ঈদের সালাত আদায়ের গুরুত্ব, সময় ও হুকুম কি?

যিলহজ্জ ও কুরবানীর ধারাবাহিক ১৬ তম ও সর্বশেষ পর্ব।

প্রশ্ন: ঈদের সালাত আদায়ের গুরুত্ব, সময় ও হুকুম কি? ঈদের সালাতের বিশুদ্ধ নিয়ম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভুমিকা: ঈদের খুশীর প্রধান অঙ্গ হল, ঈদের সালাত। এই নামায বিধিবদ্ধ হয় হিজরীর প্রথম সনে।ঈদের সালাত ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ এটি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।সুন্নাহ /ওয়াজিব নিয়ে চিন্তা না করে সকল মুসলিম নারী-পুরুষের উচিত মাঠে গিয়ে ঈদের সালাত আদায় করা।কুরবানীর ঈদ বা ঈদুল আযহা, রমজানের ঈদ বা ঈদুল ফিতর অপেক্ষা উত্তম। কারণ, ঈদুল আযহাতে নামায ও কুরবানী আছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরে আছে নামায ও সদকাহ। আর কুরবানী সদকাহ অপেক্ষা উত্তম। আবার কুরবানীর দিনে হাজীদের জন্য স্থান ও কালের মাহাত্ম্য ও পবিত্রতা একত্রিত হয়। যেহেতু ঐ সময় পবিত্র কাবাগৃহের হজ্জ হয়। আর যার পূর্বে আরাফার দিন ও পরে তাশরীকের তিন দিন। আর এই দিনগুলির প্রত্যেকটাই হাজীদের জন্য ঈদ।(লাতায়েফুল মাআরিফ ৩১৮পৃঃ)
.
◾➤ঈদুল আযহার সালাতের সময়: ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পরে রাসূলুল্লাহ (সা) ঈদের সালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বসর (রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার সালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী করে সালাত আদায় করাকে অপছন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায় শেষ করতাম। আর সালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ)। অতএব ঈদুল আযহার সালাত সূর্যোদয়ের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত শুরু করা উচিত (দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)।
.
◾➤অধিক বিশুদ্ধ মতে ঈদের সালাত সুন্নতে মুআক্কাদা। অনেক ওলামাদের মতে যেমন, ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যেম, শওকানী, সিদ্দীক হাসান খান প্রভৃতিগণের মতে এই নামায ওয়াজিব। তাই কোন সক্ষম মুসলিমের জন্য তা ত্যাগ করা বা আদায় করতে অবহেলা করা উচিত নয়। শিশুদেরকেও এই নামাযে উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধ করবে। সৌন্দর্য প্রকাশ না হলে, পর্দার রীতি থাকলে এবং পথে ও ঈদগাহে নারী-পুরুষে মিলা-মিশার ভয় না থাকলে মহিলারা জামাআতে শামিল হবে। বরং পর্দার ব্যবস্থা করে ঈদগাহে মহিলাদেরকে উপস্থিত হয়ে নামায পড়ার বন্দোবস্ত করা জরুরী।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৩১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘দুই ঈদের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৭; মির‘আত ২/৩৩১; ঐ, ৫/৩১) যাতে ঋতুবতী মহিলারাও নামাযে না হলেও দুআ ও খুশীতে শরীক হবে। এ ছাড়া পৃথকভাবে কেবল মেয়েদের জন্য কোন বাড়িতে বা মসজিদে ঈদের নামাযের কথা শরীয়তে উল্লেখিত নেই।

