড়-এর অর্থ আরাফা দিবস এবং জোড়-এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (কুরবানী দিন)’।(আহমাদ হা/১৪৫৫১)

➤(৫) আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও সর্বাধিক পরিমাণ
জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন :
.
এ দিনে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,‘‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আরাফার দিনে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’’(সহীহ মুসলিম,৩৩৫৪; ইবনু মাজাহ ৩০১৪
নাসাঈ: ৩০০৩সিলসিলা সহীহা হা/২৫৫১)ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি আরাফাহ দিবসের ফযীলতের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
.
➤(৬) আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে আল্লাহ গর্ব করেন:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানের ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তিনি তাদের বলেন, ‘‘আমার এই বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে উশকোখুশকো ও ধূলিমলিন অবস্থায়।’’ [আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১১৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৬৮ হাদীসটি সহীহ]
.

➤(৭).আরাফার দিন মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেনঃ
.
আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিনে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। ঐদিন তিনি নিকটবর্তী হন। অতঃপর আরাফাহ ময়দানের হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ ঐ লোকেরা কি চায়’? (মুসলিম হা/১৩৪৮; মিশকাত হা/২৫৯৪; ছহীহাহ হা/২৫৫১)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি প্রথম আকাশে অবতরণ করেন (ইবনু হিববান, ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৬০)।

➤(৮).আরাফার দিনের দু‘আ মর্যাদাপূর্ণ তাই সবার উচিত অধিক পরিমাণে যিকির ও দু‘আ করা : নবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দু‘আ হলো আরাফার দিনের দু‘আ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো,

لاَ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

[লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর]

‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, আর সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান’।(তিরমিযী, হা/৩৫৮৫, হাদীসটি হাসান)
আরাফার ময়দানে এই দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বেশি বেশি পড়েছেন।(মুসনাদে আহমদ :৬৯৬১) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার্র (রহঃ) বলেন, এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আরাফাহ দিবসের দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হবে। আর সর্বোত্তম যিকর হ’ল ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।(ইবনে আব্দুল বার্র, আত-তামহীদ)

ইমাম খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দো‘আ করার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও তাঁর মহত্বের ঘোষণা করা উচিত।(ইমাম খাত্ত্বাবী, শান আদ-দো‘আ, পৃঃ ২০৬) আমাদের উচিত, আরাফার দিনে এই দু‘আটি বেশি পরিমাণে পাঠ করা।
.
➤(৯) আরাফায় আল্লাহ মানুষের কাছ থেকে তাঁর রবুবিয়্যাত তথা প্রভুত্বের স্বীকৃতি নিয়েছিলেন:
.
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আরাফার ময়দানে আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাঁর সন্তানদের বের করে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, ‘‘আমি কি তোমাদের রব নই?’’, তারা (অর্থাৎ, আমরা) সকল মানুষ সেদিন বলেছিলাম, ‘নিশ্চয়ই হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।’ [সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৭২; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৪৫১; আলবানি, সহিহুল জামি’: ১৭০১; হাদিসটি সহিহ]
.
➤(১০) আরাফার দিনেই আমাদের দ্বিন তথা ইসলামকে পূর্ণতা দেওয়া হয়েছিলো:(সূরা আল-মায়েদা, ৫/৩ সহীহ বুখারী, হা/৪৬০৬)উল্লেখ্য, এই দিনটিই ছিলো বিদায় হজের দিন।
.
➤(১১)এই দিন মুসলমান হাজীদের ঈদের দিন:
.
আরাফার দিন প্রত্যেক বছর মুসলমানদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
আমাদের মুসলিম জনগণের ঈদের দিন হচ্ছে আরাফার দিন, কুরবানীর দিন ও তাশরিকের দিন। এ দিনগুলি হচ্ছে পানাহারের দিন’।[ তিরমিজিঃ৭৭৩ আবু দাউদ: ২০৯০ নাসাঈ হা/২০০৪। ইরওয়া ৪/১৩০ হাদীসটি সহীহ]
.
➤(১২) এই দিন এবং এর পরবর্তী আরও ৪ দিনের অন্যতম কাজ হলো, বেশি বেশি তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা; এটি ওয়াজিব
.
একটি সুন্নাহসম্মত তাকবির:
.
اَللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ وَلِلّٰهِ الْحَمْد
.
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
.
(আল্লাহ সবচেয়ে বড়; আল্লাহ সবচেয়ে বড়; আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। আল্লাহই সবচেয়ে বড়; আল্লাহই সবচেয়ে বড়; আর আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা)
.
এটি ইবনু মাস‘উদ (রা.) ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের থেকে প্রমাণিত। [দারা কুতনি, আস-সুনান: ১৭৫৬; আলবানি, ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪; বর্ণনাটির সনদ সহিহ]

