ধর্ষণ ঠেকাতে শুধু মানসিকতা পরিবর্তনই কি যথেষ্ট নাকি আরও কিছু করণীয় রয়েছে

নারী ধর্ষণের জন্য মানসিকতাও দায়ী এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই। কোন আলেম কখনোই বলেন নি যে, মানসিক পরিবর্তনের দরকার নাই। কিন্তু দ্বিমত হল, যখন আপনি বলবেন, নারীর পোশাক কোনভাবেই দায়ী নয়! সে যা মনে চায় তাই পরবে। অথবা আপনি যখন ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য নারীকে হিজাব থেকে বের করে কেবল পুরুষের মানসিকতা পরিবর্তনের ওয়াজ করবেন।

একজন যুবতী মেয়ে যখন খােলামেলা পোশাক পরে, সাজগোজ করে, পারফিউম করে কোন পর পুরুষের কাছে যায় তখন সে পুরুষ যদি সুস্থ হয়ে থাকে তাহলে তার ভিতরে তোলপাড় শুরু করবে- যতই সে তার মানসিক অবস্থা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুক না কেন। ক্রমান্বয়ে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) সে নিজের প্রবৃত্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। আস্তে আস্তে সে ‘মানসিক পরিবর্তন করার ওয়াজ’ ভুলতে শুরু করে। এটিই স্বতঃ:সিদ্ধ বাস্তবতা-যদিও দ্বিমুখী নীতির লোকেরা মুখে ভিন্ন কথা বলার চেষ্টা করুক না কেন।

এবার আসুন, দেখা যাক, নারীর ধর্ষণ ঠেকাতে ইসলাম কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

*❒ ধর্ষণ, ইভটিজিং ও অবৈধ যৌন অপরাধ ঠেকাতে ইসলামের গৃহীত ১০টি পদক্ষেপ:*

➊ ইসলাম আমাদেরকে যেমন মানসিক পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে ঠিক তেমনটি মহিলাদেরকে হিজাবের নির্দেশ দিয়েছে।
➋ ধর্ষণ ঠেকানোর স্বার্থে ইসলাম মহিলাদেরকে পরপুরুষের সাথে লোকচক্ষুর আড়ালে যেতে নিষেধ করেছে।
➌ পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকলকে পর পুরুষ/নারীর দিকে চোখ পড়লে তৎক্ষণাৎ চোখ নিচু করতে নির্দেশ দিয়েছে।
➍ মহিলাদেরকে স্বামী, বাবা, ভাই, ভাগিনা ইত্যাদি মাহরাম পুরষ ছাড়া দুরের সফরে যেতে নিষেধ করেছে।
➎ মহিলাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথার বলার সময় যেন কোমল কণ্ঠ পরিহার করে।
➏ স্বামী বা মহিলা অঙ্গন ছাড়া বাইরে যাওয়ার সময় মহিলাকে পারফিউম ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
➐ ইসলাম আরও বলেছে, কারো বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে যেন অনুমতি নেয়া হয়। দরজার বাইরে দাড়িয়ে তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে। অনুমতি না পেলে সে ফিরে যাবে।
➑ বিবাহের প্রতি উৎসাহিত দান। বরং সমাজে বিবাহকে সহজ করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
➒ সর্বোপরি এতগুলো ইসলামী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন বিবাহিত ব্যক্তি যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করে তাহলে ধর্ষককে কোর্টের মাধ্যমে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ফৌজদারি দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করা হবে। আর অবিবাহিত ব্যক্তি ধর্ষণ করলে তাকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে এবং মতান্তরে তৎসঙ্গে এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল) প্রদান করা হবে।
➓ অবৈধভাবে দুজনের সম্মতিতে হলেও উপরোক্ত বিধান কার্যকর করা হবে।

বর্তমান সমাজে আল্লাহ প্রদত্ব উপরোক্ত ইসলামী বিধানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের কারণে চতুর্দিকে ইভটিজিং এবং নারী-ধর্ষণের ছড়াছড়ি। ঘটছে অসংখ্য অবৈধ গর্ভপাত। নিষ্পাপ নবজাতকের লাশ ডাস্টবিনে কুকুর-বেড়ালের খাবার হচ্ছে। ঘটছে নানা হত্যাকাণ্ড। বাড়ছে অপরাধ।
তারপরও কি ইসলামের বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করতে হবে?
➖➖➖➖➖➖➖
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।।