পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা

পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতাঃ-
প্রথম প্রমাণঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿31﴾
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আন-নূর:৩১)
উদ্ধৃত এই আয়াত থেকে নারীর জন্য পর্দার ‌অপরিহার্যতা -নিম্ন প্রণালীতে- প্রতিভাত হয়।
(১) আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে অবৈধ ও হারাম পন্থায় প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা এবং ঐ সমস্ত ভূমিকা থেকে দূরে থেকে সতীত্ব সংরক্ষণের নিদের্শ দিয়ছেন, যা পরিণতিতে ব্যভিচার সংঘটিত হওয়ার সকায়ক হয়।
সর্ব শ্রেণীর লোকই জানে যে, নারীর জন্য চেহারা ঢাকা তার সতীত্ব সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম। কারণ নারীর চেহারা অনাবৃত রাখা হলে, পরপুরুষেরা তার দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকায় এবং তার অঙ্গশ্রী দেখে চোখের দ্বারা যৌনানন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়। পরিণামে সেই নারীর সাথে বাক্যালাপ, পত্রালাপ ও সাক্ষাত ইত্যাদি অবৈধ পন্থা অবলম্বনের কারণ হয়ে দাড়ায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
العينان تزنيان و زناهما النظر
(মানুষের) চক্ষু দুটিও যেনা করে, আর চক্ষুদ্বয়ের যেনা হল দৃষ্টিপাত করা।
নবীজী পরিশেষে বলেন: যেনার সকল স্তর পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করত: সর্বশেষে গুপ্তাঙ্গ যেনার অতিক্রান্ত স্তরসমূহকে সত্যায়ন করে। অর্থাৎ, যৌন মিলনের মাধ্যেমে যেনার পরিসমাপ্তি ঘটে। অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, অর্থাৎ- গুপ্তাঙ্গের যেনা সংঘটিত হয় না। সুতরাং, যখন মুখমন্ডল আবৃত রাখা যৌনাঙ্গ হেফাযতের মাধ্যম সাব্যস্ত হল, তখন প্রতীয়মান হয় যে, মুখমন্ডল আবৃত রাখা শরিয়তের নির্দেশিত। কেননা উদ্দেশ্যের যা হুকুম মাধ্যমেরও সেই হুকুম।
দ্বিতীয় প্রমাণঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
“তারা যেন বক্ষদেশে নিজদের ওড়না ফেলে রাখে” ।
‘খুমুরুন’ শব্দটি ‘খিমার’ শব্দের বহুবচন। ‘খিমার’ ঐ কাপড়কে বলা হয় যা নারীরা মাথায় ব্যবহার করে এবং তাদ্বারা গলা ও বক্ষ পানি ভরা কুপের ন্যায় আবৃত হয়ে যায়। সুতরাং, গলা আবৃত করার নির্দেশের দ্বারা চেহারা আবৃত করার র্নিদেশ প্রমাণিত হয়। কেননা, যখন গলা ও বক্ষ পর্দার আওতাধীন, তাহলে মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত হওয়া অধিক যুক্তিযোগ্য। কারণ, নারীর মুখমন্ডল তার যাবতীয় রূপ ও সৃষ্টিগত সৌন্দর্যের মূল উৎস ও আকর্ষণ। এ কারণেই একজন নারীর সমগ্র দেহ অপেক্ষায় তার মুখমন্ডল দেখলে নৈতিক বিপর্যয় ঘটার আশংকা বেশি থাকে। তাছাড়া লোক সমাজে নারীর সৌন্দর্য তার চেহারার সৌন্দর্যের উপরেই নির্ভর করে, অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রতি মানুষ তেমন খেয়াল করে না। আলোচনার সময় যদি কেউ বলে, অমুক মহিলা রূপবতী-সুন্দরী, তখন শ্রোতা বিনা দ্বিধায় সে মহিলার চেহারার সৌন্দর্যই বুঝে নেয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, পারস্পরিক আলাপ আলোচনায় নারীর চেহারার সৌন্দর্যই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এরপর একটু চিন্তা করলে উপলব্ধি করা যাবে যে, প্রজ্ঞা ভিত্তিক ইসলামি শরিয়ত গলা ও বক্ষদেশকে পর্দার অন্তর্ভুক্ত করে মুখমন্ডলের ন্যায় ফিৎনা ও বিপর্যয়ের উৎসকে কেমন করে পর্দা বহির্ভূত করে খোলা রাখার অনুমতি দিতে পারে? (না তা কখনও হতে পারে না বরং মুখমন্ডল খোলা রেখে পুরোপুরী পর্দা পালন হতেই পারে না।)
৩- আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য প্রকাশ করার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেনঃ
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
“এবং তারা যেন প্রকাশ না করে তাদের সৌন্দর্য ততটুকু ভিন্ন যতটুকু স্বভাবত:ই প্রকাশ হয়ে পড়ে”।
অর্থাৎ নারীর কোন সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য পুরুষের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়। অবশ্য যে সব সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আপনা আপনিই প্রকাশ হয়ে পড়ে তার কথা ভিন্ন, যেমন বোরকা, লম্বা চাদর ইত্যাদি। এগুলো প্রকাশ করাতে গুণাহ নেই। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন: ততটুকু ভিন্ন যতটুকু স্বভাবতই প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি বলেননি যতটুকু তারা প্রকাশ করে। আবার এ আয়াতেই আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য প্রদর্শন করার নিষিদ্ধতা ঘোষণা করেছেন: ‌‍‌‍‌
এবং তারা যেন তাদের স্বামী (আয়াতে উল্লেখিত মোট বারজন ব্যতিক্রমভুক্ত লোকদের) ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”।
উক্ত আয়াতে দুই জায়গায় ‌‌‌‌‌‍যীনাত’ শব্দ ব্যবহার করে ব্যতিক্রম ব্যক্তিদের বিধান বণর্না দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যীনাত (সাজ-পোষাক) দুই প্রকার, দ্বিতীয়টি প্রথমটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যথা- প্রথম: যীনাত যা প্রকাশ করা ব্যতিরেকে এমনিই প্রকাশ হয়ে পড়ে। যেমন- উপরের কাপড়, বোরকা ইত্যাদি ওগুলো ঢেকে রাখা অসম্ভব (তাই তা দেখা ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত) দ্বিতীয়: যা অপ্রকাশমান (গোপনীয়) অর্থাৎ, যে সাজের মাধ্যমে নারী নিজেকে সুসজ্জিত করে, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে-স্বভাবতই প্রকাশ পায় না। এ দ্বিতীয় প্রকার যীনাত দর্শন করা সকলের জন্য জায়েয এবং দ্বিতীয়টার বেলায় ব্যতিক্রম করার মধ্যে কোন ফায়েদা থাকে না।
৪-আল্লাহ তাআলা নারীর আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এমনসব পুরুষদের কাছে প্রদর্শন করার অনুমতি প্রদান করেন, যারা নির্বোধ যাদের প্রবৃত্তিগত কোনো আগ্রহ ও উৎসুক্যই নেই। আর তারা হল দাস, কাম প্রবণতাহীন বৃদ্ধ এবং এমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, এখনও সাবালকত্বে পৌঁছেনি এবং নারীদের গোপনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
‌উপরোক্ত বণর্না থেকে দুটি মাসআলা জানা যায় ।
(ক)রমণীর আভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জা উল্লেখিত দুই প্রকারের (দাস ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক) পুরুষ ব্যতীত কারো সামনে প্রকাশ করা জায়েয নয়।
(খ) পুরুষ পরনারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে ফিৎনায় লিপ্ত হওয়ার আশংকায় পর্দা সম্পর্কিত নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, নারীর মুখমন্ডল যাবতীয় সৌন্দর্যের প্রতীক এবং ফিৎনা ও ফাসাদের উৎস। তাই মুখমন্ডল ঢাকা ওয়াজিব, যাতে কোনো পুরুষ তার প্রতি তাকিয়ে আসক্ত হয়ে ফেতনায় লিপ্ত না হয়।
৫- আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ
নারীরা যেন সজোরে পদচারণ না করে যার ফলে অলংকারাদির আওয়াজ ভেসে উঠে এবং তাদের বিশেষ সাজ-সজ্জা (পুরুষের কাছে) প্রকাশ হয়ে পড়ে।
অত্র আয়াতে নারীকে সজোরে পদচারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যাতে তাদের পায়ের অলংকার, বেড়ী, ঝুমুর ইত্যদি সম্বন্ধে বেগানা পুরুষ অবহিত হতে না পারে। সুতরাং, ফেৎনা সংঘটিত হওয়ার আশংকায় মহিলাকে যখন এ ভাবে চলাফেরা না করতে বলা হয়েছে, তখন চেহারার ন্যায় বিপদ সংকুলস্থান খোলা রাখা কিভাবে জায়েয হতে পারে?
