নামাযের শেষে মাথায় হাত দেওয়া কি হাদিস সম্মত?

উত্তরঃ না, নামাযের সালাম ফিরিয়ে মাথায় হাত দেওয়ার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই। যেই কথাগুলো আছে সেইগুলো জাল নয়তো জয়ীফ। সুতরাং, মাথায় হাত দিয়ে বানোয়াট কোন দুয়া পড়বেন না। ফরয নামায শেষে সহীহ হাদীস সম্মত নিচের দুয়াগুলো পড়বেনঃ
ফরয সালাত শেষে কি দুয়া পড়তে হবে?

বিসমিল্লাহ। ওয়ালহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা’দ।
চলুন জেনে নেই ফরয নামাযে সালাম ফিরানোর পরে মাসনুন (রাসুলুল্লাহ সাঃ নিয়মিতকরতেন এমন সুন্নাহ) দুয়া ও যিকির কোনগুলি….

ফরযনামাযের পরের দুয়াগুলো যদি কেউ পড়ে তাহলে ফরয নামায শেষ করেই পড়তে হবে, অন্যান্যসুন্নত/নফল নামায পড়ে নয়। আর যিকিরগুলো আরবীতেই করতে হবে। উল্লেখ্য এই সময়মাথায়/কপালে হাত দিয়ে দুয়া করা যাবেনা, বা আকাশের দিকেও তাকানোর প্রয়োজন নেই।
এইদুয়াগুলো করা সুন্নত, ফরয নয়। তবে চেষ্টা করা উচিত, সবার নিজেদের সময় ও সাধ্য অনুযায়ীযতগুলো দুয়া সম্ভব হয় তার উপর আমল করা। যার পক্ষে যতগুলো সম্ভব ও ভালো লাগে।

রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ফরয সালাত শেষকরে যেই দুয়াগুলো পড়তেনঃ
১. “আসতাগফিরুল্লা-হ” – ৩ বার ।

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ

অর্থঃ হে আল্লাহ!আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

৩.“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – ১ বার।

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

অর্থঃ হেআল্লাহ্‌! তুমি শান্তিময়, তোমারকাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
সাওবান(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “রাসুল (সাঃ) যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবারইস্তেগফার পড়তে্ন অর্থাত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মাআনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতাইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”।
মুসলিম১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১, তিরমিযী ১/৬৬।

৪.“লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দা’হু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকুওয়া লাহুল হা’মদু, ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িনক্বাদীর” – ১ বার। (মুসলিম ১২৪০)

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَـرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

৫. “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা” – ১ বার। এই দুয়া ইচ্ছাকরলে নামাযের ভেতরে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরার সময়ও করা যায়।

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ

অর্থঃ হেআল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্যকর”।
এই দুয়াটাএতো গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক সাহাবীকে এই দুয়া পড়ার জন্য বিশেষভাবেওয়াসীয়ত করে যান।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে বলেছিলেনঃ ‘‘হে মুয়াজ! আল্লাহর কসমআমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যেতুমি প্রত্যেক সালাতের পর এই দুয়া করা ত্যাগ করবেনা, “আল্লাহুম্মাআ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।”
আবু দাউদ১/২১৩, নাসায়ী, ইবেন হিব্বান, হাদীস সহীহ।

৬. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫)১ বার।
আবু উমামা(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“যেব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকেজান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা”।
নাসায়ী,ইবনু হিব্বান, হাদীস সহীহ।

এছাড়াও আরোঅন্যান্য অনেক দুয়া ও যিকির আছে ফরয নামাযের পরে – যার যার সামর্থ্য ও পছন্দনীয় সেইগুলো করবেন ইন শা’ আল্লাহ। আপনারা সহীহ দুয়াগুলো পাবেন “হিসনুল মুসলিম” বইয়ের “সালামফিরানোর পরের দুয়া” অধ্যায়ে ও রিয়াদুস সালেহীন বইয়ের “যিকির/দুয়া” অধ্যায়ে।

***তাসবীহ, তাহমীদও তাকবীরঃ
প্রত্যেক ফরযসালাতের পর মাসনুন অনেক দুয়া ও আমল আছে, তার মধ্যে বিশেষ একটা হলো তাসবীহ, তাহমীদও তাকবীরগুলো ৩৩ বার করে পড়া। যাদের জন্য ৩৩ বার করে পড়া কঠিন মনে হয় বা ৩৩ বারকরে পড়তে পারেন না, তারা ১০ বার করেও পড়তে পারেন, সুন্নতের মাঝে এটাও আছে।
নিঃসন্দেহে ৩৩ বারকরে পড়াই উত্তম ও সওয়াব অনেক বেশি। তাই যারা ৩৩ করে পড়তে পারেন তারা ৩৩ বার করেইপড়বেন। আর যারা ৩৩ বার পড়তে পারবেন না তারা অন্তত ১০বার মোট ৩০ বার পড়তে পারেন ইনশা’ আল্লাহ।

***আমি ৩৩বার করেপড়া ও ১০ বার করে পড়ার হাদীসগুলো দিয়ে দিচ্ছিঃ

সুবহা’নাল্লাহ (৩৩বার) , আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার), আল্লাহু-আকবার (৩৪ বার)। (মুসলিম ১/২১৯, তিরমিযী২/১৭৮)

# আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলু্‌ল্লাহ (সাঃ) এর নিকটএসে বললেনঃ ধনবানরা তো সমস্ত বড় মর্যাদাগুলো দখল করে নিলেন এবং স্থায়ী নিয়ামতগুলোতাদের ভাগে পড়ল। আমরা যেমন নামায পড়ি তারাও তেমনি নামায পড়ে, আমরা যেমন রোযারাখি তারাও তেমনি রোযা রাখে, কিন্তু ধন-সম্পদের দিক থেকে তারা আমাদের অপেক্ষাঅগ্রসর। ফলে তারা হজ্জ করে, উমরা করে, আবার জিহাদ করে এবং সাদকাও করে। তিনি (সাঃ)বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু শিক্ষা দেবো না? যার ওপর আমল করে তোমরা নিজেদেরঅপেক্ষা অগ্রবর্তীদেরকে ধরে ফেলবে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের থেকেও এগিয়ে যাবে,আর তোমাদের মতো ঐ আমলগুলো না করা পর্যন্ত কেউ তোমাদের অপেক্ষা অগ্রবর্তী হবে না।তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেনঃ তোমরা প্রত্যেকনামাযের পর ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়ো। বর্ণনাকারী আবু সালিহ সাহাবী(রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন তাকে ঐ কালেমা গুলো পড়ারনিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বললেনঃ এ কালেমা গুলো সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” অবশেষে এপ্রত্যেকটি কালেমাই হবে ৩৩ বার। (বুখারী ও মুসলিম)।
ইমাম মুসলিমের হাদীসেআরও আছেযে, দরিদ্র মুহাজিরগণ পুনরায় রাসুল (সাঃ) এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন,আমরা যা কিছু করছিলাম আমাদের ধনী ভাইরা তা শুনে নিয়েছে এবং তারাও তা করতে শুরুকরেছে। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ এটা হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি তাদান করেন। হাদীসে উল্লেখিত “আদ-দাসূর” শব্দটি “দাসর”-এর বহুবচন। “দাসর” অর্থ“বিপুল ঐশ্বর্য”।

# আবু হুরাইরা(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকনামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহুআকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িনকাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জেরসমতুল্য হয়। (মুসলিম)।

# কা’ব ইবনে উজরাহ(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, (নামাযের) পরে পঠিতকয়েকটি কালেমা এমন আছে যেগুলো পাঠকারী অথবা (বলেন) সম্পাদনকারী ব্যর্থ হয় না। সেকালেমাগুলো হচ্ছেঃ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’। (মুসলিম)।
বিঃদ্রঃ ১০০ বারপূরণ করার জন্য আল্লাহু আকবর ৩৪বার পড়া যেতে পারে অথবা আল্লাহু আকবর ৩৩বার পড়েশেষে একবার “লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হু ওয়াহ দাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকুওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়া যাবে। দুইটাই হাদীসেএসেছে, যেকোনো একটা করলে হবে।

১০বার করে পড়ারহাদীসঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু’আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তি দুইটি অভ্যাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে পারলে সেনিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। জেনে রাখ! উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আয়ত্ত করা সহজ। সেঅনুসারে অনেক অল্প সঙ্খক লোকই টা আমল করে থাকে। (১) প্রতি ওয়াক্তের (ফরয) নামাযেরপর দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ্ ও দশ বার আল্লাহু আকবার বলবে।’আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমিনামাযের পর স্বীয় হস্তে গণনা করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (পাঁচ ওয়াক্তে) মুখের উচ্চারণে একশত পঞ্চাশবার এবংমীযানে (দাঁড়িপাল্লায়) দেড় হাজার হবে। (২) আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় তুমি”সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার এক শত বার বলবে (প্রথম দুটি৩৩ বার ও শেষের টি ৩৪ বার মোট ১০০) ফলে টা মীযানে এক হাজারে রূপান্তরিত হবে।তোমাদের মাঝে কে এক দিন ও রাতে দুই হাজার পাঁচশ গুনাহে লিপ্ত হয়? (অর্থাৎ এত গুলো পাপও ক্ষমা যোগ্য হবে);সাহাবীগণ বলেন, কোন ব্যক্তি সবসময় এরূপ একটি ‘ইবাদাত কেন করবে না! রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে অবস্থান থাকাকালেতার কাছে শয়তান এসে বলতে থাকে, এটা মনে কর, ওটা মনে কর। ফলে সেই নামাযী (শয়তানেরধোঁকাবাজি থাকা মাঝেই রত অবস্থায়) নামাযে শেষ করে। আর উক্ত তাসবিহ আমল করার সেসুযোগ পায়না। পুনরায় তোমাদের কেউ শোয়ার জন্য শয্যা গ্রহণ করতে শয়তান তার নিকটএসে তাকে ঘুম পাড়ায় এবং সে তাসবিহ পাঠ না করেই ঘুমিয়ে পড়ে।
হাদিসটিসহিহঃ ইবনু মাজাহ/৯২৬।

সংগৃহীত: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও