তিনি অন্তর্যামী, বুকের ভেতরে মনের খবরও জানেন

মহান আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ

আলআলীম ;  নামের অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী, সবজান্তা

জিনিসের প্রকৃতি জানার নাম হল ইলম। মহান আল্লাহ সৃষ্টির সবকিছু জানেন। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সারা সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি জানেন যা ঘটা জরুরী, যা ঘটা অসম্ভব এবং যা ঘটা সম্ভব। ঘটনার পরিণামে কি ঘটবে তাও তাঁর জানা। তিনি জানেন যা ঘটে গেছে, বর্তমানে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে। তিনি জানেন কিছু ঘটলে তা কিরুপে ঘটবে এবং যা ঘটার নয়, তা ঘটলেও কিরুপে ঘটবে। তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত-সূক্ষ্ম-ক্ষুদ্র-অণু-পরমাণু সবকিছু জানেন। দৃশ্য-অদৃশ্য সকল বিষয়ের জ্ঞান রাখেন। বিশ্ব-রচনার পূর্বেও তিনি ঘটিতব্য সবকিছু জানতেন। আর সেই মুতাবেকই বিশ্ব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই সকলের ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন।

মানুষের সৃষ্টিকর্তা তিনি। তিনিই ভাল জানেন তাদের ভাল-মন্দ উপকারী-অপকারী বিষয়বস্তু। আর সেই মোতাবেকই তিনি শরীয়াতের বিধান দিয়েছেন।

বর্তমান শতাব্দীতে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে কত পারদর্শী। তবুও বলা হয় যে, মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র পনের শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে ! যদি পরিপূর্ণ মস্তিষ্ক সে ব্যবহার করতে পারে তাহলে কতকিছু সে আবিষ্কার করতে পারে, তাহলে আরো কত কি আবিষ্কার হতে পারে। তবুও সে আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় কিছু নয়। যেহেতু তিনি সেই জ্ঞানের সৃষ্টিকর্তা।

তিনি জানেন বান্দা যা করে, যা বলে এবং যা মনে করে। তাঁর নিকট অজানা কিছুই নয়। মহান আল্লাহ আল-কুর’আনে তাঁর জ্ঞানের কথা বহুবার বলেছেন, তার কিছু নিম্নরূপঃ

“তিনি সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ” [আল বাকারাহ ২৮২, আন-নিসা ১৭৬, আন-নূর ৩৫,৬৪, হুজুরাত ১৬, আত-তাগাবুন১১]

“তিনি অন্তর্যামী, বুকের ভেতরে মনের খবরও জানেন”। [আলে ইমরান ১১৯,১৫৪, মায়িদা৭,আনফাল৪৩,হুদ৫,লুকমান২৩,ফাতির ৩৮]

নভোমন্ডল ভূমন্ডলে যা আছেতিনি তা জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর। আল্লাহ অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত [সূরা তাগাবুন ৪]

“চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন”। [সূরা আল মুমিন ১৯]

আর একথা জেনে রেখো যেতোমাদের মনে যে কথা রয়েছেআল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যেআল্লাহ ক্ষমাকারী ধৈর্য্যশীল [সূরা বাকারাহ ২৩৫]

“যদি তুমি উচ্চকন্ঠেও কথা বল, তিনি তো গুপ্ত ও তদপেক্ষাও গুপ্ত বিষয়বস্তু জানেন”। [সূরা ত্বহা৭]

তোমাদের মধ্যে কেউ গোপনে কথা বলুক বা তা সশব্দে প্রকাশ করুকরাতের অন্ধকারে সে আত্নগোপন করুক বা প্রকাশ্য দিবালোকে বিচরণ করুক, সবাই তাঁর নিকট সমান [সূরা রাদ ১০]

“তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ”। [সূরা হাজ্জ ৭০]

আল্লাহর নিকট আসমান যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই [সূরা আলে ইমরান ৫]

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নভোমন্ডলে যা আছে এবং ভূমন্ডলে যা আছে সব কিছুর মালিক এবং তাঁরই প্রশংসা পরকালে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। তিনি জানেন যা ভূগর্ভে প্রবেশ করে, যা সেখান থেকে নির্গত হয়, যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় এবং যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি পরম দয়ালু ক্ষমাশীল”। [সূরা সাবা ১-২]

“তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে”। [সূরা সাবা ৩]

“তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।

তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন”। [সূরা হাদীদ ৩-৪]

“কেয়ামতের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন ফল আবরণমুক্ত হয় না। এবং কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, আমার শরীকরা কোথায়? সেদিন তারা বলবে, আমরা আপনাকে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কেউ এটা স্বীকার করে না”। [সূরা ফুসিলাত ৪৭]

“আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত”।[সূরা মুজদালাহ ৭]

তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”। [সূরা আনয়াম ৫৯]

“আল্লাহ আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত”।[সূরা ফাতির ৩৮]

তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত”।[সূরা জিন ২৬-২৭]

নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা লুকমান ৩৪]

“তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সব বিষয় তাঁর জ্ঞানের পরিধিভুক্ত”। [সূরা ত্বহা ৯৮]

“আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত”।[সূরা তালাক ১২]

বলাই বাহুল্য যে তাঁর জ্ঞান সব জায়গায় আছে, সবকিছু তিনি জানেন, কোন কিছুই তাঁর নিকট গুপ্ত নয়। নিশ্চয় তিনি মহাজ্ঞানী, মহান প্রতিপালক, মহান আল্লাহ।

 

  • বইঃ মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
  • লেখকঃ আব্দুল হামিদ ফাইযি