বিবাহের পূর্বে যদি পাত্রীপক্ষের সাথে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় বিবাহ করবে না মর্মে চুক্তি করা হয় অতঃপর বিবাহের পর দ্বিতীয় বিবাহ করলে প্রথম স্ত্রী কি বিচ্ছেদ চাইতে পারবে

প্রশ্ন: বিবাহের পূর্বে যদি পাত্রীপক্ষের সাথে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় বিবাহ করবে না মর্মে চুক্তি করা হয়, অতঃপর বিবাহের পর দ্বিতীয় বিবাহ করলে প্রথম স্ত্রী কি বিচ্ছেদ চাইতে পারবেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর যদি পাত্র বিবাহের পূর্বে শরীয়তসম্মতভাবে পাত্রীপক্ষের সাথে এমন শর্তে সম্মত হন যে, প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করবেন না এ শর্ত বৈধ কি না তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রমাণ সমর্থিত শক্তিশালী কথা হলো: বিবাহের সময় স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যে কোনো একজন আরেকজনের উপর যে শর্ত আরোপ করেন, তার মূলনীতি হলো বৈধতা এবং তা পূরণ করা আবশ্যক, যতক্ষণ না তা শরীয়তের পরিপন্থী হয়। এর প্রমাণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:”শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।”(সহীহ বুখারী হা/২৭২১; সহীহ মুসলিম হা/১৪১৮)। সুতরাং যদি কোনো নারী প্রথম বিবাহের সময় শর্তারোপ করেন যে, স্বামী জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না, কিংবা অন্ততপক্ষে তার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না এবং স্বামী যদি এ শর্ত মেনে নিয়ে তার সাথে বিবাহ সম্পাদন করেন, তাহলে এ শর্তের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা তার দায়িত্ব হবে। অতএব তিনি যদি স্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা ও অনুমতি ব্যতিরেকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি একদিকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে গুনাহগার হবেন, অন্যদিকে প্রথম স্ত্রীর জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক বাতিল (ফাসখ) করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।ফলে স্ত্রী চাইলে স্বামীর সাথে বসবাস করতে পারেন অথবা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে বিচ্ছেদ নিতে পারেন।কারণ স্বামী তার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।অথচ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন:”আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”(সূরা বনি ইসরাইল: ১৭/৩৪)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন,”হে মুমিনগণ,তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর।”(সূরা মায়েদাহ; ৫/১)।উক্ত আয়াতের তাফসিরে যায়দ ইবনে আসলাম (রহ.) বলেছেন, এখানে ঐসব চুক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ পরস্পরে একে অন্যের সাথে সম্পাদন করে। যেমন, বিবাহ-শাদী ও ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ইত্যাদি। [তাফসীরে বাগভী সূরা মায়েদার ১ নং আয়াতের তাফসির]। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল- সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।’(সহীহ বুখারী, হা/২৭২১, ৫১৫১; মুসলিম, হা/১৪১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেছেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে যদি তা হালাল হয়। (মুস্তাদরাক হাকেম হা/২৩১০ সহীহুল জামে‘ হা/৬৭১৫)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেছেন, মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না।’ (আবু দাঊদ হা/৩৫৯৪; তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত হা/২৯২৩)।
.
সৌদি সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
واعلم أن الأصل في جميع الشروط في العقود الصحة حتى يقوم دليل على المنع؛ والدليل على ذلك عموم الأدلة الآمرة بالوفاء بالعقد: (ياأيها الذين آمنوا أوفوا بالعقود) [المائدة: 1] ، (وأوفوا بالعهد إن العهد كان مسؤولا) [الإسراء: 34] ، وكذلك الحديث الذي روي عن الرسول ـ عليه الصلاة والسلام : (المسلمون على شروطهم إلا شرطا أحل حراما أو حرم حلالا) . وكذلك قوله ـ عليه الصلاة والسلام : (كل شرط ليس فيه كتاب الله فهو باطل وإن كان مائة شرط) .فالحاصل: أن الأصل في الشروط الحل والصحة، سواء في النكاح، أو في البيع، أو في الإجارة، أو في الرهن، أو في الوقف، وحكم الشروط المشروطة في العقود إذا كانت صحيحة أنه يجب الوفاء بها في النكاح وغيره؛ لعموم قوله تعالى: (ياأيها الذين آمنوا أوفوا بالعقود) فإن الوفاء بالعقد يتضمن الوفاء به وبما تضمنه من شروط وصفات؛ لأنه كله داخل في العقد” .