লক্ষনীয় যে, এ দুটির মধ্যে কোনটি অধিক ফেৎনা সৃষ্টিকারী ও ধ্বংসাত্মক। রমণীর পায়ের অলংকারের শব্দ? যদ্বারা রমণী যুবতী না বৃদ্ধ, সুশ্রী না কুশ্রী কিছুই অনুভব করা যায় না, নাকি তার সৌন্দযের্র প্রতীক উম্মুক্ত চেহারা? বিবেক-বুদ্ধি ও অনুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তি বর্গের অজানা নয় যে, এ দুটির কোনটি ফেৎনা সৃষ্টির কারণ হতে পারে এবং কোনটি খোলা না রেখে সম্পূর্ণ আবৃত রাখার অগ্রাধিকার রাখে। নি:সন্দেহে বলা যায়, এটি হবে চেহারা। কারণ, উক্ত আয়াতে পায়ের সাজ-সজ্জা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। নারীর চেহারা প্রদর্শন করানোতো আরও কঠোর এবং সন্দেহাতীতভাবে হারাম হবে।
তৃতীয় প্রমাণঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই।…. তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা”। (সূরা নূর-৬০)
আলোচ্য আয়াতে পর্দার অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমন্ডল ইত্যাদি আবৃত রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে রাখার অনুমতি শুধুমাত্র বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মন্ডল বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার হুকুম (নির্দেশ) বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে পৃথক করে উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আয়াতে বলা হয়েছে:
غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ
অর্থাৎ যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, বস্ত্র খুলে রাখে, তবে তাদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু যুবতী ও তরুণী নিজ নিজ লাবণ্যময় মুখমন্ডল প্রদর্শন করে পুরুষের সামনে নেচে বেড়ানোর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পরপুরুষকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করাই হয়ে থাকে। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা কদাচিত হয়ে থাকে যার উপর কোন হুকুম হয় না। এতে প্রমাণিত হল যে, বিবাহের যোগ্য যুবতী তরুণীর জন্যে মুখমন্ডল সহকারে পরিপূর্ণ পর্দা করা অপরিহার্য।
চতুর্থ প্রমাণঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মহিলাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে যেন জিলবাব তথা চাদর দ্বারা মাথার উপর দিক থেকে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে বের হয়, তবে একটি চোখ খোলা রাখবে। সাহাবির তাফসীর নি:সন্দেহে শরয়ি দলীল । এমনকি কোনো কোনো আলেম সাহাবির তাফসীরকে হাদীসে মারুফের (উচ্চ ও ক্রটিমুক্ত হাদীস) সমতুল্য মনে করেন। সাহাবির তাফসীরে রাস্তা দেখার জন্যেই একটি চোখ খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। নিষ্প্রয়োজনে চক্ষু উম্মুক্ত রাখা বৈধ হবে না।
আরবি পরিভাষায় জিলবাব বলতে বড় চাদরকে বুঝানো হয়, যা ওড়নার উপর বোরকার পরিবর্তে পরিধান করা হয়।
নবী পত্নী উম্মে সালামা (রা:) বলেন, আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর থেকে আনসারি মহিলাগণ (মদীনা শরীফের স্থায়ী অধিবাসিনী) কালো চাদর পরে অতি ধীরস্থিরতার সাথে ঘর হতে বের হতেন। মনে হত যেন তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে। সাহাবি আলী (রা:) এর শিষ্য আবু উবাইদাহ আস-সালমানী, কাতাদাহ প্রমুখ বলেন, মুমিন লোকদের স্ত্রীগণ মাথার উপর থেকে চাদর এভাবে পরিধান করত, চলার পথে রাস্তা দেখার জন্যে চক্ষু ব্যতীত শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেত না।
পঞ্চম প্রমাণঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آَبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ وَاتَّقِينَ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا
‌‍ নবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোন অপরাধ নেই। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী। (সুরা আহযাব-৫৫)
ইবনে কাসীর (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে গাইরে মাহরাম (ইসলামি শরিয়তে যাদের সাথে বিবাহ অনুমোদিত)-এর সাথে পর্দা করার নির্দেশ দানের পর এটিও বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, আত্মীয় মাহরামদের সাথে পর্দা করা ওয়াজিব নয়। যেমন, সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে:
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ
“তারা যেন তাদের স্বামী ছাড়া অন্যের সামনে তাদের সাজ-সজ্জা প্রকাশ না করে”।
পরপুরুষের সামনে পর্দার অপরিহার্যতার উপর পবিত্র কোরআন থেকে এই চারটি দলীল পেশ করা হল শুধু প্রথম আয়াতেই এ বিষয়ের উপর পাঁচটি প্রণালীতে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। (যা আমাদের জন্যে যথেষ্ট।)
দ্বিতীয়তঃ
সুন্নাহর আলোকে পর্দার অপরিহার্যতাঃ-
প্রথম দলীলঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
إذا خطب أحدكم امرأة فلا جناح عليه أن ينظر منها إذا كان إنما ينظر إليها لخطبة و إن كانت لا تعلم ( رواه أحمد)
“তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না”। (মুসানদে আহমাদ)
মাজমাউজ্জাওয়ায়েদ গ্রন্থে উক্ত হাদীসকে ত্রুটিমুক্ত ও বিশুদ্ধ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে, তাহলে গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গুনাহগার হবে। অনুরূপ যারা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে নয় বরং মহিলার রূপ লাবণ্য দর্শনের স্বাদ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে দেখে থাকে, তারাও পাপাচারীদের দলভুক্ত হবে।
প্রশ্ন হতে পারে, হাদীসে মহিলার কোন অঙ্গটি দর্শনীয় তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বক্ষদেশ, হাত, পা ইত্যাদি যে কোনো একটি অঙ্গের দর্শনওতো উদ্দেশ্য হতে পারে।
উত্তর: সৌন্দর্য ও রূপ উপলব্ধিকারী প্রস্তাব দাতার পক্ষে পাত্রীর চেহারার সৌন্দর্য দেখাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কারণ, চেহারাই হল, নারী সৌন্দর্যের প্রতীক। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য অন্বেষনকারী প্রস্তাবদাতা নারীর চেহারাই দেখে থাকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। (নারীর দর্শনীয় অঙ্গটি চেহারাই হয়ে থাকে)
২য় দলীলঃ
রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে ঈদগাহে ঈদের নামায আদায় করার আদেশ প্রদান করলে জনৈকা নারী বলে উঠলেন। হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের করো কারো পরিধান করার মত চাদর-কাপড় নেই (আমরা কিভাবে জনসমাবেশে ঈদের নামায আদায় করতে যাব।) প্রত্যুত্তেরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যার চাদর নাই তাকে যেন অন্য বোন পরার জন্যে চাদর দিয়ে দেয়। (বুখারী-মুসলিম)
উক্ত হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীরা কোন অবস্থাতেই চাদর পরিধান না করে গৃহ থেকে বের হতেন না, এমনকি চাদর ব্যতীত ঘর হতে বের হওয়াকে অসম্ভব মনে করতেন। এ কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দানের পরও তারা চাদর ছাড়া ঈদগাহে যাওয়াকে সমীচীন মনে করেননি। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে এরশাদ করেন, সে যেন তার অন্য বোন হতে ধার নিয়ে হলেও চাদর পরিধান করে ঘর থেকে বের হয়। লক্ষনীয় যে, রাসূল বিনা চাদরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করেননি। অথচ ঈদ গাহে গিয়ে নামায আদায় করা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ইসলামি শরিয়ত সম্মত বিধান। যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) শরিয়ত সম্মত কাজের জন্যেও চাদর ব্যতীত (পুরাপুরী পর্দা করা ব্যতীত) ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেননি, তাহলে অনৈসলামিক, অহেতুক, শরিয়ত অসম্মত কাজে চাদর ব্যতীত বেপর্দায় যাওয়ার অনুমতি কিভাবে দেওয়া যেতে পারে? নি:সন্দেহে তা অবৈধ হবে। বরং নারীর পক্ষে বাজারে মার্কেটে চলাফেরা করা এবং পরপুরুষের সাথে খোলা-মেলা ভাবে ঘুরে বেড়ানো অহেতুক কাজ যা প্রকৃত পক্ষে তাদের জন্যে অকল্যাণকর।
বস্তুত: আয়াতে ও হাদীসে চাদর পরিধান করার নির্দেশ এ কথাই প্রমাণ করে যে, নারীর জন্যে মুখমন্ডলসহ পরিপূর্ণ পর্দা করা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত।
তৃতীয় দলীলঃ
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে উম্মত জননী আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত আছে:
كان رسول الله يصلي الفجر معه نساء من المؤمنات متلفعات بمروطهن ثم يرجعن إلى بيوتهن ما يعرفهن أحد من الناس.