◾➤ঈদের সালাত আদায়ের নিয়মাবলী : ঈদের সালাতের পদ্ধতি অন্যান্য (ফজরের) নামাযের মতই। অবশ্য এ নামাযে অতিরিক্ত কিছু তকবীর রয়েছে ঈদায়নের সালাতে আযান বা এক্বামত নেই(সহীহ মুসলিম, ১৪৭০)।ইমাম সাহেব নারী পুরুষ সবাইকে নিয়ে প্রথমে জামা‘আতের সাথে ১২ তাকবীরে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবেন ১ম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা ও ছানা পাঠের পর ধীরস্থিরভাবে স্বল্প বিরতি সহ পরপর সাত তাকবীর দিবে। অতঃপর আঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ ইমাম সরবে সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়বেন এবং মুক্তাদীগণ চুপে চুপে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়বে। অনুরূপভাবে ২য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে ধীরস্থিরভাবে পরপর পাঁচটি তাকবীর দিয়ে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ সহ সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। এ সময় মুক্তাদীগণ চুপে চুপে কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে।উল্লেখ্য যে,ঈদের সালাতে প্রথম রাক‘আতে সূরায়ে ক্বাফ অথবা সূরা আ‘লা এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরায়ে ক্বামার অথবা সূরা গা-শিয়াহ পড়া সুন্নাহ।(সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৮৪০-৪১)তবে কারো উপরোক্ত সূরা গুলো মুখস্ত না থাকলে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য যে কোন সূরা দিয়েও পড়া যাবে।(আবুদাঊদ হা/৮১৮, ৮২০, ৮৫৯) প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে ও বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে। অতিরিক্ত তাকবীর সমূহ বলতে ভুলে গেলে বা গণনায় ভুল হ’লে তা পুনরায় বলতে হয় না বা ‘সিজদায়ে সাহু’ লাগে না।(মির‘আত হা/১৪৫৭, ২/৩৪১ পৃঃ; ঐ; হা/১৪৫৫-এর আলোচনা ৫/৫৩-৫৪; ইরওয়া ৩/১১৩) সালাত শেষে ইমাম সাহেব একটি খুৎবা দিবেন। খুৎবার সময় হাতে লাঠি রাখবেন। [আবুদাঊদ হা/১১৪৫, সনদ হাসান; ঐ, মিশকাত হা/১৪৪৪; মির‘আত ৫/৫]

একটি খুৎবা দেওয়াই সহীহ হাদীস সম্মত। দুই খুৎবা সম্পর্কে কয়েকটি ‘যঈফ’ হাদীছ রয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও হাদীস সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল। [মির‘আত ২/৩৩০-৩৩১; ঐ, ৫/৩১)
.
ঈদায়নের জামা‘আতে পুরুষদের পিছনে পর্দার মধ্যে মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে যোগদান করবেন। প্রয়োজনে একজনের চাদরে দু’জন আসবেন। খত্বীব সাহেব নারী-পুরুষ সকলকে উদ্দেশ্য করে তাদের বোধগম্য ভাষায় কুরআন-হাদীছের ব্যাখ্যাসহ খুৎবা দিবেন। ঋতুবতী মহিলাগণ কেবল খুৎবা শ্রবণ করবেন ও দো‘আয় শরীক হবেন। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন যে, ‘উক্ত হাদীছের শেষে বর্ণিত دَعْوَةُ الْمُسْلِمِيْنَ কথাটি ‘আম’। এর দ্বারা ইমামের খুৎবা, নসিহত ও দো‘আ বুঝানো হয়েছে। কেননা ঈদায়নের সালাতের পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিত দো‘আর প্রমাণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন সহীহ হাদীস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৩১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘দুই ঈদের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৭; মির‘আত ২/৩৩১; ঐ, ৫/৩১]

◾➤ঈদের নামায পুরো অথবা কিছু অংশ ছুটে গেলে:
_____________________________________
ঈদের সালাতে ইমামের তকবীর পড়তে শুরু করার পর কেউ জামাআতে শামিল হলে, সে প্রথমে তাহরীমার তকবীর দিবে। অতঃপর বাকী তকবীরে ইমামের অনুসরণ করবে এবং ছুটে যাওয়া আগের তকবীরগুলো মাফ হয়ে যাবে।(ইবনে উষাইমীন আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ৭পৃঃ)

ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে তাহরীমার তকবীর দিয়ে (সময় আছে বুঝলে রুকূর তকবীর দিয়ে) রুকূতে যাবে। যেহেতু তকবীরগুলো শেষ হওয়ার পর সে শামিল হয়েছে এবং তার যথাস্থানও ছুটে গেছে, তাই তা আর কাযা করতে হবে না।(ইবনে উষাইমীন আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ১১পৃঃ)

পক্ষান্তরে যদি কেউ কওমায় বা তার পরে জামাআতে শামিল হয়, তাহলে ইমামের দ্বিতীয় রাকআত তার প্রথম ধরে ইমাম সালাম ফিরে দিলে উঠে সে নিজের দ্বিতীয় রাকআত পূরণ করে নেবে এবং ইমাম দ্বিতীয় রাকআতে যেভাবে নামায পড়েছেন, ঠিক সেভাবেই ঐ রাকআত কাযা করবে।(ইবনে আবী শাইবাহ ৫৮১২)

কেউ তাশাহহুদে এসে জামাআতে শামিল হলে ইমামের সাথে তাশাহহুদ পড়ে তাঁর সালাম ফিরার পর উঠে যথা নিয়মে সমস্ত তকবীর সহ ২ রাকআত নামায আদায় করে নেবে।[আল মুগনী ৩/২৮৫)

