পুরুষদের লেবাসের শর্তাবলী

১। লেবাস যেন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ অবশ্যই আবৃত রাখে। যেহেতু ঐটুকু অঙ্গ পুরুষের লজ্জাস্থান। (সহীহুল জামে হা/ ৫৫৮৩)
২। এমন পাতলা না হয়, যাতে ভিতরের চামড়া নজরে আসে।
৩। এমন আঁট-সাট না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়।
৪। কাফেরদের লেবাসের অনুকৃত না হয়।
৫। মহিলাদের লেবাসের অনুরূপ না হয়।
৬। জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়।
৭। গাঢ় হলুদ বা জাফরানী রঙের যেন না হয়। আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আমার গায়ে দু’টি জাফরানী রঙের কাপড় দেখে বললেন, “ এগুলো কাফেরদের কাপড়। সুতরাং তুমি তা পরো না।” (সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৭)
৮। লেবাস যেন রেশমী কাপড়ের না হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪১)
“দুনিয়ায় রেশম বস্তু তারাই পরবে, যাদের পরকালে কোন অংশ নেই।” (সহীহুল বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২০)
হযরত উমার (রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রেশমের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তবে দুই, তিন অথবা চার আঙ্গুল পরিমাণ (অন্য কাপড়ের সঙ্গে জুড়ে) ব্যবহার করতে অনুমতি দিয়েছেন।(সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৪)
তদনুরূপ কোন চর্মরোগ প্রভৃতিতে উপকারী হলে তা ব্যবহারে অনুমতি আছে। (সহীহুল বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৬)
৯। পরিহিত লেবাস (পায়জামা, পেন্ত,লুঙ্গি, কামীস প্রভৃতি) যেন পায়ের গাঁটের নিচে না যায়। হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “গাঁটের নিচের অংশ লুঙ্গী জাহান্নামে।” (সহীহুল বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩১৪)
“মু’মিনের লুঙ্গী পায়ের অর্ধেক রলা পর্যন্ত। এই (অর্ধেক রলা) থেকে গাঁট পর্যন্ত অংশের যে কোনও জায়গায় হলে ক্ষতি নেই। কিন্ত এর নিচের অংশ দোযখে যাবে।” এরূপ তিনবার বলে তিনি পুনরায় বললেন, “আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি তাকিয়েও দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গী (গাঁটের নিচে) ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়।” (সুনান আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৩১)
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় লেবাস ছিল কামীস (ফুল-হাতা প্রায় গাঁটের উপর পর্যন্ত লম্বা জামা বিশেষ)।
(সুনান আবু দাউদ,মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৮)
যেমন তিনি চেক-কাটা চাদর পরতে ভালবাসতেন। (সহীহুল বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩০৪)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথায় ব্যবহার করতেন পাগড়ী। (সহীহুল জামে হা/ ৪৬৭৬)। তিনি কালো রঙের পাগড়ীও বাধতেন। (সুনান আবু দাউদ ৪০৭৭)
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবা তথা সলাফদের যুগে টুপীও প্রচলিত ছিল (সহীহ বুখারী, মুসলিম,সুনান আবু দাউদ ৬৯১)।
যেমন সে যুগে শেলোয়ার বা পায়জামাও পরিচিত ছিল। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও পায়জামা খরিদ করেছিলেন। (ইবনু মাজাহ ২২২০)। তিনি ইহরাম বাঁধা অবস্থায় হাজিদেরকে পায়জামা পরতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২৬৭৮)। অবশ্য লুঙ্গি না পাওয়া গেলে পায়জামা পরতে অনুমতি দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২৬৭৯) ।
ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) যখন লুঙ্গি পরতেন, তখন লুঙ্গির সামনের দিকের নীচের অংশ পায়ের পাতার উপর ঝুলিয়ে দিতেন এবং পেছন দিকটা (গাঁটের) উপরে তুলে নিতেন। এরূপ পরার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এরূপ পরতে দেখেছি।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৭০)
তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট পোশাকের সবচেয়ে পছন্দনীয় রঙ ছিল সাদা। তিনি বলেন, “তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর। কারণ সাদা রঙের কাপড় বেশী পবিত্র থাকে। আর ঐ রঙের কাপড়েই তোমাদের মাইয়্যেতকে কাফনাও (কাফন দাও)।” (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৩৭)
এছাড়া সবুজ রঙের কাপড়ও তিনি ব্যবহার করতেন। (আবু দাউদ ৪০৬৫)
এবং লাল রঙেরও লেবাস পরিধান করতেন। (আবু দাউদ ৪০৭২)
মুহাদ্দেস আলবানী রহঃ বলেন, ‘লাল রঙের কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নয়।’ (মিশকাতের টীকা ২/১২৪৭)
লেবাসে- পোশাকে সাদা সিধে থাকা ঈমানের পরিচায়ক। (আবু দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৫)
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বিনয় সহকারে সৌন্দর্যময় কাপড় পরা ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে কিয়ামতে সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন; ঈমানের লেবাসের মধ্যে তাঁর যেটা ইচ্ছা সেটাই পরতে পারবে।” (সহীহুল জামে ৬১৪৫)
তবে সুন্দর লেবাস পরা যে নিষিদ্ধ তা নয়। কারণ, “আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। বান্দাকে তিনি যে নেয়ামত দান করেছেন তাঁর চিহ্ন (তাঁর দেহে) দেখতে পছন্দ করেন। আর তিনি দারিদ্র ও (লোকচক্ষে) দরিদ্র সাজাকে ঘৃণা করেন।” (সহীহুল জামে ১৭৪২)
প্রিয় রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যার অন্তরে অনু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” বলা হল, ‘লোকে তো চায় যে, তাঁর পোশাকটা সুন্দর হোক, তাঁর জুতোটা সুন্দর হোক। (তাহলে সেটাও কি ঐ পর্যায়ে পড়বে?)’ তিনি বললেন, “আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার তো ‘হক’ (ন্যায় ও সত্য) প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে ঘৃণা করার নাম।” (সহীহুল জামে ৭৬৭৪)
তিনি আরো বলেন, “উত্তম আদর্শ উত্তম বেশভূষা এবং মিতাচারিতা নবুওয়াতের ২৫ অংশের অন্যতম অংশ।” (সহীহুল জামে ১৯৯৩)।
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তির মাথায় আলুথালু চুল দেখে বললেন, “এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা মাথার এলোমেলো চুলগুলোকে সোজা করে (আঁচরে) নেয়!” আর এক ব্যক্তির পরনে ময়লা কাপড় দেখে বললেন, “এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা ময়লা কাপড়কে পরিষ্কার করে নেয়!” (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৫১)
আবুল আহওয়াস বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এলাম। আমার পরনে ছিল নেহাতই নিম্নমানের কাপড়। তিনি তা দেখে আমাকে বললেন, “তোমার কি মাল-ধন আছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ বললেন, “কোন শ্রেণীর মাল আছে?” আমি বললাম, ‘সকল শ্রেণীরই মাল আমার নিকট মজুদ। আল্লাহ আমাকে উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ও ক্রীতদাস দান করেছেন।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ যখন তোমাকে এত মাল দান করেছেন, তখন আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ও অনুগ্রহ তোমার বেশ-ভূষায় প্রকাশ পাওয়া উচিত।” (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৫২)
তিনি বলেন, “যা ইচ্ছা তাই খাও এবং যেমন ইচ্ছা তেমনই পর, তবে তাতে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও অহংকার।” (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৮০)
সূত্রঃ স্বলাতে মুবাশশির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)