ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। অতঃপর এই উম্মতের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর ফিতনা দাজ্জাল নাকি নারীরা এই প্রশ্নটি গভীরভাবে ব্যাখ্যার দাবি রাখে। কারণ আমরা সহীহ হাদীসসমূহে ফিতনা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা দেখতে পাই, যা এই বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে।কুরআন সুন্নাহর আলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়; নারী-সংক্রান্ত ফিতনার প্রভাব মূলত ব্যক্তির নৈতিকতা, চরিত্র ও কামনা-বাসনার জগতে সীমাবদ্ধ। এটি মানুষের আত্মসংযম, চরিত্র গঠন এবং তাক্বওয়ার জন্য এক বিশাল পরীক্ষা। এই ফিতনা বাহ্যিকভাবে আকর্ষণীয় হলেও এর অন্তর্নিহিত বিপদ লুকিয়ে থাকে নফসের দুর্বলতা, প্রবৃত্তির কাছে পরাজয় এবং সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়ের মধ্যে। অন্যদিকে দাজ্জালের ফিতনা একেবারে ঈমান, তাওহীদ এবং দ্বীনের মৌলিক আকীদার উপর সরাসরি আঘাত হানে। এটি মানুষের ঈমানকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো ভয়াবহ এক পরীক্ষা, যা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, বরং সমগ্র উম্মাহ নারী পুরুষ উভয়ের আকীদাগত ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই ফিতনা চাক্ষুষ মু‘জিযা ও ধোঁকায় পরিপূর্ণ, যা কেবল আল্লাহর সাহায্য, দৃঢ় ঈমান ও সুগভীর ইলম ছাড়া মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সুতরাং এ দুই ফিতনার প্রকৃতি একে অপরের থেকে ভিন্ন। নারীদের ফিতনা মূলত শারীরিক ও নৈতিক পরীক্ষা, আর দাজ্জালের ফিতনা হলো চূড়ান্ত ঈমানি ও আক্বীদাগত পরীক্ষা। এই পার্থক্য আমাদেরকে ফিতনা চেনার ও তা থেকে আত্মরক্ষার পদ্ধতিকে ভিন্নভাবে নির্ধারণ করার দিকে আহ্বান জানায়। উদাহরণস্বরূপ:
.
আদম (আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে দাজ্জালের ফিতনা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফিতনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ দিয়েছেন। এজন্য নূহ আলাইহিস সালাম থেকে আরম্ভ করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবীই তাদের সম্প্রদায়কে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। যাতে তারা সাবধান থাকতে পারে এবং দাজ্জালের বিষয়টি তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। রাসূলদের দায়িত্ব ছিল উম্মতকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সাবধান করা। যেমন আবূ দাহমা, আবূ কাতাদাহ্ (রাযি:) ও অনুরূপ আরো কতক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, হিশাম ইবনু ‘আমির এর সামনে দিয়ে আমরা ‘ইমরান ইবনু হুসায়নের কাছে যেতাম। একদিন হিশাম (রা.) বললেন, তোমরা আমাকে অতিক্রম করে এমন লোকের কাছে যাচ্ছ, যারা আমার চেয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বেশী উপস্থিত হয়নি এবং যারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসের ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি জানে না। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আদম (‘আ:)-এর সৃষ্টির পর হতে কিয়ামাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাজ্জালের চেয়ে মারাত্মক আর কোন সৃষ্টি হবে না।”(সহিহ মুসলিম হা/৭২৮৫; ই.ফা. ৭১২৮, ই.সে. ৭১৮১) কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন;( أمر أكبر من الدجال ) فهو كبر الشأن وعظم الفتنة، لا كبر الجسم، هذا الأظهر، وقد يحتمل أنه يشير إلى عظم الجسم “এটি দজ্জালের চেয়েও বড় বিষয় অর্থাৎ গুরুত্ব ও ফিতনার দিক থেকে বড়, শরীরের আকারে বড় নয়, এটিই সবচেয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা। তবে এটি শরীরের আকার বড় হওয়ার দিকেও ইঙ্গিত করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও থাকতে পারে।” (ইকমালুল মু‘আল্লিম; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৫০৪)।
.
