জানাযার সালাত পড়ার সঠিক পদ্ধতি

০১. ওযু করুন। [০১]

০২. সালাতের পূর্বশর্তসমূহ পূরণ করুন। [০২]

০৩. কিবলা মুখি হয়ে দাঁড়ান। [০৩]

০৪. তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলুন। [০৪]

০৫. তাকবীরের সাথে উভয় হাত উত্তোলন করুন। [০৫]

০৬. ডান হাতকে বাম যেরার উপরে রাখুন। [০৬]

০৭. ডান হাতকে বাম যেরার উপরে রেখে; বুকের উপর স্থাপন করুন। [০৭]

০৮. তারপর নিম্নোক্ত দুআটি পড়ুন। [০৮]

أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ

আ’উযু বিল্লাহিস সামি’ইল আলীম মিনাশ-শাইত্বানির রাজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি।

অর্থঃ শাইত্বান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হতে আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চাই।

০৯. অতঃপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ুন। [০৯]

১০. অতএব সূরা আল ফাতিহাহ পড়ুন। [১০]

১১. সূরা আল ফাতিহাহ পড়ার পর আমীন বলুন। [১১]

১২. (আবার) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ুন। [১২]

১৩. এরপর আপনার পছন্দের যে কোন সূরা পাঠ করুন। [১৩]

১৪. তার পরে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে, দুই হাত উত্তোলন করুন। [১৪]

১৫. তারপর নাবী (সা) এর উপর দুরূদ পড়ুন, যেমনঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী। [১৫]

১৬. আবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে, দুই হাত উত্তোলন করুন। [১৬]

১৭. মৃত বেক্তির জন্য আন্তরিক ভাবে দুআ করুন। [১৭] নিম্নোক্ত কিছু মাসনুন দুআ’র উদাহরণ দেওয়া হলোঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লা হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা’আহয়িহি ‘আলাল ইসলাম। ওয়ামান তাওয়াফ্‌ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যকার জীবিত, মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট, বড় এবং পুরুষ ও মহিলা সবাইকেই মাফ করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যে ব্যক্তিকে আপনি বাচিয়ে রাখেন তাকে ইসলামের উপর বাচিয়ে রাখুন এবং যে ব্যক্তিকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করুন। [১৮]

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদি, ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাসি, ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহি, ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ‘য়িযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া ‘আযাবিন নার।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। [১৯]

اللهُمَّ إِنَّ فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَأَعِذْهُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা, ওয়া হাবলি জিওয়ারিকা, ফাআ-ইযহু মিন ফিতনাতিল ক্বাবরি ওয়া আযা-বিন না-রি, ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফাই ওয়াল হাক্ক, ফাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।

অর্থঃ হে আল্লাহ, অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মাদারীতে, আপনার প্রতিবেশিত্বের নিরাপত্তায়; সুতরাং আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা থেকে এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আর আপনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং প্রকৃত সত্যের অধিকারী। অতএব, আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। [২০]

اللَّهُمَّ إِنَّهُ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا فَتَجَاوَزْ عَنْ سَيِّئَاتِهِ اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মা ইন্নাহু‘আবদুকা, ওয়াবনু ‘আবদিকা, ওয়াবনু আমাতিকা, কানা ইয়াশ-হাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আন্তা। ওয়া আন্না মুহাম্মাদ ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুকা, ওয়া আনা আ’লামু বিহি, আল্লা হুম্মা ইন কা-না মুহসিনান, ফাযিদ ফী ইহসানিহি, ওয়া ইনকা-না মুসীআন, ফা তাজা-ওয়ায ‘আন সাইয়ি-আতিহি, আল্লা হুম্মা লা তাহরিম-না আজরাহু, ওয়া তাফতিন্না বা’দাহু।

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! এই ব্যক্তি আপনার বান্দা এবং আপনার বান্দা ও বান্দীর পুত্র, সে সাক্ষ্য দিত যে, আপনি ব্যেতিত অন্য কোন মা’বুদ নাই এবং মুহাম্মাদ (সা) আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল, আপনি এই বান্দা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ্‌! এই ব্যক্তি যদি প্রকৃত নেক বান্দা হন তবে তাঁহার নেকী বৃদ্ধি করুন। আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে তাহাকে ক্ষমা করিয়া দিন। হে আল্লাহ্‌! ইহার পুণ্যের সওয়াব হইতে আমাদিগকে বঞ্চিত করিবেন না এবং তাঁহার পর আমাদিগকে ফিতনায় লিপ্ত করিবেন না। [২১]

اللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মা আ‘য়িযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি।

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! ইহাকে কবরের আযাব হইতে বাঁচান। [২২]

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ تَوَفَّيْتُهُ مِنْهُمْ فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيمَانِ، وَمَنْ أَبْقَيْتُهُ مِنْهُمْ فَأَبْقِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা, ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা, ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা, আল্লা হুম্মা মান তাওয়াফফাইতুহু মিনহুম ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান। ওয়ামান আবকাইতুহু মিনহুম ফাআবকিহি ‘আলাল ইসলাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যকার জীবিত, মৃত, ছোট, বড়, পুরুষ, মহিলা এবং উপস্থিত ও অনুপস্থিত সবাইকেই মাফ করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ঈমানের উপরেই মৃত্যু দিয়েন। আর তাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের উপরেই জীবিত রাখেন। [২৩]

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِهَذِهِ النَّفْسِ الْحَنِيفِيَّةِ الْمُسْلِمَةِ، وَاجْعَلْهَا مِنَ الَّذِينَ تَابُوا، وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ، وَقِهَا عَذَابَ الْجَحِيمِ

উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মাগফির লিহাযিহিন-নাফসিল হানীফিইয়াতিল মুসলিমাতি, ওয়াজ’আলহা মিনাল লাযীনা তাবু, ওয়াত-তাবা’য়ু সাবীলিকা, ওয়া কিহা আযাবাল জাহীম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি এই একনিষ্ঠ মুসলিম প্রাণ/আত্মাকে ক্ষমা করো। এবং এই আত্মাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো যারা তাওবা করেছে এবং তোমার পথ অনুসরণ করেছে। এবং তাকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। [২৪]

১৮. মৃতের জন্য দুআ করার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। [২৫]

সুতরাং যে কোন প্রমাণিত দুআ করা জায়েয হবে। সাইয়েদুনা আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রা) এবং তাবেঈনদের কথা অনুযায়ী বুঝা যায় যে মৃত ব্যেক্তির জন্য একাধিক দুআ এক সাথে পড়া যায়।

১৯. আবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলুন। [২৬]

২০. তারপর ডান দিকে শুধু একবার সালাম ফিরাবেন। [২৭]

সমাপ্ত, আলহামদুলিল্লাহ !
পোস্ট :- সালাফী মানহাজ।।