◾➤ঈদের সালাত সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো:
_______________________________________
➤(১)ঈদের সালাত আদায় করে বাড়ীতে এসে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা সুন্নাহ। কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ীতে ফিরে দুই রাক‘আত সালাত পড়তেন। (ইবনু মাজাহ, হা/১০৭৬, সনদ হাসান; ইরওয়াউল গালীল, হা/৩৯৯)

➤(২).একই ঈদগাহে একাধিক জামা‘আত করা যাবে না। জায়গা সংকুলান না হলে ঈদের মাঠ বড় করে অথবা অন্য কোন খোলা ময়দানে ঐক্যবদ্ধভাবে সালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম একই মাঠে একাধিক বার ঈদের জামা‘আত করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (শায়খ বিন বায, নুরুন আলাদ দারব, ১৩ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৮)।

➤(৩).সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়া উত্তম। কিন্তু ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় হয় এমন ঈদগাহ না পেলে, ৬ তাকবীর আদায়কারী ইমামের পিছনে ঈসালা পড়া যাবে এটিও জায়েজ কিন্তু উত্তম নয়।(আবু দাউদ ইবনু মাজাহ, হা/১২৮০)

➤(৪).ঈদের সালাতে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করে নিঃশব্দে তকবীর বলবে; সশব্দে নয়। কারণ, মুক্তাদীর সশব্দে তকবীর বলা ওলামাদের মতে বিদআত।(মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃঃ)

➤(৫).ঈদের সালাতে অতিরিক্ত এই তকবীরগুলো বলা কিন্তু সুন্নত। কেউ বললে তার সওয়াব পাবে এবং না বললে বা ভুলে গেলে তার কোন পাপ হবে না।সাহু সিজদাও লাগবে না অবশ্য এ ব্যপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তা ত্যাগ করা উচিত নয়। যাতে অন্যান্য নামায থেকে ঈদের নামায পৃথক বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত হয়।[আল-মুগনী ৩/২৭৫,নাইলুল আওতার, ইমাম শওকানী ৩/৩০০,)

➤(৬).ঈদের সালাত খোলা ময়দানে আদায় করা সুন্নাহ।মসজিদ মর্যাদাপূর্ণ স্থান হওয়ার পরও ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত পড়ার ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা রয়েছে।” (আল মুগনি ২/২৭৬) কিন্তু বৃষ্টি কিংবা ভীতির কারণে ময়দানে যাওয়া অসম্ভব বিবেচিত হ’লে মসজিদে ঈদের জামা‘আত করা যাবে।(আলবানী,সালাতুল
ঈদায়েন ফিল মুছল্লা, পৃঃ ৩৫)।তবে বায়তুল্লাহ ব্যতীত বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে বিনা কারণে ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করা সুন্নাত বিরোধী কাজ।

➤(৭).ঋতুবতী মহিলারাও পরিপূর্ণ পর্দা করে ঈদের মাঠে যাবেন। কেননা এটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) নির্দেশ তবে ঋতুবতী হলে তারা কেবল খুৎবা শ্রবণ করবে ও দো‘আয় শরীক হবে,সালাত আদায় করবেনা। প্রখ্যাত সাহাবি উম্মে আতিয়া (নুসাইবা বিনতে কা’ব রা. থেকে হাদীস রয়েছে। (সহীহ বুখারি,৩৫১ মুসলিম,৮৯০ মিশকাত১৪৩১) দুঃখজনক হলেও সত্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহটি পালন করা হলেও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল ব্যতীত সব জায়গায় এটি অবহেলিত, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
.
➤(৮).শরঈ ওজর থাকলে অর্থাৎ বৃষ্টি বা কোন সমস্যার কারনে ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করা হ’লে সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত তাহ্ইয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করা মুস্তাহাব,এমনকি নিষিদ্ধ সময়ও। এটি মসজিদের সাথে সম্পর্কিত সুন্নাত, ঈদের সালাতের সাথে নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় না করে না বসে।(বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু বায ১৩/১৫,)
.
➤(৯).জামা‘আত ছুটে গেলে একাকী অথবা জামা‘আত সহকারে ঈদের ন্যায় তাকবীর সহ দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিবে তবে একাকী সালাতে খুৎবা দিবে না। আর জামা‘আতের সাথে আদায় করলে এবং খুৎবা দেওয়ার উপযুক্ত কেউ থাকলে তিনি খুৎবা দিবেন।(ফাতহুল বারী ২/৪৭৪মির‘আত ৫/৬৪-৬৫)
.
➤(১০).সমস্যার জন্য ঈদগাহে আসতে না পারলে বাড়ীতে মেয়েরা সহ সকলকে নিয়ে ঈদগাহের ন্যায় তাকবীর সহকারে জামাআতের সাথে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে।এক্ষেত্রে ঈদের সালাতের পর যে খুতবা হয় বাড়িতে সালাতের ক্ষেত্রে তা দেয়া যাবে না।(ফাৎহ সহ ২/৫৫০-৫১ পৃঃ, ‘দুই ঈদের সালাত’ অধ্যায়-১৩, অনুচ্ছেদ-২৫।)
.
➤(১১).পৃথকভাবে মহিলার ইমামতিতে মহিলারা ঈদের জামা‘আত করতে পারবে না। বাড়িতেও তাদের একাকী পড়ার কোন দলিল নেই শরীয়তে। তবে ঈদগাহে জায়গা না থাকলে মহিলারা পর্দার সাথে পৃথক ঈদের জামা‘আত করতে পারবে। তখন একজন পুরুষ ব্যক্তি তাদের ছালাত পড়িয়ে দিবে। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ‘যাবিরা’ নামক স্থানে তাঁর আযাদকৃত গোলাম ইবনু আবূ উতবাকে এ আদেশ করেছিলেন। তাই তিনি তাঁর পরিবারবর্গ ও সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে শহরের অধিবাসীদের ন্যায় তাকবীরসহ সালাত আদায় করেন (ছহীহ বুখারী, ‘ঈদায়েন’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৫)
.
➤(১২).জুম‘আ ও ঈদ একই দিনে হ’লে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইমাম হিসাবে দু’টিই পড়েছেন। অন্যদের মধ্যে যারা ঈদ পড়েছেন, তাদের জন্য জুম‘আ অপরিহার্য করেননি।(আবুদাঊদ হা/১০৭৩ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৬; ঐ, ১/২৩৬; নায়লুল আওত্বার ৪/২৩১) অবশ্য দু’টিই আদায় করা যে অধিক সওয়াবের কারণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।
.
➤(১৩).ঈদের খুতবাহ শোনা সুন্নত কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। এটির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। কেননা, খুতবার মধ্যে মুসলিম জাতির কল্যাণের জন্য দুয়া করা হয়, ওয়ায-নসিহত করা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা পেশ করা হয়। মুমিনের জন্য উচিত এই যে, প্রত্যেক মঙ্গলের প্রতি সে আগ্রহী হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য উপকারী বিষয়ের প্রতি যত্নবান হবে। আর খুতবা শোনা নিশ্চয় বড় উপকারী বিষয়।(সহীহ আবূ দাঊদ ১০২৪ মুস্তাদরাক হাকিম, হা/১০৪৩)
.
(১৪).ঈদের সালাত আদায়ের পর একাধিক ব্যক্তি খুৎবা দিতে পারবেন না। বরং একজন ব্যক্তিই খুৎবা দিবেন। এটাই রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাত (মুসলিম হা/৮৮৫, মিশকাত হা/১৪৪৬)। তবে ওযরবশতঃ কাউকে মাঝপথে খুৎবা পরিত্যাগ করতে হ’লে অপরজন প্রথম থেকে খুৎবা শুরু করবেন।(ওছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৮)।

➤(১৫).ঈদের জামা‘আতে একবার শরীক হয়ে পরে কারণবশতঃ অন্য স্থানে এসে জামা‘আত হ’তে দেখলে চাইলে তাতেও অংশগ্রহণ করা যাবে প্রথমটি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ হিসাবে এবং পরেরটি নফল হিসাবে। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে জামা‘আতের সাথে এশার ছালাত পড়তেন এবং নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন। (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)।

➤(১৬).ঈদের মাঠ পাকা করা, আলোক সজ্জা করা , ঈদগাহের মেঝে পাকা করা, ছায়ার জন্য সামিয়ানা টাঙানো বা ছাদ করা কোনটাই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে প্রমাণিত নয়।তাই এসব থেকে বিরত থাকাই উত্তম তবে অতি প্রয়োজনে গরমের জন্য উপরে সামিয়ানা টাঙানো দোষের নয়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭, মির‘আত ৫/২২ পৃঃ)
.
পরিশেষে, এ কথা মনে রাখতে হবে যে, ঈদের খুশি যেন শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে না থাকে, এটি যেন সকল শ্রেণীর লোক উপলব্ধি করতে পারে। ধন্য হোক ঈদের দিন। উৎসবে মুখরিত হোক মুসলিম উম্মাহর এ দিনের খুশি। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।