অপরদিকে নারীদের ফিতনা সম্পর্কে উসামা ইবনে যায়েদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,“পুরুষ জাতির জন্য নারীদের অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিতনা আমি রেখে গেলাম না।”(সহীহ বুখারী, হা/৫০৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪০; তিরমিযী, হা/২৭৮০; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৯৮; আহমাদ, হা/২১৭৪৬) তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন, “সুতরাং তোমরা দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থাক এবং নারীদের ব্যাপারে সাবধান থাক। কেননা বানী ইসরাঈল জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম নারীদের মাঝেই ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল।” (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪২; তিরমিযী, হা/২১৯১; ইবনু হিব্বান, হা/৩২২১; আহমাদ, হা/১১১৪৩; বাইহাক্বী, হা/৬৭৪৬) হাদীস দুটি থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, নারীর চেয়ে ভয়ংকর ফিতনা পুরুষের জীবনে আর নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী কখনো মিথ্যা হতে পারে না। পুরুষের পরীক্ষার জন্য বা বিপদে ফেলার জন্য নারী সবচেয়ে বড় অস্ত্র। একজন বিজ্ঞ-সচেতন পুরুষকে নারী যত দ্রুত তার বশে আনতে পারে পৃথিবীতে তা আর কেউ পারে না। নারী পুরুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বিকল করে ফেলতে পারে। তাকে ইচ্ছা মতো তার পিছনে পিছনে ঘুরাতে পারে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। তার মোহিনী জালে যে কাউকে আটকে ফেলতে পারে। আল্লাহ যাকে হেফাযত করবেন তা ভিন্ন কথা। বিধায় তাদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
.
উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা ইবনে বাত্তাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:وفى حديث أسامة أن فتنة النساء أعظم الفتن مخافة على العباد؛ لأنه عليه السلام عمم جميع الفتن بقوله: (ما تركت بعدى فتنة أضر على الرجال من النساء) ، ويشهد لصحة هذا الحديث قول الله تعالى: ( زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ ) الآية، فقدم النساء على جميع الشهوات. وقد روى عن بعض أمهات المؤمنين أنها قالت: من شقائنا قدمنا على جميع الشهوات. فالمحنة بالنساء أعظم المحن، على قدر الفتنة بهن، وقد أخبر الله مع ذلك أن منهن لنا عدوًا، فينبغى للمؤمن الاعتصام بالله، والرغبة إليه في النجاة من فتنتهن، والسلامة من شرهن “উসামার (রা.) হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের ফিতনা অন্যান্য সকল ফিতনার তুলনায় সবচেয়ে ভয়ানক ও আশঙ্কাজনক বান্দাদের জন্য। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীসে সবধরনের ফিতনাকে সাধারণভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁর এই বাণীর মাধ্যমে: ‘আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোনো ফিতনা রেখে যাইনি।”হাদীসের সত্যতার প্রমাণ কুরআনের এই আয়াত থেকেও মেলে:زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ”মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি”…(সূরা আলে ইমরান: ১৪)
এই আয়াতে আল্লাহ নারীকে সকল কামনার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন। এ বিষয়ে মুমিনদের একজন মাতা (উম্মুল মুমিনীন) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছিলেন: “আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, আমাদেরকেই সমস্ত কামনার আগে স্থান দেওয়া হয়েছে।” অতএব, নারীদের মাধ্যমে পরীক্ষা (মিহনাহ) সবচেয়ে কঠিন ও বড় ধরনের পরীক্ষা এটি নির্ভর করে তাদের ফিতনার মাত্রার উপর।আর আল্লাহ তাআলা এটাও জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। তাই একজন মুমিন ব্যক্তির উচিত আল্লাহর আশ্রয়ে থাকা, এবং এই ফিতনা থেকে মুক্তি ও নারীদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করা”।(ইবনু বাত্তাল, শারহু সহীহিল বুখারী, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৮৮)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
: وفي قول الرسول صلوات الله وسلامه عليه : ( ما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء ) دليل على عظم فتنة النساء وأنه يجب علينا التحرز بقدر المستطاع من الوقوع في فتنتهن لأن المرأة تفتن الرجل حتى ربما يكفر بالله العظيم من أجلها وقد ذكر مرّ بي في أحد الكتب أظنه لابن الجوزي أن مؤذناً صعد المنارة ليؤذن فرأى امرأة جميلة على سطح فأعجبته وتعلقت نفسه بها فاتصل بها فقالت له إنها نصرانية ولا تقبل أن تتزوج به حتى يتنصر فحاولها فأبت إلا أن يتنصر ، فتنصر والعياذ بالله فلما تنصر قالت له إذا كان هذا دينك وعقيدتك بهذا الرخص عندك فأنا قد أكون أرخص من ذلك عندك وتطلقني بأدني سبب ولا رغبة لي فيك شوف كيف الآن خسر الدنيا والآخرة والعياذ بالله ففتنة النساء عظيمة لأنها تدخل على الإنسان التقي والعالم والجاهل والفاسق وعلى كل أحد فيجب على الإنسان أن يحرص غاية الحرص من درء هذه الفتنة ، ليس في نفسه فقط بل حتى في مجتمعه بناءً على ذلك يجب علينا أن نبصر أولئك القوم الذين يدعون إلى سفور المرأة وتبرجها ومخالطتها للرجال وأن نبين لهم أن هذا هدم للأخلاق والأديان والمستقبل أيضاً لأن الشعوب إذا أصبحت بهيمية ليس لها إلا شهوة الفرج وملء البطن أصبحت لا قيمة لها وأصبحت ذليلة ، ذليلة أمام الدنيا وأمام جبابرة الخلق ولهذا ما استولى أعداء المسلمين على المسلمين إلا بهذه الوسائل ، زجوا لهم بالنساء كما نسمع في نكبات وقعت بالمسلمين أنهم أي الأعداء قالوا اغزوهم بالنساء يسروا لهم أمور النساء أطلقوا النساء الجميلات ووفروا لهن كل ما يفتن الرجال وسهلوا الوصول إليهن ، وحينئذٍ تملكون عقول الرجال وتملكون ديارهم وأموالهم وهذا هو الذي حصل ، وقوله عليه الصلاة والسلام : ( ما تركت بعدي فتنة أضر ) لو قال قائل إن الرسول صلى الله عليه وسلم قال : إنه ما حصلت فتنة منذ خلق آدم إلى أن تقوم الساعة أشد من فتنة المسيح الدجال فكيف نجمع بينهما نقول : لكل واحد منهما مصب فهذا فيما يتعلق بالأخلاق والعفة وذاك فيما يتعلق بالأديان فإن أعظم فتنة على الدين هي فتنة المسيح الدجال التي مرّ عليكم شيئاً منها وأن من فتنته أنه يدعو القوم إلى عبادته فيأبون فينصرف عنهم ثم يصبحون ممحلين ما عندهم زرع ولا ضرع ، ويأتي للقوم فيدعوهم فيستجيبون دعوته فيقول للسماء أمطري فتمطر ويقول للأرض أنبتي فتنبت فتصبح مواشيهم أسمن ما يكون وأكثر ما يكون لبناً وضرع هذه فتنة ولا لا ؟ والله فتنة من أعظم الفتن ، فتنة لا يسلم منها إلا من سلمه الله عز وجل .