“আর জেনে রাখুন যে, চুক্তির সমস্ত শর্তের মূলনীতি হলো তা বৈধ (বা হালাল হওয়া),যতক্ষণ না তা নিষিদ্ধ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়; এই নীতির প্রমাণ হিসেবে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ সাধারণ নির্দেশনা প্রদান করে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর)”(সূরা মায়েদাহ: ১),”আর প্রতিশ্রুতি পালন করো;নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”(আল-ইসরা: ৩৪) এছাড়া, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,”মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না।’ (আবু দাঊদ হা/৩৫৯৪) এবং তাঁর বাণী: “এমন কোন শর্ত, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য হবে; এমনকি সে শর্ত শতবার আরোপ করলেও।”(বুখারী হা/২৫৬৩) সুতরাং,সংক্ষেপে:শর্ত সম্পর্কিত মৌলিক নীতি হল বৈধতা। এটি প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে—চাই তা বিবাহ হোক, বিক্রয়-বাণিজ্য, ভাড়া, বন্ধক,কিংবা ওয়াকফ।যদি কোনো চুক্তিতে শর্তগুলো বৈধ হয়, তবে সেই শর্তগুলো পালন করা আবশ্যক। যেমন, বিবাহ চুক্তি বা অন্যান্য চুক্তিতে, শর্ত পূরণ করা হল চুক্তি পূরণের অন্তর্ভুক্ত কারণ,আল্লাহ বলেছেন “হে মুমিনগণ,তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর।”(সূরা মায়েদাহ: ৫/১) চুক্তি ও এর সমস্ত শর্ত একত্রে চুক্তির অন্তর্গত। কারণ এসবই চুক্তির অংশ।”(ইবনু উসাইমীন; আল-শারহুল মুমতি; খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ১৬৩; মিশরীয় সংস্করণ: ৫/২৪১) .
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,إذا اشترط لها أن لا يخرجها من دارها أو بلدها ، أو لا يسافر بها ، أو لا يتزوج عليها : فهذا يلزمه الوفاء به ، فإن لم يفعل فلها فسخ النكاح ، روي هذا عن عمر وسعد بن أبي وقاص وعمرو بن العاص رضي الله عنهم “যদি পাত্রী তার জন্য শর্ত দেয় যে, বিবাহের পর স্বামী তাকে তার বাড়িতে রাখতে হবে অন্য কোথাও নিতে পারবে না, তার সাথে দূরে কোথাও ভ্রমন করবে না।স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করবে না এবং সে তার সাথে কোন ষড়যন্ত্র করবে না তাহলে তাকে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে, এবং যদি তিনি তা না করেন, তবে স্ত্রীর বিবাহ বাতিল করার অধিকার রয়েছে।”(ইমাম ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৮৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
إذا اشترطت أن لا يتزوج عليها فإن هذا يجوز .وقال بعض العلماء : إنه لا يجوز ؛ لأنه حجر على الزوج فيما أباح الله له ، فهو مخالف للقرآن : (فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلاثَ وَرُبَاعَ) النساء/3 .فيقال في الجواب على ذلك : هي لها غرض في عدم زواجه ، ولم تعتد على أحد ، والزوج هو الذي أسقط حقه ، فإذا كان له الحق في أن يتزوج أكثر من واحدة ، أسقطه ، فما المانع من صحة هذا الشرط ؟! ولهذا ؛ فالصحيح في هذه المسألة ما ذهب إليه الإمام أحمد رحمه الله من أن ذلك الشرط صحيح”