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সালাতে কিছু সংখ্যক মহিলা চাদর পরিহিত অবস্থায় পরিপূর্ণ পর্দা করত: তাঁর পিছনে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে আসতেন। সালাত শেষে আপন আপন গৃহে ফেরার পথে তাদেরকে চেনা যেত না।
আয়েশা (রা:) আরো বলেন : আজ মহিলাদের আচরণ যেভাবে আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যদি রাসূলের জীবদ্দশায় তা প্রকাশ পেত, তাহলে রাসূল মহিলা সম্প্রদায়কে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন- ইহুদীরা (বনী ইসরাঈল) তাদের স্ত্রীলোকদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:)ও এ ধরনের বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখিত হাদীসে দুই পদ্ধতিতে পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়েছে:-
(ক) ইসলামের সবোর্ত্তম যুগের সাহাবায়ে কেরাম যারা আল্লাহ তাআলার নিকট শিষ্টাচারী, সদাচারী এবং ঈমানি পরাকাষ্ঠাসহ সৎকর্মের আদর্শ প্রতীক ছিলেন। তাদের স্ত্রীগণ, পরিপূর্ণ পর্দা করে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে অভ্যস্ত ছিলেন। তারাই আমাদের অনুসরণীয় আদর্শ। অনুরূপভাবে তারাও অনুসরণীয় যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন:
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿100﴾
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা-১০০)
যখন ইসলামের স্বর্ণ যুগের সাহাবা পত্নীগণ চলাফেরায় বেশ-ভূষায় ভদ্রতা-নম্রতায় ইসলামি কৃষ্টি কালচারে এভাবে অভ্যস্ত ছিলেন, যারা তাদের পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়েছেন, তখন তাদের ন্যায় মহান ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মহিলাদের পথ প্রত্যাখ্যান করে আমরা কিভাবে অসভ্যতা ও অপসংস্কৃতির বশ্যতা স্বীকার করবো? যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সতর্ক উচ্চারণ করে বলেন:
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ। (সূরা নিসা-১১৫)
(খ) উম্মত জননী আয়েশা রা: ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. যারা ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী ও সূক্ষ্ম তত্ত্ববিদ ছিলেন তারা আল্লাহর বান্দাদের একান্ত হিতাকাঙ্খী হওয়ার ব্যাপারে কোনো সংশয় থাকতে পারে না। এ দুই মহান ব্যক্তিত্ব এ অভিমত পেশ করেন যে, আমরা এ যুগে মহিলাদের যে আচরণ পর্যবেক্ষণ করছি এ দৃশ্য যদি আল্লাহর রাসূল দেখতেন তাহলে মহিলা সম্প্রদায়কে মসজিদে গমনাগমন থেকে পূর্ণভাবে নিষেধ করতেন, অথচ তা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের অন্তর্ভুক্ত। সে সময় মহিলাদের এ ধরনের আচরণের ফলে মসজিদে আগমন না করার নির্দেশ প্রদানের উপক্রম হল। এবার চিন্তা করে দেখুন আমাদের যুগ যে যুগে সর্বক্ষেত্রে চরিত্রহীনতা, নির্লজ্জতা, উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা এবং ঈমানী দূর্বলতার ব্যাপক পরিস্থিতিতে মহিলাদের জন্যে পর্দার কি ধরনের নির্দেশ হতে পারে?
বস্তুত: উম্মত জননী আয়েশা (রা:) ও আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) এর উপলব্ধি যা শরিয়তের দলীল হিসাবে স্বীকৃত । যে সব বিষয় থেকে শরিয়ত নিষিদ্ধ বিষয় উদ্ভুত হয় তাও নিষিদ্ধ (এতে প্রমাণিত হল যে, নারীর মুখমন্ডল উম্মুক্ত রাখা হারাম, যারা এর বিরুদ্ধাচারণ করবে তারা হারামে পতিত হওয়ার অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
চতুর্থ দলীলঃ
রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাস) বলেন:
من جر ثوبه خيلاء لم ينظر الله إليه يوم القيامة
“যে ব্যক্তি অহংকার বশে (পায়ের গোড়ালীর নীচে) কাপড় ঝুলিয়ে চলবে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করবেন না”।
নবী পত্নী উম্মে সালামা জিজ্ঞাসা করলেন, নারীগণ চাদরের নিম্নাংশ কতটুকু পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখবে? রাসূল বললেন, অর্ধহাত পরিমাণ। উম্মে সালামা আবারও প্রশ্ন করলেন এ অবস্থায় মহিলার পা দৃষ্টিগোচর হবে। তদুত্তরে রাসূল বললেন- তাহলে একহাত পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখবে এর অধিক নয়।
এ হাদীসে প্রমাণিত হল যে, মহিলার পা আবৃত রাখা ওয়াজিব, যা সাহাবি পত্নীগণের অজানা ছিল না। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মহিলার পা দর্শনে যতটুকু ফিৎনার আশংকা রয়েছে তার চাইতে হাত ও মুখমন্ডল দর্শনে ফিৎনার আশংকা বেশি । অতএব পা দর্শন যা ফিৎনার নগণ্যতম মাধ্যম তাতে সতর্কবাণীর ফলে হাত ও মুখমন্ডল দর্শন যা সন্দেহাতীতভাবে অধিকতর ফিৎনাস্থল তার বিধান স্পষ্ট হয়ে গেল। আপনারা ভালোভাবে অবগত আছেন যে, প্রজ্ঞাভিত্তিক সুসম্পূর্ণ নিখুত শরিয়তে মহিলার পা যা ফিৎনার নগণ্যতম পন্থা তাতে পর্দার নির্দেশ দিয়ে হাত ও মুখমন্ডল যা ফিৎনার মূল উৎস তা উম্মুক্ত রাখার অনুমতি প্রদান করবে, তা কস্মিণকালেও হতে পারে না। কেননা, এটি মহাবিজ্ঞ আল্লহ রাব্বুল আলামীনের নিখুত আইন-কানুন ও বিধি- বিধানের পরিপন্থী।
পঞ্চম দলীলঃ
إذا كان لإحداكن مكاتب وكان عنده ما يؤدي فلتحتجب منه
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাস) বলেন:
“যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে। তাহলে সে নারী কৃতদাসের সামনে পর্দা করবে”।
(আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ। ইমাম তিরমিজি একে সহীহ বলেছেন।)
উক্ত হাদীসে পর্দার অপরিহর্যতা এভাবে প্রমাণিত হয় যে, কৃতদাস যতদিন তার দাসত্বে বা মালিকানায় থাকবে। ততদিন তার সামনে মুখমন্ডল খোলা রাখা বৈধ হবে। যখন দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে, তখন পর্দা করা ওয়াজিব। কারণ, এখন সে গাইরে মাহরাম বলে গণ্য হবে। এতে প্রমাণিত হল, মহিলার জন্যে পরপুরুষের সামনে পর্দা করা অপিরহার্য।
ষষ্ঠ দলীলঃ
উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বলেন,
كان الركبان يمرون بنا و نحن محرمات مع الرسول فإذا حاذونا سدلت إحدانا جلبابها على وجهها من رأسها فإذا جاوزنا كشفناه.
আমরা রাসূলের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রস করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল খুলে দিতাম। (আহমাদ)