কেন আল্লাহ একটি ধর্ম তৈরি করলেন না?

উত্তরঃ ডা. জাকির নায়েক ৷
.
যদি আপনি কুরআন পড়েন ৷ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন—
.
”নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম।
Al-Quran (Aal-i-Imraan No3 Verse No: 19)
.
আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ৷ ইসলাম মানে আল্লাহতাআলার কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করা ৷ যদি আপনি সবগুলো ধর্মই দেখেন ৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহ, নবী বা রাসূল প্রেরণ করেছেন এক ধর্ম প্রচারের জন্য ৷ সব নবী রাসূল আদম আঃ থেকে শুরু করে নূহ আঃ, মূসা আঃ, ঈসা আঃ, মুহাম্মদ সাঃ সকল নবীগণই ৷ পবিত্র কুরআনে আছে —
.
”আমি তোমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।”
Al-Quran (Faatir No35 Verse No: 24)
.
আল্লাহ বলেন—
.
”যারা কুফুরী করেছে তারা বলে, ‘তার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ তুমি তো শুধু সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে একজন সঠিক পথ প্রদর্শনকারী।”
Al-Quran (Ar-Ra’d No13 Verse No: 7)
.
ভাই সকল নবীগণই যারা এসেছিলেন তারা কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছেকে সমর্পণের কথাই শিখিয়েছেন ৷ মূলকথা যা সকল নবীগণই শিক্ষা দিয়েছেন একত্ববাদের কথা বলেছেন ৷ তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তার কোন মা নেই, তার কোন বাবা নেই, তিনি কেবল একক, তার মত কোন কিছুই নেই ৷ আর সময়ের শ্রোতে পূর্ববর্তী নবীগণ যা প্রচার করেছেন তা পরিবর্তন হয়েছে ৷ লেকচারে আমি বলেছি ৷ প্রায় সব ধর্মগ্রন্থ যেগুলো কুরআনের আগে এসেছে পরিবর্তিত হয়ে গেছে ৷ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে একাধিকবার বলেছেন যদি তিনি চাইতেন তবে সবাইকে আত্মসমর্পণকারী বানাতে পারতেন ৷ মুসলিম বানাতে পারতেন ৷ ভাই মুসলিম শব্দটাকে ধর্ম মনে করবেন না ৷ ইসলাম শব্দের অর্থ হল একটি দ্বীন একটি জীবনব্যবস্থা ৷ নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করা ৷ আর মুসলিম মানে এরকম নাম থাকা নয় যে আবদুল্লাহ, সুলতান, জাকির ৷ মুসলিম হল যে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে ৷ যদি আপনার ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পন করেন তাহলে আমি আপনাকে বলব মুসলিম ৷ সুতরাং শুধু এই লেভেল দেখবেন না যে জাকির, সুলতান, আবদুল্লাহ ৷ আরবিতে মুসলিম মানে যে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করে ৷ যদি কেউ নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেন তিনি একজন মুসলিম ৷ সুতরাং সকল নবীগণই শিক্ষা দিয়েছেন যে আমাদের ইচ্ছাকে সমর্পণ করতে হবে ৷ সবাই এক আল্লাহর কথা শিক্ষা দিয়েছেন ৷ সবাই তাওহীদ শিক্ষা দিয়েছেন ৷ কিন্তু সময়ের আবর্তনে সব গ্রন্থই পরিবর্তন হয়ে গেছে ৷ এই কারণে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত নবী মুহাম্মদ সাঃ কে প্রেরণ করেছেন ৷ এবং সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বার্তা পবিত্র কুরআন ৷ সকল নবী যারা মুহাম্মদ সাঃ এর আগে এসেছিলেন এবং সকল গ্রন্থ যেগুলো পবিত্র কুরআনের আগে এসেছিল ৷ সেগুলো শুধু সে সময়কার লোকদের জন্য এসেছিল ৷ কুরআন চারটির নাম উল্লেখ আছে তাওরাত, যাবুর, ইনজীল এবং কুরআন ৷ তাওরাত হল সেই ওহী বা আল্লাহর বাণী যা মূসা আঃ কে দেওয়া হয়েছিল ৷ যাবুর আল্লাহর পক্ষ থেকে দাউদ (আঃ) কে দেওয়া হয়েছিল ৷ ইনজীল হল সেই ওহী বা আল্লাহর বাণী যা ঈসা আঃ কে দেওয়া হয়েছিল ৷ আর কুরআন হল সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত বার্তা, সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী মুহাম্মদ সাঃ কে দেওয়া হয়েছে ৷ কুরআন আরও বলছে —
.
”হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূলের, তাঁর রসূলের নিকট তিনি অবতীর্ণ করেছেন সেই কিতাবের এবং পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে, তাঁর রসূলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করে সে সীমাহীন পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” Al-Quran (An-Nisaa No4 Verse No: 136)
.
সুতরাং পূর্বেও কিতাব নাযিল করা হয়েছিল ৷ কিন্তু সব কিতাব যা কুরআনের আগে এবং সকল নবী যারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগে এসেছিলেন তারা শুধু সেই সময় এবং সেই সময়ের লোকদের জন্য প্রেরিত ৷ এ কারণেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখেন নি ৷ যেহেতু কুরআন সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত বার্তা তাই এটা শুধু মুসলিম বা আরবদের জন্য না ৷ এটা সমগ্র মানবজাতির জন্য এবং নবী মুহাম্মদ সাঃ শুধু আরব বা মুসলিমদের জন্য নয় তাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য আর একারণেই তার কথা উল্লেখ আছে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থ গুলোতে ৷ আর এই কিতাব পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন—
.
”নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।”
Al-Quran (Al-Hijr No15 Verse No: 9)
.
তার মানে আমরা দেখছি সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেছিলেন একটাই ধর্ম প্রচার করার জন্য ৷ মানে আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করার জন্য ৷ আরবিতে এটা ইসলাম ৷ যীশু খ্রীষ্ট কখনোই খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি ৷ খৃষ্টান শব্দটি যে বাইবেলে নেই সেটা কি আপনি জানেন? পুরো বাইবেলে খৃষ্টান শব্দটি খুঁজে পাবেন না ৷ তিনি খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করেন নি ৷ খৃষ্টান শব্দটা দ্বারা মূলত এন্টিওয়াকে ( Antioch) যীশুর অনুসারীদের বোঝাতো [ Book of Acts 11:26 ৷ ডাক নাম ৷ সুতরাং যীশু খ্রীষ্ট ইসলাম প্রচার করেছেন ৷ এটা আছে—
.
“আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না৷ আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) যেমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি৷
[Gospel of John 5:30]
.
আরবিতে বললে তিনি ইসলাম প্রচার করেছিলেন ৷ সুতরাং আমরা দেখছি সব নবী রাসূলই নিজের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করার শিক্ষা দিয়েছেন ৷ এজন্যই কুরআন বলছে—
.
”নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম।”
Al-Quran (Aal-i-Imraan No3 Verse No: 19)
.

আমাদের উচিত ধর্মগ্রন্থে ফিরে যাওয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশে ফিরে যাওয়া এবং নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নির্দেশের কাছে সমর্পণ করুন তাহলেই আপনি সত্য পথে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
.
আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন ৷
.
ভিডিও লিঙ্কঃ ↴
 বাংলায় – https://m.youtube.com/watch?v=1kEiio52MeQ
 ইংরেজীতে – https://m.youtube.com/watch?v=9PgzHCdLdag