জেনে নিন কিছু বহুল প্রচলিত জাল হাদিস

একটি জাল হাদিস মেনে চলা মানে মিথ্যা প্রচার করা বা মিথ্যা অনুসরণ করে নিজেকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা। সুতরাং যে কোন হাদিস জানার আগে তার সূত্র এবং এটি সহিহ বা বিশুদ্ধ কিনা তা জেনে নেয়া খুব জরুরী। এর জন্য খুব কষ্ট করার দরকার নেই। কম্পিউটার থাকলে এক সার্চেই এর আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে। আর তা না থাকলে একজন ভালো আলিমের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক কিছু প্রচলিত জাল হাদিস এবং মিলিয়ে দেখে নিন আপনার জানা হাদিসগুলো এর ভেতর পড়ে কিনা।

১। “জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনে হলেও যাও”। (ইবন আদী ২/২০৭। ইবন জাওজী ও ইবন হিব্বান এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
বহুল ব্যবহৃত ও বহুল প্রচারিত একটি জাল হাদিস। একটু খতিয়ে দেখলে সাধরণ চোখেই এই হাদিসটির জালিয়াতি চোখে পড়ে। রাসুলুল্লাহ সাঃ যদি সত্যিই এ কথা বলতেন তাহলে অত্যন্ত কষ্টকর হলেও চীনে অগণিত সাহাবাদের যাতায়াত থাকতো। তাছাড়া সে সময় চীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্য এমন কোন যায়গা ছিলোনা যে জ্ঞানার্জনের জন্য কাছাকাছি অনেক যায়গা ছেড়ে সেখানে যেতে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলবেন।

২। “বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র”। (বাগদাদের ইতিহাস লিপিবদ্ধকালে খাতিব হাদিসটি লিপিবদ্ধ করেছেন, তবে তিনি নিজেই একে জাল বলেছেন)
শহীদদের মর্যাদা আর সকলের চেয়ে বেশী তা আল্লাহ্ নিজে কুরআনে বলেছেন। বহুল প্রচলিত এই জাল হাদিসটি দিয়ে মানুষকে শাহাদাতের বন্ধুর পথ থেকে অতি সূক্ষ্মভাবে দূরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একথা সত্য বলে মানার পর এমন কি কোন লোক থাকবে, যে বিদ্বান না হয়ে শহীদ হতে চাইবে?

৩। “মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথা বললে তা সৎকাজগুলিকে ধ্বংস করে, যেভাবে প্রাণী ঘাস সাবাড় করে”। (তাবাকাত আশ শাফি’ইয়া, চতুর্থ খন্ড, ১৪৫ পৃঃ)
মসজিদ হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্রের মতো। অন্যায় ও অশ্লীল কথা ছাড়া সকল ভালো কথা, কাজ, পরিকল্পনার যায়গা হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময় থেকেই ছিলো মসজিদ।

৪। “আরবদের তিন কারণে ভালোবেসো। প্রথমতঃ আমি একজন আরব, দ্বিতীয়তঃ কুরআন নাজিল হয়েছে আরবী ভাষায়, তৃতীয়তঃ জান্নাতের ভাষা হবে আরবী”। (মুসতাদরাক আল হাকিমঃ চথুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৮৭। রিজাল শাস্ত্রের অন্যতম সেরা স্কলার আবু হাতিম একে জাল প্রমাণ করেছেন)।
এই হাদিসটিও ইসলামের ভেতর জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প ঢুকাবার জন্য ব্যবহার করা হয়। আরব-অনারব কোন পার্থক্য ইসলামে নেই বরং এমন করার অপচেষ্টা কবিরা গুনাহ।

৫। “মুসলিমদের ভেতর এমন একজন ব্যক্তিও নেই, যার গুনাহগুলো জুম্মার দিনে ক্ষমা করে দেয়া হয় না”। (তাবরানি বর্ণিত। এটি জাল প্রমাণ করেছেন ইবন নাজর আল আসকালানী ও আজ জাহাবী)
সামান্য আমলের অবিশ্বাস্য ফজিলতের বর্ণনা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট বানাবার অপচেষ্টার অংশ হিসাবে এমন অনেক জাল হাদিস তৈরী করা হয়েছে। “আখেরী যুগে একটি সুন্নত পালন করলে সাতশ শহীদের সম্না সওয়াব পাওয়া যাবে” এটিও হলো বহুল প্রচারিত এমন আরেকটি জাল হাদিস।

৬। “আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা”। (লিপিবদ্ধ করেছেন আল হাকিম ৩/১২৬। ইমাম বুখারী এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
আলী রাঃ এর প্রতি বাড়াবাড়ি দেখাতে গিয়ে শিয়াদের দ্বারা অগণিত জাল হাদিস ব্যবহৃত হয়, যার ভেতর এটি হলো বহুল ব্যবহৃত একটি জাল হাদিস। যদিও আলী রাঃ এর মর্যাদা সম্পর্কে বিশুদ্ধ হাদিস আছে।