বিপরীত লিঙ্গের বেশভূষা অবলম্বন হারাম এবং এ সম্পর্কিত একটি হাদিসের ব্যাখ্যা

নিম্নোক্ত হাদিসটির ব্যাখ্যা জানতে চাই:
ইবনে ‘আব্বাস রা. বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন। তিনি বলেছেন, “ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।”
ইবনে ‘আব্বাস রা. বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং ‘উমর রা. অমুককে বের করে দিয়েছেন। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬]

উত্তর:
ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন। তিনি বলেছেন: “ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।”
ইবনে ‘আব্বাস রা. বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং ‘উমার রা. অমুককে বের করে দিয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬)

➤ হাদিসের ব্যাখ্যা:

এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।

অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।

❖ ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা কবিরা গুনাহ:

উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও এ মর্মে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদীসে নিম্নে পেশ করা হল:
 ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ثَلاَثٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : الْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ وَالدَّيُّوثُ
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না। তারা হল:
🔰 ১. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান,
🔰 ২.. পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী
🔰 ৩. এবং দাইয়ুস (যে নিজ পরিবারে পর্দাহীনতা, অশ্লীলতা ও পাপাচারকে মেনে নেয় এবং তাদেরকে এ সব নোংরামী থেকে বাঁধা প্রদান করে না।)
(মুসনাদ আহমদ : ৬১৮০)

 খ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবু দাউদ : ৪০৯৮]
 গ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ

“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ)
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।