পড়ুন দাজ্জালের কি কি ফিতনা হবে

আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিষেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমান ও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী (ছাঃ) আগেই সতর্ক করেছেন। মু’মিন বান্দগন এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ।ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ।ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ।ইমান হারা হবে। দাজ্জাল নিজেকে রাব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মু’মিন ব্যাক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়,পেশাব-পায়খানা করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রব ও আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ক্রটি হতে সম্পর্ন মুক্ত। কোন সৃষ্ট জীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।

দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বেঃ

১) একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমনঃনাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ «দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে»[১]।
তিনি আরো সংবাদ দিয়েছেন যে মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমন করবে। মক্কা ও মদীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দিবে।
২) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নামঃদাজ্জালের সাথে জান্নাত এবং জাহ্নআম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ন বিপরীত। দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্টি পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন। নবী (ছাঃ) বলেনঃ
«দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তাআমি অবগত আছি। তার সাথে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যাটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাত হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে।কারন উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরনথাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে«[২]
৩) দাজ্জাল মৃত ব্যাক্তিকে জীবিত করবেঃদাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানের সহযোগীতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা ও গোমরাহী এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে। নবী (ছাঃ) বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবে হে সন্তান, তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক”[৩]। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।

[১] মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান

[২] মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান

[৩] সহীহুঊল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং-৭৭৫২।

৪) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবেঃদাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিনকে ফসল ফলানোর জন্য বলবে। যমিন ফসল ফলাবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। নবী (ছাঃ) বলেনঃ
« দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহব্বান জানাবে। এতেতারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষন করবে, যমিন ফসল ফলাবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রিতি ঈমান আনয়নের আহব্বান জনাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্ত ধন গুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে«।(মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)

৫) দাজ্জাল একজন মু’মিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবেঃ
নবী (ছাঃ) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবেঃ না। অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল এ সম্পর্কে আমার বিশ্বস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা। ( বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (ছাঃ) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? নবী (ছাঃ) বলেনঃ উক্ত যুবক বলবেনঃ তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও । তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনো ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে লোক সকল! আমার পরে আর করো সাথে এরুপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করেত ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছ।নবী (ছাঃ)বলেনঃ
«এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী» ] (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)
দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনাঃ
সহীহ হাদীছৈর বিবরণ অনুযায়ী দাজ্জালের জন্যে মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই সে প্রবেশ করবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দাজ্জালের হাদীসে এসেছে «অতঃপর দাজ্জাল বললোঃ আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ খাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে ফেরশতাগণ পাহারা দিবে”।(মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)
সে সময়মদীনা শরীফ তিনবার কেঁপে উঠবে এবং প্রত্যেক মুনাফেক এবং কাফেরকে বের করে দিবে। যারা দাজ্জালের নিকট যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে তাদের অধিকাংশই হবে মহিলা। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্যপুরুষেরা তাদের স্ত্রী,মা. বোন. কন্যা, ফুফু এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।
দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
সাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের ম। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বভাবিক দিনের মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক বছরের মত ধীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ না; বরং তোমরা অনুমান কের সময় নির্ধারন করে নামায পড়বে। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃ
নবী (ছাঃ) দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপর রেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল অকল্যানের পথ হতে সতর্ক করেছেন। উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষনগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ননা করেছেন। যাতে মু’মিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে কোনরুপ অসুবিধা না হয়।
ইমাম সাফারায়েনী (রঃ) বলেনঃ প্রতিটি বিজ্ঞমুসলিমের জন্য আবশ্যক তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী- পরিবার এবং সকল নারী পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদীছগুলো বর্ননা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান যামানায় ।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরুপঃ-
১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাঃইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থকে বাঁচার একমাএ উপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয় সুমহান গুনাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে সে অতি সহজেই দাজ্জালকে চিনতে পারবে। সে দেখতে পাবে দাজ্জাল খায় পান করে কিন্তু মুমিনের আকীদা এই যে, আল্লাহ তা’আলা পানাহার ও অন্যান মানবীয় দোষ- গুন থেকে সম্পূর্ণ পবিএ। যে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী সে কখনো আল্লাহ বা রব্ব হতে পারেনা। দাজ্জাল হবে অন্ধ। আল্লাহ এরুপ দোষ ক্রটির অনেক উর্ধে। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অধিকারী মুমিনগণের মনে প্রশ্ন জাগবে যে নিজের দোষ থেকে মুক্ত হতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু হতে পারে? মুমিনের আকীদা এই যে আল্লাহকে দুনিয়ার জীবনে দেখা সম্ভব নয় ।অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন কাফের সবাই দুনিয়াতে দেখতে পাবে।
২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃআয়েশা (রাঃ) বলেনঃ «আমি নবী (ছাঃ) কে নামাযের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেনঃ
«হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন- মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই«।(বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃনবী (ছাঃ) দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ কর্ম দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে। মুমিনের জন্য উত্তম হলো সম্ভব হলে সে সময়ে ,মদীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারন দাজ্জাল তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা।
৪) সূরা কাহাফ পাঠ করাঃনবী (ছাঃ) দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদের সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ « যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে«।(মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবূল ফিতান)
সূরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ সম্ভবতঃ এজন্য হতে পারে যে, এই সূরায় আল্লাহ তাআলা বিস্ময়কর বড় বড় কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মুমিন ব্যক্তি এগুলো গভীভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবেনা। এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বেনা।
দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃ
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। বিস্তারিত বিবরণ এই যে,মক্কা মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারী সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে।তাদের কে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মুকাদ্দিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ) কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ করে বলবেন «তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনো রেহাই পাবেনা”। ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে মুসলমানদের হাতে দাজ্জাল বাহিনী ইহুদী দল পরাজিত হবে। তারপর কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পছনে এক ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করেল পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম ! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেস্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।(নেহায়া, আল ফিতান ওয়াল মালাহিম ১/১২৮-১২৯)
সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, নবী (ছাঃ) বলেনঃ «ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীদেরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেস্টা করবে। কিন্ত কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বা পাথর বলবেঃ হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত«। (সহীহ মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)