দুনিয়ায় ঈমানদারদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-মুসিবত এবং কঠিন পরীক্ষা থাকা খুব সাধারণ বিষয়। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: দুনিয়ার নিয়মটাই এমন যে, এটি আপনাকে ক্ষতবিক্ষত করে ভেঙে চুরমার করে দেবে, দুঃখ-দুশ্চিন্তার অথৈ সাগরে একাকি ছেড়ে দেবে। এই জগতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যেমন স্থায়ী হয় না, তেমনি দুশ্চিন্তা-ঝামেলাও চিরদিন থাকে না।নিয়ামতে ভরপুর শান্তি-সুখের জীবন উপহার দেওয়ার জন্য আল্লাহ কখনো মানুষকে সাময়িকভাবে নিঃস্ব-অসহায় করে দেন। মুমিন বান্দাদের প্রকৃত সুখ শান্তির স্থান তো আখেরাত। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘এই পার্থিব জীবন তো (অস্থায়ী) ভোগের সামগ্রী মাত্র। আর জেনে রেখো! আখিরাতই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’’(সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯) প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
“মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন”।(সহীহ বুখারী হা/৫৬৪১ ও ৫৬৪২)
.
মৃত্যু পরবর্তী গন্তব্যস্থল আখিরাতের তুলনায় এই দুনিয়ার জীবনের দুঃখ-কষ্ট অথবা হাসি-আনন্দ কিছুই নয়। কোনোভাবেই দুটোর তুলনা চলে না। তাই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবি কষ্টগুলোকে সবরের সাথে মেনে নেওয়ার মধ্যেই মুমিনের কল্যাণ নিহিত। মুমিনজীবনের সাথে দুঃখ-কষ্টকে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) সত্যই বলেছেন, ‘আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত ঈমানদারের কোনো স্বস্তি নেই।’ (ইমাম ওয়াকি, কিতাবুয যুহদ, পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
উপরোক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
: الإنسان في هذه الدنيا لا يمكن أن يبقي مسرورًا دائمًا، بل هو يومًا يسر ويومًا يحزن، ويومًا يأتيه شيء ويومًا لا يأتيه، فهو مصاب بمصائب في نفسه ومصائب في بدنه، ومصائب في مجتمعه ومصائب في أهله، ولا تحصي المصائب التي تصيب الإنسان، ولكن المؤمن أمره كله خير، إن أصابته ضراء صبر فكان خيرًا له، وإن أصابته سراء شكر فكان خير له .
فإذا أصبت بالمصيبة فلا تظن أن هذا الهم الذي يأتيك أو هذا الألم الذي يأتيك ولو كان شوكة، لا تظن أنه يذهب سدى، بل ستعوض عنه خيرًا منه، ستحط عنك الذنوب كما تحط الشجرة ورقها، وهذا من نعمة الله، وإذا زاد الإنسان على ذلك الصبر واحتساب الأجر كان له مع هذا أجر .
“এই দুনিয়ার জীবনে কোনও মানুষের পক্ষে সর্বদা আনন্দে থাকা সম্ভব নয়। তার একটি দিন যদি যায় প্রফুল্লতায়, তো আরেকটি দিন যাবে দুশ্চিন্তায় (এটাই স্বাভাবিক)। একদিন তার হাতে কিছু আসবে, আরেকদিন আসবে না। সে কখনো নিজের কারণে বিপদে পড়বে, কখনো তার শরীর নিয়ে সমস্যায় পড়বে। কখনো সমাজ বা পরিবেশের কারণে কষ্ট পাবে, কখনো তার পরিবার থেকে কষ্ট আসবে। মানুষের জীবনে বিপদের কোনো শেষ নেই। কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তি সর্বাবস্থায় কল্যান লাভ করে। যদি তার ওপর কোনো বিপদ আসে, সে ধৈর্য ধারণ করে। এই ধৈর্য তার জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। আবার যদি তার জীবনে সুখের সময় আসে, সে শুকরিয়া আদায় করে। এই শুকরিয়াও তার জন্য মঙ্গলজনক হয়। সুতরাং যদি তুমি কোনো বিপদে পড়ো, তবে এমনটা ভাববে না যে এই কষ্ট, দুশ্চিন্তা, অথবা কোনো ছোট আঘাত (যেমন একটি কাঁটা বিদ্ধ হওয়া) এসব কিছুই অকারণে হয়েছে। বরং তুমি জানো যে এইসব কষ্টের বিনিময়ে তুমি কল্যানকর ভালো কিছু অর্জন করবে। তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে, যেমন একটি গাছ শুকিয়ে যাওয়া পাতা ঝরিয়ে ফেলে। এটি আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। আর যদি তুমি এই অবস্থায় ধৈর্য ধারন কর এবং এর জন্য প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করো, তাহলে তুমি কেবল কষ্ট সহ্য করছ না, বরং এর মাধ্যমে সওয়াবও অর্জন করছ।”(ইবনু উসাইমীন; শারহু রিয়াদুস সালিহিন, ১/২৪৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________________
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি।