ছেলে বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইলে বিবাহ

ছেলে বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইলে বিবাহ জায়েজ কি এবং জায়েজ হলে উক্ত বিবাহ সম্পাদানের বিশুদ্ধ পদ্ধতি।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
বিবাহের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনা সামনি হওয়াই উত্তম। তবে অনলাইন তথা টেলিফোন বা ইন্টারনেটের মতো আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিবাহের চুক্তি সম্পাদন জায়েজ কিনা এই মর্মে আহালুল আলেমদের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, পাত্র-পাত্রী উভয় পক্ষ পরস্পরে জানাশোনা ও বিশ্বস্ত হলে কোনরকম ধোঁকা-প্রতারণার সম্ভাবনা না থাকলে মেয়ের অভিভাবকের উপস্থিতিতে দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষীর সামনে মোবাইলের মাধ্যমে ছেলে সম্মতি প্রকাশ করলে বিবাহ সিদ্ধ হবে। কারণ, বিবাহের রুকন হলো ঈজাব ও কবুল, আর শর্ত হলো- পাত্র-পাত্রী উভয়ের সম্মতি যা টেলিফোন অথবা মোবাইলেও সম্পাদন করা সম্ভব। তবে কোনরূপ ধোঁকার আশ্রয় নিলে বিবাহ বাতিল হবে। কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’(সহীহ মুসলিম হা/১০১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১২৬, আরো বিস্তারিত জানতে ইসলাম সাওয়াল ওয়া জওয়াব, ফৎওয়া নং-২২০১, ১০৫৫৩১)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে বিবাহের সমস্ত শর্তাবলী পূরণ করে অনলাইনের মাধ্যমে বিবাহ জায়েজ হবে কিনা মর্মে প্রশ্ন করা হলে জবাবে শাইখ বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে ধোঁকা ও প্রতারণার আশঙ্কা না থাকলে এবং উক্ত মাধ্যমে বিবাহের শারঈ শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে উক্ত বিবাহ সহীহ হবে। (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জওয়াব, ফৎওয়া নং-২২০১)
.
মোবাইলে বিবাহ সম্পাদনের নিয়ম হলো, কাজী সাহেব বা কোন ইমাম সাধারণ বিবাহের ন্যায় প্রথমে বিবাহের খুৎবা পাঠ করবেন, যা দুই পক্ষ শুনবে। (সুনানে দারেমী হা/২২০২; মিশকাত হা/৩১৪৯) অতঃপর অভিভাবক কর্তৃক মেয়ের সম্মতি নিয়ে টেলিফোন, মোবাইল বা যেকোন অডিও বা ভিডিও কলের মাধ্যমে দু’জন ন্যায় পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতিতে মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বলেবন, আমার মেয়ে ওমুক (ছেলের নাম স্পষ্ট করে) এতো নগদ ও এতো বাকী মোহরের বিনিময়ে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাযী তুমি তাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করো। তখন সে (বর) অপর প্রান্ত থেকে মেয়ের ওলী ও দুজন সাক্ষীকে শুনিয়ে বলবে,‘ক্বাবিলতু’ (আমি গ্রহণ করলাম)। বা আমি এই বিবাহ কবুল করছি।’ বললে বিবাহ সম্পাদন হয়ে যাবে। এরূপ তিনবার বলা ভালো। কারণ রাসূল (ﷺ) গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনবার বলতেন। (সহীহ বুখারী, মিশকাত, হা/৩০৮) এরপর সকলে বরের উদ্দেশ্যে একাকী এই দুআ করবে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন; রাসূল (ﷺ) কোনো ব্যক্তির বিবাহ সম্পাদন কালে বলতেন, بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيَنَكُمَا فِىْ خَيْرٍ، উচ্চারণ : বা-রাকাল্লুহ লাকা ওয়া বা-রাকা আলাইকুমা ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খয়রিন। অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন ও তোমাদের উভয়কে বরকত দান করুন। তিনি তোমাদের উভয়ের মাঝে দাম্পত্য মিলন কল্যাণমণ্ডিত করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯৫৭; তিরমিযী, হা/১০৯১)। তারপর খেজুর দিয়ে সবাই মিষ্টিমুখ করবে। এইখানেই বিবাহের আসল কার্যক্রম শেষ। জেনে রাখা ভাল যে,আক্দের অর্থাৎ বিবাহ পড়ানোর সময় কনে মাসিক অবস্থায় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। তবে মাসিক অবস্থায় বাসর শয্যায় সহবাস করা যাবে না।
.
মোবাইলে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর চাইলে ওয়ালীমা করা যায়, যদিও বাসর না হয়। কেননা বিবাহ সংঘটিত হয়েছে। (ফাৎহুল বারী হা/৫১৬৬- ‘অলীমা’ অনুচ্ছেদ,পৃ ৯/২৩১)। বিবাহের পর ওয়ালীমা করা বিশুদ্ধ মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। (ইমাম নববী,শরহ মুসলিম ৯/২১৭)। রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অলীমা বাসরের পরে ছিল। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২১২; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৭৮)। তবে কারণবশতঃ অলীমার দিন বিলম্বিতও করা যায়। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, সাতদিন বা অনুরূপ দিন পর্যন্ত অলীমা করা যায়। রাসূল (ﷺ) অলীমার সময়কে এক বা দুই দিনের জন্য খাছ করেননি। (সহীহ বুখারী; ১৭/২৬৫)। হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তিনি অলীমার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেননি যেদিন অলীমা করাকে ওয়াজিব বা মুস্তাহাব বলা হবে। আর এটি তিনি ‘আম হাদীস’ থেকে নিয়েছেন। (ফাৎহুল বারী; ৯/২৪৩)
.
উল্লেখ্য যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রীপক্ষের কোন দায়িত্ব নেই, মেহমানদারী ব্যতীত। তাও সেটা বাধ্যতামূলক নয় বরং ইচ্ছাধীন। আর ছেলে পক্ষের উপর অর্থাৎ ওয়ালীমা অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ করা ছেলের উপর কর্তব্য, মেয়ের নয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বর-কনে উভয়ের নিকট আত্মীয়-স্বজন সহ এলাকার গরীব অসহায় মুসলিমদের দাওয়াত দেয়া উত্তম, তবে মেয়ের পিতা যদি সন্তুষ্টি চিত্তে ওয়ালীমার অনুষ্ঠান করে বর পক্ষের লোককে দাওয়াত করে তাহলে তারা খেতে পারবে, এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা মেয়ের বাবার জন্যও ওলীমা করা জায়েয কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। (কিতাবু মাওকেউ ইসলাম সওয়াল ও জওয়াব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৮৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।