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীতে: “আমি আমার পরে পুরুষদের ওপর নারীদের ফিতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা রেখে যাইনি।” এই হাদীসে নারীদের ফিতনার ভয়াবহতা ও গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের উচিত নারীদের ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে যথাসম্ভব নিজেকে রক্ষা করা। কারণ, একজন নারী পুরুষকে এমনভাবে ফিতনায় ফেলতে পারে যে, সে তার কারণে মহান আল্লাহর সাথে কুফরিও করে বসতে পারে। আমি একটি বইয়ে (সম্ভবত ইবনুল জাওযীর কোনো গ্রন্থে) এমন একটি ঘটনা পড়েছি: এক মুয়াযযিন (আজান দানকারী) মিনারে উঠে আজান দিতে গিয়ে একটি সুন্দরী নারীকে ছাদে দেখল। সে নারীতে মুগ্ধ হয়ে গেল এবং তার প্রতি মন আকৃষ্ট হলো। পরে তার সাথে যোগাযোগ করলে নারীটি জানায় যে, সে একজন খ্রিস্টান এবং সে কখনোই মুসলিমের সাথে বিয়ে করবে না যতক্ষণ না সে (পুরুষটি) খ্রিস্টান হয়ে যায়। সে চেষ্টা করল, কিন্তু নারী তাতে রাজি হয়নি যতক্ষণ না সে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। অবশেষে সে (পুরুষ) খ্রিস্টান হয়ে গেল আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন! এরপর নারীটি তাকে বলে: “যদি তোমার ধর্ম ও আকীদা এতটাই তোমার কাছে সস্তা হয় যে, আমার কারণে তুমি তা ছেড়ে দিতে পারো, তবে আমি তো তোমার কাছে আরও সস্তা হতে পারি! তুমি সামান্য কারণেই আমাকে তালাক দিতে পারো, তাই আমার আর তোমার মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। দেখো, সে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই হারিয়ে ফেলল! আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। নারীদের ফিতনা খুবই ভয়ংকর, কারণ এটি ধার্মিক, আলেম, অজ্ঞ, পাপী সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যেই প্রবেশ করে। তাই মানুষের উচিত নিজের এবং তার সমাজের মধ্যেও এই ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এর আলোকে আমাদের উচিত: যারা নারীকে প্রকাশ্যে আনতে, তাকে সাজিয়ে-গুজিয়ে পুরুষদের সাথে মেলামেশার দিকে আহ্বান জানায়, তাদেরকে সতর্ক করা। তাদের বোঝানো উচিত যে, এটি নৈতিকতা, ধর্ম ও ভবিষ্যতের ধ্বংসের পথ। কারণ, যখন কোনো জাতি পশুবৎ হয়ে পড়ে তাদের লক্ষ্য থাকে কেবল যৌন সুখ ও পেট পূরণ তখন সে জাতির আর কোনো মূল্য থাকে না, তারা লাঞ্ছিত হয়ে পড়ে। তারা দুনিয়ার সামনে ও দুনিয়ার জালিমদের সামনে অপমানিত হয়ে পড়ে। এ কারণেই মুসলিমদের শত্রুরা মুসলিমদেরকে পরাজিত করতে নারীদেরকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। যেমন আমরা মুসলিমদের দুর্যোগে শুনে থাকি, শত্রুরা বলেছে: “তাদেরকে নারীদের মাধ্যমে আক্রমণ করো। নারীদের বিষয় সহজ করে দাও। সুন্দরী নারীদের সামনে আনো, তাদের এমনভাবে সাজাও যা পুরুষদের ফিতনায় ফেলবে এবং তাদের কাছে পৌঁছানো সহজ করে দাও। এইভাবে তারা পুরুষদের মস্তিষ্ককে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদও দখল করে নেয়।এটাই বাস্তবে ঘটেছে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণী: “আমি আমার পরে পুরুষদের ওপর নারীদের ফিতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা রেখে যাইনি।” এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে রাসূল (ﷺ) তো বলেছেন, আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনা তাহলে এই দুটি কথার মধ্যে সমন্বয় কীভাবে করা যাবে?” উত্তর হবে: দুইটি ফিতনার ক্ষেত্র ভিন্ন। নারীর ফিতনা হলো নৈতিকতা ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। আর দাজ্জালের ফিতনা হলো ধর্ম ও আকীদার ক্ষেত্রে। দাজ্জালের ফিতনা ধর্মের উপর সবচেয়ে ভয়ানক ফিতনা। তোমরা তার কিছু বিবরণ শুনেছো: সে কিছু জাতিকে ডেকে বলবে তাকে ইবাদত করতে, তারা অস্বীকার করবে। তখন সে তাদের ছেড়ে চলে যাবে, এবং পরদিন তারা দুর্ভিক্ষে পড়বে তাদের কোনো ফসল বা পশু থাকবে না। সে আরেক জাতিকে ডেকে বলবে, তারা রাজি হয়ে যাবে। তখন সে আকাশকে বলবে বৃষ্টি দাও বৃষ্টি হবে। সে মাটিকে বলবে উদ্ভিদ ফলাও মাটি ফলাবে। তাদের গবাদিপশু সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান হয়ে যাবে এবং সবচেয়ে বেশি দুধ দেবে। এটা কি ফিতনা নয়? আল্লাহর কসম, এটা অন্যতম বড় ফিতনা। এমন ফিতনা যার থেকে কেবল আল্লাহ যাকে রক্ষা করবেন, সেই বাঁচতে পারবে।”(ইবনু উসাইমিন,https://alathar.net/home/esound/index.php?op=codevi…; এবং ইবনু উসাইমীন; শারহু রিয়াজুস সলিহিন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৫১-১৫৩)
.
শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:
فظاهر حديث أسامة هو عن فتن الشهوات التي تعترض المؤمن في حياته وعيشه، دائما، وهي كانت على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم، وبقيت بعد أن توفاه الله ، ثم لا تزال مستمرة في كل زمن، من الافتتان بالنساء والأموال والجاه ونحو هذا، فهذه الفتن أخطرها فتنة النساء. وأما فتنة الدجال فليست داخلة في هذا النوع من الفتن؛ لأنها فتنة لم يتركها النبي صلى الله عليه وسلم موجودة فهي لم تأت بعد، وهي ليست من جنس فتن الشهوات، بل هي من فتن الشبهات.كما أن حديث أسامة عن الفتن المختصة بالرجال دون النساء، أما الدجال فهو فتنة للجميع.
উসামা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসের বাহ্যিক প্রমাণে বোঝা যায়, এখানে এমন সব কামনামূলক (شهوات) ফিতনার কথা বলা হয়েছে, যা একজন মুমিন তার জীবনধারণ ও জীবিকার পথে সদা-সর্বদা সম্মুখীন হয়। এসব ফিতনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগেও ছিল, তিনি ওফাত লাভ করার পরও তা বিদ্যমান ছিল, এবং তা এখনো প্রতিটি যুগে অব্যাহত রয়েছে। এই ফিতনাগুলোর মধ্যে রয়েছে নারী, ধন-সম্পদ, পদমর্যাদা ও খ্যাতি প্রভৃতির প্রতি আসক্তি। আর এ সকল ফিতনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হলো নারীদের ফিতনা। অন্যদিকে দাজ্জালের ফিতনা এই শ্রেণিভুক্ত নয়; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ওফাত লাভ করেন, তখনও এ ফিতনা উদ্ভূত হয়নি। এটি এখনো আগত এবং এটি কামনামূলক ফিতনা নয়, বরং এটি সংশয় ও বিভ্রান্তির (شبهات) ফিতনার অন্তর্ভুক্ত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উসামা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে যেসব ফিতনার কথা এসেছে, সেগুলো মূলত পুরুষদের প্রতি কেন্দ্রীভূত, পক্ষান্তরে দাজ্জালের ফিতনা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই বিপজ্জনক এবং সর্বব্যাপী।”(ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতওয়া নং-৪৩৪২৩৯) মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬◐✪◑▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।