“যদি স্ত্রী এই শর্ত আরোপ করেন যে স্বামী তার সঙ্গে বিবাহের বাইরে আর কোনো নারীকে বিবাহ করবেন না, তবে এটি বৈধ। যদিও কিছু আলেম বলেছেন যে এটি বৈধ নয়, কারণ এতে স্বামীকে এমন বিষয়ে বাধ্য করা হয়েছে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য বৈধ। তারা কুরআনের আয়াত উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন: “অতএব তোমরা নারীদের মধ্যে তোমাদের পছন্দমতো বিয়ে করো– দুই, তিন অথবা চারজনকে।”(সূরা নিসা:৩) এই যুক্তির জবাবে বলা যায় যে, বহুবিবাহ না করার বিষয়ে স্ত্রীর আরোপিত শর্তের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এতে তিনি কারও প্রতি কোনো অন্যায় করেননি। বরং স্বামী নিজেই তার বৈধ অধিকার ত্যাগ করেছেন। সুতরাং, যেহেতু স্বামী তার একাধিক স্ত্রীর অধিকার রাখতে পারার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করছেন,তাহলে এই শর্তের বৈধ হওয়ার পথে বাধা কোথায়?অতএব,এই মাসয়ালার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও সঠিক মত হলো ইমাম আহমদের (রহঃ) মত: স্ত্রীর দ্বারা আরোপিত এই শর্ত বৈধ ও গ্রহণযোগ্য।”(ইবনু উসাইমীন;আশ-শারহুল মুমতি’,খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৪৩)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
و لو شرط عليها أن تحافظ على الصلوات الخمس ، أو تلزم الصدق والأمانة فيما بعد العقد ، فتركته فيما بعدُ : فله الفسخ “
“যদি স্ত্রী পূর্বে চুক্তির শর্ত হিসেবে স্থির করে যে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, বা চুক্তির পর সত্যবাদিতা ও আমানতদারী বজায় রাখবে; এবং পরে তা অবহেলা করে—তাহলে স্বামীর জন্য বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার রয়েছে।”(ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ;আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যা; পৃষ্ঠা: ২০৯)
.
সৌদি আরবের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৮৯ হি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:একজন মহিলাকে একজন পুরুষ প্রস্তাব দেয়, এবং মহিলাটি শর্ত করে যে সে ধূমপান করবে না, পুরুষটি তাতে রাজি হয় এবং মহিলা তাকে বিবাহ করে। পরে মহিলা জানতে পারে যে পুরুষটি ধূমপান করে, এখন তার কী করা উচিত?
তিনি উত্তর দেন:الحمد لله . إذا كان الأمر كما ذكر فإن للمرأة المذكورة الخيار في فسخ نكاحها منه ، أو البقاء معه “আলহামদুলিল্লাহ।যদি বিষয়টি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তেমনই হয়, তবে উল্লেখিত মহিলার অধিকার রয়েছে যে সে তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বাতিল করতে পারে, অথবা স্বামীর সাথে থেকে যেতে পারে।”(ফাতাওয়া আশ-শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম” খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১৪৯)
.
ইমাম ইবনু উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “কিছু মহিলা বিবাহের প্রস্তাবের সময় তার স্বামীর কাছে চাকরানী রাখার শর্ত আরোপ করে। এই শর্তটি কি বৈধ? চাকরানীর বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব এটি কখন বৈধ হবে এবং কোন প্রয়োজন বা পরিস্থিতিতে অনুমোদিত? এছাড়াও, এই শর্ত কার্যকর হবে কি হবে না? একইভাবে, যদি কেউ বিবাহের সময় শিক্ষকতা বা চাকুরির শর্ত আরোপ করে, এবং ভবিষ্যতে এই শর্ত বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তখন তার বৈধতা কেমন হবে?”
উত্তরে শাইখ বলেন:
ثبت في الحديث الصحيح عن النبي صلى الله عليه وآله وسلم أنه قال: (إن أحق الشروط أن توفوا بها ما استحللتم به الفروج) ومن المعلوم أن الوفاء بالشروط المذكورة في العقود واجب؛ لقول الله تعالى: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ) [المائدة:1] ولقوله: (وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولاً) [الإسراء:34].فإذا اشترطت المرأة على الزوج شروطاً غير ممنوعة شرعا وجب عليه الوفاء بها، فإن لم يف بها فلها الفسخ ، أي: يكون الأمر بيدها، ومن ذلك إذا اشترطت عليه أن تبقى مدرسة ، أو أن تبقى طالبة ، والتزم بهذا الشرط ؛ فإنه يجب عليه الوفاء بذلك ، ولا يحل له أن يترك الوفاء به .فإن ترك الوفاء به ، ورغبت في الفسخ ، فلها حق الفسخ؛ لأنه لم يف بالشرط.وأما ما يتعلق بالخادم ، فأنا لا أحبذ جلب الخدم إلا عن الضرورة ، فإذا كان هناك ضرورة ، فلا بأس أن يأتي بالخادم .ولكن يلاحظ أنه لا بد من حضور محرمها معها؛ لقول النبي صلى الله عليه وسلم: (لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم) فإذا قال صاحب البيت: ماذا أصنع بمحرمها؟ ليس عندي له شغل؟ قلنا: من الممكن أن يخدمك في البيت بشراء الحوائج اليومية أو غير ذلك ، ومن الممكن أن تدعه حتى هو بنفسه يتكسب ويحصل خيراً لك وله ، المهم ألا تأتي بخادم إلا ومعها محرم “
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত আছে যে তিনি বলেছেন:(শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।”(সহীহ বুখারী হা/২৭২১) এবং এটা জানা কথা যে চুক্তিতে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ করা ফরজ; মহান আল্লাহর বাণীর কারণে: (হে ইমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর) [আল-মায়িদাহ: ১], এবং তাঁর বাণী: আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [আল-ইসরা:৩৪] অতএব, যদি মহিলা স্বামীর কাছে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ নয় এমন শর্ত আরোপ করেন, তবে স্বামীর উপর তা পূরণ করা আবশ্যক। যদি তিনি (স্বামী) তা পূরণ না করেন, তবে তার (স্ত্রীর) বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার রয়েছে, অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি তার হাতে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যদি তিনি শিক্ষক বা ছাত্রী থাকার শর্ত করেন এবং স্বামী এই শর্ত মেনে নেন; তবে তার উপর তা পূরণ করা অবশ্যই করণীয়, এবং তা পূরণ না করা তার জন্য বৈধ নয়।যদি তিনি শর্ত পূরণ না করেন, এবং মহিলা বিবাহ ভঙ্গ করতে চান, তবে তার বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার রয়েছে; কারণ স্বামী শর্ত পূরণ করেননি। আর চাকর-এর বিষয়ে, আমি কেবল প্রয়োজনের সময় ছাড়া দাস/চাকর রাখার পক্ষে নই। যদি কোনো প্রয়োজন থাকে, তবে চাকর/চাকরানী রাখাতে কোনো সমস্যা নেই।তবে এটি মনে রাখতে হবে যে তার সাথে অবশ্যই একজন মাহরাম থাকতে হবে; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে)। যদি বাড়ির মালিক বলেন: আমি তার মাহরামকে দিয়ে কী করব? আমার তার জন্য কোনো কাজ নেই? আমরা বলব:সম্ভব হলে সে বাড়ির দৈনন্দিন কাজ যেমন জিনিসপত্র কেনা বা অন্যান্য সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, তাকে নিজের আয়ের সুযোগ দেওয়া যায়, যা উভয়ের জন্য উপকারী। মোট কথা: মাহরাম ছাড়া কোনো চাকরানী আনা নিষিদ্ধ।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-৯/১২)
.
পাশাপাশি এটি জানা প্রয়োজন যে, স্বামী যদি এ শর্ত ভঙ্গ করেন, তবে শুধু এতটুকু কারণে স্ত্রী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালাকপ্রাপ্ত হবেন না। বরং এ অবস্থায় স্ত্রীর জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের (ফাসখ) অধিকার প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি চাইলে বিচ্ছেদ গ্রহণ করতে পারেন, অথবা শর্ত ত্যাগ করে স্বামীর কাজে সন্তুষ্ট থেকে তার স্ত্রী হিসেবেই থাকতে পারেন।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]
বলেছেন:
“من الشروط الصحيحة في النكاح : إذا شرطت عليه أن لا يتزوج عليها ، فإن وفّى ، وإلا فلها الفسخ ؛ لحديث : ( أَحَقُّ الشُّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ ) .
وكذا لو شرطت أن لا يفرق بينها وبين أولادها أو أبويها ؛ صح هذا الشرط ، فإن خالفه ؛ فلها الفسخ .
ولو اشترطت زيادة في مهرها ، أو كونه من نقد معين ؛ صح الشرط ، وكان لازما ، ويجب عليه الوفاء به ، ولها الفسخ بعدمه ، وخيارها في ذلك على التراخي ، فتفسخ متى شاءت ؛ ما لم يوجد منها ما يدل على رضاها ، مع علمها بمخالفته لما شرطته عليه ؛ فحينئذ يسقط خيارها .
قال عمر بن الخطاب رضي الله عنه للذي قضى عليه بلزوم ما شرطته عليه زوجته ، فقال الرجل : إذاً يطلقننا ؟!
فقال عمر : مقاطع الحقوق عند الشروط . ولحديث : (الْمُؤْمِنُونَ عَلَى شُرُوطهمْ) .
قال العلامة ابن القيم : “يجب الوفاء بهذه الشروط التي هي أحق أن يوفيها ، وهو مقتضى الشرع والعقل والقياس الصحيح ؛ فإن المرأة لم ترض ببذل بضعها للزوج إلا على هذا الشرط ، ولو لم يجب الوفاء به ؛ لم يكن العقد عن تراض ، وكان إلزاماً بما لم يلزمها الله به ورسوله “
“বিবাহের সঠিক শর্তাবলীর মধ্যে একটি হলো: যদি স্ত্রী স্বামীর উপর অন্য বিবাহ না করার শর্ত আরোপ করেন, তবে যদি স্বামী তা পূরণ করেন (তো ভালো), অন্যথায় স্ত্রীর বিচ্ছেদ (ফাসখ) করার অধিকার রয়েছে; কারণ হাদীসে এসেছে: ‘(যে শর্তগুলো পূরণ করা তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী, তা হলো সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা যৌনাঙ্গকে হালাল করেছ)’। অনুরূপভাবে, যদি স্ত্রী শর্ত আরোপ করেন যে স্বামী তাকে তার সন্তানাদি বা তার পিতা মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না, তবে এই শর্তটিও সঠিক হবে। যদি স্বামী তা লঙ্ঘন করেন; তবে স্ত্রীর বিচ্ছেদ (ফাসখ) করার অধিকার রয়েছে। যদি তিনি তার মোহরের মধ্যে কোনো বৃদ্ধি বা নির্দিষ্ট কোনো নগদ অর্থ শর্ত করেন; তবে শর্তটি সঠিক হবে এবং তা বাধ্যতামূলক হবে, এবং স্বামীর উপর তা পূরণ করা অবশ্য কর্তব্য হবে।স্বামী যদি এটি পূরণ না করেন,তাহলে স্ত্রীর জন্য বিচ্ছেদ (ফাসখ) করার অধিকার থাকবে,তবে এই অধিকারটি স্থগিত থাকবে,অর্থাৎ, স্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী যখন খুশি তা প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন কোনো আচরণ লক্ষ্য করা যায় যা স্বামীর প্রতি তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে,অথচ তিনি স্বামীর শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়টি অবগত; তবে সে ক্ষেত্রে তার অধিকারটি বাতিল হয়ে যাবে।উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বলেছেন, যিনি তার স্ত্রীর আরোপিত শর্তের পূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন:”তবে কি তারা আমাদের তালাক দিয়ে দেবে?” উমার (রাঃ) বললেন:”শর্ত পূরণের মাধ্যমে অধিকারের সমাপ্তি ঘটে।” এছাড়া হাদীসে এসেছে:“মুমিনগণ তাদের শর্তাবলীর প্রতি অটল থাকে।” আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:”এই শর্তগুলো পূরণ করা অবশ্যক, কারণ এটি সবচেয়ে উপযোগী এবং শরীয়ত, যুক্তি ও সঠিক কিয়াসের (অনুমানের) দাবি; কারণ নারী এই শর্তের উপর সম্মতি ছাড়া স্বামীর কাছে তার যৌন অধিকার সমর্পণ করতে রাজি হননি। যদি এই শর্ত পূরণ করা ওয়াজিব না হতো, তবে চুক্তিটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হতো না এবং এটি এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হতো যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নারীর উপর বাধ্যতামূলক করেননি।”(ইমাম সালেহ আল-ফাওযান; ‘আল-মুলাখখাস আল-ফিকহী’ খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৪৫-৩৪৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।
Share: