তাওহীদুল হাকিমিয়া

প্রশ্ন: তাওহীদুল হাকিমিয়া বলতে কি বুঝায়? এর প্রকৃত অর্থ ও প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর হাকিমিয়াত সমসাময়িক ইসলামী চিন্তাধারায় বহুল আলোচিত ও প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি এত বেশি আলোচিত হয়েছে যে, বর্তমানে অনেক মানুষের চিন্তা ও কর্মক্ষেত্রে এর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। এর ফলে এই ধারণা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট পরিভাষা সমসাময়িক ইসলামী বক্তৃতা ও লেখনীতে বিশেষ স্থান দখল করেছে। এর চারপাশে জন্ম নিয়েছে বহু জ্ঞানভিত্তিক বিতর্ক ও মতপার্থক্য, যা একে পরিণত করেছে দাওয়াহ ও আন্দোলনমূলক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে; পাশাপাশি এটি সমসাময়িক ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তার গঠনে অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকে একে যেন এক প্রকার “জাদুকরি চাবিকাঠি” হিসেবে ব্যবহার করেছেন—আলিম হোক বা সাধারণ মানুষ হোক, কেউ কেউ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট শরয়ি বিধান প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, আবার কেউ বা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রচারের হাতিয়ার বানিয়েছেন। এ বিষয়টি শুধু মুসলিম গবেষকদেরই নয়,অমুসলিম গবেষকদেরও আকৃষ্ট করেছে, এবং এর অনুসন্ধানে গৃহীত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ও বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।
.
▪️ভাষাগত দিক থেকে হাকিমিয়াত:
.
হাকিমিয়াত” শব্দটি একটি ইজতিহাদি বা উদ্ভাবিত শব্দ, যা এসেছে আরবি “হাকাম” শব্দ থেকে। এর অর্থ হলো: শাসক বা হাকিমের পদ, তাঁর দায়িত্ব বা কর্মপদবী। অর্থাৎ শব্দটি নতুন হলেও এটি মূলত “হুকুম” বা কর্তৃত্বের ধারণাকেই প্রকাশ করে। আরবীতেও এটি প্রাচীন প্রচলিত শব্দ নয়। সর্বশ্রেষ্ঠ তিন প্রজন্মের কেউই এই শব্দটি ব্যবহার করেননি,ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিমসহ হাদীস গ্রন্থ সংকলনকারী মুহাদ্দিসগণ,চার মাযহাবের ইমামগণসহ পরবর্তী মুসলিম উম্মাহর হকপন্থী প্রসিদ্ধ কোন আলেম তাওহীদের চতুর্থ অংশ হিসেবে শব্দটি ব্যবহার করেননি। বরং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনায় প্রথম যিনি এই শব্দটি ব্যবহার করেন তিনি হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ সাইয়্যিদ আবুল আ’লা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর হাত ধরেই উপমহাদেশে শব্দটি প্রসার লাভ করে এবং পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। মওদূদী ইসলামী সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি আলোচনা করতে গিয়ে “হাকিমিয়াত”-এর ধারণাকে সামনে আনেন। তাঁর দৃষ্টিতে এটি ছিল ইসলামী সাংবিধানিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে তিনি তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা উপস্থাপন করেন, যেখানে হাকিমিয়াত সংক্রান্ত ব্যাখ্যাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় ভারতের শাসনব্যবস্থা ছিল ইংরেজ ঔপনিবেশিকদের হাতে—যা মওদূদীর মতে ছিল জাহেলি ও কাফের মানবিক কর্তৃত্ব। অন্যদিকে, কংগ্রেসের কল্পিত স্বাধীন ভারতের রূপরেখায় দেখা যাচ্ছিল পশ্চিমা ধাঁচের জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে শাসনক্ষমতা থাকবে হিন্দু নেতৃত্বের হাতে। এই পরিস্থিতিতেই মওদূদী উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেন মানবিক হাকিমিয়াতের কুফর এবং জোর দেন আল্লাহর একক হাকিমিয়াতের উপর। তাঁর রচিত “তাদবীনুদ দাস্তূরুল ইসলামী” গ্রন্থে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। মূলত গ্রন্থটি ছিল সে সময়কার ধর্মনিরপেক্ষদের উত্থাপিত প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জের জবাব। আইনজীবী এ. কে. রোহী তখন ঘোষণা করেছিলেন—“যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে কুরআনে সংবিধানগত নীতিমালা বিদ্যমান, তবে আমি তাকে পাঁচ হাজার রুপি পুরস্কার দেব।”মওদূদী তাঁর “আসাসুদ দাস্তূরুল ইসলামী ফিল কুরআন” গ্রন্থ রচনা এবং করাচিতে “তাদবীনুদ দাস্তূরুল ইসলামী” শিরোনামে বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জের জবাব দেন। এর ফলে আইনজীবী রোহী তাঁর চিন্তায় সন্তুষ্ট হন এবং পরে সংবিধান প্রণয়ন পরিষদে ইসলামী সংবিধানসম্মত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
.
▪️সাইয়্যিদ আবুল আ’লা মওদূদীর নিকট হাকিমিয়াতের অর্থ:
.
মওদূদী (রহিমাহুল্লাহ) হাকিমিয়াতকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, এটি সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও পরম কর্তৃত্বের প্রতিশব্দ। আজকের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় যেমন সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) ব্যবহৃত হয়, তেমনই হাকিমিয়াতও বোঝায় সেই চূড়ান্ত ক্ষমতাকে, যা অন্য সব ক্ষমতার ওপর পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে। মওদূদীর প্রদত্ত এই সংজ্ঞা পাশ্চাত্য চিন্তাবিদদের সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।
.
তাওহীদুল-হাকিমিয়্যাতের অর্থ হলো—আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে এককভাবে হুকুমদাতা ও শরীয়ত প্রণেতা হিসেবে সাব্যস্ত করা। একমাত্র তিনিই প্রকৃত হাকিম, তিনিই শরীয়তের বিধান প্রণয়নকারী, আর তাঁর হুকুমে কাউকে শরিক করা বৈধ নয়। সমসাময়িক আলিমগণের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ দেখা যায়। তাঁদের একদল এটিকে তাওহীদের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গণ্য করেছেন। অপরদিকে অন্য একদল এটিকে তাওহীদের উলুহিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আবার কেউ কেউ রুবুবিয়্যাহ এবং উলুহিয়্যাহ উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত মনে করেছেন। যারা এটিকে তাওহীদের পৃথক শাখা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, তাঁদের দলিল হলো—আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে স্পষ্ট করেছেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর পরিবর্তে শরীয়তের বিধান প্রণয়ন করে, সে মূলত আল্লাহর সমকক্ষ বা শরিক দাবি করছে। যেমন আল্লাহ সূরা শূরা আয়াত ২১-এ বলেছেন:اَمۡ لَهُمۡ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوۡا لَهُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا لَمۡ یَاۡذَنۡۢ بِهِ اللّٰهُ ؕ وَ لَوۡ لَا كَلِمَۃُ الۡفَصۡلِ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ “নাকি তাদের এমন কতগুলো শরীক রয়েছে, যারা এদের জন্য দ্বীন থেকে শরীআত প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? আর ফয়সালার ঘোষণা না থাকলে এদের মাঝে অবশ্যই সিদ্ধান্ত হয়ে যেত। আর নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”(সূরা শূরা: ২১) এবং আল্লাহ আরও বলেন:قُلِ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا لَبِثُوۡا ۚ لَهٗ غَیۡبُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اَبۡصِرۡ بِهٖ وَ اَسۡمِعۡ ؕ مَا لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّلِیٍّ ۫ وَّ لَا یُشۡرِكُ فِیۡ حُكۡمِهٖۤ اَحَدًا”আপনি বলুন, তারা কত কাল অবস্থান করেছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আসমান ও যমীনের গায়েবের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্ৰোতা! তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।”(সূরা কাহফ: ২৬)। অতএব আল্লাহ মহান তাঁর হুকুমে কাউকে শরিক করেননি, আর কাউকে এই অনুমতিও দেননি যে তাকে বাদ দিয়ে তাকে উপাসনা করা হবে। সূরা কাহফের আয়াত ২৬-এর একটি প্রামাণ্য কিরাআতে স্পষ্টভাবে মুসলিমকে সতর্ক করা হয়েছে—সে যেন আল্লাহর হুকুমে কাউকে শরিক না করে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বিধান মান্য করে তার ইবাদত না করে।হাদিসে এসেছে,আদী বিন হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা আমি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এলাম, তখন আমার গলায় স্বর্ণের ক্রুশ ছিল। তা দেখে তিনি বললেন, “হে আদী! তোমার দেহ থেকে এই প্রতিমা খুলে ফেলো।” আমি শুনলাম তিনি সূরা তওবার এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ,”আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে”।(সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১) পাঠ করতে শুনলাম। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, তারা তো তাঁদের আলিম ও রুহবানদের ইবাদত করতে না। তিনি বললেন: “হ্যাঁ, কিন্তু তারা তাদের জন্য আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল করে দিতো, আর তারা তা হালাল মনে করত। তারা তাদের জন্য আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করে দিতো, আর তারা তা হারাম মনে করত।(আদী বললেন, জী হ্যাঁ। তিনি (ﷺ) বললেন,এটাই ছিল তাদের ইবাদত করা।” বায়হাকি সুনানুল কুবরা হা/৩০৩৫০; তিরমিজি হা/৩০৯৫ ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটি সহীহ বলেছেন।) অপর বর্ননায় আবু বখতারী (রহঃ) বর্ণনা করেন: হুযাইফা (রাঃ)-কে এ আয়াত: ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ“আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে”।(সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তারা কি তাঁদের জন্য নামাজ পড়ত? তিনি বললেন: “না, বরং তারা তাঁদের জন্য যা আল্লাহ হারাম করেছিলেন, তা হালাল করে দিত, আর তারা তা হালাল মনে করত। এবং তারা তাঁদের জন্য যা আল্লাহ হালাল করেছিলেন, তা হারাম করে দিতো, আর তারা তা হারাম মনে করতো। এর ফলে তারা তাদেরকে রব বানিয়ে নিতো। হাদিসটি ইমাম বায়হাকি তাঁর -সুনানুল কুবরা হা/২০৩৫১) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] “মানহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ”-তে বলেছেন:
ولا ريب أن من لم يعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله على رسوله فهو كافرٌ، فمن استحل أن يحكم بين الناس بما يراه هو عدلًا من غير اتباعٍ لما أنزل الله فهو كافرٌ؛ فإنه ما من أمةٍ إلا وهي تأمر بالحكم بالعدل، وقد يكون العدل في دِينها ما رآه أكابرهم… فهؤلاء إذا عرَفوا أنه لا يجوز الحكم إلا بما أنزل الله فلم يلتزموا ذلك، بل استحلوا أن يحكموا بخلاف ما أنزل الله – فهم كفارٌ”.
“এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে না যে আল্লাহ তাঁর রসূলের উপর যা নাযিল করেছেন, তার ভিত্তিতেই হুকুম দেওয়া ফরয সে কাফির। সুতরাং, যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে যে, সে মানুষের মাঝে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান বাদ দিয়ে নিজের দৃষ্টিতে ন্যায়সঙ্গত মনে হওয়া নিয়মে ফায়সালা করবে অথচ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ করবে না সে কাফির। কারণ এমন কোনো জাতি নেই যারা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নির্দেশ দেয় না। তবে তাদের ধর্মে ন্যায়বিচার বলতে অনেক সময় বোঝায়—তাদের নেতৃস্থানীয়দের যা ভালো মনে হয় তাই-ই ন্যায়বিচার। তারা যদি জেনে-বুঝে এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছুর দ্বারা ফায়সালা করা বৈধ নয়, তবুও যদি তা গ্রহণ না করে; বরং উল্টো আল্লাহর অবতীর্ণ বিধানের বিপরীতে অন্য কিছুর দ্বারা ফয়সালাকে হালাল মনে করে—তাহলে তারা কাফির।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মানহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩০)
.
আল্লামা শানকীতী (রাহিমাহুল্লাহ) “আযওয়াউল বায়ান” এ সূরা শূরা (১০) এর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন:”মহান আল্লাহর বানী:وَ مَا اخۡتَلَفۡتُمۡ فِیۡهِ مِنۡ شَیۡءٍ فَحُكۡمُهٗۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبِّیۡ عَلَیۡهِ تَوَكَّلۡتُ ٭ۖ وَ اِلَیۡهِ اُنِیۡبُ “আর তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ করো না কেন তার ফয়সালা তো আল্লাহরই কাছে। তিনিই আল্লাহ আমার রব; তাঁরই উপর আমি নির্ভর করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।”(সূরা শূরা:১০) এই মহিমান্বিত আয়াতের প্রমাণ হলো মানুষের মধ্যে যে সকল বিষয়ের ব্যাপারে মতভেদ হয়,সেসবের চূড়ান্ত হুকুম আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে, অন্য কারো কাছে নয়। এটি বহু আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সুতরাং, আল্লাহর হুকুমে শিরক করা যেমন, তাঁর ইবাদতে শিরক করাও তেমনি। তিনি তাঁর হুকুম সম্পর্কে বলেছেন:قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا”আপনি বলুন, তারা কত কাল অবস্থান করেছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আসমান ও যমীনের গায়েবের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্ৰোতা! তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।”(সূরা কাহাফ: ২৬)। আর সাত ক্বারীর একজন ইবনে ‘আমির-এর ক্বিরাআতে এসেছে: (وَلَا تُشْرِكْ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا) “তুমি তাঁর হুকুমে কাউকে শরীক করো না।” আর তাঁর ইবাদতে শিরক সম্পর্কে তিনি বলেছেন:وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا”আর (কেউ যেন) তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।” (সূরা কাহাফ: ১১০)। এ দুটি বিষয় সমান। এর মাধ্যমে তুমি জেনে নেবে যে, হালাল সেটাই যা আল্লাহ হালাল করেছেন, হারাম সেটাই যা আল্লাহ হারাম করেছেন, এবং দীনের অর্থ হলো সেটাই যা আল্লাহ শরী‘আত হিসেবে প্রণয়ন করেছেন। সুতরাং, তাঁর শরী‘আতের বাইরে অন্য কোনো প্রণীত আইন বাতিল। আর যে ব্যক্তি মনে করে যে এই আইন আল্লাহর শরী‘আতের সমতুল্য বা তার চেয়ে উত্তম তার এ বিশ্বাস প্রকাশ্য কুফর, এতে কোনো বিরোধ নেই। কুরআনের বহু আয়াত প্রমাণ করেছে যে, আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম নেই। আর অন্যের শরী‘আতকে অনুসরণ করা আল্লাহর প্রতি কুফর।সেসব আয়াতের মধ্যে রয়েছে—আল্লাহর বাণী:اِنِ الۡحُكۡمُ اِلَّا لِلّٰهِ ؕ یَقُصُّ الۡحَقَّ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡفٰصِلِیۡنَ”হুকুম কেবল আল্লাহর কাছেই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্ৰেষ্ঠ।(সূরা আনআম ৫৭) অপর আয়াতে বলেন:وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡكُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الۡكٰفِرُوۡنَ”আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের।”( সূরা মায়েদা: ৪৪) আরও বলেন:وَ لَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۘ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۟ كُلُّ شَیۡءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجۡهَهٗ ؕ لَهُ الۡحُكۡمُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ “আর আপনি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ছাড়া সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল।বিধান তারই এবং তারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা কসাস: ৮৮) অন্যান্য অনুরূপ আয়াতও প্রচুর রয়েছে,যেমনاِنَّمَا سُلۡطٰنُهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ یَتَوَلَّوۡنَهٗ وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ بِهٖ مُشۡرِكُوۡن”তার আধিপত্য তো শুধু তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে।”(সূরা নাহল: ১০০) আরও বলেন:وَ لَا تَاۡكُلُوۡا مِمَّا لَمۡ یُذۡكَرِ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَیۡهِ وَ اِنَّهٗ لَفِسۡقٌ ؕ وَ اِنَّ الشَّیٰطِیۡنَ لَیُوۡحُوۡنَ اِلٰۤی اَوۡلِیٰٓئِهِمۡ لِیُجَادِلُوۡكُمۡ ۚ وَ اِنۡ اَطَعۡتُمُوۡهُمۡ اِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُوۡنَ”আর আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তার কিছুই তোমরা খেও না; এবং নিশ্চয় তা গর্হিত। নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক।” (সূরা আনআম: ১২১) এবংاَلَمۡ اَعۡهَدۡ اِلَیۡكُمۡ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ اَنۡ لَّا تَعۡبُدُوا الشَّیۡطٰنَ ۚ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ”হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদাত করো না,কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?।(সুরা ইয়াসিন: ৬০) এ ধরণের আয়াত অসংখ্য।” (ইমাম শানকীতী; আযওয়াউল বায়ান খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৫০)
.
তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন: لما كان التشريع وجميع الأحكام – شرعيةً كانت أو كونية قدرية – من خصائص الربوبية، كما دلت عليه الآيات المذكـورة، كان كل من اتبع تشـريعًا غير تشــريع الله قد اتخذ ذلك المشرِّعَ ربًّا، وأشركه مع الله”যেহেতু শরী‘আত প্রণয়ন ও সমস্ত হুকুম তা শর‘ঈ হোক কিংবা কুদরতি কাওনুন সবই রবুবিয়্যাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য; যেমনটি উল্লেখিত আয়াতগুলো প্রমাণ করেছে, সুতরাং যে-ই আল্লাহর শরী‘আতের বাইরে অন্য কোনো শরী‘আত অনুসরণ করবে, সে ঐ আইন প্রণেতাকে রব বানালো এবং আল্লাহর সাথে তাকে শরীক করলো।” (আযওয়াউল বায়ান; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬৯) তিনি উক্ত স্পষ্ট আয়াতগুলোর আলোকে সংক্ষিপ্তসার দিয়েছেন এভাবে :إن متَّبِعي أحكام المشرعين غير ما شرعه الله مشركون بالله”“যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য আইন প্রণেতাদের বিধান অনুসরণ করে, তারা আল্লাহর সাথে শিরককারী।”(আযওয়াউল বায়ান; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬৯)
.
ইমাম ইবনু আবিল ‘ইয হানাফি “শারহুত ত্বহাবী”এ উম্মাহর উপর রাসূল (ﷺ)-এর হকসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন: في معرض ذكر ما يجب على الأمة تجاه نبيها صلى الله عليه وسلم: “فيوحِّده بالتحكيم والتسليم، والانقياد والإذعان، كما وحَّد المرسِل بالعبادة والخضوع، والذل والإنابة والتوكل.فهما توحيدان، لا نجاة للعبد من عذاب الله إلا بهما: توحيد المرسِل، وتوحيد متابعة الرسول؛ فلا يحاكِمُ إلى غيره، ولا يرضى بحُكم غيره”অতএব,উম্মাহর ওপর যা কর্তব্য তা হচ্ছে;তাঁকেই (রাসূল ﷺ-কে) ফায়সালার একমাত্র নির্ধারক হিসেবে মানা, তাঁর আদেশের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, তাঁর আনুগত্যে অবনত হওয়া এবং বিনম্রভাবে মেনে নেওয়া—যেমন তারা প্রেরক (আল্লাহ)-কে একত্বের সাথে ইবাদত করে, তাঁর সামনে বিনীত হয়, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাঁর উপরই ভরসা করে। সুতরাং এ দুটি হলো তাওহীদের দুটি শাখা—যার ব্যতীত বান্দার জন্য আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি নেই: (১) প্রেরক আল্লাহর তাওহীদ, এবং (২) রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণের তাওহীদ। তাই বান্দা অন্য কারো কাছে ফয়সালার জন্য যাবে না, এবং অন্য কারো ফায়সালায় সন্তুষ্টও হবে না।”(শারহুত ত্বহাবী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২২৮)
.
ইমাম ত্বহাবী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য এখানে নবীকে এককভাবে বিচারক হিসেবে মানা প্রসঙ্গে নয়; বরং তিনি হুকুমের একত্ব প্রসঙ্গে আলোকপাত করেছেন। কেননা, আল্লাহকে বিচারক হিসেবে মানা আর রাসূলকে বিচারক হিসেবে মানার মাঝে কোনো ভিন্নতা নেই। কারণ, রাসূল কখনো নিজের মনগড়া কথা বলেন না; তিনি যা বলেন, তা কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহীর ভিত্তিতেই বলেন।
.
আর বাস্তবিক অর্থে যাকে কেউ “তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ” বলে অভিহিত করেছেন,সেটি মূলত তাওহীদুল উলুহিয়্যাহরই একটি অংশ। কারণ তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ মানে আল্লাহকে এককভাবে ইবাদতের যোগ্য মানা। আর ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাঁর একক হুকুম মানা ও শরীয়াহ মেনে নেওয়া। সুতরাং, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করে—হারামকে হালাল কিংবা হালালকে হারাম করার ব্যাপারে, অথবা শরীয়াহবিরোধী আইন-প্রণয়নকে স্বীকৃতি দেয়—সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে উপাস্য বানিয়ে নেয়।আল্লাহ তাআলা বলেন:﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ﴾“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম-রাহেবদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে।”(সূরা আত-তাওবা: ৩১) অতএব, যে ব্যক্তি সৃষ্টিকুলের কারো হাতে বিরোধ নিষ্পত্তি বা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পণ করে, কিংবা এতে সম্মতি জানায়, কিংবা এর দিকে আহ্বান করে, কিংবা এর সমর্থনে দাঁড়ায়, কিংবা বিনা জবরদস্তিতে এটিকে মেনে নেয়—সে আল্লাহর সঙ্গে বড় শিরক করেছে। আর এই শিরকই তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়— আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই!
.
প্রিয় পাঠক! নতুন আবিষ্কৃত তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এটি আসলে দুইটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
.
প্রথম অংশ: মহাবিশ্ব সংক্রান্ত তাকদীর ও শরীয়াহ প্রণয়ন আল্লাহর একক অধিকার। এটি তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এগুলো একান্তই রবের কাজ। তিনি-ই একমাত্র সৃষ্টির উপর হুকুমদাতা এবং শরীয়াহ প্রণেতা। যেমন আল্লাহ বলেন:”আল্লাহ মানুষের জন্য শরীয়াহ প্রণয়নের অধিকার অন্যদের দেওয়াকে অস্বীকার করে বলেন:أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ “জেনে রাখো, সৃজন ও আদেশ তারই সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত বরকতময়।” (সূরা আরাফ:৫৪) তিনি আরও বলেন:وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃُ الۡفَصۡلِ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ”নাকি তাদের এমন কতগুলো শরীক রয়েছে, যারা এদের জন্য দ্বীন থেকে শরীআত প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?”(সূরা শুরা: ২১) অতএব, সৃষ্টিজগতের তাকদীর নির্ধারণ করা হোক বা দ্বীনের শরীয়াহ বিধান প্রণয়ন—উভয়ই একমাত্র আল্লাহরই একক অধিকার।
.
দ্বিতীয় অংশ: বান্দাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর ক্বদর এবং শরীয়াহকে মান্য করা, এবং সমস্ত বিবাদ ও মতবিরোধের বিচার আল্লাহর প্রদত্ত শরীয়াহর মাধ্যমে করা। এ কাজে তারা যখন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর প্রদত্ত সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এবং নিজের মনে কোনো দ্বিধা অনুভব করে না, তখন সেটিই প্রকৃত ঈমান।যেমন আল্লাহ বলেন:فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا”কিন্তু না, আপনার রবের শপথ তারা মুমিন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।”(সূরা নিসা ৬৫)। সুতরাং বান্দাদের জন্য আল্লাহর শরীয়াহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তা মেনে চলা প্রকৃত অর্থে ইবাদতের একটি রূপ। এটি অন্য কাউকে উৎসর্গ করা যায় না। বরং শুধুমাত্র আল্লাহর শর্তানুযায়ী বিচার-ফয়সালায় ফিরে যাওয়ায় আল্লাহর প্রতি একমাত্র ইবাদত প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাই তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর অংশ।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ মূলত তাওহীদের একটি দিক, যা প্রধানত তাওহীদুল রুবুবিয়্যাহর আওতায় পড়ে, বিশেষ করে শাসক (হাকিম) সম্পর্কিত বিষয়সমূহে। আল্লাহর ক্ষেত্রে এর অর্থ হলো: তিনিই প্রকৃত শাসক এবং একমাত্র বিধানদাতা। ফলে, যিনি সমস্ত বিষয়ের ওপর শাসন, নিয়ন্ত্রণ ও আদেশ-নিষেধ নির্ধারণ করেন, তিনিই আল্লাহ। এই দিকটি তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত। আবার বাস্তবিক দিক থেকে, বান্দা যখন আল্লাহর হুকুম মেনে চলে, তখন এটি তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর অন্তর্ভুক্তও হয়। সুতরাং, যেহেতু তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ তাওহীদের দুটি দিকই ধারণ করে, তাই এটিকে আলাদা করে চতুর্থ অংশে বিভক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি প্রয়োজন থাকত, তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রসিদ্ধ সালাফগণ এটি তাওহীদের চতুর্থ অংশ হিসেবে ব্যবহার করতেন।অতএব,আমাদের প্রসিদ্ধ সালাফগণ তাওহীদকে তিনটি তিনটি বিভক্ত করেছেন যেমন: ১.তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ ২.তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, ৩.তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। আর তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ মূলত তাওহীদের তিনটি অংশের মধ্যেই সন্নিবিষ্ট।যেমনটি আমরা উপরোক্ত আলোচনায় ব্যাখ্যা করেছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে বোঝার তৌফিক দিন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।
Share: