দ্বীন Vs নারীর শারীরিক সৌন্দর্য

পৃথিবীতে প্রত্যেক পুরুষই নারীর সৌন্দর্যের প্রতি নিতান্তই দুর্বল। সুন্দরী নারীর প্রতি একজন পুরুষের ফিতরাতগত (সহজাত প্রবৃত্তি) আকর্ষণ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আর তা কেবল এই আধুনিক সমাজ বলেই নয়, বরং হাজার হাজার বছর ধরে সুশ্রী চেহারার নারীদের প্রতি পুরুষদের অত্যাধিক ঝোঁক ছিলো এবং এভাবেই পরম্পরায় চলে আসছে।

কিন্তু আমরা কি জানি, এই পৃথিবীতে প্রত্যেক নারীকুল পুরুষদের অতীব আকাঙ্ক্ষিত- আকর্ষণীয়- চেহারা নিয়ে জন্মায় না? (ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি মহান রবের নিকট যিনি প্রত্যেক নর-নারীকে সৃষ্টি করেছেন সৌন্দর্য মন্ডিত করে- ভিন্ন আঙ্গিকে)

আকর্ষনীয় চেহারার অধিকারী না হওয়া নারীদের হাজার বছর আগ হতে ট্রিট করা হতো পশুর ন্যয়। কাউকে বেছে নিতে হতো চিরস্থায়ী দাসীর জীবন, কাউকে পুঁতে ফেলা হতো জীবন্ত কবরে, কেউ বা পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরনের সঙ্গী- পতিতা- রূপে নিজেকে মেলে ধরতো। এছাড়া সামাজিক নির্যাতন থেকে শুরু করে শত কুসংস্কার এর বলি হওয়া তো ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার।

সেই সুদূর আরবেও ১৪০০ বছর পুর্বে লোকেরা সম্পদশালী, বংশীয় মর্যাদার অধিকারী এবং সুন্দরী নারীদেরই কেবল বিয়ে করতেন। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি হাদিস আছে যা দ্বারা এই সত্যই অনুমেয়।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মানুষ সাধারণত নারীদের মাঝে চারটি গুণ দেখে বিবাহ করে, তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং দ্বীন (কিন্তু এমন করবেনা), তোমরা বিয়ের জন্য দ্বীনকে অগ্রাধিকার দাও। তোমরা যদি ধার্মিক নারীদেরকে অগ্রাধিকার না দাও, তাহলে অবশ্যই তোমাদের দুই হাত ধূলায় ধূসরিত হবে”।

[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।]

উক্ত হাদিস হতেও এটাই প্রতীয়মাণ হয় তৎকালীন সমাজেও একই রীতি অনুসৃত হতো। অথচ আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, সুন্দরী নারীদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন, বরং এর অর্থ সুন্দরী নারী যদি বে-দ্বীন হয় তবে একজন পুরুষের জন্য ধ্বংস অবধারিত, অথচ দুনিয়াবী আকর্ষণহীন একজন নারীও যদি দ্বীনদারীতায় আগ্রগামী হয় তবে এর মাঝেই আছে সফলতা।

– প্রায় সময় কাছের অনেক বোনদের গল্প কানে আসে। আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের কথা জেনেছিলাম, বোনের চেহারায় শ্রী নেই দেখে পাত্র পক্ষের কেউই পছন্দ করছে না; বয়স প্রায় ৩৮ বছর পেরিয়ে গেছে। পরিবারের কোন সদস্যের মুখে হাসি নেই, তার দুশ্চিন্তায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় সে বোন দ্বীনদারও নয়।

– সেদিন আরেক বোনের ব্যাপারে শুনলাম, সামান্য স্থুলকার দেহের কারনে বিয়ে হচ্ছে না। বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও একই কেস; দ্বীনদারীতার লেশটুকুও নেই (আল্লাহ মাফ করুক)।

একটাবার চিন্তা করুন তো, যদি এভাবে পৃথিবীর সকল কম আকর্ষনীয় নারীদের সংখ্যা হিসেবে করতে যাই তাহলে এসব নারীদের বিয়ের মাধ্যমে সংসার করার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। আর তাই ইসলাম এমন এক মানদণ্ড পুরুষদের জন্য সেট করেছে যেখানে নারীর শারীরিক সৌন্দর্য, ধন-দৌলত, বংশীয় মর্যাদা কোনটাই গুরত্ব বহন করে নি কেবল মাত্র দ্বীন ছাড়া। দ্বীনের অগ্রগামীতা দেখেই পুরুষদের বিয়ে করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনেক ফুকাহা এবং সলফে স্বলেহীগন বলেছেন, ‘দ্বীনহীনা কোন নারীকে বিয়ে করা গুনাহের কাজ হবে যদিও তার সৌন্দর্য, বংশ, ধন-সম্পদ তোমাকে আকর্ষণ করুক; কেননা দ্বীনহীনা নারী তার স্বামীকে দাইয়্যুসে পরিনত করে, যা একজন পুরুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম বড় কারন’।

সাহাবীদের আমলে কেবল দ্বীনদারিতার উপর বৃদ্ধ নারীর বয়সী মহিলাকেও বিয়ে করেছেন অনেক সাহাবী। স্বয়ং আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দুধ-মাকেও বিয়ে করেছিলেন তাঁর পালক পুত্র যায়েদ বিন হারিসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেবল বলেছেন, ‘এই নারী জান্নাতী, তোমরা কে এই নারীকে বিয়ে করতে চাও?’ যায়েদ ইবনে হারিসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হাত তুললেন এবং পরবর্তীতে দাদীর বয়সী নারীকে বিবাহ করলেন; যিনি যৌবন নিঃশেষ অবস্থায় উপনীত। এরপর এই ঘর থেকেই উসামা বিন যায়েদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মতো দুর্ধর্ষ সেনাপ্রধান জন্মেছিলো। তার মানে হলো দ্বীনের অগ্রগামীতা একজন নারীর মধ্যে থাকলে অবশ্যই আল্লাহ্ তা’য়লা তাঁর কোন এক বান্দার মাধ্যমে সেই বান্দীর ব্যবস্থা করিয়ে নিবেন।

তাই সমস্ত পুরুষেরা আসুন দ্বীনদারীতাকে প্রাধান্য দেই। চেহারার আকর্ষনীয় সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে দ্বীনদার নারীদের প্রাধান্য দেই, আখিরাতের ঘর নির্মাণে মনোযোগী হই। আর সমস্ত বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজেদের সৌন্দর্যের ব্যাপারে চিন্তিত না হয়ে, মহান রবের সান্নিধ্যে শান্তি খুঁজে নিন; ইন শা আল্লাহ, যায়েদ ইবন হারিসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মতো বাঘা সাহাবীদের ন্যায় ভাইয়েরাও এগিয়ে আসবে আপনাদের কাছেই। বিইযনিল্লাহ্, নিশ্চয়ই যাদের স্বপ্ন ঊর্ধ্বাকাশে বাড়ি নির্মাণের, তারা দ্বীনের সৌন্দর্যে-কে ভালোবাসার কারনেই সেই চিরস্থায়ী বাড়ির মালিক হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।