বাজারে ভিত্তিহীন দুআ-দুরুদ ও কিচ্ছা কাহিনীর বই-পত্র এবং তার ভিত্তিহীন আমলের কিছু উদাহরণ

ভিত্তিহীন দুআ-দুরূদের বই-পত্রঃ নেয়ামুল কুরআন, মকছুদুল মোমিনীন, বেহেশতের কুঞ্জী, বেহেশতের পথ, বেহেস্তি জেওর, রুহুল কুরআন, আমালে কুরআন, আমলে নাজাত, সোলেমানী খাবনামা, নূরানী মজমুয়ায়ে পাঞ্জেগানা, নুরানী পূর্ণাঙ্গ অজিফা, তাবীজাতে রূহুল্লাহ, তাযকেরাতুল আম্বিয়া, কাসাসুল আম্বিয়া, ইউসুফী খাবনামা ও ফালনামা, ফাজায়েলে আমল ও বার চান্দের ফযীলত ইত্যাদি……..।

ভিত্তিহীন কাহিনীঃ আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.), মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.), মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রহ.), উয়াইস কারনী (রহ.), মনসুর হাল্লাজ (রহ.) খাজা খিযির (আ.), ইমাম গাজ্জালী (রহ.), মাওলানা রূমী (রহ.), বায়েজীদ বোস্তামী (রহ.), শাহজালাল (রহ.), শাহ পরাণ (রহ.), বার আউলিয়া (রহ.), তাপসী রাবেয়া বসরী (রহ.), শেখ সাদী (রহ.), বাংলাদেশের সূফী-সাধক ও অলী-আউলিয়া, কারবালায় ইয়াজিদ ও হোসাইন, আমানত শাহ (রহ.), শেখ ফরীদ (রহ.), নিযামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.), ইউসুফ-জোলেখা ও রেশমী রুমাল ইত্যাদি ……..।

ভিত্তিহীন দুরূদঃ দুরূদে হাজারী, দুরূদে লাখী, দুরুদে তাজ, দুরূদে তুনাজ্জিনা, দুরূদে শিফা, দুরূদে আকবার, দুরূদ ফতুহাত, দুরুদে নারিয়া, দুরূদে ছাইফুল্লাহ, দুরুদে যিয়ারত, দুরূদে খাইর, দুরূদে শাফেয়ী, দুরূদে মাহী, দুরূদে রুইয়াতে নাবী, দুরূদে রুহী, দুরূদে বীর, দুরূদে গাওসীয়া, দুরূদে মুহাম্মাদী ইত্যাদি ভিত্তিহীন দূ’আঃ দু’আয়ে গঞ্জল আরশ, দু’আয়ে হাবীবী, দু’আয়ে কাদাহ, দু’আয়ে জ্বামিলা, দুআয়ে পরশমণি, আহাদ নামা ইত্যাদি ভিত্তিহীন খতমঃ খতমে ইউনুস, খতমে তাহলীল, খতমে খাজেগান, সবিনা। খতম, জালালী খতম ইত্যাদি ……..!

এই সকল বই থেকে কিছু উদ্ভট আমলঃ

চলিশ বৎসরের গুনাহ মাফের দু’আঃ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ সূর্য ডুবার সময় নিমের এই দু’আ চল্লিশবার পাঠ করিলে চল্লিশ বৎসরের ছগীরাহ গুনাহ মাফ হইয়া যাইবে।

পরীক্ষায় পাশ করার দু’আঃ এই দু’আটি ১০০০ বার পাঠ করিলে পরীক্ষায় পাশ করা যাইবে ।

পুত্র সন্তান লাভের দু’আঃ এই দু’আ গোলাপ পানি ও জাফরানের কালি দ্বারা লিখিয়া স্ত্রীর গলায় বাধিয়া দিতে হইবে এবং ৭০ বার ইয়া মাতীনু পড়িয়া আঙ্গুলি দ্বারা ঐ গর্ভবতীর পেটের উপর বৃত্তের ন্যায় গোল রেখা টানিবে, তাহা হইলেই পুত্র সন্তান লাভ হইবে।

চাকুরী লাভের তদবীরঃ দুরুদে নারিয়া ৪৪৪৪ বার পড়িলে নিশ্চিত চাকুরী লাভ হইবে। এই দুরূদ শরীফ পাঠে অসংখ্য রহমতের বর্ণনা রহিয়াছে ।

দোকানে বিক্রয় বেশী হওয়ার দু’আঃ এই দু’আ জুম্মার নামাযের পর কারো সাথে কথা না বলিয়া ৭০ বার পড়িতে হইবে। অতঃপর দুআটি পড়িয়া গোলাপ পানিতে ফুঁ দিয়ে তাহা প্রতিদিন দোকানে ছিটাইয়া দিতে হইবে তাহা হইলে বিক্রয় বৃদ্ধি পাইবে ।

বসন্ত রোগ দূর করার উপায়ঃ এই আয়াতটি ৭বার পড়িয়া ৭টি চাউলের উপর ৭বার ফুক দিতে হইবে, অতঃপর এক একটি চাউল এক একজনকে খাইতে দিতে হইবে এবং এতে বসন্ত রোগ হইবে না।

ডাইরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার দু’আঃ এই আয়াতটি ১৪শত বার পড়িয়া পানিতে ফুক দিয়া সবাইকে ৩দিন খাওয়াইতে হইবে অথবা প্রতিদিন ২৮০বার আয়াতটি পড়িতে হইবে অথবা আয়াতটি ৫বার কাগজে লিখিয়া তাবিজ বানাইয়া সাথে রাখিলে ডাইরিয়া দূর হইয়া যাইবে।

কারো চাকুরী নষ্ট করার তদবীরঃ যে অন্ধকার রাত্রিতে মেঘের গর্জন হয় ও বিদ্যুৎ চমকাইতে থাকে, সেই রাত্রিতে নতুন বড় বাসনে সূরা রা’দ লিখিয়া বর্ষার পানিতে ধুইবে; ঐ পানি অন্ধকার রাত্রিতে ঐ ব্যক্তির ঘরের দরজায় ছিটাইয়া দিবে, ইনশাআল্লাহ তার চাকুরী নষ্ট হইয়া যাইবে । এই সূরার ১২ নং আয়াতে মেঘের গর্জন ও বিদ্যুতের বর্ণনা রহিয়াছে বলিয়া মেঘের গর্জন ও বিদ্যুত চমকাইতে থাকার সময় এর আমল বিশেষ কার্যকরী হইয়া থাকে।

মনের বাসনা ও অভাব পূরণের পরীক্ষিত তদবীরঃ কাহারও কিছু বাসনা থাকিলে নিমোক্ত আয়াত কাগজে লিখিয়া স্রোতঃশীলা নদীর পানিতে ভাসাইয়া দিবে ও আয়াতটি পড়িবে ও মন-বাসনার কথা মনে করিবে তাহা হইলেই মনের বাসনা পূর্ণ হইবে ।

স্বামী বশীভূত করার আমলঃ এই আয়াত কোন মিষ্টি দ্রব্যের উপর পড়িয়া ফুক দিয়া স্বামীকে খাওয়াইয়া দিলে ইনশাআল্লাহ স্ত্রীর প্রতি স্বামী আকৃষ্ট হইবে ।

দুই জনের মধ্যে শক্রতা সৃষ্টি করার তদবীরঃ এই নকশার নীচে লিখিবে। অমুক ও অমুকের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হউক এবং ইহা তাবিজ করিয়া পুরাতন দুই কবরের মধ্যস্থলে পুতিয়া রাখিলে তাহাদের মধ্যে শক্রতা আরম্ভ হইবে ।

ইযযত ও সম্মান বৃদ্ধির আমলঃ জাফরান ও মধু একত্রে মিশাইয়া হলুদ রঙের রেশমী কাপড়ের উপর আয়াত লিখিয়া তাবিজের মত করিবে; তৎপর মোম ও কুন্দ্রকুট একত্রে মিশাইয়া তাহাতে আগুন ধরাইবে, ইহাতে যে ধুয়া হইবে সেই ধুয়া তাবিজে লাগাইবে। এই তাবীজ সঙ্গে লইয়া যেখানে যাইবে আল্লাহর ফজলে ইযযত ও সম্মান লাভ করিবে।

সুরা আর-রহমানের তদবীরঃ একটি সুতা নিতে হইবে তারপর সূরা আররহমান পড়িতে পড়িতে যতবার ‘ফাবি…তুকাজ্জিন আসিবে ততবার সুতায় একটি করিয়া গিড়া দিতে হইবে, এভাবে ৩১টি গিড়া হইবে, সেই সূতা স্ত্রীর গলায় বাধিয়া দিলে গর্ভ নষ্ট হইবে না।

দোজখের দরজা বন্ধ করার তদবীরঃ নিজ ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া এই আয়াত পড়িলে দোজখের দরজা তার জন্য বন্ধ হইয়া যাইবে ।

মৃত্যু ঠেকাবার তদবীরঃ এই আয়াত মাগরিবের সময় পড়িলে মাগরিব থেকে ফযর পর্যন্ত আজরাঈল কাছে আসিতে পারিবে না আবার ফযরে পড়িলে আজরাঈল ফযর থেকে মাগরিব পর্যন্ত কাছে আসিতে পারিবে না ।
***সতর্কতাঃ
উপরের এই আমলগুলো উদাহরণ হিসেবে নেয়া হয়েছে মূলতঃ নেয়ামুল কুরআন’ ও ‘মছুদুল মোমিনীন’ বই থেকে। এই বইগুলো লিখেছেন এবং সম্পদনা করেছেন বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে পাশ করা বড় বড় আলেমগণ । যারা মাদ্রাসার সাথে জড়িত আশা করি তারা আমাদেরকে ভুল বুঝবেন না । আমরা যদি কারো মনে আঘাত করে থাকি সেজন্য ক্ষমা প্রার্থি। এখানে মাদ্রাসায় যারা পড়াশোনা করেন তাদের তেমন দোষ নয়। আসলে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে এই সকল ভুল শিক্ষা ও ভুল তথ্য প্রচার এবং আমল হয়ে আসছে যার কারণে এই সকল শিরক ও বিদআতি আমলগুলো একের থেকে অন্যের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আলেমদের থেকে ছাত্ররা পাচ্ছেন এবং ছাত্ররা আলেম হওয়ার পর আবার তাদের থেকে তাদের ছাত্ররা পাচ্ছে । প্রকাশনাগুলোর ও ইসলামের উপর সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে তারাও দিনের পর দিন এই বইগুলো প্রকাশ এবং বিক্রি করে যাচ্ছেন।।

***সংগ্রহ এবং লেখকঃ আসাদ রনি***