আরাফার দিন অর্থাৎ, জিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একাকী বা জামাতে নামাজ আদায়কারী, নারী অথবা পুরুষ—প্রত্যেকের জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক (উপরে বর্ণিত যেকোনো একটি তাকবির) পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষদের উচ্চ আওয়াজে বলতে হবে, আর নারীরা নিচু আওয়াজে বলবে, যাতে শুধু নিজে শুনতে পায়। [ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ২৪/২২০; ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ: ২/৩৬০;
.
হায়েজ নেফাসে থাকা নারীদের জন্য এই তাকবির পাঠ করা জরুরি নয়। কারণ এটি ফরজ নামাজের পর পাঠ করতে হয়। তবে, তাঁরা পড়লে নেকি পাবেন।
.
বি:দ্র: ফরজ নামাজ শেষে কোনো কথা বলা বা নামাজ পরিপন্থী কোনো কিছু করার আগেই অন্তত একবার তাকবির পাঠ করা অনেকের মতে ওয়াজিব। তাই, ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর বিলম্ব না করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা উচিত। মিস হয়ে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র পড়ে নেবে, পাশাপাশি বিলম্ব হওয়ার জন্য ইস্তিগফার পড়বে।
.
➤(১৩) আরাফার দিনে যাবতীয় সকল নেক আমলই
করা যায়, কারণ এটি যিলহজ্জের মহান দশকের অন্তর্ভুক্ত:
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজ্জের (প্রথম) দশ দিনের আমলের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।’’ সাহাবিগণ বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি এর চেয়ে উত্তম নয়?’ তিনি বললেন, ‘‘না। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং এর কোনোটি নিয়েই আর ফিরে এলো না (অর্থাৎ, শহিদ হয়ে গেলো, তার কথা ভিন্ন)।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৯৬৯; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬৫০৫; আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৪৩৮] এই দশদিনের ফরজ ইবাদত অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের তুলনায় অধিক মর্যাদার। এই দশদিনের নফল ইবাদত অন্যান্য মাসের নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। [ইবনু রজব, ফাতহুল বারি: ৯/১৫]
.
➤(১৪).এই দিনে আমরা চাইলে নিম্নলিখিত আমলগুলো করতে পারি:
.
▪️সূরা ফাতেহা পাঠ করা(বুখারী, মিশকাত হা/২১৪২)
▪️সূরা ইখলাস পাঠ করা (বুখারী হা/৫০১৫)
▪️সূরা মূলক পাঠ করা(তিরমিয: ২৮৯০)
▪️আয়াতুল কুরসী'(বুখারী হা/২৩১১)
▪️সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত(বুখারি,৫০১০)
▪️সূরা কাফিরুন পাঠ করা (তিরমিয়ী: ২৮৯৩, ২৮৯৫)
▪️সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়া।(তিরমিযি ২৯০৩)
▪️রাতের বিশেষ আমল : ১০০ আয়াত পাঠ করা
(সিলসিলা সহিহাহ: ৬৪৩ মুসনাদে আহমাদ ১৬৯৫৮)
▪️সিয়াম রাখা বিশেষ করে আরাফার।(নাসায়ি, ২৪১৭)
▪️জীবিত ও মৃত মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা(তাবারানি;৩/২৩৪)
▪️তাসবিহ আহাদিল পাঠ করা(বুখারী হা/ ৬৪০৫)
▪️তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা(ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯২৮)
▪️অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা:(নাসায়ি,১২৯৭)
▪️সাধ্যানুযায়ী দান-সদাকাহ করা(সহিহুল জামি’: ৪৫১০)
▪️অপরকে দ্বীনি ইলম,আমল শিক্ষা দেওয়া (সহীহ মুসলিম,৬৭৯৭)

➤(১৫) আরাফার দিন হাজীদের কাজ হলঃ
.
আরাফা ময়দানে অবস্থান করা: এটিই হ’ল হজ্জের প্রধান দিন। এটি পালন না করলে হজ্জ হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা,) বলেন, الْحَجُّ عَرَفَةُ ‘হজ্জ হ’ল আরাফাহ’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৭১৪।]

৯ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা হ’তে ধীরস্থিরভাবে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করতে করতে ১৪.৪ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে আরাফা ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবেন অতঃপর সহজসাধ্য চেষ্টা করবেন মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলা পর্যন্ত নামেরাহ নামক স্থানে অবতরণ করতে। আর যদি কষ্টের কারণ হয় তাহলে কোন গোনাহ নেই। কারণ নামেরায় অবস্থান করা সুন্নাত, ইহা ওয়াজিব নয়।সুতরাং ময়দানের চিহ্নিত সীমানার মধ্যে সুবিধামত স্থানে অবস্থান নিবেন।[আ‘রাফ ১৭২; আহমাদ, মিশকাত হা/১২১]
.
এবং সেখানে আপনি যোহর হ’তে মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আরাফাতে পৌঁছে সূর্য ঢলার পরে ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি কর্তৃক হজ্জের সুন্নাতী খুৎবা হয়ে থাকে। যা শোনা জরূরী। তারপর সূর্য ঢলে পড়লে যোহর ও আসর সলাত অগ্রিম একত্রিত (জমা তাকদীম) করে দুই দুই রাক’আত আদায় করবেন, যেমন নাবী (সা.) আদায় করেছিলেন। যোহর ও আসরের সালাত এক আযান ও দুই ইক্বামতে ২+২=৪ রাক‘আত জমা ও ক্বসর সহ মূল জামা‘আতের সাথে আদায় করবেন। সম্ভব না হ’লে নিজেরা পৃথক জামা‘আতে নিজ নিজ তাঁবুতে জমা ও ক্বসর করবেন।[সহীহ মুসলিম ১২১৮]
.
আরাফার সিয়াম হাজিদের জন্য নয়, বরং যারা হজ্জ করতে আসেনি তাদের জন্য। আরাফার মাঠে অবস্থানকারী হাজিগণ রোজা রাখবেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় আরাফা দিবসে রোজা রাখেননি,বরং এদিন দুধ পান করেছেন মর্মে সহীহ হাদিস আছে। [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৫১]
.
ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।(মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪, আহমদ শাকের বলেছেন : হাদিসটির সনদ শুদ্ধ)
.
আরাফার ময়দানে অবস্থান করে তওবা-ইস্তিগফার, যিকর ও তাসবীহ সহ আল্লাহর নিকটে হৃদয়-মন ঢেলে দো‘আ করাটাই হ’ল হজ্জের মূল কাজ। এ সময় সহীহ হাদীছে বর্ণিত বিভিন্ন দো‘আ পড়বেন ও কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকবেন।আর যদি রসূল (সা.) থেকে বর্ণিত (দু‘আ মাসূরাহ্) কারো না জানা থাকে তাহলে যে কোন বৈধ দু‘আ নিজ ভাষায় করবেন।অতঃপর সূর্যাস্তের পর আরাফা ময়দানে হ’তে মুযদালেফার দিকে রওয়ানা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে মাগরিবের তিন রাক‘আত ও এশার দু’রাক‘আত ছালাত ক্বছর সহ এক আযান ও দুই ইক্বামতে এশার আউয়াল ওয়াক্তে ‘জমা তাখীর’ করে আদায় করবেন এবং ঘুমিয়ে যাবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন!(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।